রাঙামাটিতে নির্মাণাধীন সেতু ধসে শ্রমিক নিহত, আহত ১৭

রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কের সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের বড়াদম এলাকায় গতকাল নির্মাণাধীন একটি সেতু ঢালাইয়ের সময় সেন্টারিং ধসে পড়ে। এতে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ১৭ জন আহত হয়েছেন। নিহত শ্রমিকের নাম মো. রফিক (৩৮)। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশায়। ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি-আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কের মোট দূরত্ব ১৯ কিলোমিটার। এই সড়কের মধ্যে বড়াদম এলাকার স্থানে ঝুকিপূর্ণ বিবেচনা করে সেতু নির্মাণের হাতে নেয় এলজিইডি। এতে ১২০ মিটার দৈর্ঘ্য ও প্রায় ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এই সেতুর নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পায় খাগড়াছড়ির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স। তবে এই সেতুর উপঠিকাদার হিসেবে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন মেসার্স এসএস ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ও রাঙামাটি জেলা যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দীন। গতকাল রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের বড়াদম এলাকায় রাঙামাটি-আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কের এই গার্ডার সেতুতে একদল নির্মাণ শ্রমিক ঢালাই ও সেন্টারিংয়ের কাজ করছিলেন। এ সময় সকাল ৯টার দিকে শ্রমিকরা ঢালাইয়ের স্থানের উপরেই মিক্সার মেশিন রেখে কাজ করছিল। এতে মেশিনের অতিরিক্ত ঝাঁকুনির কারণে স্প্যানের জয়েন্টে নড়বড়ে হয়ে যায়। ফলে কাজ শুরু করার ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই মিক্সার মেশিনসহ গার্ডারের মধ্যবর্তী ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুতকৃত ৩৬ মিটার অংশ ধসে গিয়ে ১৮ জন শ্রমিক আহত হন। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন ও অন্য শ্রমিকরা তাদের উদ্ধার করে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মো. রফিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। আহত ১৭ জনেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে মধ্যে কাওসার, খলিল, শাহ আলম ও সুজনের আবস্থা গুরুতর।

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ত্রিতন চাকমা জানান, সেতু ধসে পড়ে আহত বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে একজন মারা গেছেন এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।

রাঙামাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা বেগম জানান, যতটুকু জেনেছি এটি অবহেলাজনিত কারণেই হয়েছে এবং মামলা হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এলজিইডির রাঙামাটি সদর উপজেলা প্রকৌশলী প্রণব রায় চৌধুরী জানান, শ্রমিকরা যে জায়গায় ঢালাই করছিল সেটার ওপরই মিক্সার মেশিন রেখে কাজ করছিল। এতে অতিরিক্ত ভাইব্রেশনের কারণে স্প্যানের জয়েন্টে হয়তো সমস্যা হয়েছে। ফলে কাজ শুরু করার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই মিক্সার মেশিনসহ গার্ডারের মধ্যবর্র্তী ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুতকৃত ৩৬ মিটার অংশ ধসে গিয়ে শ্রমিকরা আহত হয়েছে। তবে এ সময় তাদের তদারকির কাজে নিয়োজিত লোকজন থাকলেও কেউ হতাহত হননি।

রাঙামাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি বলেন, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলীকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে তদন্ত রিপোর্ট জমাদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এ ঘটনাটি সম্পূর্ণ ঠিকাদারের অবহেলার কারণে ঘটেছে। তবে তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই ঘটনার বিস্তারিত বলা যাবে।

শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল ২০২২ , ১৬ বৈশাখ ১৪২৮ ২৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

রাঙামাটিতে নির্মাণাধীন সেতু ধসে শ্রমিক নিহত, আহত ১৭

নিজস্ব বার্র্তা পরিবেশক, পার্বত্যাঞ্চল

রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কের সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের বড়াদম এলাকায় গতকাল নির্মাণাধীন একটি সেতু ঢালাইয়ের সময় সেন্টারিং ধসে পড়ে। এতে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ১৭ জন আহত হয়েছেন। নিহত শ্রমিকের নাম মো. রফিক (৩৮)। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশায়। ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি-আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কের মোট দূরত্ব ১৯ কিলোমিটার। এই সড়কের মধ্যে বড়াদম এলাকার স্থানে ঝুকিপূর্ণ বিবেচনা করে সেতু নির্মাণের হাতে নেয় এলজিইডি। এতে ১২০ মিটার দৈর্ঘ্য ও প্রায় ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এই সেতুর নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পায় খাগড়াছড়ির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স। তবে এই সেতুর উপঠিকাদার হিসেবে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন মেসার্স এসএস ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ও রাঙামাটি জেলা যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দীন। গতকাল রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের বড়াদম এলাকায় রাঙামাটি-আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কের এই গার্ডার সেতুতে একদল নির্মাণ শ্রমিক ঢালাই ও সেন্টারিংয়ের কাজ করছিলেন। এ সময় সকাল ৯টার দিকে শ্রমিকরা ঢালাইয়ের স্থানের উপরেই মিক্সার মেশিন রেখে কাজ করছিল। এতে মেশিনের অতিরিক্ত ঝাঁকুনির কারণে স্প্যানের জয়েন্টে নড়বড়ে হয়ে যায়। ফলে কাজ শুরু করার ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই মিক্সার মেশিনসহ গার্ডারের মধ্যবর্তী ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুতকৃত ৩৬ মিটার অংশ ধসে গিয়ে ১৮ জন শ্রমিক আহত হন। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন ও অন্য শ্রমিকরা তাদের উদ্ধার করে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মো. রফিক নামে এক শ্রমিক মারা যান। আহত ১৭ জনেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে মধ্যে কাওসার, খলিল, শাহ আলম ও সুজনের আবস্থা গুরুতর।

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ত্রিতন চাকমা জানান, সেতু ধসে পড়ে আহত বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে একজন মারা গেছেন এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।

রাঙামাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা বেগম জানান, যতটুকু জেনেছি এটি অবহেলাজনিত কারণেই হয়েছে এবং মামলা হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এলজিইডির রাঙামাটি সদর উপজেলা প্রকৌশলী প্রণব রায় চৌধুরী জানান, শ্রমিকরা যে জায়গায় ঢালাই করছিল সেটার ওপরই মিক্সার মেশিন রেখে কাজ করছিল। এতে অতিরিক্ত ভাইব্রেশনের কারণে স্প্যানের জয়েন্টে হয়তো সমস্যা হয়েছে। ফলে কাজ শুরু করার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই মিক্সার মেশিনসহ গার্ডারের মধ্যবর্র্তী ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুতকৃত ৩৬ মিটার অংশ ধসে গিয়ে শ্রমিকরা আহত হয়েছে। তবে এ সময় তাদের তদারকির কাজে নিয়োজিত লোকজন থাকলেও কেউ হতাহত হননি।

রাঙামাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি বলেন, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলীকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে তদন্ত রিপোর্ট জমাদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এ ঘটনাটি সম্পূর্ণ ঠিকাদারের অবহেলার কারণে ঘটেছে। তবে তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই ঘটনার বিস্তারিত বলা যাবে।