ইউক্রেনে বিদেশি হস্তক্ষেপ হলে বিদ্যুৎগতিতে ব্যবস্থা : পুতিন

ইউক্রেন যুদ্ধে কোনো দেশ হস্তক্ষেপ করলে তাকে সমুচিত জবাব দেয়া হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। দেশটির সেন্ট পিটার্সবার্গের উত্তরের এক শহরে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলোচনার সময় পুতিন বলেছেন, বাইরের কোনো দেশ (পশ্চিমা) ইউক্রেনে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করলে বিদ্যুৎগতিতে দ্রুত জবাবের মুখোমুখি হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সব ধরনের উপকরণ আছে। দরকার হলে আমরা তা ব্যবহার করব।’

ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর থেকেই পশ্চিমারা সরাসরি পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে সেনা না পাঠালেও ব্যাপক সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে। রাশিয়া অভিযোগ করে আসছে, পশ্চিমাদের সামরিক সহায়তা ইউক্রেন পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। রুশ মিডিয়া বলছে, ছায়া নেটোর সঙ্গেই লড়ছে তাদের দেশের সেনারা। এই বক্তব্যের মাধ্যমে পুতিন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্রের কথাই বলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে যুদ্ধে যেন রাশিয়াকে ইউক্রেন হারাতে পারে, সেজন্য কিয়েভের সহযোগী দেশগুলো অস্ত্র সরবরাহ বাড়িয়েছে। পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলেছেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়া ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

রাজধানী কিয়েভের আশপাশের এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর গত সপ্তাহেই রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চলে ব্যাপক আক্রমণ চালিয়েছে। যদিও কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধের কারণে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে।

এদিকে মস্কো পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার পর ইউরোপিয়ান কমিশন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ তুলেছে। কমিশনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, রাশিয়া প্রমাণ করেছে যে সরবরাহকারী দেশ হিসেবে তারা নির্ভরযোগ্য নয়।

তবে ক্রেমলিন বলেছে, পশ্চিমা দেশগুলোর অবন্ধুসুলভ আচরণের কারণেই রাশিয়া এটি করতে বাধ্য হয়েছে। রুবলে অর্থ পরিশোধ না করায় রাশিয়ার সরকারি কোম্পানি গ্যাজপ্রম বুধবার পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

দখলকৃত খেরসনে নিজস্ব

মুদ্রা চালু করছে রাশিয়া

ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানের তৃতীয় মাসে এসে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন অঞ্চল পুরোপুরি দখলে নেয় রুশ সেনারা। দখলের পর এবার সেখানে রুশ মুদ্রা রুবলে লেনদেন চালু করতে যাচ্ছে মস্কো।

এমনকি রাশিয়ার টেলিভিশন ও রেডিও ইতোমধ্যেই অঞ্চলটিতে সম্প্রচার শুরু করেছে। দক্ষিণ ইউক্রেনের এই অঞ্চলটির সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের ডেপুটি চেয়ারম্যানের এই তথ্য জানিয়েছে।

গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের একজন আঞ্চলিক সামরিক কর্মকর্তা বলেন, আঞ্চলিক প্রশাসনের এবং একইসঙ্গে সিটি কাউন্সিলের নতুন প্রধান নিয়োগ করেছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। একইদিন খেরসনের গভর্নর হেন্নাদি লাহুতা জানান, দখলকারীরা খেরসন সিটি কাউন্সিলের পুরো প্রাঙ্গণ দখল করে নিয়েছে। পরে সেখান থেকে তারা ইউক্রেনের সকল প্রতীক ও চিহ্ন সরিয়ে দেয় এবং নিজস্ব রক্ষীদের নিযুক্ত করে।

মূলত দখলের পরই খেরসন অঞ্চলে রুশ মুদ্রা রুবলে লেনদেন চালু করতে যাচ্ছে মস্কো। খেরসনের সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের ডেপুটি চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা আরআইএ জানিয়েছে, ইউক্রেনের দক্ষিণের এই অঞ্চলটি আগামী ১ মে থেকে রাশিয়ার মুদ্রায় লেনদেন করতে শুরু করবে।

অবশ্য রাশিয়ার মুদ্রায় লেনদেন শুরু হলেও ইউক্রেনীয় মুদ্রা রিভনিয়াও আপাতত সেখানে চালু থাকবে। ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইউক্রেনীয় মুদ্রা থেকে রুশ মুদ্রায় পুরোপুরি রূপান্তরে চার মাস পর্যন্ত সময় লাগবে। এই সময়ে রাশিয়ান রুবল ও ইউক্রেনীয় রিভনিয়া উভয়ই সেখানে কার্যকর থাকবে।

গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান শহর এবং বন্দরনগরী খেরসন দখল করে নেয় রাশিয়া।সেসময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের বাহিনী দক্ষিণ ইউক্রেনের সমগ্র খেরসন অঞ্চলটিকে ‘মুক্ত’ করেছে। যদিও মার্চের শুরুতেই খেরসন শহরটি দখলে নিয়েছিল রুশ সেনারা।

এছাড়া প্রথম বড় কোনো ইউক্রেনীয় শহর হিসেবে খেরসন দখল করেছিল রুশ সেনারা। এর প্রায় দুই মাসের মাথায় এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে খেরসনের পুরো অঞ্চলটি দখলে নেয় রাশিয়া। প্রায় ৩ লাখ বাসিন্দার খেরসন শহর ও অঞ্চলটি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর দখলে যাওয়া মস্কোর জন্য বড় ধরনের এক বিজয়। মূলত রুশ সামরিক বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘাঁটিও হবে শহরটি। এই শহর থেকে উপকূল বরাবর আরও ভেতরে এবং পশ্চিমের আরেক বৃহৎ বন্দরনগরী ওডেসার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হবে। খেরসন শহরটি কৃষ্ণ সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এবং একটি শিল্পকেন্দ্র।

শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল ২০২২ , ১৬ বৈশাখ ১৪২৮ ২৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

ইউক্রেনে বিদেশি হস্তক্ষেপ হলে বিদ্যুৎগতিতে ব্যবস্থা : পুতিন

ইউক্রেনের খারকিভে রুশ বোমা হামলায় গুরুতর আহত এক জরুরি কর্মীকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে তার সতীর্থরা -ডেইলি মেইল

image

ইউক্রেন যুদ্ধে কোনো দেশ হস্তক্ষেপ করলে তাকে সমুচিত জবাব দেয়া হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। দেশটির সেন্ট পিটার্সবার্গের উত্তরের এক শহরে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলোচনার সময় পুতিন বলেছেন, বাইরের কোনো দেশ (পশ্চিমা) ইউক্রেনে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করলে বিদ্যুৎগতিতে দ্রুত জবাবের মুখোমুখি হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সব ধরনের উপকরণ আছে। দরকার হলে আমরা তা ব্যবহার করব।’

ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর থেকেই পশ্চিমারা সরাসরি পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে সেনা না পাঠালেও ব্যাপক সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে। রাশিয়া অভিযোগ করে আসছে, পশ্চিমাদের সামরিক সহায়তা ইউক্রেন পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। রুশ মিডিয়া বলছে, ছায়া নেটোর সঙ্গেই লড়ছে তাদের দেশের সেনারা। এই বক্তব্যের মাধ্যমে পুতিন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্রের কথাই বলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে যুদ্ধে যেন রাশিয়াকে ইউক্রেন হারাতে পারে, সেজন্য কিয়েভের সহযোগী দেশগুলো অস্ত্র সরবরাহ বাড়িয়েছে। পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলেছেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়া ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

রাজধানী কিয়েভের আশপাশের এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর গত সপ্তাহেই রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চলে ব্যাপক আক্রমণ চালিয়েছে। যদিও কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধের কারণে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে।

এদিকে মস্কো পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার পর ইউরোপিয়ান কমিশন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ তুলেছে। কমিশনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, রাশিয়া প্রমাণ করেছে যে সরবরাহকারী দেশ হিসেবে তারা নির্ভরযোগ্য নয়।

তবে ক্রেমলিন বলেছে, পশ্চিমা দেশগুলোর অবন্ধুসুলভ আচরণের কারণেই রাশিয়া এটি করতে বাধ্য হয়েছে। রুবলে অর্থ পরিশোধ না করায় রাশিয়ার সরকারি কোম্পানি গ্যাজপ্রম বুধবার পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

দখলকৃত খেরসনে নিজস্ব

মুদ্রা চালু করছে রাশিয়া

ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানের তৃতীয় মাসে এসে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন অঞ্চল পুরোপুরি দখলে নেয় রুশ সেনারা। দখলের পর এবার সেখানে রুশ মুদ্রা রুবলে লেনদেন চালু করতে যাচ্ছে মস্কো।

এমনকি রাশিয়ার টেলিভিশন ও রেডিও ইতোমধ্যেই অঞ্চলটিতে সম্প্রচার শুরু করেছে। দক্ষিণ ইউক্রেনের এই অঞ্চলটির সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের ডেপুটি চেয়ারম্যানের এই তথ্য জানিয়েছে।

গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের একজন আঞ্চলিক সামরিক কর্মকর্তা বলেন, আঞ্চলিক প্রশাসনের এবং একইসঙ্গে সিটি কাউন্সিলের নতুন প্রধান নিয়োগ করেছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। একইদিন খেরসনের গভর্নর হেন্নাদি লাহুতা জানান, দখলকারীরা খেরসন সিটি কাউন্সিলের পুরো প্রাঙ্গণ দখল করে নিয়েছে। পরে সেখান থেকে তারা ইউক্রেনের সকল প্রতীক ও চিহ্ন সরিয়ে দেয় এবং নিজস্ব রক্ষীদের নিযুক্ত করে।

মূলত দখলের পরই খেরসন অঞ্চলে রুশ মুদ্রা রুবলে লেনদেন চালু করতে যাচ্ছে মস্কো। খেরসনের সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের ডেপুটি চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা আরআইএ জানিয়েছে, ইউক্রেনের দক্ষিণের এই অঞ্চলটি আগামী ১ মে থেকে রাশিয়ার মুদ্রায় লেনদেন করতে শুরু করবে।

অবশ্য রাশিয়ার মুদ্রায় লেনদেন শুরু হলেও ইউক্রেনীয় মুদ্রা রিভনিয়াও আপাতত সেখানে চালু থাকবে। ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইউক্রেনীয় মুদ্রা থেকে রুশ মুদ্রায় পুরোপুরি রূপান্তরে চার মাস পর্যন্ত সময় লাগবে। এই সময়ে রাশিয়ান রুবল ও ইউক্রেনীয় রিভনিয়া উভয়ই সেখানে কার্যকর থাকবে।

গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান শহর এবং বন্দরনগরী খেরসন দখল করে নেয় রাশিয়া।সেসময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের বাহিনী দক্ষিণ ইউক্রেনের সমগ্র খেরসন অঞ্চলটিকে ‘মুক্ত’ করেছে। যদিও মার্চের শুরুতেই খেরসন শহরটি দখলে নিয়েছিল রুশ সেনারা।

এছাড়া প্রথম বড় কোনো ইউক্রেনীয় শহর হিসেবে খেরসন দখল করেছিল রুশ সেনারা। এর প্রায় দুই মাসের মাথায় এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে খেরসনের পুরো অঞ্চলটি দখলে নেয় রাশিয়া। প্রায় ৩ লাখ বাসিন্দার খেরসন শহর ও অঞ্চলটি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর দখলে যাওয়া মস্কোর জন্য বড় ধরনের এক বিজয়। মূলত রুশ সামরিক বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘাঁটিও হবে শহরটি। এই শহর থেকে উপকূল বরাবর আরও ভেতরে এবং পশ্চিমের আরেক বৃহৎ বন্দরনগরী ওডেসার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হবে। খেরসন শহরটি কৃষ্ণ সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এবং একটি শিল্পকেন্দ্র।