পাকিস্তান বাহিনীর হামলা, মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা হামলা

একাত্তরের ২৭ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা চালায়। অন্যদিকে মুক্তিবাহিনী গড়ে তুলে তীব্র প্রতিরোধ। এদিনে নীলফামারীর জলঢাকার কালীগঞ্জে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মম গণহত্যা চালায়। জলঢাকা থানা থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ছোট বাজার কালীগঞ্জ। এদিন চারশ’ হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ ভারতে যাওয়ার উদ্দেশে সমবেত হয় কালীগঞ্জ বাজারে। এ সময় স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় খবর পেয়ে ৪টি কনভয় করে প্রায় ত্রিশ জনের মতো হানাদার বাহিনীর সৈন্য এসে কিছু বুঝে উঠার আগেই ব্রাশফায়ার করে নিরীহ মানুষদের ওপর। মুহূর্তেই শহীদ হন চারশ’র বেশি নিরীহ মানুষ। আহত যারা ছিলেন তাদের একটি গর্তে মাটিচাপা দিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদাররা।

এদিনে কুমিল্লার মিয়াবাজারে পাকিস্তানি হানাদার ও মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে প্রচ- সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে হানাদার বাহিনীর বহু সৈন্য নিহত হয়। এছাড়া খাগড়াছড়ির রামগড় দখলের জন্য চট্টগ্রামের হিকুয়ায় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে প্রচ- যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে উভয়পক্ষেরই বেশ কয়েকজন হতাহত হয়।

এদিনে পাকিস্তানি হানাদারেরা প্রচ- যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনীর কাছ থেকে নোয়াখালী, সান্তাহার ও মৌলভীবাজার দখল করে।

পাকিস্তানি হানাদারদের কমান্ডোরা মিজো গেরিলাদের নিয়ে ২৭ এপ্রিল মহালছড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায় এবং একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘিরে ফেলে। এ সময় ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের গোলাগুলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছুটে গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকেন, যেন অবশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুবেষ্টনী থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। গোলাগুলির একপর্যায়ে শত্রুর লাইট মেশিনগানের গুলিতে ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের শহীদ হন।

পাকিস্তানি হানাদাররা এদিন জনতার প্রতিরোধ ভেঙে কক্সবাজারের চকরিয়ায় প্রবেশ করে চিরিঙ্গার হিন্দুপাড়ায় ঢুকে গণহত্যা চালায়। এই গণহত্যায় বহু হিন্দু ধর্মাবলম্বী নিহত হন।

মৌলভীবাজারের বড়লেখার শাহবাজপুরে পাকিস্তানি হানাদারদের ওপর সফল আক্রমণ চালায় লেফটেন্যান্ট মোরশেদের নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনীর একটি দল। অতর্কিত এই আক্রমণে বেশ কয়েকজন হানাদার বাহিনীর সদস্য নিহত হয়। এরপর লেফটেন্যান্ট মোরশেদসহ মুক্তিবাহিনীর সেই দলটি মাধবপুরে ফিরে আসে।

এদিন বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি সীমান্ত দিয়েই অজস্র মানুষ ভারতে আশ্রয়ের জন্যে ভারতে প্রবেশ করে। এদিন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যে নতুন নতুন প্রচুর আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়।

এদিন পাকিস্তান সামরিক সরকার ঢাকায় পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ ১৪৮ নম্বর সামরিক বিধি জারি করে। পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান সামরিক প্রশাসক জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তান রাইফেল (ইপিআর) নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘পূর্ব পাকিস্তান বেসামরিক বাহিনী’ (ইপিসিএফ)।

পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ. রহিম খান ঢাকা আসেন। ঢাকায় তিনি সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে বিমান হামলা সম্পর্কে কৌশল নির্ধারণ করেন।

ঢাকায় সামরিক কর্তৃপক্ষ ১৪৮ নম্বর সামরিক বিধি জারি করে। এ আদেশের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সহায়তাকারীদের গণহারে শাস্তির নির্দেশ দেয়া হয়। এ আদেশে কোন কারণ ছাড়াই কেবল সন্দেহের ওপর ভিত্তি করে চরম শাস্তির দেয়ার অধিকার দেয়া হয় ঘাতকদের। এমনকি, যে এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা তৎপরতা চালাবে সে এলাকার লোকদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা লাভ করে দালালরা।

ব্রিটিশ এমপি জন স্টোনহাউস লন্ডনে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘পূর্ব বাংলায় যে মারাত্মক ও ভয়ঙ্কর গণহত্যা চলছে, তা অবিশ্বাস্য। ঢাকায় ঠা-া মাথায় মানুষ খুন করা হচ্ছে। সেখানে তাদের সামরিক বাহিনী যে কাজ করছে, তা নিঃসন্দেহে গণহত্যা হিসেবে বিবেচিত। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের ভোটাররা যে ভোট দিয়েছেন, তা ফলাফলেই চাক্ষুষ প্রমাণ মিলে। আর এখন সামরিক জান্তা সরকার গণতান্ত্রিক রায়কে উপড়ে ফেলে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এটি কি আদৌ উপেক্ষা করা যায়? ব্রিটিশ সরকারের উচিৎ পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসন ও পূর্ব পাকিস্তানে পরিচালিত সামরিক জান্তা দ্বারা পরিচালিত গণহত্যা নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান প্রদর্শন করা। এই মুহূর্তে আমাদের চুপ করে বসে থাকা উচিৎ নয়।’

ভারতীয় সোশালিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এস এম যোশী এদিন এক বিবৃতিতে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিতে পারে, তার জন্য ভারত সরকারের উচিৎ অগ্রণী ভূমিকা পালন করা। যদি ভারতীয়রা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এগিয়ে আসে তবে দীর্ঘদিনের ভারতীয় মমত্ববোধ এবং দায়িত্বশীলতা প্রকাশ পাবে। একইসঙ্গে রক্ষা পাবে বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম এদিন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ভারত কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না। তবে ভারতের ওপর অন্য কোন দেশ আক্রমণ করলে বা যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে তবে ভারত বসে থাকবে না। এর কঠোর জবাব দিতে বাধ্য হবে।’

২৭ এপ্রিল কলকাতায় পাকিস্তানের নতুন ডেপুটি হাইকমিশনারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। ডেপুটি হাইকমিশনার পরে পুলিশি সাহায্যে কলকাতা শহর ছেড়ে পুলিশের এক মেসে সাময়িক আশ্রয় গ্রহণ করেন। যদিও আন্দোলনকারীরা খবর পেয়ে সেই বাড়ির সামনে গিয়েও পাকিস্তানি হানাদারদের গণহত্যা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

এদিন নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার ও মুক্তিবাহিনীর প্রতি ঐকমত্য, সংহতি ও সমর্থন প্রকাশ করে। তারা বলেন, নেপাল সরকারের উচিৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি এবং গণমানুষের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান করা। একইসঙ্গে নেপালের ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি সার্ভিসের ন্যাশনাল কমিটি বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদারদের দ্বারা সংগঠিত বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যা, নিপীড়নের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধ করতে আহ্বান জানায়। একইসঙ্গে তারা বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের উচিৎ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের রায় মেনে নেয়া এবং অবিলম্বে স্বাধীনতা প্রদান করা।

বুধবার, ২৭ এপ্রিল ২০২২ , ১৪ বৈশাখ ১৪২৮ ২৫ রমাদ্বান ১৪৪৩

২৭ এপ্রিল ১৯৭১

পাকিস্তান বাহিনীর হামলা, মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা হামলা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

একাত্তরের ২৭ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা চালায়। অন্যদিকে মুক্তিবাহিনী গড়ে তুলে তীব্র প্রতিরোধ। এদিনে নীলফামারীর জলঢাকার কালীগঞ্জে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মম গণহত্যা চালায়। জলঢাকা থানা থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ছোট বাজার কালীগঞ্জ। এদিন চারশ’ হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ ভারতে যাওয়ার উদ্দেশে সমবেত হয় কালীগঞ্জ বাজারে। এ সময় স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় খবর পেয়ে ৪টি কনভয় করে প্রায় ত্রিশ জনের মতো হানাদার বাহিনীর সৈন্য এসে কিছু বুঝে উঠার আগেই ব্রাশফায়ার করে নিরীহ মানুষদের ওপর। মুহূর্তেই শহীদ হন চারশ’র বেশি নিরীহ মানুষ। আহত যারা ছিলেন তাদের একটি গর্তে মাটিচাপা দিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদাররা।

এদিনে কুমিল্লার মিয়াবাজারে পাকিস্তানি হানাদার ও মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে প্রচ- সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে হানাদার বাহিনীর বহু সৈন্য নিহত হয়। এছাড়া খাগড়াছড়ির রামগড় দখলের জন্য চট্টগ্রামের হিকুয়ায় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে প্রচ- যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে উভয়পক্ষেরই বেশ কয়েকজন হতাহত হয়।

এদিনে পাকিস্তানি হানাদারেরা প্রচ- যুদ্ধের পর মুক্তিবাহিনীর কাছ থেকে নোয়াখালী, সান্তাহার ও মৌলভীবাজার দখল করে।

পাকিস্তানি হানাদারদের কমান্ডোরা মিজো গেরিলাদের নিয়ে ২৭ এপ্রিল মহালছড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায় এবং একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘিরে ফেলে। এ সময় ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের গোলাগুলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছুটে গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকেন, যেন অবশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুবেষ্টনী থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। গোলাগুলির একপর্যায়ে শত্রুর লাইট মেশিনগানের গুলিতে ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের শহীদ হন।

পাকিস্তানি হানাদাররা এদিন জনতার প্রতিরোধ ভেঙে কক্সবাজারের চকরিয়ায় প্রবেশ করে চিরিঙ্গার হিন্দুপাড়ায় ঢুকে গণহত্যা চালায়। এই গণহত্যায় বহু হিন্দু ধর্মাবলম্বী নিহত হন।

মৌলভীবাজারের বড়লেখার শাহবাজপুরে পাকিস্তানি হানাদারদের ওপর সফল আক্রমণ চালায় লেফটেন্যান্ট মোরশেদের নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনীর একটি দল। অতর্কিত এই আক্রমণে বেশ কয়েকজন হানাদার বাহিনীর সদস্য নিহত হয়। এরপর লেফটেন্যান্ট মোরশেদসহ মুক্তিবাহিনীর সেই দলটি মাধবপুরে ফিরে আসে।

এদিন বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি সীমান্ত দিয়েই অজস্র মানুষ ভারতে আশ্রয়ের জন্যে ভারতে প্রবেশ করে। এদিন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যে নতুন নতুন প্রচুর আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়।

এদিন পাকিস্তান সামরিক সরকার ঢাকায় পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ ১৪৮ নম্বর সামরিক বিধি জারি করে। পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান সামরিক প্রশাসক জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তান রাইফেল (ইপিআর) নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘পূর্ব পাকিস্তান বেসামরিক বাহিনী’ (ইপিসিএফ)।

পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ. রহিম খান ঢাকা আসেন। ঢাকায় তিনি সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে বিমান হামলা সম্পর্কে কৌশল নির্ধারণ করেন।

ঢাকায় সামরিক কর্তৃপক্ষ ১৪৮ নম্বর সামরিক বিধি জারি করে। এ আদেশের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সহায়তাকারীদের গণহারে শাস্তির নির্দেশ দেয়া হয়। এ আদেশে কোন কারণ ছাড়াই কেবল সন্দেহের ওপর ভিত্তি করে চরম শাস্তির দেয়ার অধিকার দেয়া হয় ঘাতকদের। এমনকি, যে এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা তৎপরতা চালাবে সে এলাকার লোকদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা লাভ করে দালালরা।

ব্রিটিশ এমপি জন স্টোনহাউস লন্ডনে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘পূর্ব বাংলায় যে মারাত্মক ও ভয়ঙ্কর গণহত্যা চলছে, তা অবিশ্বাস্য। ঢাকায় ঠা-া মাথায় মানুষ খুন করা হচ্ছে। সেখানে তাদের সামরিক বাহিনী যে কাজ করছে, তা নিঃসন্দেহে গণহত্যা হিসেবে বিবেচিত। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের ভোটাররা যে ভোট দিয়েছেন, তা ফলাফলেই চাক্ষুষ প্রমাণ মিলে। আর এখন সামরিক জান্তা সরকার গণতান্ত্রিক রায়কে উপড়ে ফেলে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এটি কি আদৌ উপেক্ষা করা যায়? ব্রিটিশ সরকারের উচিৎ পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসন ও পূর্ব পাকিস্তানে পরিচালিত সামরিক জান্তা দ্বারা পরিচালিত গণহত্যা নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান প্রদর্শন করা। এই মুহূর্তে আমাদের চুপ করে বসে থাকা উচিৎ নয়।’

ভারতীয় সোশালিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এস এম যোশী এদিন এক বিবৃতিতে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিতে পারে, তার জন্য ভারত সরকারের উচিৎ অগ্রণী ভূমিকা পালন করা। যদি ভারতীয়রা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এগিয়ে আসে তবে দীর্ঘদিনের ভারতীয় মমত্ববোধ এবং দায়িত্বশীলতা প্রকাশ পাবে। একইসঙ্গে রক্ষা পাবে বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম এদিন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ভারত কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না। তবে ভারতের ওপর অন্য কোন দেশ আক্রমণ করলে বা যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে তবে ভারত বসে থাকবে না। এর কঠোর জবাব দিতে বাধ্য হবে।’

২৭ এপ্রিল কলকাতায় পাকিস্তানের নতুন ডেপুটি হাইকমিশনারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। ডেপুটি হাইকমিশনার পরে পুলিশি সাহায্যে কলকাতা শহর ছেড়ে পুলিশের এক মেসে সাময়িক আশ্রয় গ্রহণ করেন। যদিও আন্দোলনকারীরা খবর পেয়ে সেই বাড়ির সামনে গিয়েও পাকিস্তানি হানাদারদের গণহত্যা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

এদিন নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার ও মুক্তিবাহিনীর প্রতি ঐকমত্য, সংহতি ও সমর্থন প্রকাশ করে। তারা বলেন, নেপাল সরকারের উচিৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি এবং গণমানুষের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান করা। একইসঙ্গে নেপালের ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি সার্ভিসের ন্যাশনাল কমিটি বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদারদের দ্বারা সংগঠিত বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যা, নিপীড়নের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধ করতে আহ্বান জানায়। একইসঙ্গে তারা বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের উচিৎ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের রায় মেনে নেয়া এবং অবিলম্বে স্বাধীনতা প্রদান করা।