প্রাথমিকে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ সময়ের দাবি

এস এম আতিয়ার রহমান

গত ৫০ বছরে প্রথমিক শিক্ষার উন্নয়নে নানা ধরনের পটপরিবর্তন, নানা কৌশল অবলম্বন, শিখন ও শিক্ষণের ধরনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। তারপরও প্রাথমিকে শিক্ষার মান কাক্সিক্ষত পর্যায়ে এখনও পৌঁছেনি। বিশেষ করে প্রাথমিক পাস করা শিক্ষার্থী যখন মাধ্যমিকে ভর্তি হচ্ছে তখন সেখানকার অনেক বিজ্ঞ শিক্ষক অভিমত ব্যক্ত করেন যে, ওইসব শিক্ষার্থীর ভিত্তি দুর্বল রয়েছে। আবার মাধ্যমিক পাস শিক্ষার্থী যখন কলেজে ভর্তি হচ্ছে তখন একইভাবে অনেক শিক্ষক বলছেন তাদের শিক্ষার মান তত ভালো নয়। শিক্ষার বুনিয়াদে দুর্বলতা রয়েছে। আবার এইচএসসি ও সমমানের পাস যারা ডিগ্রি বা অনার্সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে সেখানেও শোনা যায় একই কথা। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বেসিক দুর্বলতার সঙ্গে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ধরা পড়ছে তাদের ভাষাজ্ঞান ও ব্যবহারিক শিক্ষার ক্ষেত্রে। বাংলা, ইংরেজি ও অংকে ব্যুৎপত্তিগত ঘাটতি নানাভাবে অনুধাবন করা যায়। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ক্লাসের পাশাপাশি সেশনাল এবং ল্যাবে বেশ কাজ হচ্ছে।

প্রাথমিকে এখন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ সময়ের দাবি। শিক্ষক নিয়োগে এ সিদ্ধান্ত পাল্টে দিতে পারে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি। এ বিষয়ে বিস্তারিত বলার আগে দেখা যাক প্রাথমিকে কি কি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন সবচেয়ে জরুরি। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষায় বড় প্রয়োজন বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি এ তিনটি বিষয়ে ভালোভাবে শিক্ষাদান। বলা যায় মৌলিক এ তিনটি বিষয়ে যদি শিশুর ভিত্তি ভালো হয় তা হলে পরবর্তী সময়ে সে অনেকটা একাই চলতে, শিখতে পারে।

প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে এই তিনটি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভালো জ্ঞান নিয়ে পরবর্তী স্তর তথা মাধ্যমিকে প্রবেশ করানো দরকার। এর সঙ্গে নৈতিক শিক্ষার বিষয়টিও জরুরি। জাপানে তো প্রাক-প্রাথমিকে বা প্রাথমিকে শিষ্টাচার, নীতি-নৈতিকতা, খেলার ছলে শিক্ষা ও কিছু বিষয়ের বাস্তব জ্ঞান ও পরিচিতি বলবৎ রয়েছে, যা হোক, যে বিষয়টি নিয়ে অবতারণা, তা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষায় বাংলা, অঙ্ক এবং ইংরেজি বিষয়ে ভালো শেখাতে হলে ভালো শিক্ষক দরকার।

দেশে এখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট বেকার রয়েছে। এর মধ্যে বাংলা, অঙ্ক ও ইংরেজি বিষয়ে অনার্স নিয়ে পাস এবং একই বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনকারী হাজার হাজার ডিগ্রিধারীও রয়েছেন। যদি প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়েগে এ তিনটি বিষয়ে অনার্স বা মাস্টার্স ডিগ্রিধারী যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করা যায় তবে বর্তমান অবস্থার চেয়ে এ তিনটি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যে ভালো শিখতে পারবে সেটা ধরে নেয়া যায়। মূল কথা প্রাথমিকে এখন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের সময় এসেছে। অন্তত উক্ত তিনটি বিষয়য়ে শিক্ষক নিয়োগ করে তা শুরু করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে যোগ্যতম শিক্ষক নিয়োগেই যে একেবারে রাতারাতি পরিবর্তন আসবে তা নয়, এর জন্য মনিটরিং দরকার। শিক্ষকদের নিবেদিতপ্রাণ হওয়া দরকার। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক শিক্ষা ও ক্লাসে ফিডব্যাক নিয়ে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা ঘোচানোর চেষ্টা করা দরকার।

একই সঙ্গে এমন একটি প্রজ্ঞাপন দরকার যে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের অবশ্যই সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করতে হবে। এর ফলে প্রাথমিকে শিক্ষার পরিবেশ উন্নতি হবে। শিক্ষকগণ সতর্ক ও আরও সচেষ্ট হবেন। দায়বদ্ধতা বাড়বে। যাই হোক প্রাথমিকে বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতম শিক্ষক নিয়োগ এখন সময়ের দাবি। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তিনটি বিষয়ের শিক্ষকদের জন্য পঠন-পাঠন কৌশলের ওপর ফাউন্ডেশন ট্রেইনিং দেয়া এবং তাদের মধ্যে চাইল্ড সাইকোলজি (শিশু মনস্তত্ব) ওপর জ্ঞান থাকতে হবে।

প্রাথমিকে বর্ণিত তিনটি বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগে নীতিমালায় সংশোধন বা সংযোজন আনতে তাদের বেতন স্কেলও পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষায় প্রধান শিক্ষকের প্রারম্ভিক বেতন স্কেল দ্বিতীয় শ্রেণী করে সেখানেও নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার পরিবর্তন আনা দরকার। একই সঙ্গে বাংলা, ইংরেজি এবং অঙ্ক বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনার্স ডিগ্রিধারীদের প্রারম্ভিক বেতন স্কেল দ্বিতীয় শ্রেণীর নিচের ধাপ এবং অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রিধারীদের জন্য দ্বিতীয় শ্রেণীর বেতন স্কেল নির্ধারণ করা যেতে পারে। সেটা সম্ভব না হলে যাদের এমন ডিগ্রি আছে তাদের অন্তত ২-৩টি ইনক্রিমেন্ট দেয়া যেতে পারে। এসব শিক্ষক নিয়োগে একটি শর্তজুড়ে দেয়া যায় নিয়োগের পর অন্তত ১০ বছর তারা অন্য কোথাও যেতে পারবে না এবং তাদের পিটিআইতে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

শিক্ষার গুণগতমান বা বিশ্বমান অর্জনের জন্য আমাদের শুধু ওপরের স্তরের ভাবনা বা পরিবর্তনের কথা ভাবলে চলবে না, বরং এখন থেকে একেবারে প্রাথমিক স্তর নিয়েই শুরু করতে হবে, যার ফল পাওয়া যাবে আরও ১০-২০ বছর পর। মূলত আমাদের শিক্ষার গুণগত মৌলিক পরিবর্তন আনতে হলে প্রাথমিক শিক্ষার মানের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রাথমিক স্কুলের একটি শ্রেণীকক্ষকে স্মার্ট ক্লাসরুম হিসেবে তৈরি করতে হবে, যাতে শিশুদের প্রযুক্তি-পরিবেশ সম্পর্কেও কিছুটা ধারণা পায়। সে সঙ্গে প্রাথমিকের শিক্ষকদের মর্যাদা ও আর্থসামাজিক অবস্থার কথাও বিবেচনায় নিতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ব্যবস্থাপনার সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব জাতি গঠনের অন্যতম নিয়ামক শিক্ষকদের ওপরই। এ সত্য অনুধাবন করেই পাঠদানে তাদের নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে।

মনে রাখা দরকার প্রাথমিক শিক্ষাই একটি শিক্ষিত জাতি গঠনে মূল ভিত্তি। শিক্ষকতা চাকরি নয়, মহান ব্রত। যাদের সেই ব্রত আছে তাদেরই আসা উচিত এ মহান পেশায়। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো খুবই জরুরি। তাহলেই প্রকৃতপক্ষে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি সুদৃঢ় হতে পারে এবং যা আমাদের শিক্ষার মান বিশ্বমানে উন্নীত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

[লেখক : পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়]

বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২ , ১৫ বৈশাখ ১৪২৮ ২৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

প্রাথমিকে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ সময়ের দাবি

এস এম আতিয়ার রহমান

গত ৫০ বছরে প্রথমিক শিক্ষার উন্নয়নে নানা ধরনের পটপরিবর্তন, নানা কৌশল অবলম্বন, শিখন ও শিক্ষণের ধরনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। তারপরও প্রাথমিকে শিক্ষার মান কাক্সিক্ষত পর্যায়ে এখনও পৌঁছেনি। বিশেষ করে প্রাথমিক পাস করা শিক্ষার্থী যখন মাধ্যমিকে ভর্তি হচ্ছে তখন সেখানকার অনেক বিজ্ঞ শিক্ষক অভিমত ব্যক্ত করেন যে, ওইসব শিক্ষার্থীর ভিত্তি দুর্বল রয়েছে। আবার মাধ্যমিক পাস শিক্ষার্থী যখন কলেজে ভর্তি হচ্ছে তখন একইভাবে অনেক শিক্ষক বলছেন তাদের শিক্ষার মান তত ভালো নয়। শিক্ষার বুনিয়াদে দুর্বলতা রয়েছে। আবার এইচএসসি ও সমমানের পাস যারা ডিগ্রি বা অনার্সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে সেখানেও শোনা যায় একই কথা। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বেসিক দুর্বলতার সঙ্গে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ধরা পড়ছে তাদের ভাষাজ্ঞান ও ব্যবহারিক শিক্ষার ক্ষেত্রে। বাংলা, ইংরেজি ও অংকে ব্যুৎপত্তিগত ঘাটতি নানাভাবে অনুধাবন করা যায়। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ক্লাসের পাশাপাশি সেশনাল এবং ল্যাবে বেশ কাজ হচ্ছে।

প্রাথমিকে এখন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ সময়ের দাবি। শিক্ষক নিয়োগে এ সিদ্ধান্ত পাল্টে দিতে পারে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি। এ বিষয়ে বিস্তারিত বলার আগে দেখা যাক প্রাথমিকে কি কি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন সবচেয়ে জরুরি। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষায় বড় প্রয়োজন বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি এ তিনটি বিষয়ে ভালোভাবে শিক্ষাদান। বলা যায় মৌলিক এ তিনটি বিষয়ে যদি শিশুর ভিত্তি ভালো হয় তা হলে পরবর্তী সময়ে সে অনেকটা একাই চলতে, শিখতে পারে।

প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে এই তিনটি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভালো জ্ঞান নিয়ে পরবর্তী স্তর তথা মাধ্যমিকে প্রবেশ করানো দরকার। এর সঙ্গে নৈতিক শিক্ষার বিষয়টিও জরুরি। জাপানে তো প্রাক-প্রাথমিকে বা প্রাথমিকে শিষ্টাচার, নীতি-নৈতিকতা, খেলার ছলে শিক্ষা ও কিছু বিষয়ের বাস্তব জ্ঞান ও পরিচিতি বলবৎ রয়েছে, যা হোক, যে বিষয়টি নিয়ে অবতারণা, তা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষায় বাংলা, অঙ্ক এবং ইংরেজি বিষয়ে ভালো শেখাতে হলে ভালো শিক্ষক দরকার।

দেশে এখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট বেকার রয়েছে। এর মধ্যে বাংলা, অঙ্ক ও ইংরেজি বিষয়ে অনার্স নিয়ে পাস এবং একই বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনকারী হাজার হাজার ডিগ্রিধারীও রয়েছেন। যদি প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়েগে এ তিনটি বিষয়ে অনার্স বা মাস্টার্স ডিগ্রিধারী যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করা যায় তবে বর্তমান অবস্থার চেয়ে এ তিনটি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যে ভালো শিখতে পারবে সেটা ধরে নেয়া যায়। মূল কথা প্রাথমিকে এখন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের সময় এসেছে। অন্তত উক্ত তিনটি বিষয়য়ে শিক্ষক নিয়োগ করে তা শুরু করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে যোগ্যতম শিক্ষক নিয়োগেই যে একেবারে রাতারাতি পরিবর্তন আসবে তা নয়, এর জন্য মনিটরিং দরকার। শিক্ষকদের নিবেদিতপ্রাণ হওয়া দরকার। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক শিক্ষা ও ক্লাসে ফিডব্যাক নিয়ে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা ঘোচানোর চেষ্টা করা দরকার।

একই সঙ্গে এমন একটি প্রজ্ঞাপন দরকার যে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের অবশ্যই সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করতে হবে। এর ফলে প্রাথমিকে শিক্ষার পরিবেশ উন্নতি হবে। শিক্ষকগণ সতর্ক ও আরও সচেষ্ট হবেন। দায়বদ্ধতা বাড়বে। যাই হোক প্রাথমিকে বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতম শিক্ষক নিয়োগ এখন সময়ের দাবি। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তিনটি বিষয়ের শিক্ষকদের জন্য পঠন-পাঠন কৌশলের ওপর ফাউন্ডেশন ট্রেইনিং দেয়া এবং তাদের মধ্যে চাইল্ড সাইকোলজি (শিশু মনস্তত্ব) ওপর জ্ঞান থাকতে হবে।

প্রাথমিকে বর্ণিত তিনটি বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগে নীতিমালায় সংশোধন বা সংযোজন আনতে তাদের বেতন স্কেলও পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষায় প্রধান শিক্ষকের প্রারম্ভিক বেতন স্কেল দ্বিতীয় শ্রেণী করে সেখানেও নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার পরিবর্তন আনা দরকার। একই সঙ্গে বাংলা, ইংরেজি এবং অঙ্ক বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনার্স ডিগ্রিধারীদের প্রারম্ভিক বেতন স্কেল দ্বিতীয় শ্রেণীর নিচের ধাপ এবং অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রিধারীদের জন্য দ্বিতীয় শ্রেণীর বেতন স্কেল নির্ধারণ করা যেতে পারে। সেটা সম্ভব না হলে যাদের এমন ডিগ্রি আছে তাদের অন্তত ২-৩টি ইনক্রিমেন্ট দেয়া যেতে পারে। এসব শিক্ষক নিয়োগে একটি শর্তজুড়ে দেয়া যায় নিয়োগের পর অন্তত ১০ বছর তারা অন্য কোথাও যেতে পারবে না এবং তাদের পিটিআইতে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

শিক্ষার গুণগতমান বা বিশ্বমান অর্জনের জন্য আমাদের শুধু ওপরের স্তরের ভাবনা বা পরিবর্তনের কথা ভাবলে চলবে না, বরং এখন থেকে একেবারে প্রাথমিক স্তর নিয়েই শুরু করতে হবে, যার ফল পাওয়া যাবে আরও ১০-২০ বছর পর। মূলত আমাদের শিক্ষার গুণগত মৌলিক পরিবর্তন আনতে হলে প্রাথমিক শিক্ষার মানের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রাথমিক স্কুলের একটি শ্রেণীকক্ষকে স্মার্ট ক্লাসরুম হিসেবে তৈরি করতে হবে, যাতে শিশুদের প্রযুক্তি-পরিবেশ সম্পর্কেও কিছুটা ধারণা পায়। সে সঙ্গে প্রাথমিকের শিক্ষকদের মর্যাদা ও আর্থসামাজিক অবস্থার কথাও বিবেচনায় নিতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ব্যবস্থাপনার সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব জাতি গঠনের অন্যতম নিয়ামক শিক্ষকদের ওপরই। এ সত্য অনুধাবন করেই পাঠদানে তাদের নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে।

মনে রাখা দরকার প্রাথমিক শিক্ষাই একটি শিক্ষিত জাতি গঠনে মূল ভিত্তি। শিক্ষকতা চাকরি নয়, মহান ব্রত। যাদের সেই ব্রত আছে তাদেরই আসা উচিত এ মহান পেশায়। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের পাশাপাশি তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো খুবই জরুরি। তাহলেই প্রকৃতপক্ষে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি সুদৃঢ় হতে পারে এবং যা আমাদের শিক্ষার মান বিশ্বমানে উন্নীত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

[লেখক : পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়]