ননএমপিও চোখে উৎসব

চিরঞ্জীব চ্যাটার্জী

গত হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব বৈশাখী উৎসব। শুরু হতে যাচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতরও। আর, বিভিন্ন সময়ে বাংলার পরতে-পরতে সারা বছর তো লেগেই থাকে হরেক রকম উৎসবের আমেজ।

শত অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার ভেতর দিয়েও আবহমানকাল থেকে বাঙালির সামজিক এ উৎসব প্রিয়তার সুনাম বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। অবশ্য, গত এক দশকে বাংলাদেশ নামক দেশটি অর্থনীতির ভিতও বিশ্ব মানচিত্রে অনেকটা পথ এগিয়েছে।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উত্তর সময়েও শিক্ষা ক্ষেত্রে ননএমপিও নামক একটি অভিশপ্ত শব্দের বিলোপ এ মাটিতে এখনো সম্ভবপর হয়ে ওঠে নিবরং, বৎসরের পর বৎসর এই শিক্ষকদের যেন কোন আনন্দ থাকতে নেই, বেদনাময় জীবনপ্রবাহেই যেন তাদের রাষ্ট্রস্বীকৃত একটি বিধান। তাই তো দেশে যখনই শুরু হয়

উৎসব-উৎসব আমেজ, এই শব্দ অভিশাপেই তখন যেন লক্ষাধিক শিক্ষকের চোখে ভেসে ওঠে অন্ধকারময় এক-একটি দুঃসপ্নের রাত!

কিন্তু কেন, কার স্বার্থ রক্ষায় একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থায় এ অমানবিক বৈষম্যের শিকার ননএমপিও শিক্ষক সমাজ? একই শিক্ষাব্যবস্থার অর্থনৈতিক কাঠামোতে এত বিভিন্নতা পৃথিবীর আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। একই শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, এমপিও-ননএমপিও ইত্যাদি বৈষম্য। বিশেষ করে, এর মধ্যে ননএমপিও নামক শব্দের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের রাষ্ট্রস্বীকৃত কোন আর্থিক মূল্য নেই। এমন কি, সমাজিক অসম্মানেও এই শিক্ষকরা (ননএমপিও) দেশে এখন শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে চলছ বলে মনে হয়! উল্লেখ্য, এই ননএমপিও শিক্ষকদের ভেতরও আবার বিভাজন আছে। যেমন: ননএমপিও প্রতিষ্ঠানের ননএমপিও শিক্ষক এবং এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ননএমপিও শিক্ষক।

গত বছর অবশ্য এই ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৮০০ প্রতিষ্ঠান বর্তমান সরকারের আন্তরিকতায় এমপিও সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু, এ বৈশ্বিক মহামারী পরিস্থিতিতে সবচেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ননএমপিও শিক্ষকবৃন্দ। পূর্বে কলেজের নিজস্ব তহবিল হতে যৎসামান্য সম্মানী দেয়া হলেও বর্তমানে অধিকাংশ কলেজ ফান্ড শূন্য হওয়ায় সে যৎসামান্য সম্মানীও বন্ধ হয়ে পড়েছে। কেননা, দীর্ঘ দিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হলেও শিক্ষার্থী প্রদত্ত বেতন নির্ভর ফান্ডে নতুন করে আর সেভাবে অর্থের জোগান হচ্ছে না।

এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে এই শ্রেণীর ননএমপিও শিক্ষক বলতে, কলেজ পর্যায়ে আছে বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ও ডিগ্রি ৩য় শিক্ষক। এছাড়া, স্কুল পর্যায়ে আছে বিভিন্ন অতিরিক্ত শ্রেণী শাখার ননএমপিও শিক্ষকবৃন্দ। অন্যদিকে, প্রায় ২ হাজার ৮০০ প্রতিষ্ঠান নতুন এমপিওভুক্তি পেলেও একটি বৃহৎ অংশ (প্রায় ৯ হাজার) এখনও এমপিও সুবিধার বাইরেই আছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, দেশ যেমনি এগিয়ে যাচ্ছে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই; তেমনি এটিও অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই, প্রিয় এ ভূমিতে এখনো সত্যিকারের সোনার সপ্ন বাস্তবায়ন পুরোপুরি সম্ভব হয়ে ওঠেনি!

যে সপ্নের বাস্তবায়ন হঠাৎ থমকে গিয়েছিল ৭৫ পরবর্তী দুঃসপ্নের রাতে! দীর্ঘকাল এ বেতন বঞ্চিত শিক্ষকদের উৎসব মানে- সম্মানহানির এ মহোৎসব দেখা চোখে-উৎসব মানে, আলোকের ঝরনাধারা-উৎসব মানে, নতুন এক-একটি সুখ সপ্নের আলিঙ্গন সেটি ভেসে উঠবে কি-না!

[লেখক : সেল সদস্য (তথ্য), বাংলাদেশ নিগৃহীত অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক পরিষদ]

বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২ , ১৫ বৈশাখ ১৪২৮ ২৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

ননএমপিও চোখে উৎসব

চিরঞ্জীব চ্যাটার্জী

গত হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব বৈশাখী উৎসব। শুরু হতে যাচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতরও। আর, বিভিন্ন সময়ে বাংলার পরতে-পরতে সারা বছর তো লেগেই থাকে হরেক রকম উৎসবের আমেজ।

শত অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার ভেতর দিয়েও আবহমানকাল থেকে বাঙালির সামজিক এ উৎসব প্রিয়তার সুনাম বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। অবশ্য, গত এক দশকে বাংলাদেশ নামক দেশটি অর্থনীতির ভিতও বিশ্ব মানচিত্রে অনেকটা পথ এগিয়েছে।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উত্তর সময়েও শিক্ষা ক্ষেত্রে ননএমপিও নামক একটি অভিশপ্ত শব্দের বিলোপ এ মাটিতে এখনো সম্ভবপর হয়ে ওঠে নিবরং, বৎসরের পর বৎসর এই শিক্ষকদের যেন কোন আনন্দ থাকতে নেই, বেদনাময় জীবনপ্রবাহেই যেন তাদের রাষ্ট্রস্বীকৃত একটি বিধান। তাই তো দেশে যখনই শুরু হয়

উৎসব-উৎসব আমেজ, এই শব্দ অভিশাপেই তখন যেন লক্ষাধিক শিক্ষকের চোখে ভেসে ওঠে অন্ধকারময় এক-একটি দুঃসপ্নের রাত!

কিন্তু কেন, কার স্বার্থ রক্ষায় একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থায় এ অমানবিক বৈষম্যের শিকার ননএমপিও শিক্ষক সমাজ? একই শিক্ষাব্যবস্থার অর্থনৈতিক কাঠামোতে এত বিভিন্নতা পৃথিবীর আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। একই শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, এমপিও-ননএমপিও ইত্যাদি বৈষম্য। বিশেষ করে, এর মধ্যে ননএমপিও নামক শব্দের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের রাষ্ট্রস্বীকৃত কোন আর্থিক মূল্য নেই। এমন কি, সমাজিক অসম্মানেও এই শিক্ষকরা (ননএমপিও) দেশে এখন শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে চলছ বলে মনে হয়! উল্লেখ্য, এই ননএমপিও শিক্ষকদের ভেতরও আবার বিভাজন আছে। যেমন: ননএমপিও প্রতিষ্ঠানের ননএমপিও শিক্ষক এবং এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ননএমপিও শিক্ষক।

গত বছর অবশ্য এই ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৮০০ প্রতিষ্ঠান বর্তমান সরকারের আন্তরিকতায় এমপিও সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু, এ বৈশ্বিক মহামারী পরিস্থিতিতে সবচেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ননএমপিও শিক্ষকবৃন্দ। পূর্বে কলেজের নিজস্ব তহবিল হতে যৎসামান্য সম্মানী দেয়া হলেও বর্তমানে অধিকাংশ কলেজ ফান্ড শূন্য হওয়ায় সে যৎসামান্য সম্মানীও বন্ধ হয়ে পড়েছে। কেননা, দীর্ঘ দিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হলেও শিক্ষার্থী প্রদত্ত বেতন নির্ভর ফান্ডে নতুন করে আর সেভাবে অর্থের জোগান হচ্ছে না।

এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে এই শ্রেণীর ননএমপিও শিক্ষক বলতে, কলেজ পর্যায়ে আছে বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ও ডিগ্রি ৩য় শিক্ষক। এছাড়া, স্কুল পর্যায়ে আছে বিভিন্ন অতিরিক্ত শ্রেণী শাখার ননএমপিও শিক্ষকবৃন্দ। অন্যদিকে, প্রায় ২ হাজার ৮০০ প্রতিষ্ঠান নতুন এমপিওভুক্তি পেলেও একটি বৃহৎ অংশ (প্রায় ৯ হাজার) এখনও এমপিও সুবিধার বাইরেই আছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, দেশ যেমনি এগিয়ে যাচ্ছে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই; তেমনি এটিও অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই, প্রিয় এ ভূমিতে এখনো সত্যিকারের সোনার সপ্ন বাস্তবায়ন পুরোপুরি সম্ভব হয়ে ওঠেনি!

যে সপ্নের বাস্তবায়ন হঠাৎ থমকে গিয়েছিল ৭৫ পরবর্তী দুঃসপ্নের রাতে! দীর্ঘকাল এ বেতন বঞ্চিত শিক্ষকদের উৎসব মানে- সম্মানহানির এ মহোৎসব দেখা চোখে-উৎসব মানে, আলোকের ঝরনাধারা-উৎসব মানে, নতুন এক-একটি সুখ সপ্নের আলিঙ্গন সেটি ভেসে উঠবে কি-না!

[লেখক : সেল সদস্য (তথ্য), বাংলাদেশ নিগৃহীত অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক পরিষদ]