আমদানি-পরবর্তী অর্থায়নে নীতিমালার শর্ত শিথিল করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

এখন থেকে আমদানি পরবর্তী অর্থায়নে জামানত নেয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিল্পের কাঁচামাল এবং কৃষি খাতের আমদানি পণ্যের ঋণের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ঋণের মেয়াদ বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্ষেত্রবিশেষে ঋণের মেয়াদ একবার বাড়ানো যাবে। এর বেশি বাড়ানো যাবে না। জাহাজ সংকটসহ পণ্য সরবরাহ চেইন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন নীতিমালার শর্ত শিথিল করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত মঙ্গলবার এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশের কৃষি খাতসহ অন্য জরুরি খাতে টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিকে সুসংহত করার জন্য দেশের আমদানি কার্যক্রমকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল রাখতে আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন নীতিমালায় সংশোধন আনা হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের আওতায় দেয়া ঋণ যে আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন হিসেবে বিবেচিত হবে না তা নতুন প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট করা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের জুনে এ-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, আমদানি নিরুৎসাহিত করতে আমদানি-পরবর্তী অর্থায়নের এই নীতিমালা কঠোর করা হয়েছে। আমদানি করার পর অনেকে ঋণ শোধ করেন না। ফলে ব্যাংককে বিভিন্ন ধরনের ঋণ দিয়ে ওই দেনা শোধ করতে হয়। এর মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বাণিজ্যিক পণ্য, শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন খাতে আমদানির অর্থ পরিশোধের জন্য সব ধরনের ফান্ডেড ঋণ সুবিধার মধ্যে লোন অ্যাগেইনস্ট ট্রাস্ট রিসিপ্টসহ (এলটিআর) বিভিন্ন ঋণ দেয়া হয়। এসব ঋণ আমদানি-পরবর্তী অর্থায়ন নামে পরিচিত হবে। এসব ঋণ নেয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। পরিশোধ না করলে ক্ষেত্রবিশেষে এক দফা মেয়াদ বাড়ানো যাবে। এরপর আর বাড়ানো যাবে না। খেলাপি হয়ে যাবে।

আগে এসব ঋণের কোন নীতিমালা ছিল না। ঋণের সুনির্দিষ্ট কোন মেয়াদও ছিল না। ফলে আমদানি-পরবর্তী সময়ে ঋণ নিয়ে সেগুলো পরিশোধ না করে মেয়াদি ঋণে রূপান্তর করা হতো।

বিশেষ অনেক এলসিটিআর মেয়াদি ঋণে রূপান্তর করা হয়েছে। ঋণের মেয়াদ বিষয়ে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য তথা- চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, মসলা, ভোজ্যতেলে আগের মতোই সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য অর্থায়ন করা যাবে। অন্য ট্রেডিং পণ্যে এখন থেকে মেয়াদ হবে ১২০ দিন।

আর সার, বীজ, কীটনাশক ও কৃষি যন্ত্রপাতি এবং প্রাণিজ খাতের আমদানি পণ্য যেমন- মৎস্যসহ গৃহপালিত পশুপাখির প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপকরণ, ভ্যাকসিন, ওষুধের ক্ষেত্রে ১৮০ দিন মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে এগুলোর মেয়াদ নির্ধারণ করা ছিল না। এছাড়া শিল্পের কাঁচামালের ক্ষেত্রে আগের সর্বোচ্চ ১৮০ দিন থেকে বাড়িয়ে ২১০ দিনের জন্য ঋণ দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অন্য ট্রেডিংয়ে আগের মতোই ৩০ দিন বাড়ানো যাবে। শিল্পের কাঁচামালে বাড়ানো যাবে আগের মতোই ৬০ দিন। আর কৃষি খাতের পণ্যের ক্ষেত্রেও ৬০ দিন মেয়াদ বাড়ানো যাবে। অন্যদিকে স্থানীয় ঋণপত্রের বিপরীতে আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন সুবিধা দেয়া যাবে না।

কোন গ্রাহককে একই এলসির বিপরীতে পণ্য আমদানিতে একাধিকবার এই ধরনের ঋণ সুবিধা দেয়া যাবে না। তবে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কোন কারণে ঋণ বকেয়া হয়ে পড়লে খেলাপি হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই গ্রাহকের নামে নতুন ঋণ দিতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিতে হবে। এছাড়া ঋণ দেয়া যাবে না।

বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২ , ১৫ বৈশাখ ১৪২৮ ২৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

আমদানি-পরবর্তী অর্থায়নে নীতিমালার শর্ত শিথিল করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

এখন থেকে আমদানি পরবর্তী অর্থায়নে জামানত নেয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিল্পের কাঁচামাল এবং কৃষি খাতের আমদানি পণ্যের ঋণের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ঋণের মেয়াদ বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্ষেত্রবিশেষে ঋণের মেয়াদ একবার বাড়ানো যাবে। এর বেশি বাড়ানো যাবে না। জাহাজ সংকটসহ পণ্য সরবরাহ চেইন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন নীতিমালার শর্ত শিথিল করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত মঙ্গলবার এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশের কৃষি খাতসহ অন্য জরুরি খাতে টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিকে সুসংহত করার জন্য দেশের আমদানি কার্যক্রমকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল রাখতে আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন নীতিমালায় সংশোধন আনা হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের আওতায় দেয়া ঋণ যে আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন হিসেবে বিবেচিত হবে না তা নতুন প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট করা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের জুনে এ-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, আমদানি নিরুৎসাহিত করতে আমদানি-পরবর্তী অর্থায়নের এই নীতিমালা কঠোর করা হয়েছে। আমদানি করার পর অনেকে ঋণ শোধ করেন না। ফলে ব্যাংককে বিভিন্ন ধরনের ঋণ দিয়ে ওই দেনা শোধ করতে হয়। এর মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বাণিজ্যিক পণ্য, শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন খাতে আমদানির অর্থ পরিশোধের জন্য সব ধরনের ফান্ডেড ঋণ সুবিধার মধ্যে লোন অ্যাগেইনস্ট ট্রাস্ট রিসিপ্টসহ (এলটিআর) বিভিন্ন ঋণ দেয়া হয়। এসব ঋণ আমদানি-পরবর্তী অর্থায়ন নামে পরিচিত হবে। এসব ঋণ নেয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। পরিশোধ না করলে ক্ষেত্রবিশেষে এক দফা মেয়াদ বাড়ানো যাবে। এরপর আর বাড়ানো যাবে না। খেলাপি হয়ে যাবে।

আগে এসব ঋণের কোন নীতিমালা ছিল না। ঋণের সুনির্দিষ্ট কোন মেয়াদও ছিল না। ফলে আমদানি-পরবর্তী সময়ে ঋণ নিয়ে সেগুলো পরিশোধ না করে মেয়াদি ঋণে রূপান্তর করা হতো।

বিশেষ অনেক এলসিটিআর মেয়াদি ঋণে রূপান্তর করা হয়েছে। ঋণের মেয়াদ বিষয়ে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য তথা- চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, মসলা, ভোজ্যতেলে আগের মতোই সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য অর্থায়ন করা যাবে। অন্য ট্রেডিং পণ্যে এখন থেকে মেয়াদ হবে ১২০ দিন।

আর সার, বীজ, কীটনাশক ও কৃষি যন্ত্রপাতি এবং প্রাণিজ খাতের আমদানি পণ্য যেমন- মৎস্যসহ গৃহপালিত পশুপাখির প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপকরণ, ভ্যাকসিন, ওষুধের ক্ষেত্রে ১৮০ দিন মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে এগুলোর মেয়াদ নির্ধারণ করা ছিল না। এছাড়া শিল্পের কাঁচামালের ক্ষেত্রে আগের সর্বোচ্চ ১৮০ দিন থেকে বাড়িয়ে ২১০ দিনের জন্য ঋণ দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অন্য ট্রেডিংয়ে আগের মতোই ৩০ দিন বাড়ানো যাবে। শিল্পের কাঁচামালে বাড়ানো যাবে আগের মতোই ৬০ দিন। আর কৃষি খাতের পণ্যের ক্ষেত্রেও ৬০ দিন মেয়াদ বাড়ানো যাবে। অন্যদিকে স্থানীয় ঋণপত্রের বিপরীতে আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন সুবিধা দেয়া যাবে না।

কোন গ্রাহককে একই এলসির বিপরীতে পণ্য আমদানিতে একাধিকবার এই ধরনের ঋণ সুবিধা দেয়া যাবে না। তবে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কোন কারণে ঋণ বকেয়া হয়ে পড়লে খেলাপি হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই গ্রাহকের নামে নতুন ঋণ দিতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিতে হবে। এছাড়া ঋণ দেয়া যাবে না।