গ্রাহকের আড়াই কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এনজিও সম্পাদক

অর্থ লগ্নিকারি প্রতিষ্ঠান নিউ বসুন্ধরা, সেবা বন্ধন ও চলন্তিকা সোসাইটির পর বাগেরহাট সদর উপজেলার সিএন্ডবি বাজার এলাকায় সাধারণ গ্রাহকদের আড়াই কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন মানব উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সরকার। গত এক সপ্তাহ ধরে বিপ্লবের কোন খোজ পাচ্ছেন না অর্থলগ্নিকারি গ্রাহকরা। স্থানীয়রা ও গ্রাহকরা ধারণা করছেন স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বিপ্লব ভারত চলে গেছে নিরাপদে। এই অবস্থায় সিএন্ডবি বাজারে থাকা মানব উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির অফিস, সমিতির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান শ্রুতি এন্টারপ্রাইজ ও দারুচিনি শপিং সেন্টারে তালা লাগিয়ে দিয়েছে ক্ষুব্ধ গ্রাহক ও জন প্রতিনিধিরা। এদিকে সাধারণ সম্পাদককে খুজে না পেয়ে সমিতির সভাপতি উন্নয়নকর্মী মানিক দাসকে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন গ্রাহকরা। এ বিষয়ে খোজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালে সিএন্ডবি বাজার এলাকার মানিক দাস ও বিপ্লব সরকার স্থানীয় কিছু লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে মানব উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামের একটি প্রতিষ্ঠান করে। সিএনন্ডবি বাজারের পরিতোষ দাসের একটি ভবনে অফিস নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তারা। স্থানীয় সহজ সরল মানুষদের গ্রাহক বানিয়ে দৈনিক, মাসিক ও এক কালীন বিনিয়োগ নেওয়া শুরু করে প্রতিষ্টানটি। মানিক দাস বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রুপান্তরে চাকুরীরত থাকায় সমিতির অর্থসহ সব ধরণের দেখভাল করতেন বিপ্লব সরকার। এভাবে বিপ্লব সরকার স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা বিনিয়োগ নেয়। এর মধ্যে কয়েক লক্ষ টাকা গ্রাহকদের ঋণ দেওয়া আছে, শ্রুতি এন্টারপ্রাইজ ও দারুচিনি শপিং সেন্টারেও কিছু টাকার মালামাল রয়েছে। তবে দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে ওয়াল্টনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বেশ কিছু টাকা পাবে। এই অবস্থায় গেল ১৯ এপ্রিল থেকে সমিতির প্রধান নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সরকার পলাতক রয়েছে। ভবন মালিক পরিতোষ দাস বলেন, মানব উন্নয়ন সমবায় সমিতিতে আমার নিজের ১০ লক্ষ টাকা এবং আমার দুই বন্ধুর ৮ লক্ষ টাকা রয়েছে। আমার ৯ মাসের ভাড়াও বাকি তাদের কাছে। এই অবস্থায় যে সমিতি চালাত-সমিতির টাকা পয়সা পরিচালনা করতেন সেই বিপ্লব সরকার পালিয়ে গেছে। তাকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার বৃদ্ধ বাবা-মাও ছেলের কোন খোজ দিতে পারে না। বউ আর একমাত্র মেয়েরও কোন খোজ নেই। আমাদের ধারণা গ্রাহকদের টাকা পয়সা নিয়ে সে ভারত চলে গেছে। তবে সমিতির সভাপতিসহ অন্যরা যেহেতু আছেন তারা গ্রাহকদের অর্থ পরিশোধ করবে। কাজী তারেক নামের এক গ্রাহক বলেন, ১ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা জমা দিয়েছি ওই সমিতিতে। অনেক কষ্ট করে টাকা রেখেছিলাম, কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। জাহিদ হোসেন, সুবর্না দাস, বিমল সাহা, মিতা ঘোষ, হাসান আলীসহ কয়েকশ গ্রাহক এখন হায় হায় করছেন। যে টাকা নিয়েছে সেতো পালিয়েছে, এখন কে টাকা দিবে এই বলে বার বার বিপ্লবকে গালিগালাজ করছেন আকবর নামের এক ব্যক্তি। নিলয় দাস নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতি মাসে এক লক্ষ টাকায় ১৪০০ টাকা লাভ দেওয়ার শর্তে সমিতিতে ১৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন কি হবে জানি না। যেকোন মূল্যে আমরা টাকা ফেরত পেতে চাই। সমিতির ম্যানেজার কাম হিসাব রক্ষক পলাতক বিপ্লবের চাচাতো ভাই অনিক সরকার বলেন, গ্রাহকদের প্রায় আড়াই কোটি টাকা রয়েছে আমাদের কাছে। ঋণী গ্রহাকদের কাছে আমাদের কিছু টাকা রয়েছে। সমিতি ভালই চলছিল, এই অবস্থায় কেন সাধারণ সম্পাদক পালিয়ে গেল জানিনা। আমরাতো খুব বিপদে পড়ে গেলাম। এলাকার লোকজন আমাদের প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়েছে। যারা সমিতির কাছে টাকা পাবে তারা স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের নিয়ে এসে আমাদের শো-রুমে তালা দিয়ে গেছেন। এখন আমরা খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে পাওনা ৪৬ লক্ষ টাকা আদায় করা কঠিন হয়ে পড়বে। আবার কোম্পানির লোকরা আমাদেরে কাছে প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা পাবে।

বিপ্লবের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করে না পেয়ে সিএন্ডবি বাজারের অদূরে বিপ্লবের বাড়িতে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। তালাবদ্ধ ঘরে বিপ্লবের বাবা-মাও নেই। সপ্তাহ খানেক আগে কোথায় যেন চলে গেছে বলে জানান বিপ্লবের প্রতিবেশীরা।

ব্যাঙ্গের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা এসব সমবায় সমিতি ও সংস্থা সাধারন মানুষদের নানা প্রলোভনে ফেলে অর্থ লগ্নি নিয়ে এক সঙ্গে মোটা অংকের অর্থ বানিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় বলে বাগেরহাটে প্রচার রয়েছে। কারন এদের কর্মকান্ডে রাষ্ট্রের কোন মনিটরিং না থাকায় বে-পরোয়াভাবে প্রতারক চক্র দীর্ঘ সময় ধরে ফায়দা হাসিল করে পালিয়ে যায়। সাধারন মানুষের অতিলোভ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় দুরববস্থা হওয়ায় একের পর এক এ ঘটনা ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মাদ মুছাব্বেরুল ইসলাম এ বিষয়ে এ প্রতিবেদক কে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। যারা টাকা লোপাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। সেই সঙ্গে যেসব গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তারা যাতে টাকা ফেরত পেতে পারে সেই অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ গ্রহন করব।

শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল ২০২২ , ১৬ বৈশাখ ১৪২৮ ২৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

গ্রাহকের আড়াই কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এনজিও সম্পাদক

প্রতিনিধি, বাগেরহাট

অর্থ লগ্নিকারি প্রতিষ্ঠান নিউ বসুন্ধরা, সেবা বন্ধন ও চলন্তিকা সোসাইটির পর বাগেরহাট সদর উপজেলার সিএন্ডবি বাজার এলাকায় সাধারণ গ্রাহকদের আড়াই কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন মানব উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সরকার। গত এক সপ্তাহ ধরে বিপ্লবের কোন খোজ পাচ্ছেন না অর্থলগ্নিকারি গ্রাহকরা। স্থানীয়রা ও গ্রাহকরা ধারণা করছেন স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বিপ্লব ভারত চলে গেছে নিরাপদে। এই অবস্থায় সিএন্ডবি বাজারে থাকা মানব উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির অফিস, সমিতির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান শ্রুতি এন্টারপ্রাইজ ও দারুচিনি শপিং সেন্টারে তালা লাগিয়ে দিয়েছে ক্ষুব্ধ গ্রাহক ও জন প্রতিনিধিরা। এদিকে সাধারণ সম্পাদককে খুজে না পেয়ে সমিতির সভাপতি উন্নয়নকর্মী মানিক দাসকে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন গ্রাহকরা। এ বিষয়ে খোজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালে সিএন্ডবি বাজার এলাকার মানিক দাস ও বিপ্লব সরকার স্থানীয় কিছু লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে মানব উন্নয়ন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামের একটি প্রতিষ্ঠান করে। সিএনন্ডবি বাজারের পরিতোষ দাসের একটি ভবনে অফিস নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তারা। স্থানীয় সহজ সরল মানুষদের গ্রাহক বানিয়ে দৈনিক, মাসিক ও এক কালীন বিনিয়োগ নেওয়া শুরু করে প্রতিষ্টানটি। মানিক দাস বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রুপান্তরে চাকুরীরত থাকায় সমিতির অর্থসহ সব ধরণের দেখভাল করতেন বিপ্লব সরকার। এভাবে বিপ্লব সরকার স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা বিনিয়োগ নেয়। এর মধ্যে কয়েক লক্ষ টাকা গ্রাহকদের ঋণ দেওয়া আছে, শ্রুতি এন্টারপ্রাইজ ও দারুচিনি শপিং সেন্টারেও কিছু টাকার মালামাল রয়েছে। তবে দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে ওয়াল্টনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বেশ কিছু টাকা পাবে। এই অবস্থায় গেল ১৯ এপ্রিল থেকে সমিতির প্রধান নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সরকার পলাতক রয়েছে। ভবন মালিক পরিতোষ দাস বলেন, মানব উন্নয়ন সমবায় সমিতিতে আমার নিজের ১০ লক্ষ টাকা এবং আমার দুই বন্ধুর ৮ লক্ষ টাকা রয়েছে। আমার ৯ মাসের ভাড়াও বাকি তাদের কাছে। এই অবস্থায় যে সমিতি চালাত-সমিতির টাকা পয়সা পরিচালনা করতেন সেই বিপ্লব সরকার পালিয়ে গেছে। তাকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার বৃদ্ধ বাবা-মাও ছেলের কোন খোজ দিতে পারে না। বউ আর একমাত্র মেয়েরও কোন খোজ নেই। আমাদের ধারণা গ্রাহকদের টাকা পয়সা নিয়ে সে ভারত চলে গেছে। তবে সমিতির সভাপতিসহ অন্যরা যেহেতু আছেন তারা গ্রাহকদের অর্থ পরিশোধ করবে। কাজী তারেক নামের এক গ্রাহক বলেন, ১ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা জমা দিয়েছি ওই সমিতিতে। অনেক কষ্ট করে টাকা রেখেছিলাম, কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। জাহিদ হোসেন, সুবর্না দাস, বিমল সাহা, মিতা ঘোষ, হাসান আলীসহ কয়েকশ গ্রাহক এখন হায় হায় করছেন। যে টাকা নিয়েছে সেতো পালিয়েছে, এখন কে টাকা দিবে এই বলে বার বার বিপ্লবকে গালিগালাজ করছেন আকবর নামের এক ব্যক্তি। নিলয় দাস নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতি মাসে এক লক্ষ টাকায় ১৪০০ টাকা লাভ দেওয়ার শর্তে সমিতিতে ১৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন কি হবে জানি না। যেকোন মূল্যে আমরা টাকা ফেরত পেতে চাই। সমিতির ম্যানেজার কাম হিসাব রক্ষক পলাতক বিপ্লবের চাচাতো ভাই অনিক সরকার বলেন, গ্রাহকদের প্রায় আড়াই কোটি টাকা রয়েছে আমাদের কাছে। ঋণী গ্রহাকদের কাছে আমাদের কিছু টাকা রয়েছে। সমিতি ভালই চলছিল, এই অবস্থায় কেন সাধারণ সম্পাদক পালিয়ে গেল জানিনা। আমরাতো খুব বিপদে পড়ে গেলাম। এলাকার লোকজন আমাদের প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়েছে। যারা সমিতির কাছে টাকা পাবে তারা স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের নিয়ে এসে আমাদের শো-রুমে তালা দিয়ে গেছেন। এখন আমরা খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে পাওনা ৪৬ লক্ষ টাকা আদায় করা কঠিন হয়ে পড়বে। আবার কোম্পানির লোকরা আমাদেরে কাছে প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা পাবে।

বিপ্লবের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করে না পেয়ে সিএন্ডবি বাজারের অদূরে বিপ্লবের বাড়িতে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। তালাবদ্ধ ঘরে বিপ্লবের বাবা-মাও নেই। সপ্তাহ খানেক আগে কোথায় যেন চলে গেছে বলে জানান বিপ্লবের প্রতিবেশীরা।

ব্যাঙ্গের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা এসব সমবায় সমিতি ও সংস্থা সাধারন মানুষদের নানা প্রলোভনে ফেলে অর্থ লগ্নি নিয়ে এক সঙ্গে মোটা অংকের অর্থ বানিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় বলে বাগেরহাটে প্রচার রয়েছে। কারন এদের কর্মকান্ডে রাষ্ট্রের কোন মনিটরিং না থাকায় বে-পরোয়াভাবে প্রতারক চক্র দীর্ঘ সময় ধরে ফায়দা হাসিল করে পালিয়ে যায়। সাধারন মানুষের অতিলোভ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় দুরববস্থা হওয়ায় একের পর এক এ ঘটনা ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মাদ মুছাব্বেরুল ইসলাম এ বিষয়ে এ প্রতিবেদক কে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। যারা টাকা লোপাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। সেই সঙ্গে যেসব গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তারা যাতে টাকা ফেরত পেতে পারে সেই অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ গ্রহন করব।