মন্দিরে কোরআন রাখতে গিয়ে মুসলিম যুবক আটক

পটুয়াখালী জেলার বাউফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টার অভিযোগে ইদ্রিছ খান (৪৮) নামের একজনকে আটক করে পুলিশে সোপার্দ করা হয়েছে। আটক ব্যাক্তি বুধবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার বগা ইউনিয়নের উত্তর রাজনগর পালপাড়ার সার্বজনীন কালী মন্দিরে পবিত্র কোরআন শরীফ রেখে পালানোর সময় স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে। গতকাল ভোরে ইদ্রিসকে বাউফল থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, উত্তর রাজনগর পালপাড়ার সার্বজনীন কালী মন্দিরের অদূরে দিলীপ পালের বাড়িতে নাম কীর্তন অনুষ্ঠান হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার ভোরে ওই কীর্তনের সমাপনীতে নামযজ্ঞ চলছিল। নামযজ্ঞ শেষ হওয়ার কারণে বুধবার রাতে কীর্তন অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে। সন্ধ্যার দিকে অচেনা ইদ্রিস নামের ওই আগন্তক এলাকায় ঘোরাঘুরি করে। কীর্তন অনুষ্ঠানে সে খাবারও গ্রহণ করে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে কীর্তন আঙ্গিনার ১০০ মিটার দূরে উত্তর রাজনগর পালপাড়া সার্বজনীন কালী-শীতলা মন্দিরে ইদ্রিছ খান ঢুকে কালী প্রতিমার সামনে থাকা ঘটের ওপর কোরআন রেখে পালিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় কীর্তনে শান্তি-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকরা মন্দির থেকে ইদ্রিছকে বের হতে দেখে তাকে ধরে ফেলে এবং মন্দিরের ঘট থেকে পবিত্র কোরআন শরীফ উদ্ধার করে। সঙ্গে সঙ্গে বাউফল থানা পুলিশকে খবর দিলে গতকাল ভোরে ইদ্রিছ খানকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। স্বেচ্ছাসেবকদের দায়িত্বে নিয়োজিত হৃদয় পাল (২২), সঞ্জয় পাল (৩৪), সৌরভ পাল (২১), সজল পাল (৩০) ও কার্তিক পাল (৩৫) জানায়, কীর্তনে অনেক নারী-পুরুষের সমাগম ঘটায় তারা নিয়মিত কীর্তন আঙ্গিনার চারদিকে টহল দিচ্ছেলেন। এ সময় তারা ঘটনাটি দেখতে পায়। ইদ্রিছ খান কালী মন্দিরের ঘটের ওপর কোরআন শরীফ রেখেছে বলে স্বীকার করেন।

কীর্তন কমিটির সভাপতি দিলীপ পাল জানান, এ ঘটনায় কীর্তন আঙ্গিনায় সমবেত ভক্তদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কীর্তন অনুষ্ঠান শেষ করা হলেও ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠান থাকলেও সেগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে হিন্দু অধ্যুষিত উত্তর রাজনগর পাল পাড়ার সব পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বাউফল থানার ওসি আল-মামুন সংবাদকে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, আটক ব্যাক্তির বাড়ি বাখেরগঞ্জ উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নে। সে দুমকি উপজেলার আঙ্গারিয়া এলাকার কদমতলা আবাসনে থাকে। বুধবার বিকেলে পটুয়াখালী থেকে এমভি কামাল খান লঞ্চে উঠে বগা লঞ্চঘাটে নেমে ওই গ্রামে যায়। তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের আতঙ্ক দূর করার জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বাউফল থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এদিকে বাউফলে কালী মন্দিরে পবিত্র কোরআন শরীফ রেখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টার ঘটনায় পটুয়াখালী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ আহ্বায়ক স্বপন ব্যানার্জী ও সদস্য সচিব অ্যাড. সঞ্জয় খাসকেল, বাউফল উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি সঞ্জিব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক অতুল পাল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং তীব্র নিন্দা জানান। তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ ব্যাপারে বাউফল উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার বলেন, গত রাতের ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার লোকজন মুঠোফোনে তাকে বিস্তারিত জানালে তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করেছি এবং সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল ২০২২ , ১৬ বৈশাখ ১৪২৮ ২৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা

মন্দিরে কোরআন রাখতে গিয়ে মুসলিম যুবক আটক

প্রতিনিধি, পটুয়াখালী

পটুয়াখালী জেলার বাউফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টার অভিযোগে ইদ্রিছ খান (৪৮) নামের একজনকে আটক করে পুলিশে সোপার্দ করা হয়েছে। আটক ব্যাক্তি বুধবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার বগা ইউনিয়নের উত্তর রাজনগর পালপাড়ার সার্বজনীন কালী মন্দিরে পবিত্র কোরআন শরীফ রেখে পালানোর সময় স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে। গতকাল ভোরে ইদ্রিসকে বাউফল থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, উত্তর রাজনগর পালপাড়ার সার্বজনীন কালী মন্দিরের অদূরে দিলীপ পালের বাড়িতে নাম কীর্তন অনুষ্ঠান হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার ভোরে ওই কীর্তনের সমাপনীতে নামযজ্ঞ চলছিল। নামযজ্ঞ শেষ হওয়ার কারণে বুধবার রাতে কীর্তন অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে। সন্ধ্যার দিকে অচেনা ইদ্রিস নামের ওই আগন্তক এলাকায় ঘোরাঘুরি করে। কীর্তন অনুষ্ঠানে সে খাবারও গ্রহণ করে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে কীর্তন আঙ্গিনার ১০০ মিটার দূরে উত্তর রাজনগর পালপাড়া সার্বজনীন কালী-শীতলা মন্দিরে ইদ্রিছ খান ঢুকে কালী প্রতিমার সামনে থাকা ঘটের ওপর কোরআন রেখে পালিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় কীর্তনে শান্তি-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকরা মন্দির থেকে ইদ্রিছকে বের হতে দেখে তাকে ধরে ফেলে এবং মন্দিরের ঘট থেকে পবিত্র কোরআন শরীফ উদ্ধার করে। সঙ্গে সঙ্গে বাউফল থানা পুলিশকে খবর দিলে গতকাল ভোরে ইদ্রিছ খানকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। স্বেচ্ছাসেবকদের দায়িত্বে নিয়োজিত হৃদয় পাল (২২), সঞ্জয় পাল (৩৪), সৌরভ পাল (২১), সজল পাল (৩০) ও কার্তিক পাল (৩৫) জানায়, কীর্তনে অনেক নারী-পুরুষের সমাগম ঘটায় তারা নিয়মিত কীর্তন আঙ্গিনার চারদিকে টহল দিচ্ছেলেন। এ সময় তারা ঘটনাটি দেখতে পায়। ইদ্রিছ খান কালী মন্দিরের ঘটের ওপর কোরআন শরীফ রেখেছে বলে স্বীকার করেন।

কীর্তন কমিটির সভাপতি দিলীপ পাল জানান, এ ঘটনায় কীর্তন আঙ্গিনায় সমবেত ভক্তদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কীর্তন অনুষ্ঠান শেষ করা হলেও ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠান থাকলেও সেগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে হিন্দু অধ্যুষিত উত্তর রাজনগর পাল পাড়ার সব পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বাউফল থানার ওসি আল-মামুন সংবাদকে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, আটক ব্যাক্তির বাড়ি বাখেরগঞ্জ উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নে। সে দুমকি উপজেলার আঙ্গারিয়া এলাকার কদমতলা আবাসনে থাকে। বুধবার বিকেলে পটুয়াখালী থেকে এমভি কামাল খান লঞ্চে উঠে বগা লঞ্চঘাটে নেমে ওই গ্রামে যায়। তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের আতঙ্ক দূর করার জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বাউফল থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এদিকে বাউফলে কালী মন্দিরে পবিত্র কোরআন শরীফ রেখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টার ঘটনায় পটুয়াখালী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ আহ্বায়ক স্বপন ব্যানার্জী ও সদস্য সচিব অ্যাড. সঞ্জয় খাসকেল, বাউফল উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি সঞ্জিব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক অতুল পাল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং তীব্র নিন্দা জানান। তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এ ব্যাপারে বাউফল উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার বলেন, গত রাতের ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার লোকজন মুঠোফোনে তাকে বিস্তারিত জানালে তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করেছি এবং সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।