র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাতজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা এড়ানোর সুযোগ ছিল বলে মনে করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির কারণে এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে বলে ধারণা করছেন পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ একাধিক কর্মকর্তা।
গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৭তম বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
কমিটির সভাপতি লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে. আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও মো. হাবিবে মিল্লাত বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। পররাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশকিছু উন্নয়ন সহযোগী দেশের আইন প্রণেতারা বাংলাদেশের কাছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছিল, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য না পাওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যথাসময়ে চিঠির জবাব দেয়া সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিডন্যাপ ‘এনফোর্স ডিসঅ্যাপারেন্স’ বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি বিষয় নিরবচ্ছিন্নভাবে মনিটর করার জন্য পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর ফলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে বলে মনে করেন মন্ত্রী।
ড. মোমেন বলেন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো লবিস্ট হিসেবে কাজ করে কিন্তু দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সেই দেশের আইন প্রণেতাদের সম্পর্কটা তেমন ঘনিষ্ট না হওয়ার কারণে অর্থের বিনিময়ে নিয়োজিত লবিস্ট ফার্মগুলো বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। পক্ষান্তরে সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার প্রশ্ন রয়েছে বিধায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে বর্তমান পেক্ষাপটে বিদেশে অবস্থিত স্বাধীনতার স্বপক্ষের প্রবাসী বাঙালিদের কাজে লাগানোর পাশাপাশি লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ইতিপূর্বে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কিছুটা অনীহা থাকলেও বর্তমানে এটা অনেকাংশে কেটে গেছে। আমেরিকা স্যাংশন আরোপ করার পর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তার অধীনস্থ দপ্তরগুলোর প্রধানদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করা হচ্ছে। র্যাবের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলার সুযোগ রয়েছে বিধায় সেখানকার চারটি ল’ ফার্মের সঙ্গে আলোচনা চলছে। খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যেসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েছে সে ব্যাপারে তথ্য চেয়ে বাংলাদেশের পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা তথ্য দিতে সম্মতিপত্র দিয়েছে বলে তিনি জানান।
র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি কিছুটা সময়সাপেক্ষ হবে বলে মনে করেন শাহরিয়ার আলম। তবে যথাসময়ে তথ্যগুলো পেলে এবং সেগুলো সংশ্লিষ্ট দেশ, সংস্থাগুলোর কাছে উপস্থাপন করতে পারলে বাংলাদেশকে এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতো না বলে তিনি মনে করেন।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের অভ্যন্তরে সরকারবিরোধী ও স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তিগুলো ক্রমাগতভাবে প্রচুর অর্থ ব্যয়ে লবিস্ট নিয়োগ করে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার মতো দেশের গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অসত্য তথ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছেন। এ ধরনের অপপ্রচার মোকাবিলায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিদেশে অবস্থিত মিশনগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কমিটির সভাপতি লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান (অব.) বলেন, ‘র্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যে অভিযোগগুলো রয়েছে, সে বিষয়ে ফ্যাক্ট অ্যান্ড ফিগার দিয়ে ক্লারিফাই করতে হবে। জানাতে হবে এর কোনটাই ইচ্ছাকৃতভাবে হচ্ছে না।’ বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বৈঠকে সুইডেনে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।
বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২ , ১৫ বৈশাখ ১৪২৮ ২৬ রমাদ্বান ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাতজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা এড়ানোর সুযোগ ছিল বলে মনে করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির কারণে এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে বলে ধারণা করছেন পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ একাধিক কর্মকর্তা।
গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৭তম বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
কমিটির সভাপতি লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে. আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও মো. হাবিবে মিল্লাত বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। পররাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশকিছু উন্নয়ন সহযোগী দেশের আইন প্রণেতারা বাংলাদেশের কাছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছিল, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য না পাওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যথাসময়ে চিঠির জবাব দেয়া সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিডন্যাপ ‘এনফোর্স ডিসঅ্যাপারেন্স’ বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি বিষয় নিরবচ্ছিন্নভাবে মনিটর করার জন্য পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর ফলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে বলে মনে করেন মন্ত্রী।
ড. মোমেন বলেন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো লবিস্ট হিসেবে কাজ করে কিন্তু দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সেই দেশের আইন প্রণেতাদের সম্পর্কটা তেমন ঘনিষ্ট না হওয়ার কারণে অর্থের বিনিময়ে নিয়োজিত লবিস্ট ফার্মগুলো বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। পক্ষান্তরে সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার প্রশ্ন রয়েছে বিধায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে বর্তমান পেক্ষাপটে বিদেশে অবস্থিত স্বাধীনতার স্বপক্ষের প্রবাসী বাঙালিদের কাজে লাগানোর পাশাপাশি লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ইতিপূর্বে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কিছুটা অনীহা থাকলেও বর্তমানে এটা অনেকাংশে কেটে গেছে। আমেরিকা স্যাংশন আরোপ করার পর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তার অধীনস্থ দপ্তরগুলোর প্রধানদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করা হচ্ছে। র্যাবের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলার সুযোগ রয়েছে বিধায় সেখানকার চারটি ল’ ফার্মের সঙ্গে আলোচনা চলছে। খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যেসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েছে সে ব্যাপারে তথ্য চেয়ে বাংলাদেশের পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা তথ্য দিতে সম্মতিপত্র দিয়েছে বলে তিনি জানান।
র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি কিছুটা সময়সাপেক্ষ হবে বলে মনে করেন শাহরিয়ার আলম। তবে যথাসময়ে তথ্যগুলো পেলে এবং সেগুলো সংশ্লিষ্ট দেশ, সংস্থাগুলোর কাছে উপস্থাপন করতে পারলে বাংলাদেশকে এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতো না বলে তিনি মনে করেন।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের অভ্যন্তরে সরকারবিরোধী ও স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তিগুলো ক্রমাগতভাবে প্রচুর অর্থ ব্যয়ে লবিস্ট নিয়োগ করে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার মতো দেশের গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অসত্য তথ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছেন। এ ধরনের অপপ্রচার মোকাবিলায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিদেশে অবস্থিত মিশনগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কমিটির সভাপতি লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান (অব.) বলেন, ‘র্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যে অভিযোগগুলো রয়েছে, সে বিষয়ে ফ্যাক্ট অ্যান্ড ফিগার দিয়ে ক্লারিফাই করতে হবে। জানাতে হবে এর কোনটাই ইচ্ছাকৃতভাবে হচ্ছে না।’ বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বৈঠকে সুইডেনে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।