ঈদের কবিতা

আছে পাতা, ধুধু সাদা

শিহাব সরকার

কী পড়ি অতো মনোযোগে

লেখা নেই, কাটাকুটি দাগ নেই

সামনে খোলা ধুধু সাদা পাতা

নিঃস্ব মানুষের জীবন যেমন, শূন্য সাদা।

সাদা পাতা বলে মূলত কিছু নেই

পাগলের অপবাদ নিয়ে ঘুরি

সাদা পাতা বলে মূলত কিছু নেই,

ভিতরের চোখ দিয়ে বাস্তব দেখা যায়।

কোথায় সেই চক্ষুজোড়া

পাতার ভিতরে আরো কত পাতা

জন্ম-মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী, কত ইতিহাস

আলতো হাত, ছিন্ন পাণ্ডুলিপি।

সাদা পাতার ওপাশে বাস্তব ছবি

বয়স বাড়ে, সাদা পাতা সাদা হয়

গ্রন্থাবলী থেকে অক্ষর মুছে আসে,

কথা হারায়, রঙ মুছে যায়।

আমার আছে পাতা, ধুধু সাদা।

ঈদের আকাশ

দিলারা হাফিজ

ঈদের আকাশ ফেটে গড়িয়ে পড়ছে

শতাব্দীর শোক স্রোতে লাল অস্তাচলে,

যাকিছু অভ্যেস এই প্রযুক্তি প্লাবনে

মনে হলো সব আমি ছুঁড়ে ফেলে দিতে

পারি উদভ্রান্ত জলে কিংবা নিখিলের

নিরালায় রেখে যেতে পারি অনায়াসে।

উৎসবের মায়া ছেড়ে যেতে পারি দূরে

ইতিহাস থেকে বহুদূরে, ঐতিহ্য-কুলায়,

তুমি ডাকো যদি ফের রঙের মেলায়

ইতি টেনে যেতে পারি মৃত্তিকার ঘরে।

জানো তো, এখানে নই আমি আত্যন্তিক,

সমস্ত ছেড়েছে এই অনঙ্গ শরীর,

নিঃস্বতার ঢল নামে আদিম অক্ষরে,

দীর্ঘ অন্টারিও লেক জুড়ে জল নয়,

একা আমি শুয়ে থাকি বরফের নিচে

বিদায়ের আগে-ভাগে কথায় কথায়

মানুষ যেমন কাঁদে, যতি চিহ্নহীন

আমারও সেরকম হয়, কেন হয়?

তোমার কি হতো অজগর ঘুম থেকে

আতকা যখন জেগে উঠতে, মা বলে?

মিন পলকে কেটেছি সাঁতার

আবদুর রাজ্জাক

গতরাতে একটি অসম্ভব খরগোশ তোমার তোমার সৌন্দর্যে

বিচরণ করেছি আর মীন পলকে কেটেছি সাঁতার

নরম জলে।

ক্ষতবিক্ষত দেখেছি তোমাকে, ক্ষরণও দেখেছি নির্বাক থেকে।

নিরুত্তর থেকেছে তোমার নিঃশব্দ দাহ,

শীতের পরিযায়ী গিয়েছি উড়ে বিদীর্ণ আয়না থেকে।

খুব খুব তুমি প্রার্থনা করো, আমার জন্য অফুরান কাঁদো,

আমি তোমাকে প্রতিদিন খুঁজি, অনন্ত পারাপারে খুঁজি।

না নেই,

তুমি কোথাও নেই।

পরিযায়ী তোমার, তোমার ছাদবাগানে নানা ফুল হয়ে ফুটেছি,

প্রতিটি ভোরে কতো স্পর্শে তুমি কোলে তুলে নাও-

সুবর্ণ আঁখির অলকে, নরম ঠোঁটের চুমুতে।

সারারাত উড়ে উড়ে তোমার কাননে ধবল দুধের মতো

গোলাপ হয়ে, শিহরিত হয়ে, শিহরন হয়ে

তোমার সুশ্রূষায় ঘুমায়ে পড়ি।

কোয়ান্টাম ফাঁদ

হাইকেল হাশমী

অদৃশ্য, অচেনা মধ্যাকর্ষণের শক্তি

আমাকে রেখেছে ভাসমান তোমার কক্ষপথে,

আমার জানা নেই তোমার গন্তব্য

কিন্তু অনুভব করি তোমার উপস্থিতি সর্বপরি

তুমি আছো অতিনিকটে না হয় বহু দূরে

আমার মনের মাঝে না হয় শত আলোক বছর দূরে,

তবুও-

আছে তো কোন একটি সম্পর্ক

আছে তো কোন একটি সম্বন্ধ,

ঘটছে এমন কিছু ক্রিয়া

যার আছে কিছু প্রতিক্রিয়া,

আর-

এটাকে কী নাম দিবো বলো?

একটি নামহীন অতিপ্রাকৃত অনুভূতি

মনে হয় পড়েছি কোয়ান্টাম ফাঁদে।

এখন বলতে পারি-

তোমার আমার মাঝে

দূরত্বের নেই কোনো স্থান,

তুমি আছো আমার সাথে

তুমি আছো আমার মাঝে!

মুগ্ধ মায়াপ্রপঞ্চ

অশোক কর

জলে ভিজে, রোদে পুড়ে দীর্ঘকাল, তবু কত দুর্বোধ্য বোধের সীমানা, কখনো তা এক টুকরো কাগজের চেয়ে ভারি, অবান্তর কথকতার জাল বুনে মিশে যায় দূরদূরান্তে, অবশেষ বলে বাকিকথা বলার অবকাশ থাকে না! তারপরও এইসব অসম্পূর্ণ ইচ্ছেদের খুঁজে খুঁজে একেকটা দুপুর, বিকেল গ্রাস করা নির্জনতা, একেকটা দীর্ঘশ্বাস-, তারাপুঞ্জের বিশালতাকেও ম্লান করে দেয়! বোধ কি এতটাই তীব্র, শাণিত ছুঁরির চেয়ে মসৃণ কাঁটে অপূর্ণ ইচ্ছাদের, অবাধ্য ঘরে ফেরা, জ্যোৎস্নাভেজা নিজের অচেনা মুখ, প্রতিক্ষণ এভাবে নিজেকে ভেঙে ভেঙে কাকে খোঁজা! সবকিছু এত অবান্তর, আলোকণারা এত অকৃপণ, সর্বস্ব হরণে আত্মপ্রতিদ্বন্দ্বী, অবান্তর অবিনাশী প্ররোচনা! ঈর্ষারা জমে থাকে নেশার কাঁচপাত্রের গায়ে, সর্বনাশ বিশাল মাকড়শার আটপায়ে নেমে আসে, সবকিছু ধূসর, প্রাণপ্রাচুর্যহীন বোবা অনুষঙ্গ, সবকিছু অলৌকিক সৌরসূত্রে বাঁধা...

দীর্ঘশ্বাস এতো মায়া জড়িয়ে রাখে?

যে ভ্রমণ হতে পারতো

শামীম আজাদ

কত কিছু ডুবে আছে

এ দু’চোখের কবরে।

আজ ভেসে উঠেছে এক উন্মাদ দুপুর।

সেদিন আমার

রিক্সা থামিয়ে দিয়েছিলে

মাথার উপরে শিরিশ গাছের পাতারা

কেঁপে উঠেছিলো

তারও উপরে আকাশে

বন্ধ হয়েছিলো পাখিদের ওড়াউড়ি।

পাখিশূন্য আকাশ যে কেবল

যুদ্ধক্ষেত্রের উপর থাকে

এ-কথা লীগ করা তোমাকে কে বোঝাবে!

আমি তো তোমার সনেট শুনতেও যাই না।

পেছনে কলা ভবনের ভাবালু দালানটা

ছাই হয়ে গিয়েছিলো

শূন্যস্থানে ভাসছিলো কেবল

সম্ভাব্য প্রণয়ের প্রাণহীন শব।

এদিকটায় ভিসি পাহারাদেয়া

পুলিশরাও ছিলো না

আমার মুখোমুখি হয়েছিলো

তোমার কপালের অবধ্য চুল।

আমি ছিলাম প্রশ্নহীন নিরুত্তর

কিছুই করিনি আমি-

এমনকি বৃদ্ধ চালককেও বলিনি,

বাবা আপনি চলেন তো!

তুমি আমার বিনয়কে দুর্বলতা ভেবে

চোখ বেয়ে ঠোঁটের কাছে একটি রক্তরঙা

আপেল নিয়ে উঠে এসেছিলে।

কিন্তু ফলটি দু’ভাগ করে খাবার আগেই

সাঁতারে পড়ে গেলে।

হাবুডুবু খেতে খেতে তারপর একদিন

আমার চোখের কবরে ডুবেই গিয়েছো।

আমাদের আর যৌথ ভ্রমণ হয় নি।

গোপাল সাঁইয়ের কবিতা-৩৭

কামরুল ইসলাম

শূন্যের ভেতরে এই বসবাস এখন ভালোই মনে হয়

আমার, খুব একঘেঁয়ে লাগলে বেরিয়ে আসি,

গাছের কচি ডালপালা সবুজ ওড়নার মতো এগিয়ে এলে

না-ভোটে পরাজিত একটি উটপাখির ছায়ায়

আশির্বাদের হাওয়া আসে; আমি টের পাই- এই

আবিরমাখা বাগানের বিস্তারিত গল্পে

আমার কোনো বিশ্বাস নেই আর। শিকারীর চোখ হয়ে

আবার শূন্য গোলকে ফিরে যাবার আগে

কানে আসে সুড়ঙ্গ থেকে সুড়ঙ্গে যাবার তেলওয়াত।

দূরে আত্মার জায়নামাজে শুয়ে আছে

সিঁদুরে মেঘের জলমাখা মোনাজাত...

ব্রহ্মাণ্ডের ইশকুল

মাসুদার রহমান

কলাপাতার উপরে বসে দোল খাচ্ছে সকালের রোদ

রাস্তা মাড়িয়ে

এইমাত্র সবুজ সাইকেল বালিকা দল বেঁধে চলে গেছে ইশকুলে

ঘাসের উপরে মুখ রেখে দু’টি ঘোড়া চড়ে খাচ্ছে ইতস্তত

তার পিছে

ইউনিফর্ম পরে উড়ছে এক ঝাঁক রঙিন ফড়িং

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা মাথার উপরে ধীরে উঠে আসবে

সূর্য

ইশকুলের রাগী হেডমাস্টার

নারী

এমরান কবির

অদূরে জ্বলছে বায়ু তার পাশে ধোঁয়া

চোখের ভেতরে কেন দুটি বৃত্ত শোয়া

স্বাধীন রূপক ইহা নয় তো প্রতীক

পতঙ্গের ভেতরে থাকা পতন-অধিক

পুরুষ পতঙ্গ চায় কেন আগুন এতো

সব জল চুষে নিয়ে ত্রিবেণী আপ্লুত

ছায়া থেকে ফিরে তবু তরুণ কবির ঘরে

পাখি যায় ছন্দ যায় কেশ যায় ঝরে

আখ্যানে জারক রস বৈঠা কেন তরীতে

আমার তবুও ভয়ানক ভয় নারীতে

বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২ , ১৫ বৈশাখ ১৪২৮ ২৬ রমাদ্বান ১৪৪৩

ঈদের কবিতা

আছে পাতা, ধুধু সাদা

শিহাব সরকার

কী পড়ি অতো মনোযোগে

লেখা নেই, কাটাকুটি দাগ নেই

সামনে খোলা ধুধু সাদা পাতা

নিঃস্ব মানুষের জীবন যেমন, শূন্য সাদা।

সাদা পাতা বলে মূলত কিছু নেই

পাগলের অপবাদ নিয়ে ঘুরি

সাদা পাতা বলে মূলত কিছু নেই,

ভিতরের চোখ দিয়ে বাস্তব দেখা যায়।

কোথায় সেই চক্ষুজোড়া

পাতার ভিতরে আরো কত পাতা

জন্ম-মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী, কত ইতিহাস

আলতো হাত, ছিন্ন পাণ্ডুলিপি।

সাদা পাতার ওপাশে বাস্তব ছবি

বয়স বাড়ে, সাদা পাতা সাদা হয়

গ্রন্থাবলী থেকে অক্ষর মুছে আসে,

কথা হারায়, রঙ মুছে যায়।

আমার আছে পাতা, ধুধু সাদা।

ঈদের আকাশ

দিলারা হাফিজ

ঈদের আকাশ ফেটে গড়িয়ে পড়ছে

শতাব্দীর শোক স্রোতে লাল অস্তাচলে,

যাকিছু অভ্যেস এই প্রযুক্তি প্লাবনে

মনে হলো সব আমি ছুঁড়ে ফেলে দিতে

পারি উদভ্রান্ত জলে কিংবা নিখিলের

নিরালায় রেখে যেতে পারি অনায়াসে।

উৎসবের মায়া ছেড়ে যেতে পারি দূরে

ইতিহাস থেকে বহুদূরে, ঐতিহ্য-কুলায়,

তুমি ডাকো যদি ফের রঙের মেলায়

ইতি টেনে যেতে পারি মৃত্তিকার ঘরে।

জানো তো, এখানে নই আমি আত্যন্তিক,

সমস্ত ছেড়েছে এই অনঙ্গ শরীর,

নিঃস্বতার ঢল নামে আদিম অক্ষরে,

দীর্ঘ অন্টারিও লেক জুড়ে জল নয়,

একা আমি শুয়ে থাকি বরফের নিচে

বিদায়ের আগে-ভাগে কথায় কথায়

মানুষ যেমন কাঁদে, যতি চিহ্নহীন

আমারও সেরকম হয়, কেন হয়?

তোমার কি হতো অজগর ঘুম থেকে

আতকা যখন জেগে উঠতে, মা বলে?

মিন পলকে কেটেছি সাঁতার

আবদুর রাজ্জাক

গতরাতে একটি অসম্ভব খরগোশ তোমার তোমার সৌন্দর্যে

বিচরণ করেছি আর মীন পলকে কেটেছি সাঁতার

নরম জলে।

ক্ষতবিক্ষত দেখেছি তোমাকে, ক্ষরণও দেখেছি নির্বাক থেকে।

নিরুত্তর থেকেছে তোমার নিঃশব্দ দাহ,

শীতের পরিযায়ী গিয়েছি উড়ে বিদীর্ণ আয়না থেকে।

খুব খুব তুমি প্রার্থনা করো, আমার জন্য অফুরান কাঁদো,

আমি তোমাকে প্রতিদিন খুঁজি, অনন্ত পারাপারে খুঁজি।

না নেই,

তুমি কোথাও নেই।

পরিযায়ী তোমার, তোমার ছাদবাগানে নানা ফুল হয়ে ফুটেছি,

প্রতিটি ভোরে কতো স্পর্শে তুমি কোলে তুলে নাও-

সুবর্ণ আঁখির অলকে, নরম ঠোঁটের চুমুতে।

সারারাত উড়ে উড়ে তোমার কাননে ধবল দুধের মতো

গোলাপ হয়ে, শিহরিত হয়ে, শিহরন হয়ে

তোমার সুশ্রূষায় ঘুমায়ে পড়ি।

কোয়ান্টাম ফাঁদ

হাইকেল হাশমী

অদৃশ্য, অচেনা মধ্যাকর্ষণের শক্তি

আমাকে রেখেছে ভাসমান তোমার কক্ষপথে,

আমার জানা নেই তোমার গন্তব্য

কিন্তু অনুভব করি তোমার উপস্থিতি সর্বপরি

তুমি আছো অতিনিকটে না হয় বহু দূরে

আমার মনের মাঝে না হয় শত আলোক বছর দূরে,

তবুও-

আছে তো কোন একটি সম্পর্ক

আছে তো কোন একটি সম্বন্ধ,

ঘটছে এমন কিছু ক্রিয়া

যার আছে কিছু প্রতিক্রিয়া,

আর-

এটাকে কী নাম দিবো বলো?

একটি নামহীন অতিপ্রাকৃত অনুভূতি

মনে হয় পড়েছি কোয়ান্টাম ফাঁদে।

এখন বলতে পারি-

তোমার আমার মাঝে

দূরত্বের নেই কোনো স্থান,

তুমি আছো আমার সাথে

তুমি আছো আমার মাঝে!

মুগ্ধ মায়াপ্রপঞ্চ

অশোক কর

জলে ভিজে, রোদে পুড়ে দীর্ঘকাল, তবু কত দুর্বোধ্য বোধের সীমানা, কখনো তা এক টুকরো কাগজের চেয়ে ভারি, অবান্তর কথকতার জাল বুনে মিশে যায় দূরদূরান্তে, অবশেষ বলে বাকিকথা বলার অবকাশ থাকে না! তারপরও এইসব অসম্পূর্ণ ইচ্ছেদের খুঁজে খুঁজে একেকটা দুপুর, বিকেল গ্রাস করা নির্জনতা, একেকটা দীর্ঘশ্বাস-, তারাপুঞ্জের বিশালতাকেও ম্লান করে দেয়! বোধ কি এতটাই তীব্র, শাণিত ছুঁরির চেয়ে মসৃণ কাঁটে অপূর্ণ ইচ্ছাদের, অবাধ্য ঘরে ফেরা, জ্যোৎস্নাভেজা নিজের অচেনা মুখ, প্রতিক্ষণ এভাবে নিজেকে ভেঙে ভেঙে কাকে খোঁজা! সবকিছু এত অবান্তর, আলোকণারা এত অকৃপণ, সর্বস্ব হরণে আত্মপ্রতিদ্বন্দ্বী, অবান্তর অবিনাশী প্ররোচনা! ঈর্ষারা জমে থাকে নেশার কাঁচপাত্রের গায়ে, সর্বনাশ বিশাল মাকড়শার আটপায়ে নেমে আসে, সবকিছু ধূসর, প্রাণপ্রাচুর্যহীন বোবা অনুষঙ্গ, সবকিছু অলৌকিক সৌরসূত্রে বাঁধা...

দীর্ঘশ্বাস এতো মায়া জড়িয়ে রাখে?

যে ভ্রমণ হতে পারতো

শামীম আজাদ

কত কিছু ডুবে আছে

এ দু’চোখের কবরে।

আজ ভেসে উঠেছে এক উন্মাদ দুপুর।

সেদিন আমার

রিক্সা থামিয়ে দিয়েছিলে

মাথার উপরে শিরিশ গাছের পাতারা

কেঁপে উঠেছিলো

তারও উপরে আকাশে

বন্ধ হয়েছিলো পাখিদের ওড়াউড়ি।

পাখিশূন্য আকাশ যে কেবল

যুদ্ধক্ষেত্রের উপর থাকে

এ-কথা লীগ করা তোমাকে কে বোঝাবে!

আমি তো তোমার সনেট শুনতেও যাই না।

পেছনে কলা ভবনের ভাবালু দালানটা

ছাই হয়ে গিয়েছিলো

শূন্যস্থানে ভাসছিলো কেবল

সম্ভাব্য প্রণয়ের প্রাণহীন শব।

এদিকটায় ভিসি পাহারাদেয়া

পুলিশরাও ছিলো না

আমার মুখোমুখি হয়েছিলো

তোমার কপালের অবধ্য চুল।

আমি ছিলাম প্রশ্নহীন নিরুত্তর

কিছুই করিনি আমি-

এমনকি বৃদ্ধ চালককেও বলিনি,

বাবা আপনি চলেন তো!

তুমি আমার বিনয়কে দুর্বলতা ভেবে

চোখ বেয়ে ঠোঁটের কাছে একটি রক্তরঙা

আপেল নিয়ে উঠে এসেছিলে।

কিন্তু ফলটি দু’ভাগ করে খাবার আগেই

সাঁতারে পড়ে গেলে।

হাবুডুবু খেতে খেতে তারপর একদিন

আমার চোখের কবরে ডুবেই গিয়েছো।

আমাদের আর যৌথ ভ্রমণ হয় নি।

গোপাল সাঁইয়ের কবিতা-৩৭

কামরুল ইসলাম

শূন্যের ভেতরে এই বসবাস এখন ভালোই মনে হয়

আমার, খুব একঘেঁয়ে লাগলে বেরিয়ে আসি,

গাছের কচি ডালপালা সবুজ ওড়নার মতো এগিয়ে এলে

না-ভোটে পরাজিত একটি উটপাখির ছায়ায়

আশির্বাদের হাওয়া আসে; আমি টের পাই- এই

আবিরমাখা বাগানের বিস্তারিত গল্পে

আমার কোনো বিশ্বাস নেই আর। শিকারীর চোখ হয়ে

আবার শূন্য গোলকে ফিরে যাবার আগে

কানে আসে সুড়ঙ্গ থেকে সুড়ঙ্গে যাবার তেলওয়াত।

দূরে আত্মার জায়নামাজে শুয়ে আছে

সিঁদুরে মেঘের জলমাখা মোনাজাত...

ব্রহ্মাণ্ডের ইশকুল

মাসুদার রহমান

কলাপাতার উপরে বসে দোল খাচ্ছে সকালের রোদ

রাস্তা মাড়িয়ে

এইমাত্র সবুজ সাইকেল বালিকা দল বেঁধে চলে গেছে ইশকুলে

ঘাসের উপরে মুখ রেখে দু’টি ঘোড়া চড়ে খাচ্ছে ইতস্তত

তার পিছে

ইউনিফর্ম পরে উড়ছে এক ঝাঁক রঙিন ফড়িং

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা মাথার উপরে ধীরে উঠে আসবে

সূর্য

ইশকুলের রাগী হেডমাস্টার

নারী

এমরান কবির

অদূরে জ্বলছে বায়ু তার পাশে ধোঁয়া

চোখের ভেতরে কেন দুটি বৃত্ত শোয়া

স্বাধীন রূপক ইহা নয় তো প্রতীক

পতঙ্গের ভেতরে থাকা পতন-অধিক

পুরুষ পতঙ্গ চায় কেন আগুন এতো

সব জল চুষে নিয়ে ত্রিবেণী আপ্লুত

ছায়া থেকে ফিরে তবু তরুণ কবির ঘরে

পাখি যায় ছন্দ যায় কেশ যায় ঝরে

আখ্যানে জারক রস বৈঠা কেন তরীতে

আমার তবুও ভয়ানক ভয় নারীতে