জাল টাকার ব্যবসায়ী পুলিশ কর্মকর্তা আল আমিনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক শাখায় কর্মরত এএসআই মো. আল আমিনের বিরুদ্ধে জাল টাকার ব্যবসার মূল হোতা হিসেবে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে অবশেষে দীর্ঘ ৯ মাস পর তাকে প্রধান আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল আলীম মাহমুদ নিজেই বিষয়টি স্বীকার করে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত রোববার আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

তবে দীর্ঘ ৯ মাসেও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তিনি চাকরিতে বহাল তবিয়তে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, ওই এএসআই আল আমিনকে মামলা থেকে বাঁচাতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এক থানার ওসি এমন চেষ্টা নেই যা করেননি। তাদের কারণেই দীর্ঘ ৯ মাসেও তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিেেশর ট্রাফিক শাখায় কর্মরত এএসআই আল আমিন দীর্ঘদিন ধরে জাল টাকার ব্যবসা করে আসছিলেন। এর মধ্যে তার সঙ্গে পরিচয় হয় পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে নগরীর পশ্চিম মুলাটোল মহল্লার বাসিন্দা সোহান ও তার বন্ধু নিউ ইঞ্জিনিয়ারপাড়ার ব্যবসায়ী হাজী রবিউল ইসলামের ছেলে জিসানের সঙ্গে। চলতি বছরের ৫ জুলাই ওই পুলিশ কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে দুই বন্ধু সোহান ও জিসানকে নগরীর সোডাপির এলাকায় একটি হোটেলে ডেকে পাঠান।

এরপর আলোচনার এক পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তা আল আমিন তার পকেট থেকে দুটি ৫০০ টাকার বান্ডেল বের করে তাদের জানান, তার কাছে জাল টাকা আছে, এসব টাকা চালাতে পারলে অর্ধেক তাদের দেয়া হবে। এতে দুই বন্ধু সম্মত না হলে এক পর্যায়ে অনেকটা জোর করেই তাদের হাতে ৫টি ৫০০ টাকার জাল নোট দিয়ে বলেন প্রাথমিকভাবে এগুলো চালাও। বাধ্য হয়ে তারা ৫টি জাল নোট নিয়ে ব্যবসায়িক উদ্দেশে মিঠাপুকুরে যায়।

সেখান থেকেম মোটরসাইকেলে ফেরার পথে নগরীর প্রবেশদ্বার দমদমা ব্রিজের কাছে পুলিশের চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহন ও মোটরসাইকেল আটকিয়ে তল্লাশি চালানোকালে তাদের কাছে ৫টি ৫০০ টাকার জাল নোট উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর দুই বন্ধুকে পুলিশ আটক করে তাজহাট থানায় নিয়ে আসে। সেখানে পুলিশ জাল টাকা কোথায় পেয়েছে জানতে চাইলে তারা ট্রাফিক বিভাগের এএসআই আল আমিনের কথা বলে এবং তিনিই অনেকটা জোর করে তাদের দিয়েছেন বলে জানান।

শুধু তাই নয়, মোবাইল ফোনে পুলিশ কর্মকর্তা জাল টাকা ব্যবসায়ী আল আমিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলিয়ে দেন তারা এ সময় পুলিশ কর্মকর্তা ফোনে টাকা তিনি দিয়েছেন বলে জানান, পুরো বক্তব্য মোবাইল ফোনে লাউড স্পিকারে শোনান তাজহাট থানা পুলিশকে।

পুরো বিষয়টি তাজহাট থানা পুলিশ জানার পরও পুলিশ কর্মকর্তা আল আমিনকে বাঁচাতে তাজহাট থানার এসআই আশাদুল ইসলামকে বাদী করে একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করে। যার নম্বর তাজহাট থানা মামলা নম্বর-২, তারিখ ৫/৭/২১ইং। ধারা বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ক(খ) ধারা। মামলায় দুই বন্ধু সোহান ও জিসানের নাম উল্লেখ করা হলেও তাজহাট থানা পুলিশ কৌশল করে মামলার এজাহারে আল আমিনের মাধ্যমে জাল টাকা প্রাপ্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করলেও তার পরিচয় উল্লেখ করেনি পুলিশ। এরপর তাজহাট থানা পুলিশ দুই বন্ধুকে অমানসিক নির্যাতন করে এবং জাল টাকার বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি তারা যেভাবে বলবে সেভাবে দিতে হবে অন্যথায় আবারও রিমান্ডে এনে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।

পরদিন দুই বন্ধুকে আদালতে হাজির করা হলে তারা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দিতে তারা এএসআই আল আমিনে কিভাবে তাদের ডেকে এনে জাল টাকা দিয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ জবানবন্দিতে প্রদান করে।

বুধবার, ২৭ এপ্রিল ২০২২ , ১৪ বৈশাখ ১৪২৮ ২৫ রমাদ্বান ১৪৪৩

জাল টাকার ব্যবসায়ী পুলিশ কর্মকর্তা আল আমিনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক শাখায় কর্মরত এএসআই মো. আল আমিনের বিরুদ্ধে জাল টাকার ব্যবসার মূল হোতা হিসেবে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে অবশেষে দীর্ঘ ৯ মাস পর তাকে প্রধান আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল আলীম মাহমুদ নিজেই বিষয়টি স্বীকার করে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত রোববার আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

তবে দীর্ঘ ৯ মাসেও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তিনি চাকরিতে বহাল তবিয়তে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, ওই এএসআই আল আমিনকে মামলা থেকে বাঁচাতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এক থানার ওসি এমন চেষ্টা নেই যা করেননি। তাদের কারণেই দীর্ঘ ৯ মাসেও তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিেেশর ট্রাফিক শাখায় কর্মরত এএসআই আল আমিন দীর্ঘদিন ধরে জাল টাকার ব্যবসা করে আসছিলেন। এর মধ্যে তার সঙ্গে পরিচয় হয় পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে নগরীর পশ্চিম মুলাটোল মহল্লার বাসিন্দা সোহান ও তার বন্ধু নিউ ইঞ্জিনিয়ারপাড়ার ব্যবসায়ী হাজী রবিউল ইসলামের ছেলে জিসানের সঙ্গে। চলতি বছরের ৫ জুলাই ওই পুলিশ কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে দুই বন্ধু সোহান ও জিসানকে নগরীর সোডাপির এলাকায় একটি হোটেলে ডেকে পাঠান।

এরপর আলোচনার এক পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তা আল আমিন তার পকেট থেকে দুটি ৫০০ টাকার বান্ডেল বের করে তাদের জানান, তার কাছে জাল টাকা আছে, এসব টাকা চালাতে পারলে অর্ধেক তাদের দেয়া হবে। এতে দুই বন্ধু সম্মত না হলে এক পর্যায়ে অনেকটা জোর করেই তাদের হাতে ৫টি ৫০০ টাকার জাল নোট দিয়ে বলেন প্রাথমিকভাবে এগুলো চালাও। বাধ্য হয়ে তারা ৫টি জাল নোট নিয়ে ব্যবসায়িক উদ্দেশে মিঠাপুকুরে যায়।

সেখান থেকেম মোটরসাইকেলে ফেরার পথে নগরীর প্রবেশদ্বার দমদমা ব্রিজের কাছে পুলিশের চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহন ও মোটরসাইকেল আটকিয়ে তল্লাশি চালানোকালে তাদের কাছে ৫টি ৫০০ টাকার জাল নোট উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর দুই বন্ধুকে পুলিশ আটক করে তাজহাট থানায় নিয়ে আসে। সেখানে পুলিশ জাল টাকা কোথায় পেয়েছে জানতে চাইলে তারা ট্রাফিক বিভাগের এএসআই আল আমিনের কথা বলে এবং তিনিই অনেকটা জোর করে তাদের দিয়েছেন বলে জানান।

শুধু তাই নয়, মোবাইল ফোনে পুলিশ কর্মকর্তা জাল টাকা ব্যবসায়ী আল আমিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলিয়ে দেন তারা এ সময় পুলিশ কর্মকর্তা ফোনে টাকা তিনি দিয়েছেন বলে জানান, পুরো বক্তব্য মোবাইল ফোনে লাউড স্পিকারে শোনান তাজহাট থানা পুলিশকে।

পুরো বিষয়টি তাজহাট থানা পুলিশ জানার পরও পুলিশ কর্মকর্তা আল আমিনকে বাঁচাতে তাজহাট থানার এসআই আশাদুল ইসলামকে বাদী করে একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করে। যার নম্বর তাজহাট থানা মামলা নম্বর-২, তারিখ ৫/৭/২১ইং। ধারা বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ক(খ) ধারা। মামলায় দুই বন্ধু সোহান ও জিসানের নাম উল্লেখ করা হলেও তাজহাট থানা পুলিশ কৌশল করে মামলার এজাহারে আল আমিনের মাধ্যমে জাল টাকা প্রাপ্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করলেও তার পরিচয় উল্লেখ করেনি পুলিশ। এরপর তাজহাট থানা পুলিশ দুই বন্ধুকে অমানসিক নির্যাতন করে এবং জাল টাকার বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি তারা যেভাবে বলবে সেভাবে দিতে হবে অন্যথায় আবারও রিমান্ডে এনে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।

পরদিন দুই বন্ধুকে আদালতে হাজির করা হলে তারা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দিতে তারা এএসআই আল আমিনে কিভাবে তাদের ডেকে এনে জাল টাকা দিয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ জবানবন্দিতে প্রদান করে।