কাউন্টারের সামনে ২৩ ঘণ্টা অপেক্ষা

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গতকাল আগামী ৩০ এপ্রিলের যাত্রার অগ্রিম টিকেট বিক্রয় করেছে রেলওয়ে। টিকেট বিক্রি শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা শেষ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। এছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করে অনলাইনে টিকেট কাটতে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন ভিড় ছিল না। তবে আগামী বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার যাত্রীদের চাপ অনেকটা বৃদ্ধি পাবে বলে জানান বাস মালিকরা।

সরেজমিন রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি টিকেট কাউন্টারে সামনে ছিল টিকেট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন। লাইনের মাথা ঠিক কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা বের করা কঠিন। একেক লাইনে দুই থেকে তিন হাজার মানুষ। এদের অধিকাংশই গত দুইদিন ধরে টিকেটের অপেক্ষায় আছেন। গত সোমবার ২৯ এপ্রিলের যাত্রারা টিকেট না পেয়ে ৩০ এপ্রিলের টিকেটের আশায় লাইনে অপেক্ষা করছে। এদের অনেকেই গত সোমবার রাত থেকে অপেক্ষা করছেন বলে যাত্রীরা জানান। ঈদের টিকেট হাতে পাওয়া মানে একটি সোনার হরিণের মতো অনুভূতি।

ইমরান হোসেন নামের রংপুরের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘গত সোমবার সকাল ৮টায় লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু কাউন্টারের সামনে যেতে যেতেই টিকেট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। সেই লাইনেই এখনো আছি। আশা করছি আজ টিকেট পাবো। কারণ সামনে বেশি লোক নেই। ১০ জনের পর আমি। তবে দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টা যুদ্ধের পর টিকেট পাচ্ছি মনে হয় এটা যেন একটি সোনার হরিণ।’

মিলন নামের অন্য এক যাত্রী বলেন, ‘লালমনিরহাটের টিকেটের জন্য সোমবার লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু টিকেট পাইনি। কাল লাইনে বুকিং দিয়ে গিয়েছিলাম। আজ আবার সকাল চলে এসেছি। দেখা যাক কি অবস্থা হয়। এর আগে কয়েকবার অনলাইনে কাটতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু ঢুকতে পারিনি। এখন কাউন্টারে যুদ্ধ চলছে। দেখি কতক্ষণ লাগে।’

রাজশাহী রুটের টিকেটপ্রত্যাশী সরুজ মিয়া জানান, আমার দরকার দুটি টিকেট। লাইনে দাঁড়িয়েই অনলাইনে চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। একটি টিকেট পেয়েও গিয়েছিলাম। সেটি কিনতে পারিনি পেমেন্ট ডিজেবল সমস্যায়। সার্ভারে চাপ অনেক বেশি। ঢোকাই যাচ্ছে না। ঢুকতে পারলেও সিট বুকড দেখাচ্ছে। আবার সিট থাকলেও পেমেন্ট থেকে যাচ্ছে পেন্ডিংয়ে।’

এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ৫৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে ঢাকা ছাড়তে পারবেন। এর মধ্যে শুধু আন্তঃনগর ট্রেনে আসন থাকবে ২৭ হাজার। এখন সবাই যদি ট্রেনে যেতে চান সেটা কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়। তবুও আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। যাতে ২৭ হাজার টিকেট সবাই পায়। কোন কালোবাজারি যাতে না হয়।’

বাস যাত্রীদের চাহিদা ঈদের দুই দিন আগের টিকেট

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাস কাউন্টারে এখনো যাত্রীদের তেমন চাপ দেখা যায়নি। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে আন্তঃজেলা বাসের যাত্রী চাপ বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, সরকারি ক্যালেন্ডারে আগামী ২ থেকে ৪ মে তিন দিন ঈদের ছুটি নির্ধারিত আছে। তার আগে ১ মে শ্রমিক দিবস তথা মে দিবসের ছুটি। এর আগে ২৯ ও ৩০ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে এবার মূলত ঈদের ছুটি শুরু হবে ২৯ এপ্রিল। মাঝখানে ৫ মে বৃহস্পতিবার অফিস খোলা। এরপর ৬ ও ৭ মে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ৫ মে বন্ধ থাকলে ঈদে ৯ দিনের সরকারি ছুটি থাকত। এই দিন ছাড়াও এবার ৬ দিনের লম্বা ছুটিতে যাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এর ফলে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে সড়কপথে বিভিন্ন রুটে ২৯ ও ৩০ এপ্রিলের অগ্রিম টিকেটের চাপ অনেক বেশি। এই দুই দিনের অগ্রিম টিকেট এরই মধ্যে ৮০ শতাংশ বিক্রি হয়ে গেছে। যে সিটগুলো বাকি রয়েছে, সবগুলোই পেছনের সারির। তবে এই দুইদিন ছাড়া অন্য দিনগুলোর অগ্রিম টিকেটের চাপ নেই বলেন বাস মালিকরা।

সরেজমিন রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কাউন্টারে যাত্রীদের তেমন ভিড় নেই। তবে সায়েদবাদ বাস টার্মিনালে অগ্রিম টিকেট তেমন বিক্রি করা হয় না। সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২২ জেলার যাত্রীরা যাতায়াত করে। এইসব অঞ্চলের যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা থাকায়। কয়েক ঘণ্টার পর পর বাস ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে বাস ছেড়ে যায় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ বিষয়ে হানিফ পরিবহনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রানিং বাসে যাত্রীর আহামরি চাপ নেই। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত কিছু যাত্রী ছিল। এরপর থেকে অল্প কয়েকজন যাত্রী নিয়ে বাস যাচ্ছে। বলা যায়, পুরো বাসই একরকম ফাঁকা থাকছে।’

‘এবার মূলত বেশি ছুটির কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ২৯ এপ্রিল থেকে ছুটি শুরু হওয়ায় এদিন ও ৩০ এপ্রিল টিকেটের চাপটা একটু বেশি। এই দুই দিনের ৮০ শতাংশ টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। যেগুলো আছে সেগুলোও একদম পেছনের সারির।’ আগের মতো ২৮ ও ২৯ রমজানে বাড়তি চাপ এবার নেই বলে জানান তিনি।

বুধবার, ২৭ এপ্রিল ২০২২ , ১৪ বৈশাখ ১৪২৮ ২৫ রমাদ্বান ১৪৪৩

রেলওয়ে টিকেট, অনলাইনে ভোগান্তি

কাউন্টারের সামনে ২৩ ঘণ্টা অপেক্ষা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গতকাল আগামী ৩০ এপ্রিলের যাত্রার অগ্রিম টিকেট বিক্রয় করেছে রেলওয়ে। টিকেট বিক্রি শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা শেষ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। এছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করে অনলাইনে টিকেট কাটতে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন ভিড় ছিল না। তবে আগামী বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার যাত্রীদের চাপ অনেকটা বৃদ্ধি পাবে বলে জানান বাস মালিকরা।

সরেজমিন রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি টিকেট কাউন্টারে সামনে ছিল টিকেট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন। লাইনের মাথা ঠিক কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা বের করা কঠিন। একেক লাইনে দুই থেকে তিন হাজার মানুষ। এদের অধিকাংশই গত দুইদিন ধরে টিকেটের অপেক্ষায় আছেন। গত সোমবার ২৯ এপ্রিলের যাত্রারা টিকেট না পেয়ে ৩০ এপ্রিলের টিকেটের আশায় লাইনে অপেক্ষা করছে। এদের অনেকেই গত সোমবার রাত থেকে অপেক্ষা করছেন বলে যাত্রীরা জানান। ঈদের টিকেট হাতে পাওয়া মানে একটি সোনার হরিণের মতো অনুভূতি।

ইমরান হোসেন নামের রংপুরের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘গত সোমবার সকাল ৮টায় লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু কাউন্টারের সামনে যেতে যেতেই টিকেট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। সেই লাইনেই এখনো আছি। আশা করছি আজ টিকেট পাবো। কারণ সামনে বেশি লোক নেই। ১০ জনের পর আমি। তবে দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টা যুদ্ধের পর টিকেট পাচ্ছি মনে হয় এটা যেন একটি সোনার হরিণ।’

মিলন নামের অন্য এক যাত্রী বলেন, ‘লালমনিরহাটের টিকেটের জন্য সোমবার লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু টিকেট পাইনি। কাল লাইনে বুকিং দিয়ে গিয়েছিলাম। আজ আবার সকাল চলে এসেছি। দেখা যাক কি অবস্থা হয়। এর আগে কয়েকবার অনলাইনে কাটতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু ঢুকতে পারিনি। এখন কাউন্টারে যুদ্ধ চলছে। দেখি কতক্ষণ লাগে।’

রাজশাহী রুটের টিকেটপ্রত্যাশী সরুজ মিয়া জানান, আমার দরকার দুটি টিকেট। লাইনে দাঁড়িয়েই অনলাইনে চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। একটি টিকেট পেয়েও গিয়েছিলাম। সেটি কিনতে পারিনি পেমেন্ট ডিজেবল সমস্যায়। সার্ভারে চাপ অনেক বেশি। ঢোকাই যাচ্ছে না। ঢুকতে পারলেও সিট বুকড দেখাচ্ছে। আবার সিট থাকলেও পেমেন্ট থেকে যাচ্ছে পেন্ডিংয়ে।’

এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ৫৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে ঢাকা ছাড়তে পারবেন। এর মধ্যে শুধু আন্তঃনগর ট্রেনে আসন থাকবে ২৭ হাজার। এখন সবাই যদি ট্রেনে যেতে চান সেটা কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়। তবুও আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। যাতে ২৭ হাজার টিকেট সবাই পায়। কোন কালোবাজারি যাতে না হয়।’

বাস যাত্রীদের চাহিদা ঈদের দুই দিন আগের টিকেট

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাস কাউন্টারে এখনো যাত্রীদের তেমন চাপ দেখা যায়নি। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে আন্তঃজেলা বাসের যাত্রী চাপ বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, সরকারি ক্যালেন্ডারে আগামী ২ থেকে ৪ মে তিন দিন ঈদের ছুটি নির্ধারিত আছে। তার আগে ১ মে শ্রমিক দিবস তথা মে দিবসের ছুটি। এর আগে ২৯ ও ৩০ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে এবার মূলত ঈদের ছুটি শুরু হবে ২৯ এপ্রিল। মাঝখানে ৫ মে বৃহস্পতিবার অফিস খোলা। এরপর ৬ ও ৭ মে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ৫ মে বন্ধ থাকলে ঈদে ৯ দিনের সরকারি ছুটি থাকত। এই দিন ছাড়াও এবার ৬ দিনের লম্বা ছুটিতে যাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এর ফলে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে সড়কপথে বিভিন্ন রুটে ২৯ ও ৩০ এপ্রিলের অগ্রিম টিকেটের চাপ অনেক বেশি। এই দুই দিনের অগ্রিম টিকেট এরই মধ্যে ৮০ শতাংশ বিক্রি হয়ে গেছে। যে সিটগুলো বাকি রয়েছে, সবগুলোই পেছনের সারির। তবে এই দুইদিন ছাড়া অন্য দিনগুলোর অগ্রিম টিকেটের চাপ নেই বলেন বাস মালিকরা।

সরেজমিন রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কাউন্টারে যাত্রীদের তেমন ভিড় নেই। তবে সায়েদবাদ বাস টার্মিনালে অগ্রিম টিকেট তেমন বিক্রি করা হয় না। সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২২ জেলার যাত্রীরা যাতায়াত করে। এইসব অঞ্চলের যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা থাকায়। কয়েক ঘণ্টার পর পর বাস ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে বাস ছেড়ে যায় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ বিষয়ে হানিফ পরিবহনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রানিং বাসে যাত্রীর আহামরি চাপ নেই। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত কিছু যাত্রী ছিল। এরপর থেকে অল্প কয়েকজন যাত্রী নিয়ে বাস যাচ্ছে। বলা যায়, পুরো বাসই একরকম ফাঁকা থাকছে।’

‘এবার মূলত বেশি ছুটির কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ২৯ এপ্রিল থেকে ছুটি শুরু হওয়ায় এদিন ও ৩০ এপ্রিল টিকেটের চাপটা একটু বেশি। এই দুই দিনের ৮০ শতাংশ টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। যেগুলো আছে সেগুলোও একদম পেছনের সারির।’ আগের মতো ২৮ ও ২৯ রমজানে বাড়তি চাপ এবার নেই বলে জানান তিনি।