বালুখেকো সেলিম চেয়ারম্যানের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

যুবলীগ ঢাকা মহানগরের দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী স¤্রাটের অন্যতম সহযোগী ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রক ও চাঁদপুরের বালুখেকো সেলিম চেয়ারম্যানকে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস সেলিম খানের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। গতকাল আদালত এ আদেশ দেন। এর ফলে সেলিম খান ৬০ দিনের জন্য (২ মাস) বিদেশ যাত্রা করতে পারবেন না।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, দুর্নীতির একটি মামলার অনুসন্ধান চলমান থাকায় অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান আদালতে সেলিম খানের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ চেয়ে আবেদন করেন। আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) শাখায় চিঠি দেয়া হয়েছে।

সেলিম খান চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও শাপলা মিডিয়া প্রযোজনা সংস্থার মালিক। যুবলীগ ঢাকা মহনাগর দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ইসলাম চৌধুরী স¤্রাটের হাত ধরে উত্থান সেলিম খানের। পুরান ঢাকার ফরাসগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি হওয়ার সুবাধে সেখানে অবৈধ ক্যাসিনো খেলা নিয়ন্ত্রণ করতেন সেলিম খান। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর দুদক যাদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছিল তার মধ্যে সেলিম খানও একজন। অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হলে সেলিম খানের নানা অপকর্মের কাহিনী এবং অবৈধ সম্পদের নানা তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে।

দুদক জানিয়েছে, অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সেলিম খান ও তার স্ত্রী শাহানারা বেগমের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিয়েছিল দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে সেলিম খানের আয়কর বিবরণীসহ বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই শেষে তার পারিবারিক ব্যয়ের হিসাব পাওয়া যায় ৩৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ টাকা। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাপ্ত বেতন-ভাতা ও ঋণসহ তার মোট আয় পাওয়া যায় ৬১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। তবে দুদকে তথ্য রয়েছে যে, সেলিম খানের মোট যে সম্পদ রয়েছে তার মূল্য ২০ কোটি ৬৯ লাখ ৮০ হাজার ৫৮৫ টাকা। কিন্তু এ সম্পদের বৈধ কোন উৎস ও রেকর্ডপত্র নেই।

দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া সেলিম খানের স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে, চাঁদপুর সদর উপজেলায় ৪.২১ একর কৃষি ও অকৃষি জমি, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ১০তলা বাড়ি, ঢাকার কাকরাইলে ৪তলা একটি বাড়ি ও কাকরাইলে একটি ফ্ল্যাট। এসব সম্পদের আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৪৫ লাখ ৬৪ হাজার ১৪০ টাকা। তার দুটি জিপ গাড়ি, চারটি ড্রেজার, একটি শটগান, স্বর্ণালঙ্কার ও আসবাবপত্র রয়েছে, যার মূল্য ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া ব্যবসায়িক মূলধন হিসাবে ২ কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ২৪৫ টাকাসহ তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ধরা হয়েছে মোট ৫ কোটি ৫০ লাখ ৯৮ হাজার ৮৪৫ টাকা।

এছাড়া তিনি ‘শাহেনশাহ’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণে ১ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ‘প্রেম চোর’ নামে আরেকটি চলচ্চিত্র নির্মাণে ২ কোটি ৭ লাখ টাকাসহ ৬ থেকে ৭টি সিনেমা নির্মাণে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন বলে বিভিন্ন নথিপত্রে উঠে এসেছে। এরও কোন বৈধ উৎস এখনও পাননি দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

বুধবার, ২৭ এপ্রিল ২০২২ , ১৪ বৈশাখ ১৪২৮ ২৫ রমাদ্বান ১৪৪৩

বালুখেকো সেলিম চেয়ারম্যানের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

যুবলীগ ঢাকা মহানগরের দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী স¤্রাটের অন্যতম সহযোগী ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রক ও চাঁদপুরের বালুখেকো সেলিম চেয়ারম্যানকে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস সেলিম খানের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। গতকাল আদালত এ আদেশ দেন। এর ফলে সেলিম খান ৬০ দিনের জন্য (২ মাস) বিদেশ যাত্রা করতে পারবেন না।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, দুর্নীতির একটি মামলার অনুসন্ধান চলমান থাকায় অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান আদালতে সেলিম খানের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ চেয়ে আবেদন করেন। আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) শাখায় চিঠি দেয়া হয়েছে।

সেলিম খান চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও শাপলা মিডিয়া প্রযোজনা সংস্থার মালিক। যুবলীগ ঢাকা মহনাগর দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ইসলাম চৌধুরী স¤্রাটের হাত ধরে উত্থান সেলিম খানের। পুরান ঢাকার ফরাসগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি হওয়ার সুবাধে সেখানে অবৈধ ক্যাসিনো খেলা নিয়ন্ত্রণ করতেন সেলিম খান। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর দুদক যাদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছিল তার মধ্যে সেলিম খানও একজন। অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হলে সেলিম খানের নানা অপকর্মের কাহিনী এবং অবৈধ সম্পদের নানা তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে।

দুদক জানিয়েছে, অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সেলিম খান ও তার স্ত্রী শাহানারা বেগমের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিয়েছিল দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে সেলিম খানের আয়কর বিবরণীসহ বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই শেষে তার পারিবারিক ব্যয়ের হিসাব পাওয়া যায় ৩৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ টাকা। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাপ্ত বেতন-ভাতা ও ঋণসহ তার মোট আয় পাওয়া যায় ৬১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। তবে দুদকে তথ্য রয়েছে যে, সেলিম খানের মোট যে সম্পদ রয়েছে তার মূল্য ২০ কোটি ৬৯ লাখ ৮০ হাজার ৫৮৫ টাকা। কিন্তু এ সম্পদের বৈধ কোন উৎস ও রেকর্ডপত্র নেই।

দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া সেলিম খানের স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে, চাঁদপুর সদর উপজেলায় ৪.২১ একর কৃষি ও অকৃষি জমি, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ১০তলা বাড়ি, ঢাকার কাকরাইলে ৪তলা একটি বাড়ি ও কাকরাইলে একটি ফ্ল্যাট। এসব সম্পদের আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৪৫ লাখ ৬৪ হাজার ১৪০ টাকা। তার দুটি জিপ গাড়ি, চারটি ড্রেজার, একটি শটগান, স্বর্ণালঙ্কার ও আসবাবপত্র রয়েছে, যার মূল্য ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া ব্যবসায়িক মূলধন হিসাবে ২ কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ২৪৫ টাকাসহ তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ধরা হয়েছে মোট ৫ কোটি ৫০ লাখ ৯৮ হাজার ৮৪৫ টাকা।

এছাড়া তিনি ‘শাহেনশাহ’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণে ১ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ‘প্রেম চোর’ নামে আরেকটি চলচ্চিত্র নির্মাণে ২ কোটি ৭ লাখ টাকাসহ ৬ থেকে ৭টি সিনেমা নির্মাণে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন বলে বিভিন্ন নথিপত্রে উঠে এসেছে। এরও কোন বৈধ উৎস এখনও পাননি দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা।