আনন্দ উৎসব ও ছোট পর্দার বিনোদন

রেজাউল করিম খোকন

ঈদ উৎসবে বিশেষ করে ছোট পর্দায় বিনোদনের অন্যতম উপকরণ হলো টিভি অনুষ্ঠানমালা। গত কয়েক যুগ ধরে বাংলাদেশে শহর, বন্দর, গ্রামের মানুষ ঈদ উৎসবে টিভি পর্দায় পরিবেশিত হরেক রকম অনুষ্ঠানমালা দেখার অপেক্ষায় থাকে। এটা ঈদ উৎসবের একটি অন্যতম বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অতীতে যখন বাংলাদেশে একটি মাত্র টিভি চ্যানেল ছিল, সেই একমাত্র চ্যানেল বিটিভির ঈদ আয়োজনে মেতে উঠতেন দর্শক। কোন বিশেষ শ্রেণী কিংবা বয়সের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না বিটিভির ঈদ আনন্দ আয়োজনের নানা সম্ভার।

একটা সময় গেছে যখন ঈদ মানেই দর্শক বুঝতেন আমজাদ হোসেনের জব্বর আলি সিরিজের দম ফাটানো হাসির নাটক, আবদুল্লাহ আবু সাঈদের জমকালো আনন্দমেলা, রুনা লায়লা-সাবিনা ইয়াসমিনের বিশেষ একক সঙ্গীতানুষ্ঠান, ঈদের বিশেষ পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলাছবি প্রভৃতি। তখন সাত দিন ধরে ঈদ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন না থাকলেও বিটিভির দু’দিনের ঈদ আয়োজনে দর্শক পরিপূর্ণ বিনোদন তৃপ্তি লাভ করতেন। ধনী, গরিব, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত, শিক্ষিত, অশিক্ষিত সব শ্রেণীর দর্শক বিটিভির ঈদের অনুষ্ঠান দেখে আনন্দে ভাসতেন। ঘরে ঘরে আনন্দের রেশ থাকত বেশ ক’দিন ধরে। এবারও দেশের প্রায় দুই ডজন টিভি চ্যানেল ঈদ উৎসবে পাঁচ থেকে সাত দিনব্যাপী নানা ধরনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। টিভি চ্যানেলগুলোর এই মেগা আয়োজনে নাটকের সংখ্যাই বেশি।

একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ছোট পর্দার দর্শকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে টিভি নাটক। দর্শক পছন্দের কথা বিবেচনা করেই টিভি চ্যানেলগুলো হরেক রকমের নাটক সম্ভার দিয়ে সাজিয়েছে তাদের ঈদ অনুষ্ঠানমালা। এর মধ্যে হাসির নাটক, প্রেমের নাটক, বিরহের নাটক, পারিবারিক গল্প প্রধান নাটকের পাশাপাশি অ্যাকশন থ্রিলার, হরর ধাচের ভৌতিক গল্পের নাটকও রয়েছে। আবার কোন কোন টিভি চ্যানেলে নিরীক্ষাধর্মী ইন্টেলেকচ্যুয়াল টাইপের নাটকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ঈদের ছুটিতে ছোট পর্দায় বিনোদনপিয়াসী কোটি কোটি টিভি দর্শক অনেক প্রত্যাশায় চোখ রাখলেও তারা কতটা আনন্দ উপভোগ করতে পারছেন সেটাই হলো প্রশ্ন।

গত কয়েক বছর ধরে ঈদ অনুষ্ঠানমালায় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে চোখ রাখতে গিয়ে বারবার মনে প্রশ্ন জেগেছে, অনেক সময় আর অর্থ ব্যয়ে নির্মিত এত হাজার হাজার শিল্পী, কলাকুশলীর মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রমের ফসল অগণিত নাটকের মধ্যে কটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শকের মন ছুঁয়ে যেতে পারছে? বেশিরভাগ নাটকের দুর্বল ও নিম্নমানের গল্প, দায়সারা নামকাওয়াস্তে অভিনয় আর আপত্তিকর বক্তব্য দর্শকদের শুধুই হতাশ এবং বিরক্ত করেছে। তরুণ-তরুণীর প্রেম-ভালোবাসা, বিয়ে কিংবা প্রাত্যাহিক জীবনযাপনের নানা ঘটনা নাটকে তুলে ধরতে গিয়ে এমন সব কা-কীর্তির অবতরণা করা হয়েছে বা হচ্ছে তা ভদ্র রুচিশীল মানুষের পক্ষে সহজভাবে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। কমেডি নাটকে নির্মল হাসি আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষণীয় কিছু বিষয় তুলে ধরা হবে-দর্শক এমনটি প্রত্যাশা করলেও ঈদ অনুষ্ঠান আয়োজনে অশালীন, আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি, ভাঁড়ামো সংলাপ সমৃদ্ধ প্রচুর নাটক দেখা গেছে অনেক চ্যানেলে, যা আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক সুস্থ পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

ঈদে দর্শকদের সঙ্গে প্রতারণা আর ছলনার আরেকটি নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল। সেটি হলো, এক ঘণ্টা সোয়া ঘণ্টার একটি এক খন্ডের নাটক ছয়-সাত পর্বে বিভক্ত করে ছয়-সাত দিন ধরে দেখানোর অদ্ভুত প্রচেষ্টা। যেখানে দর্শক নাটকটি একখন্ডে একবারে দেখে শেষ করতে পারত এখন পুরো নাটকটি দেখতে ছয়-সাত দিন ধরে অপেক্ষা করে বসে থাকতে হচ্ছে। সব দর্শকদের পক্ষে সব পর্ব দেখার সময় প্রয়োজনীয় সময় এবং সুযোগ বের করটা অবশ্যই কঠিন ব্যাপার সন্দেহ নেই। ফলে নাটকটি দেখার ইচ্ছা থাকলেও অনেক দর্শকের পক্ষে তা দেখা সম্ভব হয় না।

প্রতিবার ঈদ এলে আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো পাঁচ দিন-সাত দিনব্যাপী মেগা অনুষ্ঠানমালা আয়োজনের প্রতিযোগিতায় নামে। তাদের লক্ষ্য দর্শকদের পরিপূর্ণ আনন্দ আয়োজন নিশ্চিত করা নয়। তাদের টার্গেট হলো সর্বোচ্চ সংখ্যক বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে যতটা সম্ভব বেশি মুনাফা অর্জন। আর বিজ্ঞাপনের চাপে পিষ্ট দর্শক অসহায়ের মতো রিমোটের বোতাম টিপে অস্থিরভাবে এক চ্যানেল থেকে আরেক চ্যানেলে চোখ রাখেন। কোথাও স্বস্তিতে নির্বিঘ্নে টানা কোন একটি নাটক কিংবা অনুষ্ঠান দেখবেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত- তার উপায় থাকে না। তিন-চার মিনিট ন্যাট্যাংশ দেখানোর পর শুরু হয় দশ-বারো মিনিটের বিজ্ঞাপনমালা। ফলে দর্শক ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন স্বাভাবিকভাবে। বাধ্য হয়ে অন্য চ্যানেল ভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা নাটকে চোখ রাখেন। আগে যা দেখছিলেন তা নিমিষেই মন থেকে মুছে যায়। নতুন যা দেখতে শুরু করেছেন তার পূর্বাপর কিছু ধরতে না পারায় তারও রস আস্বাদন করতে গিয়ে হোঁচট খান বারবার।

আমাদের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলো দর্শক রুচি, মেজাজ, পছন্দ ইত্যাদির তোয়াক্কা না করে বরাবরের মতোই তাদের ইচ্ছেমতো ঈদ অনুষ্ঠানমালা আয়োজন এবং প্রচার করে যাচ্ছে। ঈদ উৎসবের একটি অন্যতম আয়োজন হিসেবে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানমালা দেখার জন্য দর্শক অপেক্ষা করে থাকেন। কিন্তু প্রতি বছর প্রতারিত, হতাশ এবং বিরক্ত হন। এভাবেই চলছে প্রতি বছর। ফলে অনেক দর্শক এখন আর ঈদ উৎসবে বাইরে বেড়ানো, ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে আগের মতো টিভি অনুষ্ঠান দেখার জন্য বাড়ি বসে থাকেন না। তারা এক সময় ঈদের বিটিভির বিশেষ নাটক কিংবা আনন্দমেলা দেখার লোভে বাইরে আত্মীয়স্বজন অথবা বন্ধু-বান্ধবদের বাড়ির নিমন্ত্রণ উপেক্ষা করতেন, কোনভাবেই যাতে এগুলো মিস না হয় তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। অথচ এখন তাদের অনেকেই ঈদে টিভি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠানমালা দেখার কোন তাগিদ অনুভব করেন না, তাদেরকে ওই সময়টাতে টিভি রেখে আড্ডাবাজি, গল্পগুজবে মেতে উঠতে কিংবা ফেসবুকে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায় এখন।

এখন সবাই অবসর বিনোদনের জন্য শুধু টেলিভিশনের ওপর নির্ভর করছে না। এখন টেলিভিশনে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন চ্যানেলের বিচিত্র ধরনের অনুষ্ঠানমালা দেখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কোন চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখতে ভালো না লাগলে মুহূর্তেই আরেকটি চ্যানেলে চোখ রাখছে স্বাধীন দর্শক রিমোটের বোতাম টিপে। টিভি অনুষ্ঠান আকৃষ্ট করতে না পারলে মোবাইল ফোনে, ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারে প্রয়োজনীয় বিনোদন খুঁজে নিতে তৎপর হচ্ছে। ফেসবুক, টুইটার অথবা বিভিন্ন ওয়েব পোর্টালে ঢুঁ মারতে দেরি করছেন না।

এখন ঘরোয়া বিনোদনে দর্শকদের বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছে ওটিটি প্ল্যাটফরম। কিছুদিন আগেও দর্শক দেশি-বিদেশি বিভিন্ন টিভি চ্যানেল নির্ভর থাকলেও এই মুহূর্তে টিভি যেন দর্শকদের আগের মতো টানতে পারছে না, বরং দর্শক টিভি বিমুখ হয়ে পড়ছেন নানা সঙ্গত কারণে। দেশি-বিদেশি সব টিভি চ্যানেলের কন্টেন্টের বৈচিত্র্যহীনতা, একঘেয়ে পুরনো ট্র্যাকের গল্প-কাহিনী পরিবেশন, ঘুরে ফিরে কিছু নির্দিষ্ট জনপ্রিয় তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রীর পারফরম্যান্স সর্বোপরি অনুষ্ঠান প্রচারকালীন সময়ে কিছুক্ষণ পর পর বিজ্ঞাপনের মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রণা দর্শকদের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে। অনেকদিন ধরেই দর্শক বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের স্বেচ্ছাচারিতার কবল থেকে মুক্তি পেতে হাঁসফাঁস করছিলেন। দর্শকদের সেই অবস্থা থেকে বিকল্প ঘরোয়া বিনোদন প্ল্যাটফরম হিসেবে ওটিটি (ওভার দ্য টপ) স্বস্তির সুবাতাস বয়ে এনেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দর্শকরা এখন আমাজন প্রাইম ভিডিও, নেটফ্লিক্স, ডিজনি হটস্টার, জি ফাইভ, হইচই, সনি লিভ প্রভৃতি জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফরমে নিয়মিতভাবে নিত্যনতুন সিনেমা, ওয়েব সিরিজ এবং অন্যান্য কন্টেট দেখছেন।

বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফরমেও বাংলাদেশি নির্মাতাদের নির্মিত সিনেমা, ওয়েব সিরিজ আন্তর্জাতিক বলয়ে ছড়িয়ে পড়ছে খুব দ্রুত এবং সহজেই। এর পাশাপাশি বাংলাদেশি বেশ কিছু ওটিটি প্ল্যাটফরম আত্মপ্রকাশ করে কম সময়ের মধ্যে ব্যাপক সাড়া তুলতে সক্ষম হয়েছে। বৈচিত্র্যপূর্ণ, নিত্যনতুন চমক লাগানো গল্প কাহিনীর সময়োপযোগী আধুনিক নান্দনিক উপস্থাপন দর্শকদের চুম্বকের মতো আকর্ষণ করছে। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বিনোদনের জগতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ওয়েব সিরিজ। আজকাল ঘরোয়া বিনোদনে টিভি সিরিজ ও সিরিয়ালগুলো যেন দর্শকদের মন ভরাতে পারছে না আগের মতো। সেক্ষেত্রে ওটিটি প্ল্যাটফরম দর্শক রুচি ও চাহিদার আলোকে নিত্যনতুন বিষয় ভাবনার ওয়েব সিরিজ নিয়ে আসছে। যেখানে গল্পের নতুনত্ব, শিল্পীদের সাহসী খোলামেলা পারফরম্যান্স, আধুনিক চিন্তাচেতনার প্রকাশ সবাইকে খুব সহজেই আকৃষ্ট এবং আলোড়িত করছে। ফলে গত কয়েক বছরে ওয়েব সিরিজের তুমুল জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

একটা সময়ে বিটিভির নাটক, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, বিনোদনমূলক অন্যান্য আয়োজন দেখার জন্য ওপার বাংলার দর্শক অধীরভাবে অপেক্ষা করতেন আর তাদের মুখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা শোনা যেত সেইসব অনুষ্ঠান সম্পর্কে। বাংলাদেশ টিভি তারকাদের প্রচন্ড জনপ্রিয়তা ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গে, সেই সময়ে। ঈদ উৎসবে পাঁচ কিংবা সাত দিন ব্যাপী মেগা আয়োজনের ফলাফল কোনভাবেই আশাব্যঞ্জক নয়। আমরা যারা সাধারণ দর্শক, ঈদে বেড়ানো, ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে টিভি সেটের সামনে বসছি ভালো কিছু দেখার এবং মজাদার কিছু উপভোগের আশায়, তারা শুধুই প্রতারিত হচ্ছি, আমাদের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। আমরা হতাশ, বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধও বটে। আমাদের রুচি, পছন্দ, মেজাজ, ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ নেই টিভি চ্যানেলগুলোর। একই সঙ্গে টিভি নাটক, অনুষ্ঠান নির্মাতাদের কাছেও একান্ত অনুরোধ, দর্শক আসলে কি দেখতে চায় নাটক কিংবা অনুষ্ঠানে-এটা উপলব্ধি করতে চেষ্টা করুন, সমকালীন দর্শক রুচি, চিন্তা-ভাবনার অনুসারী হয়ে নাটকের কাহিনীর প্লট, চিত্রনাট্য তৈরি করুন তাহলে দর্শক আর মুখ ফিরিয়ে নেবে না-আগ্রহ, উৎসাহ, কৌতূহল নিয়ে আমাদের নির্মিত নাটক এবং অনুষ্ঠান দেখবে।

এবারের ঈদ উৎসবে আমাদের দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলো নানা অনুষ্ঠানমালায় সাজিয়ে তুলবে। তাদের ঈদ আয়োজনের বিভিন্ন নমুনার টুকটাক ঝলক দেখানো হচ্ছে দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য। তবে দর্শক হিসেবে গত বেশ কয়েক বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই, সবাইকে বোকা বানানোর দিন নেই আগের মতো। দর্শক এখন শুধু টেলিভিশন নিয়ে পড়ে থাকে না বিনোদনের জন্য। তাদের হাতের নাগালের মধ্যে এসে গেছে বিনোদনের বিকল্প নানা মাধ্যম।

কিন্তু আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোর ঈদ অনুষ্ঠান প্রচারের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারী তুঘলকি মনোভাব বদলায়নি মোটেও। নিজেদের অতি মুনাফা অর্জনের বাণিজ্যিক মানসিকতা দর্শকদের জন্য নির্যাতনের শামিল হয়ে উঠেছে। এটা নিয়ন্ত্রণে কারও কোন তৎপরতা নেই। হ্যাঁ, এখন দর্শক আগের অসহায় অবস্থায় নেই। বিকল্প বিনোদন মাধ্যমে রয়েছে তাদের কাছে। চাইলে দেশি টিভি চ্যানেলের ঈদ অনুষ্ঠানমালা তারা বর্জন করতে পারেন। এতে করে চ্যানেলগুলোর পাঁচ দিন-সাত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা প্রচারের সার্থকতা কোথায়? ঈদ উৎসবকে বর্ণাঢ্য, আনন্দময় উপভোগ্য করে তুলতে আমরা নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি অনুরক্ত থেকে দেশীয় টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানমালা দেখতে চাই। আর সেজন্য চ্যানেল কর্তৃপক্ষের সচেতনতা চাই এবং তাদের অতি মুনাফালোভী মনোভাবের অবসান কামনা করছি। আজেবাজে যাচ্ছেতাই মানের নাটক আর অনুষ্ঠান দিয়ে দর্শকদের মনোরঞ্জনের অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে।

[ লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ]

বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২ , ১৫ বৈশাখ ১৪২৮ ২৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

আনন্দ উৎসব ও ছোট পর্দার বিনোদন

রেজাউল করিম খোকন

ঈদ উৎসবে বিশেষ করে ছোট পর্দায় বিনোদনের অন্যতম উপকরণ হলো টিভি অনুষ্ঠানমালা। গত কয়েক যুগ ধরে বাংলাদেশে শহর, বন্দর, গ্রামের মানুষ ঈদ উৎসবে টিভি পর্দায় পরিবেশিত হরেক রকম অনুষ্ঠানমালা দেখার অপেক্ষায় থাকে। এটা ঈদ উৎসবের একটি অন্যতম বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অতীতে যখন বাংলাদেশে একটি মাত্র টিভি চ্যানেল ছিল, সেই একমাত্র চ্যানেল বিটিভির ঈদ আয়োজনে মেতে উঠতেন দর্শক। কোন বিশেষ শ্রেণী কিংবা বয়সের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না বিটিভির ঈদ আনন্দ আয়োজনের নানা সম্ভার।

একটা সময় গেছে যখন ঈদ মানেই দর্শক বুঝতেন আমজাদ হোসেনের জব্বর আলি সিরিজের দম ফাটানো হাসির নাটক, আবদুল্লাহ আবু সাঈদের জমকালো আনন্দমেলা, রুনা লায়লা-সাবিনা ইয়াসমিনের বিশেষ একক সঙ্গীতানুষ্ঠান, ঈদের বিশেষ পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলাছবি প্রভৃতি। তখন সাত দিন ধরে ঈদ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন না থাকলেও বিটিভির দু’দিনের ঈদ আয়োজনে দর্শক পরিপূর্ণ বিনোদন তৃপ্তি লাভ করতেন। ধনী, গরিব, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত, শিক্ষিত, অশিক্ষিত সব শ্রেণীর দর্শক বিটিভির ঈদের অনুষ্ঠান দেখে আনন্দে ভাসতেন। ঘরে ঘরে আনন্দের রেশ থাকত বেশ ক’দিন ধরে। এবারও দেশের প্রায় দুই ডজন টিভি চ্যানেল ঈদ উৎসবে পাঁচ থেকে সাত দিনব্যাপী নানা ধরনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। টিভি চ্যানেলগুলোর এই মেগা আয়োজনে নাটকের সংখ্যাই বেশি।

একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ছোট পর্দার দর্শকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে টিভি নাটক। দর্শক পছন্দের কথা বিবেচনা করেই টিভি চ্যানেলগুলো হরেক রকমের নাটক সম্ভার দিয়ে সাজিয়েছে তাদের ঈদ অনুষ্ঠানমালা। এর মধ্যে হাসির নাটক, প্রেমের নাটক, বিরহের নাটক, পারিবারিক গল্প প্রধান নাটকের পাশাপাশি অ্যাকশন থ্রিলার, হরর ধাচের ভৌতিক গল্পের নাটকও রয়েছে। আবার কোন কোন টিভি চ্যানেলে নিরীক্ষাধর্মী ইন্টেলেকচ্যুয়াল টাইপের নাটকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ঈদের ছুটিতে ছোট পর্দায় বিনোদনপিয়াসী কোটি কোটি টিভি দর্শক অনেক প্রত্যাশায় চোখ রাখলেও তারা কতটা আনন্দ উপভোগ করতে পারছেন সেটাই হলো প্রশ্ন।

গত কয়েক বছর ধরে ঈদ অনুষ্ঠানমালায় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে চোখ রাখতে গিয়ে বারবার মনে প্রশ্ন জেগেছে, অনেক সময় আর অর্থ ব্যয়ে নির্মিত এত হাজার হাজার শিল্পী, কলাকুশলীর মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রমের ফসল অগণিত নাটকের মধ্যে কটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শকের মন ছুঁয়ে যেতে পারছে? বেশিরভাগ নাটকের দুর্বল ও নিম্নমানের গল্প, দায়সারা নামকাওয়াস্তে অভিনয় আর আপত্তিকর বক্তব্য দর্শকদের শুধুই হতাশ এবং বিরক্ত করেছে। তরুণ-তরুণীর প্রেম-ভালোবাসা, বিয়ে কিংবা প্রাত্যাহিক জীবনযাপনের নানা ঘটনা নাটকে তুলে ধরতে গিয়ে এমন সব কা-কীর্তির অবতরণা করা হয়েছে বা হচ্ছে তা ভদ্র রুচিশীল মানুষের পক্ষে সহজভাবে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। কমেডি নাটকে নির্মল হাসি আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষণীয় কিছু বিষয় তুলে ধরা হবে-দর্শক এমনটি প্রত্যাশা করলেও ঈদ অনুষ্ঠান আয়োজনে অশালীন, আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি, ভাঁড়ামো সংলাপ সমৃদ্ধ প্রচুর নাটক দেখা গেছে অনেক চ্যানেলে, যা আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক সুস্থ পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

ঈদে দর্শকদের সঙ্গে প্রতারণা আর ছলনার আরেকটি নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল। সেটি হলো, এক ঘণ্টা সোয়া ঘণ্টার একটি এক খন্ডের নাটক ছয়-সাত পর্বে বিভক্ত করে ছয়-সাত দিন ধরে দেখানোর অদ্ভুত প্রচেষ্টা। যেখানে দর্শক নাটকটি একখন্ডে একবারে দেখে শেষ করতে পারত এখন পুরো নাটকটি দেখতে ছয়-সাত দিন ধরে অপেক্ষা করে বসে থাকতে হচ্ছে। সব দর্শকদের পক্ষে সব পর্ব দেখার সময় প্রয়োজনীয় সময় এবং সুযোগ বের করটা অবশ্যই কঠিন ব্যাপার সন্দেহ নেই। ফলে নাটকটি দেখার ইচ্ছা থাকলেও অনেক দর্শকের পক্ষে তা দেখা সম্ভব হয় না।

প্রতিবার ঈদ এলে আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো পাঁচ দিন-সাত দিনব্যাপী মেগা অনুষ্ঠানমালা আয়োজনের প্রতিযোগিতায় নামে। তাদের লক্ষ্য দর্শকদের পরিপূর্ণ আনন্দ আয়োজন নিশ্চিত করা নয়। তাদের টার্গেট হলো সর্বোচ্চ সংখ্যক বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে যতটা সম্ভব বেশি মুনাফা অর্জন। আর বিজ্ঞাপনের চাপে পিষ্ট দর্শক অসহায়ের মতো রিমোটের বোতাম টিপে অস্থিরভাবে এক চ্যানেল থেকে আরেক চ্যানেলে চোখ রাখেন। কোথাও স্বস্তিতে নির্বিঘ্নে টানা কোন একটি নাটক কিংবা অনুষ্ঠান দেখবেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত- তার উপায় থাকে না। তিন-চার মিনিট ন্যাট্যাংশ দেখানোর পর শুরু হয় দশ-বারো মিনিটের বিজ্ঞাপনমালা। ফলে দর্শক ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন স্বাভাবিকভাবে। বাধ্য হয়ে অন্য চ্যানেল ভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা নাটকে চোখ রাখেন। আগে যা দেখছিলেন তা নিমিষেই মন থেকে মুছে যায়। নতুন যা দেখতে শুরু করেছেন তার পূর্বাপর কিছু ধরতে না পারায় তারও রস আস্বাদন করতে গিয়ে হোঁচট খান বারবার।

আমাদের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলো দর্শক রুচি, মেজাজ, পছন্দ ইত্যাদির তোয়াক্কা না করে বরাবরের মতোই তাদের ইচ্ছেমতো ঈদ অনুষ্ঠানমালা আয়োজন এবং প্রচার করে যাচ্ছে। ঈদ উৎসবের একটি অন্যতম আয়োজন হিসেবে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানমালা দেখার জন্য দর্শক অপেক্ষা করে থাকেন। কিন্তু প্রতি বছর প্রতারিত, হতাশ এবং বিরক্ত হন। এভাবেই চলছে প্রতি বছর। ফলে অনেক দর্শক এখন আর ঈদ উৎসবে বাইরে বেড়ানো, ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে আগের মতো টিভি অনুষ্ঠান দেখার জন্য বাড়ি বসে থাকেন না। তারা এক সময় ঈদের বিটিভির বিশেষ নাটক কিংবা আনন্দমেলা দেখার লোভে বাইরে আত্মীয়স্বজন অথবা বন্ধু-বান্ধবদের বাড়ির নিমন্ত্রণ উপেক্ষা করতেন, কোনভাবেই যাতে এগুলো মিস না হয় তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। অথচ এখন তাদের অনেকেই ঈদে টিভি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠানমালা দেখার কোন তাগিদ অনুভব করেন না, তাদেরকে ওই সময়টাতে টিভি রেখে আড্ডাবাজি, গল্পগুজবে মেতে উঠতে কিংবা ফেসবুকে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায় এখন।

এখন সবাই অবসর বিনোদনের জন্য শুধু টেলিভিশনের ওপর নির্ভর করছে না। এখন টেলিভিশনে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন চ্যানেলের বিচিত্র ধরনের অনুষ্ঠানমালা দেখার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কোন চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখতে ভালো না লাগলে মুহূর্তেই আরেকটি চ্যানেলে চোখ রাখছে স্বাধীন দর্শক রিমোটের বোতাম টিপে। টিভি অনুষ্ঠান আকৃষ্ট করতে না পারলে মোবাইল ফোনে, ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারে প্রয়োজনীয় বিনোদন খুঁজে নিতে তৎপর হচ্ছে। ফেসবুক, টুইটার অথবা বিভিন্ন ওয়েব পোর্টালে ঢুঁ মারতে দেরি করছেন না।

এখন ঘরোয়া বিনোদনে দর্শকদের বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছে ওটিটি প্ল্যাটফরম। কিছুদিন আগেও দর্শক দেশি-বিদেশি বিভিন্ন টিভি চ্যানেল নির্ভর থাকলেও এই মুহূর্তে টিভি যেন দর্শকদের আগের মতো টানতে পারছে না, বরং দর্শক টিভি বিমুখ হয়ে পড়ছেন নানা সঙ্গত কারণে। দেশি-বিদেশি সব টিভি চ্যানেলের কন্টেন্টের বৈচিত্র্যহীনতা, একঘেয়ে পুরনো ট্র্যাকের গল্প-কাহিনী পরিবেশন, ঘুরে ফিরে কিছু নির্দিষ্ট জনপ্রিয় তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রীর পারফরম্যান্স সর্বোপরি অনুষ্ঠান প্রচারকালীন সময়ে কিছুক্ষণ পর পর বিজ্ঞাপনের মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রণা দর্শকদের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে। অনেকদিন ধরেই দর্শক বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের স্বেচ্ছাচারিতার কবল থেকে মুক্তি পেতে হাঁসফাঁস করছিলেন। দর্শকদের সেই অবস্থা থেকে বিকল্প ঘরোয়া বিনোদন প্ল্যাটফরম হিসেবে ওটিটি (ওভার দ্য টপ) স্বস্তির সুবাতাস বয়ে এনেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দর্শকরা এখন আমাজন প্রাইম ভিডিও, নেটফ্লিক্স, ডিজনি হটস্টার, জি ফাইভ, হইচই, সনি লিভ প্রভৃতি জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফরমে নিয়মিতভাবে নিত্যনতুন সিনেমা, ওয়েব সিরিজ এবং অন্যান্য কন্টেট দেখছেন।

বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফরমেও বাংলাদেশি নির্মাতাদের নির্মিত সিনেমা, ওয়েব সিরিজ আন্তর্জাতিক বলয়ে ছড়িয়ে পড়ছে খুব দ্রুত এবং সহজেই। এর পাশাপাশি বাংলাদেশি বেশ কিছু ওটিটি প্ল্যাটফরম আত্মপ্রকাশ করে কম সময়ের মধ্যে ব্যাপক সাড়া তুলতে সক্ষম হয়েছে। বৈচিত্র্যপূর্ণ, নিত্যনতুন চমক লাগানো গল্প কাহিনীর সময়োপযোগী আধুনিক নান্দনিক উপস্থাপন দর্শকদের চুম্বকের মতো আকর্ষণ করছে। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বিনোদনের জগতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ওয়েব সিরিজ। আজকাল ঘরোয়া বিনোদনে টিভি সিরিজ ও সিরিয়ালগুলো যেন দর্শকদের মন ভরাতে পারছে না আগের মতো। সেক্ষেত্রে ওটিটি প্ল্যাটফরম দর্শক রুচি ও চাহিদার আলোকে নিত্যনতুন বিষয় ভাবনার ওয়েব সিরিজ নিয়ে আসছে। যেখানে গল্পের নতুনত্ব, শিল্পীদের সাহসী খোলামেলা পারফরম্যান্স, আধুনিক চিন্তাচেতনার প্রকাশ সবাইকে খুব সহজেই আকৃষ্ট এবং আলোড়িত করছে। ফলে গত কয়েক বছরে ওয়েব সিরিজের তুমুল জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

একটা সময়ে বিটিভির নাটক, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, বিনোদনমূলক অন্যান্য আয়োজন দেখার জন্য ওপার বাংলার দর্শক অধীরভাবে অপেক্ষা করতেন আর তাদের মুখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা শোনা যেত সেইসব অনুষ্ঠান সম্পর্কে। বাংলাদেশ টিভি তারকাদের প্রচন্ড জনপ্রিয়তা ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গে, সেই সময়ে। ঈদ উৎসবে পাঁচ কিংবা সাত দিন ব্যাপী মেগা আয়োজনের ফলাফল কোনভাবেই আশাব্যঞ্জক নয়। আমরা যারা সাধারণ দর্শক, ঈদে বেড়ানো, ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে টিভি সেটের সামনে বসছি ভালো কিছু দেখার এবং মজাদার কিছু উপভোগের আশায়, তারা শুধুই প্রতারিত হচ্ছি, আমাদের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে। আমরা হতাশ, বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধও বটে। আমাদের রুচি, পছন্দ, মেজাজ, ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ নেই টিভি চ্যানেলগুলোর। একই সঙ্গে টিভি নাটক, অনুষ্ঠান নির্মাতাদের কাছেও একান্ত অনুরোধ, দর্শক আসলে কি দেখতে চায় নাটক কিংবা অনুষ্ঠানে-এটা উপলব্ধি করতে চেষ্টা করুন, সমকালীন দর্শক রুচি, চিন্তা-ভাবনার অনুসারী হয়ে নাটকের কাহিনীর প্লট, চিত্রনাট্য তৈরি করুন তাহলে দর্শক আর মুখ ফিরিয়ে নেবে না-আগ্রহ, উৎসাহ, কৌতূহল নিয়ে আমাদের নির্মিত নাটক এবং অনুষ্ঠান দেখবে।

এবারের ঈদ উৎসবে আমাদের দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলো নানা অনুষ্ঠানমালায় সাজিয়ে তুলবে। তাদের ঈদ আয়োজনের বিভিন্ন নমুনার টুকটাক ঝলক দেখানো হচ্ছে দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য। তবে দর্শক হিসেবে গত বেশ কয়েক বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই, সবাইকে বোকা বানানোর দিন নেই আগের মতো। দর্শক এখন শুধু টেলিভিশন নিয়ে পড়ে থাকে না বিনোদনের জন্য। তাদের হাতের নাগালের মধ্যে এসে গেছে বিনোদনের বিকল্প নানা মাধ্যম।

কিন্তু আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোর ঈদ অনুষ্ঠান প্রচারের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারী তুঘলকি মনোভাব বদলায়নি মোটেও। নিজেদের অতি মুনাফা অর্জনের বাণিজ্যিক মানসিকতা দর্শকদের জন্য নির্যাতনের শামিল হয়ে উঠেছে। এটা নিয়ন্ত্রণে কারও কোন তৎপরতা নেই। হ্যাঁ, এখন দর্শক আগের অসহায় অবস্থায় নেই। বিকল্প বিনোদন মাধ্যমে রয়েছে তাদের কাছে। চাইলে দেশি টিভি চ্যানেলের ঈদ অনুষ্ঠানমালা তারা বর্জন করতে পারেন। এতে করে চ্যানেলগুলোর পাঁচ দিন-সাত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা প্রচারের সার্থকতা কোথায়? ঈদ উৎসবকে বর্ণাঢ্য, আনন্দময় উপভোগ্য করে তুলতে আমরা নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি অনুরক্ত থেকে দেশীয় টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানমালা দেখতে চাই। আর সেজন্য চ্যানেল কর্তৃপক্ষের সচেতনতা চাই এবং তাদের অতি মুনাফালোভী মনোভাবের অবসান কামনা করছি। আজেবাজে যাচ্ছেতাই মানের নাটক আর অনুষ্ঠান দিয়ে দর্শকদের মনোরঞ্জনের অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে।

[ লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ]