নিউমার্কেটে সংঘর্ষ

নাহিদ হত্যা, ৫ জন গ্রেপ্তার

নিউমার্কেটে গত ১৮-১৯ এপ্রিল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে সামনে থেকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেয় হেলমেট পরা একদল অস্ত্রধারী। তারা সবাই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী। অস্ত্রধারী এই হলমেট বাহিনীর হাতেই খুন হন ব্যবসায়ীদের পক্ষে পিকেটিং করা নাহিদ হোসেন ওরফে নাহিদ মিয়া। এছাড়া ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে পিকেটিং করার সময় হকার মুরসালিনও ছাত্রদের ইটের আঘাতে মারা যান। নাহিদকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা গেলেও মুরসালিনকে হত্যার ঘটনায় কাউকে এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে নিউমার্কেটে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা ২ হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে গিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, নিউমার্কেটে ছাত্র-ব্যবসায়ী সংঘর্ষের মধ্যে ব্যবসায়ী পক্ষের পিকেটার নাহিদ মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা মামলায় ৫ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই ৫ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবির রমনা বিভাগ। উপকমিশনার মো. ফজলে এলাহী ও জুয়েল রানার যৌথ নেতৃত্বে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো মো. আবদুল কাইয়ুম (২৪), পলাশ মিয়া (২৪), মাহমুদ ইরফান (২৪), মো. ফয়জাল ইসলাম (২৪) এবং মো. জুনায়েদ বুগদাদী (২৫)। এরা সবাই নাহিদ মিয়া হত্যায় কোন না কোনভাবে সম্পৃক্ত।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির প্রধান একে এম হাফিজ আক্তার বলেন, নাহিদকে কুপিয়ে হত্যায় এ পর্যন্ত তারা যে কজনের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন তার মধ্যে গ্রেপ্তার ৫ জন সংঘর্ষেও সামনে থেকে অস্ত্র নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিল। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রত্যেকেই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী। এদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে আমরা এখনো নিশ্চিত নই।

একে এম হাফিজ আক্তার বলেন, নাহিদের মাথায়, পিঠে ও পায়ে ৩ জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। এছাড়া সমস্ত শরীর থেতলানো ছিল। মনে হচ্ছে, তার মাথায় প্রথমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে। এছাড়া তার পিঠে ও শরীরে ধারালে অস্ত্রের আঘাত ছিল। ইটের আঘাতে তার শরীর তেথলে গিয়েছিল। আমরা যেসব ফুটেজ পেয়েছি তা বিশ্লেষণ করেছি। কাইয়ুমই তাকে প্রথম আঘাত করেছিল। এরপর একটি ফুটেজ ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায় একজন হেলমেটধারী নাহিদের নিথর দেহের ওপর কোপানো শুরু করে। ফুটেজ থেকে ওই যুবককে কেউ বাপ্পি কেউ ইমন বাশার বলে মন্তব্য করেছে। তবে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি।

অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ১৮ এপ্রিল রাতে নিউমার্কেটের দোকানের কর্মীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। পরদিন মঙ্গলবার দিনভর সংঘর্ষ হয়। এতে দুজন নিহত হন, অর্ধ শতাধিক মানুষ আহত হন। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচটি মামলা হয়েছে।

দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে দুটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এছাড়া সংঘর্ষ ও বোমাবাজির ঘটনায় আলাদা ২ মামলা করেছে পুলিশ। আরেকটি মামলা করেছেন সংঘর্ষের দিন ভাঙচুর হওয়া অ্যাম্বুলেন্সের মালিক। এর মধ্যে হত্যা মামলা দুটির তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। বাকি তিন মামলায় নিউমার্কেট থানার পুলিশ তদন্ত করছে।

নাহিদকে কোপানোর সময় হেলমেট পরিহিত যে যুবকের ছবি ভাইরাল হয়েছে এতে তাকে বাপ্পি বা ইমন বাশার বললেও ডিবি গতকাল জানিয়েছে, তারা নিশ্চিত হতে পারেনি আসলে ওই যুবক বাপ্পি বা ইমন বাশার। ইমন বাসারকে ডিবি গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে অভিযান চালানোর সময় ইমন বাসারের দুটি মোবাইল ফোন তারা জব্দ করেছে।

তবে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ইমনকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছে। ইমনের এক রুমমেটকে আটক করে তার দেয়া তথ্যে একটি হল থেকে ইমন বাসারকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব তাদের হেফাজতে নিয়েছে। শুধু ইমনই নয় র‌্যাব আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে তাদের হেফাজতে নিয়েছে। তবে র‌্যাব এখন পর্যন্ত নিউমার্কেটে সংঘর্ষে দুই হত্যা মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করার কথা স্বীকার করেনি।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছে, তাদের কাছে তথ্য রয়েছে, ইমন বাসারসহ ৪ থেকে ৫ জনকে র‌্যাব আটক করেছে। তারা ইমনকে খুঁজে পায়নি। তাদের ধারণা, ইমন বাসার র‌্যাবের কাছেই রয়েছে।

হাফিজ আক্তার বলেন, নিহত নাহিদ হোসেন সংঘর্ষের সময় দোকানের কর্মচারীদের সঙ্গে পিকেটিংয়ে ছিলেন। তিনি একটি বড় ছাতা নিয়ে এগোচ্ছিলেন যাতে ইটপাটকেল না লাগে। পিছনে ছিল দোকান ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ধাওয়ায় দোকান মালিক ও কর্মচারীরা পিছু হটে। তখন সামনে ছাতা থাকার কারণে নাহিদ সামনে কিছু দেখতে পায়নি। সে একা হয়ে যায়। তখন তাকে আঘাত করা হয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানের পর সে অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সে মারা যায়।

সেদিনের ঘটনার বিবরণে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, নিউমার্কেটের দুই দোকানকর্মী বাপ্পী ও কাউসারের মধ্যে ঝগড়ার সূত্রপাত ১৮ এপ্রিল বিকেলে। একপর্যায়ে বাপ্পী তার তিন বন্ধু ঢাকা কলেজের তিন শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে আসেন। ওই শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছে, এমন গুজব ছড়িয়ে উসকানি দিয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতভর হামলা চালায়।

মুরসালিন হত্যা মামলায় কাউকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি

হাফিজ আক্তার বলেন, মুরসালিনকে কারা মেরেছে তা এখনো আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি। মুরসালিন মারা গেছে গাউছিয়া মার্কেটের কাছে। সেখানে বড় ছাত্রাবাস রয়েছে। ছাত্রাবাসের ছাদের উপর থেকে ইট নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে একটি ইট এসে মুরসালিনের মাথার উপর পড়ে। তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে ইটের আঘাতে শরীর থেতলে যাওয়ার চিহ্ন পাওয়া গেছে। কার ইটের আঘাতে মুরসালিনের মৃত্যু হয়েছে এটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুরসালিন পিকেটিং করা অবস্থায় একটি ইট তার মাথায় পড়লে মাথা দিখ-িত হয়ে মগজ বেরিয়ে যায়। ওই অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

নিউমার্কেটের ঘটনায় গুজব ছড়ানো হয়েছিল

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, নিউমার্কেটের ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যাপক গুজবও ছড়িয়েছিল। তবে পুলিশ সবকিছু দুই দিনের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।

গ্রেপ্তার ৫ জন রিমান্ডে

এদিকে সংঘর্ষের সময় কম্পিউটার দোকানের কর্মচারী নাহিদ হোসেন হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার পাঁচজনকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শান্তা আক্তার গতকাল এ আদেশ দেন।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, নাহিদ হোসেন হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার ঢাকা কলেজের পাঁচ ছাত্রকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক তরিকুল আলম।

শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল ২০২২ , ১৬ বৈশাখ ১৪২৮ ২৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

নিউমার্কেটে সংঘর্ষ

নাহিদ হত্যা, ৫ জন গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

নিউমার্কেটে গত ১৮-১৯ এপ্রিল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে সামনে থেকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেয় হেলমেট পরা একদল অস্ত্রধারী। তারা সবাই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী। অস্ত্রধারী এই হলমেট বাহিনীর হাতেই খুন হন ব্যবসায়ীদের পক্ষে পিকেটিং করা নাহিদ হোসেন ওরফে নাহিদ মিয়া। এছাড়া ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে পিকেটিং করার সময় হকার মুরসালিনও ছাত্রদের ইটের আঘাতে মারা যান। নাহিদকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা গেলেও মুরসালিনকে হত্যার ঘটনায় কাউকে এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে নিউমার্কেটে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা ২ হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে গিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, নিউমার্কেটে ছাত্র-ব্যবসায়ী সংঘর্ষের মধ্যে ব্যবসায়ী পক্ষের পিকেটার নাহিদ মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা মামলায় ৫ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই ৫ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবির রমনা বিভাগ। উপকমিশনার মো. ফজলে এলাহী ও জুয়েল রানার যৌথ নেতৃত্বে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো মো. আবদুল কাইয়ুম (২৪), পলাশ মিয়া (২৪), মাহমুদ ইরফান (২৪), মো. ফয়জাল ইসলাম (২৪) এবং মো. জুনায়েদ বুগদাদী (২৫)। এরা সবাই নাহিদ মিয়া হত্যায় কোন না কোনভাবে সম্পৃক্ত।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির প্রধান একে এম হাফিজ আক্তার বলেন, নাহিদকে কুপিয়ে হত্যায় এ পর্যন্ত তারা যে কজনের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন তার মধ্যে গ্রেপ্তার ৫ জন সংঘর্ষেও সামনে থেকে অস্ত্র নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিল। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রত্যেকেই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী। এদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে আমরা এখনো নিশ্চিত নই।

একে এম হাফিজ আক্তার বলেন, নাহিদের মাথায়, পিঠে ও পায়ে ৩ জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। এছাড়া সমস্ত শরীর থেতলানো ছিল। মনে হচ্ছে, তার মাথায় প্রথমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে। এছাড়া তার পিঠে ও শরীরে ধারালে অস্ত্রের আঘাত ছিল। ইটের আঘাতে তার শরীর তেথলে গিয়েছিল। আমরা যেসব ফুটেজ পেয়েছি তা বিশ্লেষণ করেছি। কাইয়ুমই তাকে প্রথম আঘাত করেছিল। এরপর একটি ফুটেজ ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায় একজন হেলমেটধারী নাহিদের নিথর দেহের ওপর কোপানো শুরু করে। ফুটেজ থেকে ওই যুবককে কেউ বাপ্পি কেউ ইমন বাশার বলে মন্তব্য করেছে। তবে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি।

অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ১৮ এপ্রিল রাতে নিউমার্কেটের দোকানের কর্মীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। পরদিন মঙ্গলবার দিনভর সংঘর্ষ হয়। এতে দুজন নিহত হন, অর্ধ শতাধিক মানুষ আহত হন। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচটি মামলা হয়েছে।

দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে দুটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এছাড়া সংঘর্ষ ও বোমাবাজির ঘটনায় আলাদা ২ মামলা করেছে পুলিশ। আরেকটি মামলা করেছেন সংঘর্ষের দিন ভাঙচুর হওয়া অ্যাম্বুলেন্সের মালিক। এর মধ্যে হত্যা মামলা দুটির তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। বাকি তিন মামলায় নিউমার্কেট থানার পুলিশ তদন্ত করছে।

নাহিদকে কোপানোর সময় হেলমেট পরিহিত যে যুবকের ছবি ভাইরাল হয়েছে এতে তাকে বাপ্পি বা ইমন বাশার বললেও ডিবি গতকাল জানিয়েছে, তারা নিশ্চিত হতে পারেনি আসলে ওই যুবক বাপ্পি বা ইমন বাশার। ইমন বাসারকে ডিবি গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে অভিযান চালানোর সময় ইমন বাসারের দুটি মোবাইল ফোন তারা জব্দ করেছে।

তবে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ইমনকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছে। ইমনের এক রুমমেটকে আটক করে তার দেয়া তথ্যে একটি হল থেকে ইমন বাসারকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব তাদের হেফাজতে নিয়েছে। শুধু ইমনই নয় র‌্যাব আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে তাদের হেফাজতে নিয়েছে। তবে র‌্যাব এখন পর্যন্ত নিউমার্কেটে সংঘর্ষে দুই হত্যা মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করার কথা স্বীকার করেনি।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছে, তাদের কাছে তথ্য রয়েছে, ইমন বাসারসহ ৪ থেকে ৫ জনকে র‌্যাব আটক করেছে। তারা ইমনকে খুঁজে পায়নি। তাদের ধারণা, ইমন বাসার র‌্যাবের কাছেই রয়েছে।

হাফিজ আক্তার বলেন, নিহত নাহিদ হোসেন সংঘর্ষের সময় দোকানের কর্মচারীদের সঙ্গে পিকেটিংয়ে ছিলেন। তিনি একটি বড় ছাতা নিয়ে এগোচ্ছিলেন যাতে ইটপাটকেল না লাগে। পিছনে ছিল দোকান ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ধাওয়ায় দোকান মালিক ও কর্মচারীরা পিছু হটে। তখন সামনে ছাতা থাকার কারণে নাহিদ সামনে কিছু দেখতে পায়নি। সে একা হয়ে যায়। তখন তাকে আঘাত করা হয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানের পর সে অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সে মারা যায়।

সেদিনের ঘটনার বিবরণে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, নিউমার্কেটের দুই দোকানকর্মী বাপ্পী ও কাউসারের মধ্যে ঝগড়ার সূত্রপাত ১৮ এপ্রিল বিকেলে। একপর্যায়ে বাপ্পী তার তিন বন্ধু ঢাকা কলেজের তিন শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে আসেন। ওই শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছে, এমন গুজব ছড়িয়ে উসকানি দিয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাতভর হামলা চালায়।

মুরসালিন হত্যা মামলায় কাউকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি

হাফিজ আক্তার বলেন, মুরসালিনকে কারা মেরেছে তা এখনো আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি। মুরসালিন মারা গেছে গাউছিয়া মার্কেটের কাছে। সেখানে বড় ছাত্রাবাস রয়েছে। ছাত্রাবাসের ছাদের উপর থেকে ইট নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে একটি ইট এসে মুরসালিনের মাথার উপর পড়ে। তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে ইটের আঘাতে শরীর থেতলে যাওয়ার চিহ্ন পাওয়া গেছে। কার ইটের আঘাতে মুরসালিনের মৃত্যু হয়েছে এটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুরসালিন পিকেটিং করা অবস্থায় একটি ইট তার মাথায় পড়লে মাথা দিখ-িত হয়ে মগজ বেরিয়ে যায়। ওই অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

নিউমার্কেটের ঘটনায় গুজব ছড়ানো হয়েছিল

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, নিউমার্কেটের ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যাপক গুজবও ছড়িয়েছিল। তবে পুলিশ সবকিছু দুই দিনের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।

গ্রেপ্তার ৫ জন রিমান্ডে

এদিকে সংঘর্ষের সময় কম্পিউটার দোকানের কর্মচারী নাহিদ হোসেন হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার পাঁচজনকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শান্তা আক্তার গতকাল এ আদেশ দেন।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, নাহিদ হোসেন হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার ঢাকা কলেজের পাঁচ ছাত্রকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক তরিকুল আলম।