ঢাকা ছাড়ছে মানুষ : দুর্ভোগ, ভাড়া নৈরাজ্য, ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়

ঈদ উপলক্ষে ঢাকা ছাড়ছেন রাজধানীবাসী। পরিবারের আপনজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে আগেভাগে গ্রামে যাচ্ছেন তারা। তবে এবার সড়ক পথে যানজট, ফেরিঘাটে ভোগান্তি, নৌপথে অতিরিক্ত বোঝাই, রেলওয়ে টিকেট সংকট ও শিডিউল বিপর্যয়েরসহ পথে পথে নানা দুর্ভোগ ও ভোগান্তি শিকার হতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। এছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্যের শিকার হতে হচ্ছে ঘরমুখো মানুষদের।

গতকাল রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্রতিটি ট্রেন এক-দেড় ঘণ্টা দেরি করে ছেড়ে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে গরমের দীর্ঘ সময় স্টেশনে অপেক্ষার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান। এছাড়া সড়কপথে অতিরিক্ত গাড়ির চাপে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দাউদকান্দি এলাকায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আরিচা ও মাওয়া ফেরিঘাটে ছিল যানবাহনের দীর্ঘ লাইন।

রেলওয়ে জানায়, এবারের ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ৫৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। এর মধ্যে শুধু আন্তঃনগর ট্রেনেই ২৭ হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহন করা হবে। ঈদযাত্রার প্রথম দিনই ট্রেন বিলম্বে কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে যাত্রীরা। তবে এর জন্য পশ্চিমাঞ্চলে রেলক্রসিংয়ে সময় নেয়াকে দায়ী করে স্টেশন কর্তৃপক্ষ।

গতকাল রাজশাহীগামী ধূমকেতু ট্রেনটির মাধ্যমে ঈদযাত্রা শুরু করে রেলওয়ে। কিন্তু ট্রেনটি প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে সকাল ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে গেছে। ট্রেনটি ছাড়ার কথাছিল ৫টা ৫০ মিটিটে। এর আগে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৬টা ২০ মিনিটে কমলাপুর ছেড়ে যায়।

পারাবত এক্সপ্রেসের যাত্রী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এবারের ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ ছিল টিকেট পাওয়া। ২৩ এপ্রিল টিকেট হাতে পাওয়ার পরই ঘরে ফেরার বাড়তি আনন্দ যোগ হয়। অনেক কষ্টের পরই টিকেট পেয়েছি। তাই আজ (বুধবার) বাড়ি যাচ্ছি।’

খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি স্টেশন ছেড়ে যায় ৮টা ৪৭ মিনিটে। রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেসের সকাল ৯টা ১০ মিনিটে স্টেশন ছাড়ার কথা ছিল। তবে তা এক ঘণ্টা ২০ মিনিট দেরি করে স্টেশন ছাড়ে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। ঈদযাত্রার শুরুতেই ট্রেন বিলম্বে ছাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক যাত্রীরা।

কামাল হোসেন নামের রংপুরে এক যাত্রী বলেন, ‘আমার কাছে এক ঘণ্টাও অনেক দামি। কেননা ঈদের পরদিনই আবার আমাকে ঢাকায় ফিরতে হবে। স্টেশনে এসে দেখি ট্রেন ছাড়তে এক ঘণ্টার বেশি দেরি হচ্ছে। যাত্রার শুরুর দিনই দেরি, অন্য দিনগুলোতে তাহলে কী হবে?’

স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন মৌলভীবাজারের সাজিদ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে স্টেশনের দুই নম্বর প্লাটফর্মে পরিবার নিয়ে অপেক্ষা করছি ট্রেনের খবর নেই। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি। প্রতিবারই যাই। বাড়িতে মা আছেন। একসঙ্গে ঈদ করি।’

মিজানুর রহমান নামের রাজশাহীর এক যাত্রী বলেন, ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেসের জন্য অপেক্ষা করছি। সেহ?রি খেয়েই রেলস্টেশনে চলে এসেছি। প্রতি ঈদেই গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর খড়খড়িতে যাই। এবারও পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে আজ (বুধবার) ঢাকা ছাড়ছি। কোন ধরনের ভোগান্তি এড়াতে এবার অফিসে একদিন আগেই ছুটি নিয়েছি।’

শাহীর নামের কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের এক যাত্রী বলেন, ‘পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে ঈদে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। ঢাকায় মিরপুরে থাকি। প্রায় আধা ঘণ্টার বেশি, ট্রেনে বসে আছি। ট্রেন ছাড়ার কথা ১০টা ৪৫ মিনিটে। আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা দেরি সহ্য করা যায়। ঈদযাত্রায় এমন টুকিটাকি দেরি মানা যায়। তিন থেকে চার ঘণ্টা দেরি মানা যায় না।’

এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ১১টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে। পশ্চিমাঞ্চলে জয়দেবপুর থেকে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত স্টেশনগুলোর একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব অনেক বেশি। এ কারণে রেলক্রসিংয়ে একটু সময় বেশি লাগে। এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। একটি ট্রেন গেলে অন্য আরেকটি ট্রেন আসতে বা যেতে পারে না। অপারেটিং সিস্টেমের কারণে ট্রেন কিছুটা বিলম্ব হয়। তবে প্রস্তুতি ও চেষ্টা রয়েছে, যাতে বিলম্ব না হয়।’

ঢাকা-চট্টগ্রামে ২০ কিলোমিটার যানজট

ঈদযাত্রায় সড়কপথে অতিরিক্ত যানবাহন চাপে গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মেঘনা-গোমতী সেতু এলাকা থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজটের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।

মাসুদ নামের চট্টগ্রামের এক যাত্রী বলেন, ‘বুধবার ঢাকা থেকে সকাল ৯টায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাসে উঠেছি। সকাল ১০টায় দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী সেতু এলাকায় এসে যানজটে আটকা পড়েছি।’ ধীরে ধীরে দুপুর ১২টায় তারা চান্দিনায় পৌঁছেছেন। অথচ অন্যান্য সময় দাউদকান্দি থেকে চান্দিনা যেতে ৩০ মিনিট লাগে বলে জানান তিনি।

কুমিল্লাগামী একতা পরিবহনের বাসের যাত্রী শাহজাহান আলী ভূঁইয়া বলেন, তিনি পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজে কুমিল্লা শহরে যাচ্ছেন। সকাল ১০টায় দাউদকান্দির গৌরীপুর থেকে বাসে রওনা দিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় কুমিল্লায় পৌঁছেছেন। স্বাভাবিক সময়ে এই পথ অতিক্রম করতে ৩০ মিনিটেরও কম সময় লাগে।

বাসচালক সোহাগ মিয়া বলেন, ‘মেঘনা-গোমতী সেতু এলাকা থেকে চান্দিনা পর্যন্ত গাড়ির অনেক চাপ। যাত্রীবাহী গাড়ির পাশাপাশি পণ্যবাহী গাড়িও আছে।’ তবে চান্দিনার পরে আর তেমন যানজট নেই বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মিঠুন চন্দ্র বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখো মানুষের কারণে সড়কে যানবাহনের চাপ বেশি। এছাড়া চান্দিনার দোতলা নামক এলাকায় একটি পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের ওপর উল্টে গেছে। এ কারণে যানজট আরও বেড়েছে। যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে ও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হাইওয়ে পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করছে।’

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটারে ভোগান্তির আশঙ্কা

ঈদযাত্রায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশের গোড়াই উড়াল সেতুটি খুলে দেয়া হলেও যানজটের শঙ্কা কাটেনি উত্তরবঙ্গগামী মানুষের। কারণ এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়ক দুই লেন থাকায় যানজটের ভোগান্তির আশঙ্কা করছে যাত্রীরা।

স্থানীয়রা জানান, গত সোমবার যান চলাচলের জন্য গোড়াই উড়াল সেতু (ফ্লাইওভার) খুলে দেয়া হয়েছে। একই দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নলকা সেতুর এক লেন খুলে দেয়া হয়। উড়াল সেতু খুলে দেয়ায় উত্তরবঙ্গের মানুষ স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরতে পারবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।

মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া, আশেকপুর, রসুলপুর, কালিহাতী উপজেলার পৌলী, এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপার পর্যন্ত স্বাভাবিকের চেয়ে যানবাহনের চাপ কিছুটা বেড়েছে। তবে যাত্রীবাহী যানবাহনের চেয়ে মহাসড়কে ট্রাকের সংখ্যাই বেশি।

বঙ্গবন্ধু সেতু টোলপ্লাজা সূত্র জানায়, গত সোমবার রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ২৩ হাজার ৬১১টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের দিকে পার হয়েছে ১১ হাজার ৯১৮টি এবং উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকার দিকে পার হয়েছে ১১ হাজার ৬৯৩টি যানবাহন। স্বাভাবিক অবস্থায় এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন ১২-১৩ হাজার যানবাহন পারাপার হয়।

ঈদকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজায় টোল আদায়ের জন্য লেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় তিন-চার লেনে টোল আদায় করা হয়। ঈদকে সামনে রেখে সাতটি লেনে বাস-ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের জন্য টোল আদায় করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর বাইরেও মোটরসাইকেলের জন্য পৃথক দুটি লেন করা হয়েছে।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত চারলেন সড়ক। এরপর থেকে সেতু পর্যন্ত সড়ক দুই লেনের। যানবাহনের চাপে এখানে জট সৃষ্টি হয়। এ যানজট এড়াতে এবার এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়ক একমুখী (ওয়ান ওয়ে) করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন এ সড়ক দিয়ে সেতু পর্যন্ত যাবে। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গ থেকে সেতু পার হয়ে আসা যানবাহনগুলো বিকল্প সড়ক ভুঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসবে। যাবাহনের চাপ বাড়লে এ ওয়ান ওয়ে ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে।

বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২ , ১৫ বৈশাখ ১৪২৮ ২৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

ঢাকা ছাড়ছে মানুষ : দুর্ভোগ, ভাড়া নৈরাজ্য, ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ঈদ উপলক্ষে ঢাকা ছাড়ছেন রাজধানীবাসী। পরিবারের আপনজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে আগেভাগে গ্রামে যাচ্ছেন তারা। তবে এবার সড়ক পথে যানজট, ফেরিঘাটে ভোগান্তি, নৌপথে অতিরিক্ত বোঝাই, রেলওয়ে টিকেট সংকট ও শিডিউল বিপর্যয়েরসহ পথে পথে নানা দুর্ভোগ ও ভোগান্তি শিকার হতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। এছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্যের শিকার হতে হচ্ছে ঘরমুখো মানুষদের।

গতকাল রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্রতিটি ট্রেন এক-দেড় ঘণ্টা দেরি করে ছেড়ে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে গরমের দীর্ঘ সময় স্টেশনে অপেক্ষার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে যাত্রীরা জানান। এছাড়া সড়কপথে অতিরিক্ত গাড়ির চাপে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দাউদকান্দি এলাকায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আরিচা ও মাওয়া ফেরিঘাটে ছিল যানবাহনের দীর্ঘ লাইন।

রেলওয়ে জানায়, এবারের ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ৫৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। এর মধ্যে শুধু আন্তঃনগর ট্রেনেই ২৭ হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহন করা হবে। ঈদযাত্রার প্রথম দিনই ট্রেন বিলম্বে কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে যাত্রীরা। তবে এর জন্য পশ্চিমাঞ্চলে রেলক্রসিংয়ে সময় নেয়াকে দায়ী করে স্টেশন কর্তৃপক্ষ।

গতকাল রাজশাহীগামী ধূমকেতু ট্রেনটির মাধ্যমে ঈদযাত্রা শুরু করে রেলওয়ে। কিন্তু ট্রেনটি প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে সকাল ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে গেছে। ট্রেনটি ছাড়ার কথাছিল ৫টা ৫০ মিটিটে। এর আগে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৬টা ২০ মিনিটে কমলাপুর ছেড়ে যায়।

পারাবত এক্সপ্রেসের যাত্রী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এবারের ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ ছিল টিকেট পাওয়া। ২৩ এপ্রিল টিকেট হাতে পাওয়ার পরই ঘরে ফেরার বাড়তি আনন্দ যোগ হয়। অনেক কষ্টের পরই টিকেট পেয়েছি। তাই আজ (বুধবার) বাড়ি যাচ্ছি।’

খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি স্টেশন ছেড়ে যায় ৮টা ৪৭ মিনিটে। রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেসের সকাল ৯টা ১০ মিনিটে স্টেশন ছাড়ার কথা ছিল। তবে তা এক ঘণ্টা ২০ মিনিট দেরি করে স্টেশন ছাড়ে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। ঈদযাত্রার শুরুতেই ট্রেন বিলম্বে ছাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক যাত্রীরা।

কামাল হোসেন নামের রংপুরে এক যাত্রী বলেন, ‘আমার কাছে এক ঘণ্টাও অনেক দামি। কেননা ঈদের পরদিনই আবার আমাকে ঢাকায় ফিরতে হবে। স্টেশনে এসে দেখি ট্রেন ছাড়তে এক ঘণ্টার বেশি দেরি হচ্ছে। যাত্রার শুরুর দিনই দেরি, অন্য দিনগুলোতে তাহলে কী হবে?’

স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন মৌলভীবাজারের সাজিদ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে স্টেশনের দুই নম্বর প্লাটফর্মে পরিবার নিয়ে অপেক্ষা করছি ট্রেনের খবর নেই। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি। প্রতিবারই যাই। বাড়িতে মা আছেন। একসঙ্গে ঈদ করি।’

মিজানুর রহমান নামের রাজশাহীর এক যাত্রী বলেন, ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেসের জন্য অপেক্ষা করছি। সেহ?রি খেয়েই রেলস্টেশনে চলে এসেছি। প্রতি ঈদেই গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর খড়খড়িতে যাই। এবারও পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে আজ (বুধবার) ঢাকা ছাড়ছি। কোন ধরনের ভোগান্তি এড়াতে এবার অফিসে একদিন আগেই ছুটি নিয়েছি।’

শাহীর নামের কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের এক যাত্রী বলেন, ‘পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে ঈদে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। ঢাকায় মিরপুরে থাকি। প্রায় আধা ঘণ্টার বেশি, ট্রেনে বসে আছি। ট্রেন ছাড়ার কথা ১০টা ৪৫ মিনিটে। আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা দেরি সহ্য করা যায়। ঈদযাত্রায় এমন টুকিটাকি দেরি মানা যায়। তিন থেকে চার ঘণ্টা দেরি মানা যায় না।’

এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ১১টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে। পশ্চিমাঞ্চলে জয়দেবপুর থেকে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত স্টেশনগুলোর একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব অনেক বেশি। এ কারণে রেলক্রসিংয়ে একটু সময় বেশি লাগে। এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। একটি ট্রেন গেলে অন্য আরেকটি ট্রেন আসতে বা যেতে পারে না। অপারেটিং সিস্টেমের কারণে ট্রেন কিছুটা বিলম্ব হয়। তবে প্রস্তুতি ও চেষ্টা রয়েছে, যাতে বিলম্ব না হয়।’

ঢাকা-চট্টগ্রামে ২০ কিলোমিটার যানজট

ঈদযাত্রায় সড়কপথে অতিরিক্ত যানবাহন চাপে গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মেঘনা-গোমতী সেতু এলাকা থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজটের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।

মাসুদ নামের চট্টগ্রামের এক যাত্রী বলেন, ‘বুধবার ঢাকা থেকে সকাল ৯টায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাসে উঠেছি। সকাল ১০টায় দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী সেতু এলাকায় এসে যানজটে আটকা পড়েছি।’ ধীরে ধীরে দুপুর ১২টায় তারা চান্দিনায় পৌঁছেছেন। অথচ অন্যান্য সময় দাউদকান্দি থেকে চান্দিনা যেতে ৩০ মিনিট লাগে বলে জানান তিনি।

কুমিল্লাগামী একতা পরিবহনের বাসের যাত্রী শাহজাহান আলী ভূঁইয়া বলেন, তিনি পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজে কুমিল্লা শহরে যাচ্ছেন। সকাল ১০টায় দাউদকান্দির গৌরীপুর থেকে বাসে রওনা দিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় কুমিল্লায় পৌঁছেছেন। স্বাভাবিক সময়ে এই পথ অতিক্রম করতে ৩০ মিনিটেরও কম সময় লাগে।

বাসচালক সোহাগ মিয়া বলেন, ‘মেঘনা-গোমতী সেতু এলাকা থেকে চান্দিনা পর্যন্ত গাড়ির অনেক চাপ। যাত্রীবাহী গাড়ির পাশাপাশি পণ্যবাহী গাড়িও আছে।’ তবে চান্দিনার পরে আর তেমন যানজট নেই বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মিঠুন চন্দ্র বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখো মানুষের কারণে সড়কে যানবাহনের চাপ বেশি। এছাড়া চান্দিনার দোতলা নামক এলাকায় একটি পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের ওপর উল্টে গেছে। এ কারণে যানজট আরও বেড়েছে। যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে ও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হাইওয়ে পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করছে।’

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটারে ভোগান্তির আশঙ্কা

ঈদযাত্রায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশের গোড়াই উড়াল সেতুটি খুলে দেয়া হলেও যানজটের শঙ্কা কাটেনি উত্তরবঙ্গগামী মানুষের। কারণ এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়ক দুই লেন থাকায় যানজটের ভোগান্তির আশঙ্কা করছে যাত্রীরা।

স্থানীয়রা জানান, গত সোমবার যান চলাচলের জন্য গোড়াই উড়াল সেতু (ফ্লাইওভার) খুলে দেয়া হয়েছে। একই দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে নলকা সেতুর এক লেন খুলে দেয়া হয়। উড়াল সেতু খুলে দেয়ায় উত্তরবঙ্গের মানুষ স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরতে পারবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।

মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া, আশেকপুর, রসুলপুর, কালিহাতী উপজেলার পৌলী, এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপার পর্যন্ত স্বাভাবিকের চেয়ে যানবাহনের চাপ কিছুটা বেড়েছে। তবে যাত্রীবাহী যানবাহনের চেয়ে মহাসড়কে ট্রাকের সংখ্যাই বেশি।

বঙ্গবন্ধু সেতু টোলপ্লাজা সূত্র জানায়, গত সোমবার রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ২৩ হাজার ৬১১টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের দিকে পার হয়েছে ১১ হাজার ৯১৮টি এবং উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকার দিকে পার হয়েছে ১১ হাজার ৬৯৩টি যানবাহন। স্বাভাবিক অবস্থায় এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন ১২-১৩ হাজার যানবাহন পারাপার হয়।

ঈদকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজায় টোল আদায়ের জন্য লেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় তিন-চার লেনে টোল আদায় করা হয়। ঈদকে সামনে রেখে সাতটি লেনে বাস-ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের জন্য টোল আদায় করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর বাইরেও মোটরসাইকেলের জন্য পৃথক দুটি লেন করা হয়েছে।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত চারলেন সড়ক। এরপর থেকে সেতু পর্যন্ত সড়ক দুই লেনের। যানবাহনের চাপে এখানে জট সৃষ্টি হয়। এ যানজট এড়াতে এবার এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়ক একমুখী (ওয়ান ওয়ে) করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন এ সড়ক দিয়ে সেতু পর্যন্ত যাবে। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গ থেকে সেতু পার হয়ে আসা যানবাহনগুলো বিকল্প সড়ক ভুঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসবে। যাবাহনের চাপ বাড়লে এ ওয়ান ওয়ে ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে।