ঢাবির চারুকলার ছাত্রীদের যৌন হেনস্তার অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের এক শিক্ষক ও সাবেক-বর্তমান দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তা ও ইভটিজিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিভাগের চেয়ারম্যান, অনুষদের ডিনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

ঢাবির চারুকলা অনুষদের শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. আখতারুজ্জামান সিনবাদ, ভাস্কর্য বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থী পুলক বাড়ৈ এবং সাবেক শিক্ষার্থী শুভ বাড়ৈর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষার্থী দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ১৪ এপ্রিল মঙ্গল শোভাযাত্রার পরবর্তী মুহূর্তে চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে সেখানকার বন্ধুদের সঙ্গে বুয়েটের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী বসে ছিলেন।

‘এমন সময় শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আখতারুজ্জামান সিনবাদ বুয়েট শিক্ষার্থীকে দেখে ক্রমাগত বখাটেদের মতো শিস দিতে থাকে। একপর্যায়ে নিপীড়িত শিক্ষার্থী তার দিকে সরাসরি তাকালে তিনি লম্পটদের মতো অশ্লীল মুখভঙ্গি ও চোখটিপ দিতে থাকেন। উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করার চেষ্টা করেন।’

লিখিত অভিযোগে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, ‘পরবর্তীতে তিনি (আখতারুজ্জামান সিনবাদ) হুমকি-ধমকি দিয়ে কৃতকর্মের কথা স্বীকার করেন এবং নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে থাকা বন্ধুকে হলে থাকে কি-না সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাপূর্বক দমনমূলক আচরণ করেন এবং তিনি যে শিক্ষক সেটা স্মরণ করিয়ে তার এ আচরণের বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেন।’

শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ও চারুকলার অনুষদের ডিনের কাছে দেয়া অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীসহ ১৩ জন শিক্ষার্থী সই করেছেন।

অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ কখনই কাম্য নয় এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের জন্য অপ্রীতিকর। তারা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এছাড়া মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি পর্বে ১৩ এপ্রিল রাতে জয়নুল শিশুকলা নিকেতন কক্ষে আখতারুজ্জামান সিনবাদ চারুকলা অনুষদের প্রথমবর্ষের (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) তিন নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে ‘বিকৃত ও অপ্রীতিকর আচরণ’ করেন বলে অভিযোগ উঠে। সেখানে ভাস্কর্য বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থী পুলক বাড়ৈ এবং সাবেক শিক্ষার্থী শুভ বাড়ৈও ওই শিক্ষার্থীদের ‘যৌন হেনস্তা’ করেন বলে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ডিন অফিস থেকে এ বিষয়ে আমার বক্তব্য চাওয়া হয়েছে। সেখানে আমি আমার বক্তব্য দিব।’

এ ব্যাপারে শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চেয়ারপারসন সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টা অনুষদ খতিয়ে দেখছে।

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন জানান, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ফ্যাক্ট চেকিং কমিটি গঠন করা হবে। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিতে এ অভিযোগ পাঠানো হবে।

তিনি আরও জানান, যারা অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, তিন দিন যাবত তাদের কয়েকজনের ইন্টারভিউ নেয়া হয়েছে। ওই শিক্ষককেও চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। উনি লিখিতভাবে এ বিষয়ে বক্তব্য জানাবেন। অভিযুক্ত দু’জন ছাত্রের মধ্যে একজনের সঙ্গে কথা বলেছি। আরেকজন সাবেক স্টুডেন্ট, তার সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা চলছে। আমরা ফ্যাক্ট খুঁজছি। ঘটনার ভিত্তি থাকলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।

এদিকে অভিযোগ দেয়ার কিছুদিন পেরিয়ে গেলেও এই ঘটনার কোন তদন্ত রিপোর্ট জমা না হওয়ায় অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে একটি প্রতিবাদলিপি ছাপিয়েছেন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদলিপিতে দুই ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘তার (আক্তারুজ্জামান সিনবাদ) অনিয়ন্ত্রিত ও বিকৃত যৌন হেনস্তায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ ও শঙ্কিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ কখনোই কাম্য নয় এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের জন্য অপ্রীতিকর।’

প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এই ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তি প্রদান করে দৃষ্টান্ত স্থাপনের দাবি জানাচ্ছেন চারুকলা অনুষদের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।’

বুধবার, ২৭ এপ্রিল ২০২২ , ১৪ বৈশাখ ১৪২৮ ২৫ রমাদ্বান ১৪৪৩

ঢাবির চারুকলার ছাত্রীদের যৌন হেনস্তার অভিযোগ শিক্ষকের বিরুদ্ধে

প্রতিনিধি, ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের এক শিক্ষক ও সাবেক-বর্তমান দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তা ও ইভটিজিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিভাগের চেয়ারম্যান, অনুষদের ডিনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

ঢাবির চারুকলা অনুষদের শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. আখতারুজ্জামান সিনবাদ, ভাস্কর্য বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থী পুলক বাড়ৈ এবং সাবেক শিক্ষার্থী শুভ বাড়ৈর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষার্থী দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ১৪ এপ্রিল মঙ্গল শোভাযাত্রার পরবর্তী মুহূর্তে চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে সেখানকার বন্ধুদের সঙ্গে বুয়েটের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী বসে ছিলেন।

‘এমন সময় শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আখতারুজ্জামান সিনবাদ বুয়েট শিক্ষার্থীকে দেখে ক্রমাগত বখাটেদের মতো শিস দিতে থাকে। একপর্যায়ে নিপীড়িত শিক্ষার্থী তার দিকে সরাসরি তাকালে তিনি লম্পটদের মতো অশ্লীল মুখভঙ্গি ও চোখটিপ দিতে থাকেন। উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করার চেষ্টা করেন।’

লিখিত অভিযোগে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, ‘পরবর্তীতে তিনি (আখতারুজ্জামান সিনবাদ) হুমকি-ধমকি দিয়ে কৃতকর্মের কথা স্বীকার করেন এবং নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে থাকা বন্ধুকে হলে থাকে কি-না সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাপূর্বক দমনমূলক আচরণ করেন এবং তিনি যে শিক্ষক সেটা স্মরণ করিয়ে তার এ আচরণের বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেন।’

শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ও চারুকলার অনুষদের ডিনের কাছে দেয়া অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীসহ ১৩ জন শিক্ষার্থী সই করেছেন।

অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ কখনই কাম্য নয় এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের জন্য অপ্রীতিকর। তারা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এছাড়া মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি পর্বে ১৩ এপ্রিল রাতে জয়নুল শিশুকলা নিকেতন কক্ষে আখতারুজ্জামান সিনবাদ চারুকলা অনুষদের প্রথমবর্ষের (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) তিন নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে ‘বিকৃত ও অপ্রীতিকর আচরণ’ করেন বলে অভিযোগ উঠে। সেখানে ভাস্কর্য বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থী পুলক বাড়ৈ এবং সাবেক শিক্ষার্থী শুভ বাড়ৈও ওই শিক্ষার্থীদের ‘যৌন হেনস্তা’ করেন বলে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

অভিযুক্ত শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ডিন অফিস থেকে এ বিষয়ে আমার বক্তব্য চাওয়া হয়েছে। সেখানে আমি আমার বক্তব্য দিব।’

এ ব্যাপারে শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চেয়ারপারসন সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টা অনুষদ খতিয়ে দেখছে।

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন জানান, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ফ্যাক্ট চেকিং কমিটি গঠন করা হবে। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিতে এ অভিযোগ পাঠানো হবে।

তিনি আরও জানান, যারা অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, তিন দিন যাবত তাদের কয়েকজনের ইন্টারভিউ নেয়া হয়েছে। ওই শিক্ষককেও চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। উনি লিখিতভাবে এ বিষয়ে বক্তব্য জানাবেন। অভিযুক্ত দু’জন ছাত্রের মধ্যে একজনের সঙ্গে কথা বলেছি। আরেকজন সাবেক স্টুডেন্ট, তার সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা চলছে। আমরা ফ্যাক্ট খুঁজছি। ঘটনার ভিত্তি থাকলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।

এদিকে অভিযোগ দেয়ার কিছুদিন পেরিয়ে গেলেও এই ঘটনার কোন তদন্ত রিপোর্ট জমা না হওয়ায় অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে একটি প্রতিবাদলিপি ছাপিয়েছেন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদলিপিতে দুই ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘তার (আক্তারুজ্জামান সিনবাদ) অনিয়ন্ত্রিত ও বিকৃত যৌন হেনস্তায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ ও শঙ্কিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ কখনোই কাম্য নয় এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের জন্য অপ্রীতিকর।’

প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এই ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তি প্রদান করে দৃষ্টান্ত স্থাপনের দাবি জানাচ্ছেন চারুকলা অনুষদের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।’