ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির মূল হোতা রেজাউল গ্রেপ্তার

ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি চক্রের মূল হোতাসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তারা হলো সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার মো. রেজাউল করিম ও তার সহযোগী মো. এমরানুল আলম স¤্রাট। গত বুধবার ঢাকা কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের ব্যবহৃত স্মার্টফোন থেকে অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা বিপুল পরিমাণ রেলওয়ে ই-টিকেট জব্দ করা হয়। র‌্যাব বলছে, রেজাউল প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে আনুমানিক প্রায় ২-৩ হাজার রেলওয়ে টিকেট অবৈধ উপায়ে সরিয়ে নিতেন। এভাবে প্রতি মৌসুমে তিনি ১০-১২ লাখ টাকার মতো অবৈধভাবে আয় করতেন।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ২য় তলায় সার্ভার রুম থেকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের জন্য সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার রেজাউলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি রেলওয়ে টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং টিকেট কালোবাজারি চক্রের সঙ্গে রেজাউলের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কালোবাজারি টিকেট বিক্রিতে তার সহযোগী স¤্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রেজাউল গত ৬ বছর ধরে রেলওয়ে টিকেটিংয়ের সঙ্গে জড়িত। সহজ ডটকমের আগে সিএনএস ডটবিডিতেও তিনি কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে রেলওয়ের টিকেটের দায়িত্ব সহজ ডটকম পেলে, অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়। রেজাউল প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে আনুমানিক প্রায় ২-৩ হাজার রেলওয়ে টিকেট অবৈধ উপায়ে সরিয়ে নিতেন। এভাবে প্রতি মৌসুমে তিনি প্রায় ১০-১২ লাখ টাকার মতো অবৈধভাবে আয় করতেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। রেজাউলের বেশকিছু সেলসম্যান রয়েছে, যারা বিভিন্ন রেলস্টেশনে এই কালোবাজারি টিকেট বিক্রির সঙ্গে জড়িত।

র‌্যাব কর্মকর্তা মোমেন আরও বলেন, রেজাউল ব্যক্তিগত পরিচিতদের কাছে টিকেট প্রতি প্রায় ৫০০ টাকার মতো অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে থাকেন। অন্যদের ক্ষেত্রে ১০০০/১৫০০ টাকা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতেন। অভিযুক্তের দাবি, রেলওয়েতে বিভিন্ন ভিআইপিদের টিকেটের আবদার মেটানোর কারণে তিনি নির্বিঘেœ এই কাজ করে আসছিলেন। রেজাউল নিজস্ব পরিচিত লোকজন এবং সংশ্লিষ্ট পরিচিতজনদের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে টিকেট প্রত্যাশীদের একটি বড় ক্রেতা শ্রেণী গড়ে তুলেছেন।

এছাড়া তার নিজস্ব বেশ কিছু কালোবাজারি টিকেট বিক্রেতা রয়েছে। রেলওয়ে ই-টিকেটিং সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুবিধা নিয়ে তিনি ই-টিকেটিং সার্ভার থেকে অবৈধ উপায়ে টিকেট বুক ও ক্রয় করতেন। রেজাউল একজন প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি হওয়ায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ফাঁকি দিতে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে টিকেট সংক্রান্ত যোগাযোগ করে আসছিলেন। একই সঙ্গে ব্যাংক বা মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিসের বদলে তিনি মূলত নগদ অর্থের মাধ্যমে লেনদেন করতেন।

শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল ২০২২ , ১৬ বৈশাখ ১৪২৮ ২৭ রমাদ্বান ১৪৪৩

ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির মূল হোতা রেজাউল গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি চক্রের মূল হোতাসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তারা হলো সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার মো. রেজাউল করিম ও তার সহযোগী মো. এমরানুল আলম স¤্রাট। গত বুধবার ঢাকা কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের ব্যবহৃত স্মার্টফোন থেকে অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা বিপুল পরিমাণ রেলওয়ে ই-টিকেট জব্দ করা হয়। র‌্যাব বলছে, রেজাউল প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে আনুমানিক প্রায় ২-৩ হাজার রেলওয়ে টিকেট অবৈধ উপায়ে সরিয়ে নিতেন। এভাবে প্রতি মৌসুমে তিনি ১০-১২ লাখ টাকার মতো অবৈধভাবে আয় করতেন।

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ২য় তলায় সার্ভার রুম থেকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের জন্য সহজ ডটকমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার রেজাউলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি রেলওয়ে টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং টিকেট কালোবাজারি চক্রের সঙ্গে রেজাউলের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কালোবাজারি টিকেট বিক্রিতে তার সহযোগী স¤্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রেজাউল গত ৬ বছর ধরে রেলওয়ে টিকেটিংয়ের সঙ্গে জড়িত। সহজ ডটকমের আগে সিএনএস ডটবিডিতেও তিনি কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে রেলওয়ের টিকেটের দায়িত্ব সহজ ডটকম পেলে, অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়। রেজাউল প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে আনুমানিক প্রায় ২-৩ হাজার রেলওয়ে টিকেট অবৈধ উপায়ে সরিয়ে নিতেন। এভাবে প্রতি মৌসুমে তিনি প্রায় ১০-১২ লাখ টাকার মতো অবৈধভাবে আয় করতেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। রেজাউলের বেশকিছু সেলসম্যান রয়েছে, যারা বিভিন্ন রেলস্টেশনে এই কালোবাজারি টিকেট বিক্রির সঙ্গে জড়িত।

র‌্যাব কর্মকর্তা মোমেন আরও বলেন, রেজাউল ব্যক্তিগত পরিচিতদের কাছে টিকেট প্রতি প্রায় ৫০০ টাকার মতো অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে থাকেন। অন্যদের ক্ষেত্রে ১০০০/১৫০০ টাকা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতেন। অভিযুক্তের দাবি, রেলওয়েতে বিভিন্ন ভিআইপিদের টিকেটের আবদার মেটানোর কারণে তিনি নির্বিঘেœ এই কাজ করে আসছিলেন। রেজাউল নিজস্ব পরিচিত লোকজন এবং সংশ্লিষ্ট পরিচিতজনদের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে টিকেট প্রত্যাশীদের একটি বড় ক্রেতা শ্রেণী গড়ে তুলেছেন।

এছাড়া তার নিজস্ব বেশ কিছু কালোবাজারি টিকেট বিক্রেতা রয়েছে। রেলওয়ে ই-টিকেটিং সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুবিধা নিয়ে তিনি ই-টিকেটিং সার্ভার থেকে অবৈধ উপায়ে টিকেট বুক ও ক্রয় করতেন। রেজাউল একজন প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি হওয়ায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ফাঁকি দিতে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে টিকেট সংক্রান্ত যোগাযোগ করে আসছিলেন। একই সঙ্গে ব্যাংক বা মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিসের বদলে তিনি মূলত নগদ অর্থের মাধ্যমে লেনদেন করতেন।