ভোলার গ্যাস পাইপ লাইনে ফেনীতে আনা হচ্ছে

দ্বীপজেলা ভোলায় আবিষ্কৃত গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে মূল ভূখ-ে আনার চিন্তা করছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। চলমান গ্যাস সংকট মোকাবিলায় দেশীয় গ্যাসের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে এ বিষয়ে শীঘ্রই উদ্যোগ নেয়া হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এ বিষয়ে গত সোমবার সংবাদকে বলেন, ‘ভোলায় যে গ্যাস পাওয়া গেছে, তা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে। আমাদের তো দেখতে হবে, কীভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের বেস্ট ইউটিলাইজেশন (সর্বোত্তম ব্যবহার) করা যায়। পাইপলাইনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস থেকে ফেনী পর্যন্ত আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক নির্দেশনায় বলা হয়, ভোলায় বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া অন্য কোথাও গ্যাস সরবরাহের দরকার নেই। এছাড়া ভোলায় যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে, সেগুলো যেন দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক হয়। ভোলা থেকে বরিশাল পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই করার কথাও বলা হয়েছিল নির্দেশনায়।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জ্বালানি বিভাগ দুই ধরনের ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছে। যার মধ্যে একটি হলোÑ এলএনজিতে (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) রূপান্তরিত করে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা, অন্যটি হলো নদীর তলদেশ দিয়ে পাইপলাইন নির্মাণ করে গ্যাস গ্রিডে আনা। তবে এলএনজিতে রূপান্তরের চেয়ে পাইপলাইন নির্মাণের উদ্যোগই এখন প্রাধান্য পাচ্ছে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সংর্শ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখা গেছে, গ্যাসকে এলএনজিতে রূপান্তর করে আনা বেশ ব্যয়বহুল। এরচেয়ে পাইপলাইন নির্মাণ করা হলে তা টেকসই এবং দীর্ঘমেয়াদে সাশ্রয়ী হবে।

ভোলায় গ্যাসের মজুদ আবিষ্কার হয় ১৯৯৫ সালে। তবে উত্তোলিত গ্যাস এখনো জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা যায়নি। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, ভোলার ‘শাহবাজপুর’ গ্যাসক্ষেত্র ও ‘ভোলা নর্থ’ গ্যাসক্ষেত্র দুটিতে মোট দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস মজুদ রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে এই বিপুল পরিমাণ মজুদের সর্বোত্তম ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

ভূতত্ত্ববিদেরা মনে করেন, কেবল ভোলা দ্বীপের মূল ভূখ-ই নয় বরং এর পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলো ও সাগরের অংশজুড়ে একটি গ্যাসবলয় থাকার সম্ভাবনা অত্যন্ত জোরালো।

সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব এবং সিদ্ধান্তহীনতার কারণে ভোলার গ্যাসের মজুদ কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে, ভোলার গ্যাস কাজে লাগানো সম্ভব হলে দেশে চলমান জ্বালানি সংকট অনেকটাই প্রশমন করা সম্ভব হতো।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ বলছে, ইতোমধ্যে ভোলা থেকে নিকটবর্তী জেলাগুলোয় পাইপলাইন নির্মাণের জন্য সমুদ্র বা নদী ক্রসিং কার্যক্রম সংক্রান্ত কারিগরি ও আর্থিক ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়েছে। গত বছরের ১৯ অক্টোবর বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ভোলার গ্যাস মূল ভূখ-ে আনতে এলএনজি বা পাইপলাইন নির্মাণসংক্রান্ত পর্যালোচনা করা হয়।

সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, সরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএস, আইআইএফসির মাধ্যমে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইএলএফ কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ারিং জার্মানিকে নিয়োগ করে শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ড থেকে ভোলা নর্থ গ্যাসফিল্ড হয়ে ফেনী আইসিএস পর্যন্ত গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণের লক্ষ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি করার।

বুধবার, ২৭ এপ্রিল ২০২২ , ১৪ বৈশাখ ১৪২৮ ২৫ রমাদ্বান ১৪৪৩

ভোলার গ্যাস পাইপ লাইনে ফেনীতে আনা হচ্ছে

ফয়েজ আহমেদ তুষার

দ্বীপজেলা ভোলায় আবিষ্কৃত গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে মূল ভূখ-ে আনার চিন্তা করছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। চলমান গ্যাস সংকট মোকাবিলায় দেশীয় গ্যাসের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে এ বিষয়ে শীঘ্রই উদ্যোগ নেয়া হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এ বিষয়ে গত সোমবার সংবাদকে বলেন, ‘ভোলায় যে গ্যাস পাওয়া গেছে, তা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে। আমাদের তো দেখতে হবে, কীভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের বেস্ট ইউটিলাইজেশন (সর্বোত্তম ব্যবহার) করা যায়। পাইপলাইনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস থেকে ফেনী পর্যন্ত আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক নির্দেশনায় বলা হয়, ভোলায় বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া অন্য কোথাও গ্যাস সরবরাহের দরকার নেই। এছাড়া ভোলায় যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে, সেগুলো যেন দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক হয়। ভোলা থেকে বরিশাল পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই করার কথাও বলা হয়েছিল নির্দেশনায়।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জ্বালানি বিভাগ দুই ধরনের ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছে। যার মধ্যে একটি হলোÑ এলএনজিতে (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) রূপান্তরিত করে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা, অন্যটি হলো নদীর তলদেশ দিয়ে পাইপলাইন নির্মাণ করে গ্যাস গ্রিডে আনা। তবে এলএনজিতে রূপান্তরের চেয়ে পাইপলাইন নির্মাণের উদ্যোগই এখন প্রাধান্য পাচ্ছে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সংর্শ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখা গেছে, গ্যাসকে এলএনজিতে রূপান্তর করে আনা বেশ ব্যয়বহুল। এরচেয়ে পাইপলাইন নির্মাণ করা হলে তা টেকসই এবং দীর্ঘমেয়াদে সাশ্রয়ী হবে।

ভোলায় গ্যাসের মজুদ আবিষ্কার হয় ১৯৯৫ সালে। তবে উত্তোলিত গ্যাস এখনো জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা যায়নি। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, ভোলার ‘শাহবাজপুর’ গ্যাসক্ষেত্র ও ‘ভোলা নর্থ’ গ্যাসক্ষেত্র দুটিতে মোট দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস মজুদ রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে এই বিপুল পরিমাণ মজুদের সর্বোত্তম ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

ভূতত্ত্ববিদেরা মনে করেন, কেবল ভোলা দ্বীপের মূল ভূখ-ই নয় বরং এর পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলো ও সাগরের অংশজুড়ে একটি গ্যাসবলয় থাকার সম্ভাবনা অত্যন্ত জোরালো।

সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব এবং সিদ্ধান্তহীনতার কারণে ভোলার গ্যাসের মজুদ কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে, ভোলার গ্যাস কাজে লাগানো সম্ভব হলে দেশে চলমান জ্বালানি সংকট অনেকটাই প্রশমন করা সম্ভব হতো।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ বলছে, ইতোমধ্যে ভোলা থেকে নিকটবর্তী জেলাগুলোয় পাইপলাইন নির্মাণের জন্য সমুদ্র বা নদী ক্রসিং কার্যক্রম সংক্রান্ত কারিগরি ও আর্থিক ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়েছে। গত বছরের ১৯ অক্টোবর বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ভোলার গ্যাস মূল ভূখ-ে আনতে এলএনজি বা পাইপলাইন নির্মাণসংক্রান্ত পর্যালোচনা করা হয়।

সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, সরকারি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএস, আইআইএফসির মাধ্যমে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইএলএফ কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ারিং জার্মানিকে নিয়োগ করে শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ড থেকে ভোলা নর্থ গ্যাসফিল্ড হয়ে ফেনী আইসিএস পর্যন্ত গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণের লক্ষ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি করার।