তেঁতুলতলা মাঠ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন জায়গাটি পুলিশের সম্পত্তি

তেঁতুলতলার জায়গাটিকে মাঠ দাবি করে সেখানে থানার নির্মাণকাজ বন্ধের দাবি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল আন্দোলনকারীদের পক্ষে পরিবেশবাদী কয়েকটি সংগঠনের নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে দাবি করেন, পুলিশ যে নির্মাণকাজ চালাচ্ছে সেটি বন্ধ করা হোক। কারণ এ মাঠে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিঠির দাবি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়ে বলেছেন তেঁতুলতলা কখনও মাঠ ছিল না, এটা পরিত্যক্ত সম্পত্তি ছিল, সেজন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে থানা নির্মাণের। কলাবাগানে একটা থানা ভবন করা প্রয়োজন। এই জায়গাটা পেয়েছি। এখন যদি মেয়র অন্য একটি জায়গা দেন সেখানে মাঠ হবে। এখানে বরাদ্দ হয়ে গেছে। এটা এখন পুলিশের সম্পত্তি।

গতকাল তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে আন্দোলনকারীদের পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থপতি ইকবাল হাবিব, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবিরসহ তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রী বলেন ‘আপাতত থানার জন্য এটাই (তেঁতুলতলা মাঠ) নির্দিষ্ট জায়গা। যথাযথ প্রক্রিয়ায় বরাদ্দ হওয়ায় ওই জায়গাটি এখন পুলিশেরই।’ ‘যেটাকে তেঁতুলতলা মাঠ বলছেন, সেটা কখনই মাঠ ছিল না। এটা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ছিল। ঢাকা শহরে যে নতুন নতুন থানা ভবন হচ্ছে, বেশিরভাগই ভাড়া বাড়িতে। এ কারণে পুলিশ ফোর্সকে নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সেজন্য এগুলোকে স্থায়ী জায়গায় নেয়ার জন্য নিয়ম অনুযায়ী ডিসির (জেলা প্রশাসক) কাছে ঢাকা শহরের কোন জায়গায় জমি অধিগ্রহণের জন্য বলেছিলাম। কলাবাগানের কোন জায়গায় দেয়া যায় কি-না, সেটাও বলেছিলাম। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে ওই জায়গাটি বরাদ্দ দেয়া হয়। সেই জায়গাটির যে মূল্য, তা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জমা দেয়ার পর ডিসি জায়গাটি হস্তান্তর করে দিয়ে যান। এটা ছিল মূল কথা।’

তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি, লোকালয়ের পাশে খালি জায়গায় এখানে বাচ্চারা খেলাধুলা করত। একটু আলাপচারিতার জন্য এ জায়গাটি ছিল। এখন সবাই এ জায়গা নিয়ে নানাভাবে কথাবার্তা বলছেন। আমাদের স্পষ্ট কথা, কলাবাগান থানার জন্য জায়গা প্রয়োজন, একটি ভবন প্রয়োজন। সেটার দিকে লক্ষ্য রেখে বলছি, এ জায়গাটা আমরা পেয়েছি। এর চেয়ে যদি ভালো, উপযুক্ত জায়গা ওখানকার মেয়র সাহেব কিংবা অন্য কেউ ব্যবস্থা করতে পারেন তখন আমরা সেটা কনসিডার (বিবেচনা) করব। আপাতত থানার জন্য এটাই নির্দিষ্ট জায়গা, সরকারিভাবে এটার ব্যবস্থা হয়েছে।’

সেখানে নির্মাণকাজ চলবে কি-না, এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘নির্মাণকাজ হবে কী হবে না, সেটা পরের কথা। জায়গাটি পুলিশের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। বরাদ্দ যেহেতু হয়েছে, জায়গাটি এখন পুলিশের।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘যেহেতু এটা পুলিশের সম্পত্তি। কিছুক্ষণ আগে যারা আসছিলেন তারাও আমাদের কাছে একটা আবেদন করেছেন, বিকল্প কিছু করা যায় কি-না। সেই পর্যন্ত নির্মাণকাজ স্থগিত রাখার জন্য। আপনারাও একটু খোঁজাখুঁজি করুন, যাতে এ সুযোগটা থেকে এ এলাকার মানুষ বঞ্চিত না হয়। আপনারা যদি একটা উপযুক্ত জায়গা পান। থানাও জরুরি দরকার, বাচ্চারা বা যারা কথা বলছে তাদেরও একটা রিক্রিয়েশন দরকার। সেজন্য বলছিলেন আপনারা কনস্ট্রাকশন (নির্মাণকাজ) না করে আমরাও খুঁজি, দেখি, এটাই তাদের আবেদন ছিল।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি বলেছি, আমরা তো এখনই কনস্ট্রাকশনে যাচ্ছি না। খুঁজুন, আমরা দেখবো। আপনারা যদি এর চেয়ে ভালো অফার দিতে পারেন, অবশ্যই দেখবো। এটাই বলা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মাঠ-জলাশয় রক্ষা করে উন্নয়নকাজ করতে হবে, এ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে মনে হয় ২০ কাঠা জমি, খুব বড়ও নয়। ফুটবল খেলার মাঠ এরকমও কিছু নয়। টেনিস খেলার মাঠ হবে দুটি, সেই রকমও কিছু নয়। এটা খুবই ছোট জায়গা। এটা তো আপনারা নিজেরাও বোঝেন। চিকন-লম্বালম্বি জায়গা, জায়গাটিও সুন্দর কিংবা ভালো অবস্থায় সেই রকমও নয়। তারা যেহেতু একটা আবেদন করে গেছেন, আমরা দেখবো। যেহেতু আমরা টাকা দিয়ে ফেলছি, সেটার কী হবে। সবকিছু আমরা আলোচনা করবো।’

এটা নিয়ে একটা পাবলিক সেন্টিমেন্ট দাঁড়িয়ে গেছে, এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমিও বলছি, আমার থানা দরকার। সেটা তো পাবলিকের (জনগণ) বুঝতে হবে। কারণ আমি যদি পাবলিককে সুরক্ষা না দিতে পারি, নিরাপত্তা না দিতে পারি। তখনও তো পাবলিক সেন্টিমেন্ট আমাদের বিপক্ষে আসবে। জায়গাটি আমরা নির্বাচন করিনি। জমিটি আমাদের অধিগ্রহণ করে দেয়া হয়েছে।’

মাঠের জন্য আন্দোলনকে যৌক্তিক মনে করছেন কি-না, এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘কঠিন কঠিন প্রশ্ন করলে তো আমি মুশকিলে পড়ে যাবো। আমি বলবো এখন এটা পুলিশের সম্পত্তি। একটি আবেদন এসেছে, সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চিন্ত-ভাবনা করবো, এটা কী করা যায়।’

প্রাচীর নির্মাণ স্থগিত রাখার জন্য ডিএমপি কমিশনারকে বলবেন কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছি, আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করবো।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, ‘এখানে যে কাজটি হচ্ছে, সেই জিনিসটা আমরা চাচ্ছিলাম বন্ধ করার জন্য। আমরা চাচ্ছি যে, এবারের ঈদের জামাত ওখানেই হোক। উনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন আলোচনা করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ওনি চেষ্টা করবেন।’

বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘খেলার মাঠটির ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ফিল করছেন। কিন্তু ওনারা ২৭ কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছেন। তখন আমরা বলেছি, সেটা তো সরকারি ট্রেজারিতেই আছে। ওই এলাকায় আরও পরিত্যক্ত জায়গা আছে। একটা জায়গার কথা ইকবাল ভাই স্পষ্ট করে বলেছেন।’ সেখানে দেয়াল নির্মাণের কাজ বন্ধ করার জন্য বলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসী মুখোমুখি হোক, এটা আমরা চাই না। এখানে দেয়াল নির্মাণ হয়ে গেলে ঈদের জামায়াতটা আর করা যাবে না। তাই এটার নির্মাণকাজ বন্ধ করতে হবে।’

রাজধানীর তেঁতুলতলা খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে পরিবেশবাদী সংগঠন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা ও শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ওই মাঠের সীমানা প্রাচীরের পাশে গাছ লাগিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।

সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ যদি খেলার মাঠে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যায় তাহলে তারা ব্যাপক আন্দোলনে যাবেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বাপার ভাইস প্রেসিডেন্ট রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এখানে ২টি বিষয় খুবই উদ্বেগজনক- একটি হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি থানা দরকার। কিন্তু তারা যদি খেলার মাঠে থানা স্থাপন করতে পারে তাহলে এখানে-সেখানে খেলার মাঠ দখল করবে এবং বাংলাদেশে কোন খেলার মাঠ থাকবে না।

তিনি বলেন, একটি পরামর্শ এসেছে যে- শিশুরা কলাবাগান খেলার মাঠে খেলতে পারবে। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার গাড়ি বা বাইক আছে তাই তারা সহজেই তাদের সন্তানদের ওই মাঠে নিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু এই এলাকার নতুন প্রজন্ম কোথায় খেলতে যাবে?

রাশেদা চৌধুরী বলেন, ২০১৯ সাল পর্যন্ত খেলার মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হতো এবং গত ২ বছর করোনা মহামারীর কারণে কোন ঈদের জামাত হয়নি। তিনি বলেন, থানা নির্মাণের জন্য ঈদ জামাতের জমিও দখল করে রেখেছে তারা।

রাশেদা চৌধুরী বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বেতন আসে সরকারের তহবিল থেকে এবং সরকারের সেই কোষাগার দেশের মানুষের করের টাকায় চলে। তাই করদাতা হিসেবে আমরা যত দ্রুত সম্ভব এখানে থানা নির্মাণ বন্ধ করে সবার জন্য খেলার মাঠ উন্মুক্ত রাখার দাবি জানাচ্ছি।

বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা কলাবাগান এলাকার ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (২০১৫-২০৩৫) প্রস্তাবিত জমি ব্যবহার অঞ্চলের মানচিত্রের প্রতিলিপিসহ একটি ব্যানার স্থাপন করেন।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, খেলার মাঠটি এই এলাকার ফুসফুস এবং এখানকার বয়স্কদের হৃদপিন্ড। খেলার মাঠ ধ্বংস হলে এটি শুধু আমার ফুসফুসেরই ক্ষতি করবে না- মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর ফুসফুসেরও ক্ষতি করবে। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি এখানে পর্যবেক্ষণে আসতেন তাহলে তিনি বুঝতে পারবেন পুলিশ ভুল করেছে। খেলার মাঠ রক্ষা করতে না পারলে আমাদের শিশুসহ সবার ক্ষতি হবে, এমনকি জাতির ক্ষতি হবে।

আন্দোলনে অংশ নেয়া পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আরিফ হোসেন জানায়, গত ৮ বছর ধরে তারা এই মাঠে খেলছে। তারা আমাদের কলাবাগান মাঠে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে, কিন্তু এটা আমাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে এবং সেখানে খেলার সুযোগ পাওয়াও সহজ নয়।

বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২ , ১৫ বৈশাখ ১৪২৮ ২৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

তেঁতুলতলা মাঠ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন জায়গাটি পুলিশের সম্পত্তি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

তেঁতুলতলার জায়গাটিকে মাঠ দাবি করে সেখানে থানার নির্মাণকাজ বন্ধের দাবি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল আন্দোলনকারীদের পক্ষে পরিবেশবাদী কয়েকটি সংগঠনের নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে দাবি করেন, পুলিশ যে নির্মাণকাজ চালাচ্ছে সেটি বন্ধ করা হোক। কারণ এ মাঠে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিঠির দাবি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়ে বলেছেন তেঁতুলতলা কখনও মাঠ ছিল না, এটা পরিত্যক্ত সম্পত্তি ছিল, সেজন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে থানা নির্মাণের। কলাবাগানে একটা থানা ভবন করা প্রয়োজন। এই জায়গাটা পেয়েছি। এখন যদি মেয়র অন্য একটি জায়গা দেন সেখানে মাঠ হবে। এখানে বরাদ্দ হয়ে গেছে। এটা এখন পুলিশের সম্পত্তি।

গতকাল তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে আন্দোলনকারীদের পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থপতি ইকবাল হাবিব, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবিরসহ তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রী বলেন ‘আপাতত থানার জন্য এটাই (তেঁতুলতলা মাঠ) নির্দিষ্ট জায়গা। যথাযথ প্রক্রিয়ায় বরাদ্দ হওয়ায় ওই জায়গাটি এখন পুলিশেরই।’ ‘যেটাকে তেঁতুলতলা মাঠ বলছেন, সেটা কখনই মাঠ ছিল না। এটা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ছিল। ঢাকা শহরে যে নতুন নতুন থানা ভবন হচ্ছে, বেশিরভাগই ভাড়া বাড়িতে। এ কারণে পুলিশ ফোর্সকে নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সেজন্য এগুলোকে স্থায়ী জায়গায় নেয়ার জন্য নিয়ম অনুযায়ী ডিসির (জেলা প্রশাসক) কাছে ঢাকা শহরের কোন জায়গায় জমি অধিগ্রহণের জন্য বলেছিলাম। কলাবাগানের কোন জায়গায় দেয়া যায় কি-না, সেটাও বলেছিলাম। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে ওই জায়গাটি বরাদ্দ দেয়া হয়। সেই জায়গাটির যে মূল্য, তা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জমা দেয়ার পর ডিসি জায়গাটি হস্তান্তর করে দিয়ে যান। এটা ছিল মূল কথা।’

তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি, লোকালয়ের পাশে খালি জায়গায় এখানে বাচ্চারা খেলাধুলা করত। একটু আলাপচারিতার জন্য এ জায়গাটি ছিল। এখন সবাই এ জায়গা নিয়ে নানাভাবে কথাবার্তা বলছেন। আমাদের স্পষ্ট কথা, কলাবাগান থানার জন্য জায়গা প্রয়োজন, একটি ভবন প্রয়োজন। সেটার দিকে লক্ষ্য রেখে বলছি, এ জায়গাটা আমরা পেয়েছি। এর চেয়ে যদি ভালো, উপযুক্ত জায়গা ওখানকার মেয়র সাহেব কিংবা অন্য কেউ ব্যবস্থা করতে পারেন তখন আমরা সেটা কনসিডার (বিবেচনা) করব। আপাতত থানার জন্য এটাই নির্দিষ্ট জায়গা, সরকারিভাবে এটার ব্যবস্থা হয়েছে।’

সেখানে নির্মাণকাজ চলবে কি-না, এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘নির্মাণকাজ হবে কী হবে না, সেটা পরের কথা। জায়গাটি পুলিশের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। বরাদ্দ যেহেতু হয়েছে, জায়গাটি এখন পুলিশের।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘যেহেতু এটা পুলিশের সম্পত্তি। কিছুক্ষণ আগে যারা আসছিলেন তারাও আমাদের কাছে একটা আবেদন করেছেন, বিকল্প কিছু করা যায় কি-না। সেই পর্যন্ত নির্মাণকাজ স্থগিত রাখার জন্য। আপনারাও একটু খোঁজাখুঁজি করুন, যাতে এ সুযোগটা থেকে এ এলাকার মানুষ বঞ্চিত না হয়। আপনারা যদি একটা উপযুক্ত জায়গা পান। থানাও জরুরি দরকার, বাচ্চারা বা যারা কথা বলছে তাদেরও একটা রিক্রিয়েশন দরকার। সেজন্য বলছিলেন আপনারা কনস্ট্রাকশন (নির্মাণকাজ) না করে আমরাও খুঁজি, দেখি, এটাই তাদের আবেদন ছিল।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি বলেছি, আমরা তো এখনই কনস্ট্রাকশনে যাচ্ছি না। খুঁজুন, আমরা দেখবো। আপনারা যদি এর চেয়ে ভালো অফার দিতে পারেন, অবশ্যই দেখবো। এটাই বলা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মাঠ-জলাশয় রক্ষা করে উন্নয়নকাজ করতে হবে, এ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে মনে হয় ২০ কাঠা জমি, খুব বড়ও নয়। ফুটবল খেলার মাঠ এরকমও কিছু নয়। টেনিস খেলার মাঠ হবে দুটি, সেই রকমও কিছু নয়। এটা খুবই ছোট জায়গা। এটা তো আপনারা নিজেরাও বোঝেন। চিকন-লম্বালম্বি জায়গা, জায়গাটিও সুন্দর কিংবা ভালো অবস্থায় সেই রকমও নয়। তারা যেহেতু একটা আবেদন করে গেছেন, আমরা দেখবো। যেহেতু আমরা টাকা দিয়ে ফেলছি, সেটার কী হবে। সবকিছু আমরা আলোচনা করবো।’

এটা নিয়ে একটা পাবলিক সেন্টিমেন্ট দাঁড়িয়ে গেছে, এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমিও বলছি, আমার থানা দরকার। সেটা তো পাবলিকের (জনগণ) বুঝতে হবে। কারণ আমি যদি পাবলিককে সুরক্ষা না দিতে পারি, নিরাপত্তা না দিতে পারি। তখনও তো পাবলিক সেন্টিমেন্ট আমাদের বিপক্ষে আসবে। জায়গাটি আমরা নির্বাচন করিনি। জমিটি আমাদের অধিগ্রহণ করে দেয়া হয়েছে।’

মাঠের জন্য আন্দোলনকে যৌক্তিক মনে করছেন কি-না, এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘কঠিন কঠিন প্রশ্ন করলে তো আমি মুশকিলে পড়ে যাবো। আমি বলবো এখন এটা পুলিশের সম্পত্তি। একটি আবেদন এসেছে, সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চিন্ত-ভাবনা করবো, এটা কী করা যায়।’

প্রাচীর নির্মাণ স্থগিত রাখার জন্য ডিএমপি কমিশনারকে বলবেন কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছি, আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করবো।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, ‘এখানে যে কাজটি হচ্ছে, সেই জিনিসটা আমরা চাচ্ছিলাম বন্ধ করার জন্য। আমরা চাচ্ছি যে, এবারের ঈদের জামাত ওখানেই হোক। উনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন আলোচনা করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ওনি চেষ্টা করবেন।’

বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘খেলার মাঠটির ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ফিল করছেন। কিন্তু ওনারা ২৭ কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছেন। তখন আমরা বলেছি, সেটা তো সরকারি ট্রেজারিতেই আছে। ওই এলাকায় আরও পরিত্যক্ত জায়গা আছে। একটা জায়গার কথা ইকবাল ভাই স্পষ্ট করে বলেছেন।’ সেখানে দেয়াল নির্মাণের কাজ বন্ধ করার জন্য বলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসী মুখোমুখি হোক, এটা আমরা চাই না। এখানে দেয়াল নির্মাণ হয়ে গেলে ঈদের জামায়াতটা আর করা যাবে না। তাই এটার নির্মাণকাজ বন্ধ করতে হবে।’

রাজধানীর তেঁতুলতলা খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে পরিবেশবাদী সংগঠন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা ও শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ওই মাঠের সীমানা প্রাচীরের পাশে গাছ লাগিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।

সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ যদি খেলার মাঠে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যায় তাহলে তারা ব্যাপক আন্দোলনে যাবেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বাপার ভাইস প্রেসিডেন্ট রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এখানে ২টি বিষয় খুবই উদ্বেগজনক- একটি হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি থানা দরকার। কিন্তু তারা যদি খেলার মাঠে থানা স্থাপন করতে পারে তাহলে এখানে-সেখানে খেলার মাঠ দখল করবে এবং বাংলাদেশে কোন খেলার মাঠ থাকবে না।

তিনি বলেন, একটি পরামর্শ এসেছে যে- শিশুরা কলাবাগান খেলার মাঠে খেলতে পারবে। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার গাড়ি বা বাইক আছে তাই তারা সহজেই তাদের সন্তানদের ওই মাঠে নিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু এই এলাকার নতুন প্রজন্ম কোথায় খেলতে যাবে?

রাশেদা চৌধুরী বলেন, ২০১৯ সাল পর্যন্ত খেলার মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হতো এবং গত ২ বছর করোনা মহামারীর কারণে কোন ঈদের জামাত হয়নি। তিনি বলেন, থানা নির্মাণের জন্য ঈদ জামাতের জমিও দখল করে রেখেছে তারা।

রাশেদা চৌধুরী বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বেতন আসে সরকারের তহবিল থেকে এবং সরকারের সেই কোষাগার দেশের মানুষের করের টাকায় চলে। তাই করদাতা হিসেবে আমরা যত দ্রুত সম্ভব এখানে থানা নির্মাণ বন্ধ করে সবার জন্য খেলার মাঠ উন্মুক্ত রাখার দাবি জানাচ্ছি।

বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা কলাবাগান এলাকার ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (২০১৫-২০৩৫) প্রস্তাবিত জমি ব্যবহার অঞ্চলের মানচিত্রের প্রতিলিপিসহ একটি ব্যানার স্থাপন করেন।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, খেলার মাঠটি এই এলাকার ফুসফুস এবং এখানকার বয়স্কদের হৃদপিন্ড। খেলার মাঠ ধ্বংস হলে এটি শুধু আমার ফুসফুসেরই ক্ষতি করবে না- মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর ফুসফুসেরও ক্ষতি করবে। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি এখানে পর্যবেক্ষণে আসতেন তাহলে তিনি বুঝতে পারবেন পুলিশ ভুল করেছে। খেলার মাঠ রক্ষা করতে না পারলে আমাদের শিশুসহ সবার ক্ষতি হবে, এমনকি জাতির ক্ষতি হবে।

আন্দোলনে অংশ নেয়া পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আরিফ হোসেন জানায়, গত ৮ বছর ধরে তারা এই মাঠে খেলছে। তারা আমাদের কলাবাগান মাঠে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে, কিন্তু এটা আমাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে এবং সেখানে খেলার সুযোগ পাওয়াও সহজ নয়।