ঈদযাত্রা, ভাড়া নৈরাজ্য যাত্রী হয়রানি

গুনতে হবে অতিরিক্ত ৮ হাজার কোটি টাকা

ঈদযাত্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও চাঁদাবাজেরা লুটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করে জরুরি ভিত্তিতে এ ভাড়া নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল সকালে ‘ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি’ বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবি জানান। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

লিখিত বক্তব্যে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এবারের ঈদে গণপরিবহন সংকটকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর অতিলোভী কিছু অসাধু মালিক ও পরিবহন চাঁদাবাজদের নেতৃত্বে ভাড়া নৈরাজ্যের এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। কিছু অসাধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করেও এ ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ করতে পারছে না।

তিনি বলেন, এবারের ঈদে ২৫ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত সব পথে প্রায় ৬০ কোটি ট্রিপ যাত্রী হতে পারে। তার সিংহভাগ অর্থাৎ ৪০ কোটি ট্রিপ সড়কপথে, ২০ কোটি ট্রিপ রেল, নৌ ও আকাশপথে যাতায়াত হতে পারে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ২৫ এপ্রিলের পর থেকে শহরাঞ্চলে রিকশা ভাড়া বেড়েছে ২০ ভাগ। আজ শুক্রবার থেকে এই ভাড়া ১০০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করছে অটোরিকশা ও ইজিবাইক চালকরাও। সব রুটে লেগুনা ভাড়া দ্বিগুণ আদায় করা হচ্ছে।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে চালক-সহকারীর বেতন ও দুই ঈদের বোনাস যাত্রী সাধারণের কাছে থেকে আদায় করে নিলেও তাদের বেতন বোনাস না দেয়ায় রাজধানীর বাস-মিনিবাসে ঈদের ৩ দিন আগে থেকে ঈদের ৩ দিন পর পর্যন্ত যাত্রী উঠানামায় সর্বনিম্ন ভাড়া ৫০ টাকা হারে আদায় করা হয়। এবারও এ হারে ভাড়া আদায়ের লক্ষ্যে চালক-শ্রমিক ও পরিবহন চাঁদাবাজরা মরিয়া হয়ে উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মহোৎসব চলছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত নানাভাবে তৎপরতা চালিয়ে, কাউন্টারে কাউন্টারে জরিমানা আরোপ করেও এই ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকাতে পারছে না। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাত্রাপথে বিভিন্ন বাসে যাত্রীপ্রতি ১০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। নৌপথেও ভাড়া নৈরাজ্য চরমে ঠেকেছে। রেলে টিকেট কালোবাজারি, অনলাইনে টিকেট পেতে বিড়ম্বনা অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় এবার চরমে পৌঁছেছে। আকাশপথেও এ ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে যাত্রীরা এখন দিশেহারা।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, গত বছরের নভেম্বরে সরকার ডিজেলের মূল্য ২৩ ভাগ বাড়ানোর সময়ে বাস ভাড়া ২৭ ভাগ ও লঞ্চ ভাড়া ৩৬ ভাগ বাড়ানো হলেও লঞ্চ মালিকেরা নানা কারচুপির মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ ৪৬ শতাংশ হারে বর্ধিত ভাড়া আদায় করে আসছিলেন। ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটে আগে ডেকের ভাড়া ছিল ২০০ টাকা। ভাড়া বৃদ্ধির পর তা ৩৫০ টাকা হারে আদায় করা হলেও এবারের ঈদে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে। এক শয্যার কেবিনের ভাড়া ৯০০ টাকা ছিল, ভাড়া বৃদ্ধির পর তা ১ হাজার ২০০ টাকা করা হলেও এবারের ঈদে ১ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। দুই শয্যার ডাবল কেবিনের ভাড়া আগে ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা। ভাড়া বৃদ্ধির পর তা ২ হাজার ৪০০ টাকা করা হলেও এখন আদায় করা হচ্ছে ৩ হাজার টাকা। আবার এসব টিকেটের কালোবাজারিরা আরও ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা বর্ধিত মূল্য নিয়ে যাত্রীদের হাতে তুলে দিচ্ছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, সড়কপথে ঢাকা-চুয়াডাঙ্গা, বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রামসহ উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি রুটে বাসে যাত্রীপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা হারে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যা আজ থেকে দ্বিগুণে পৌঁছে যাবে। ঢাকা-রংপুর রুটে হানিফ এন্টারপ্রাইজের ভাড়া আগে ১০০০ টাকা নেয়া হলেও এখন ১৮০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এ রুটে ঈগল পরিবহনের ভাড়া ১২০০ টাকা নেয়া হলেও এখন ১৮০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। শাহআলী পরিবহনের ভাড়া ৮৫০ টাকা আর এখন ১৪০০ টাকা নেয়া হচ্ছে।

image

আজ শুক্রবার থেকে ছুটি, লঞ্চ বাস ট্রেনে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়, গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে তোলা ছবি - সংবাদ

আরও খবর
ডায়রিয়া : দ্রুত সংক্রমণ বাড়ায় উদ্বিগ্ন সরকার
পাকিস্তানের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে
বিএনপি গণতন্ত্র ও প্রগতির অন্তরায় ওবায়দুল কাদের
কানেকটিভিটি বাড়াতে চায় ভারত-বাংলাদেশ
দেড় মাস পর সুপ্রিম কোর্ট বারের ফলাফল
ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির মূল হোতা রেজাউল গ্রেপ্তার
‘পার্বত্য অঞ্চলের দুই জেলায় আনসার নিয়োগে অর্থের লেনদেন’
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন জল্পনা
দু’মাসেই এতিম, নিঃস্ব দুই শিশু : ঈদের পোশাক নিয়ে পাশে দাঁড়ালেন নির্বাহী কর্মকর্তা
কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে প্রচেষ্টা চলছে : কৃষিমন্ত্রী

শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল ২০২২ , ১৬ বৈশাখ ১৪২৮ ২৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

ঈদযাত্রা, ভাড়া নৈরাজ্য যাত্রী হয়রানি

গুনতে হবে অতিরিক্ত ৮ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

আজ শুক্রবার থেকে ছুটি, লঞ্চ বাস ট্রেনে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়, গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে তোলা ছবি - সংবাদ

ঈদযাত্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও চাঁদাবাজেরা লুটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করে জরুরি ভিত্তিতে এ ভাড়া নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল সকালে ‘ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি’ বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবি জানান। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

লিখিত বক্তব্যে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এবারের ঈদে গণপরিবহন সংকটকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর অতিলোভী কিছু অসাধু মালিক ও পরিবহন চাঁদাবাজদের নেতৃত্বে ভাড়া নৈরাজ্যের এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। কিছু অসাধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করেও এ ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ করতে পারছে না।

তিনি বলেন, এবারের ঈদে ২৫ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত সব পথে প্রায় ৬০ কোটি ট্রিপ যাত্রী হতে পারে। তার সিংহভাগ অর্থাৎ ৪০ কোটি ট্রিপ সড়কপথে, ২০ কোটি ট্রিপ রেল, নৌ ও আকাশপথে যাতায়াত হতে পারে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ২৫ এপ্রিলের পর থেকে শহরাঞ্চলে রিকশা ভাড়া বেড়েছে ২০ ভাগ। আজ শুক্রবার থেকে এই ভাড়া ১০০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করছে অটোরিকশা ও ইজিবাইক চালকরাও। সব রুটে লেগুনা ভাড়া দ্বিগুণ আদায় করা হচ্ছে।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে চালক-সহকারীর বেতন ও দুই ঈদের বোনাস যাত্রী সাধারণের কাছে থেকে আদায় করে নিলেও তাদের বেতন বোনাস না দেয়ায় রাজধানীর বাস-মিনিবাসে ঈদের ৩ দিন আগে থেকে ঈদের ৩ দিন পর পর্যন্ত যাত্রী উঠানামায় সর্বনিম্ন ভাড়া ৫০ টাকা হারে আদায় করা হয়। এবারও এ হারে ভাড়া আদায়ের লক্ষ্যে চালক-শ্রমিক ও পরিবহন চাঁদাবাজরা মরিয়া হয়ে উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মহোৎসব চলছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত নানাভাবে তৎপরতা চালিয়ে, কাউন্টারে কাউন্টারে জরিমানা আরোপ করেও এই ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকাতে পারছে না। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাত্রাপথে বিভিন্ন বাসে যাত্রীপ্রতি ১০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। নৌপথেও ভাড়া নৈরাজ্য চরমে ঠেকেছে। রেলে টিকেট কালোবাজারি, অনলাইনে টিকেট পেতে বিড়ম্বনা অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় এবার চরমে পৌঁছেছে। আকাশপথেও এ ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে যাত্রীরা এখন দিশেহারা।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, গত বছরের নভেম্বরে সরকার ডিজেলের মূল্য ২৩ ভাগ বাড়ানোর সময়ে বাস ভাড়া ২৭ ভাগ ও লঞ্চ ভাড়া ৩৬ ভাগ বাড়ানো হলেও লঞ্চ মালিকেরা নানা কারচুপির মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ ৪৬ শতাংশ হারে বর্ধিত ভাড়া আদায় করে আসছিলেন। ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটে আগে ডেকের ভাড়া ছিল ২০০ টাকা। ভাড়া বৃদ্ধির পর তা ৩৫০ টাকা হারে আদায় করা হলেও এবারের ঈদে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে। এক শয্যার কেবিনের ভাড়া ৯০০ টাকা ছিল, ভাড়া বৃদ্ধির পর তা ১ হাজার ২০০ টাকা করা হলেও এবারের ঈদে ১ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। দুই শয্যার ডাবল কেবিনের ভাড়া আগে ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা। ভাড়া বৃদ্ধির পর তা ২ হাজার ৪০০ টাকা করা হলেও এখন আদায় করা হচ্ছে ৩ হাজার টাকা। আবার এসব টিকেটের কালোবাজারিরা আরও ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা বর্ধিত মূল্য নিয়ে যাত্রীদের হাতে তুলে দিচ্ছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, সড়কপথে ঢাকা-চুয়াডাঙ্গা, বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রামসহ উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি রুটে বাসে যাত্রীপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা হারে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যা আজ থেকে দ্বিগুণে পৌঁছে যাবে। ঢাকা-রংপুর রুটে হানিফ এন্টারপ্রাইজের ভাড়া আগে ১০০০ টাকা নেয়া হলেও এখন ১৮০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এ রুটে ঈগল পরিবহনের ভাড়া ১২০০ টাকা নেয়া হলেও এখন ১৮০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। শাহআলী পরিবহনের ভাড়া ৮৫০ টাকা আর এখন ১৪০০ টাকা নেয়া হচ্ছে।