গুতেরেসের সফরের মধ্যেই কিয়েভে হামলা

দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির রাজধানী কিয়েভ সফর করছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস। তবে তার সফরের মধ্যেই রাজধানী কিয়েভে রকেট হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সমালোচনা করেছেন গুতেরেস।

গুতেরেস জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এতে কিয়েভ এখনও রাশিয়ার ভারী অস্ত্রের হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে এমন উদ্বেগ ফুটে উঠেছে

আন্তেনিও গুতেরেস বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদ ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রতিরোধ বা শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এটি বিশাল হতাশা ও ক্রোধের বিষয়। তিনি আরও বলেন, ‘খুব স্পষ্ট করে বললে : নিরাপত্তা পরিষদ এই যুদ্ধ প্রতিরোধ ও শেষ করার জন্য তার ক্ষমতার সবকিছু করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

বিবিসি বলছে, ১৫ সদস্যের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এই কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছে সংস্থাটি।

এতে করে ইউক্রেনীয় সরকার-সহ অন্যদের কাছ থেকে নিরাপত্তা পরিষদ তথা জাতিসংঘ সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। মূলত, রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের একটি এবং এই দেশটি সংঘাতের একাধিক প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে। কিয়েভে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অ্যান্তনিও গুতেরেস। জেলেনস্কি আগে থেকেই নিরাপত্তা পরিষদের সমালোচনা করে আসছেন।

সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস বলেন, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আপনাকে এবং ইউক্রেনের জনগণকে বলতে এসেছি, আমরা হাল ছাড়বো না। নিরাপত্তা কাউন্সিল ‘অচল’ হয়ে পড়েছে বলে স্বীকার করে করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। ইউক্রেনে জাতিসংঘের এক হাজার চারশ কর্মী, খাবার, অর্থ এবং অন্যান্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সমালোচনা সত্ত্বেও মঙ্গলবার রাশিয়া সফরে যান জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। মস্কোতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে জাতিসংঘ প্রধানের বৈঠকও হয়। বৈঠকে মারিওপোলের আজভস্টাল স্টিল প্ল্যান্ট থেকে বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ‘নীতিগতভাবে’ সম্মত হন পুতিন। অবশ্য সমালোচনা থেকে রক্ষায় নিজের সংস্থার পক্ষেও কথা বলেছেন গুতেরেস। তিনি স্বীকার করেছেন, নিরাপত্তা পরিষদ যখন ‘পঙ্গু হয়ে গেছে’ তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী অন্যান্য পদক্ষেপ নিয়েছে জাতিসংঘ।

গুতেরেস বলেন, ‘ইউক্রেনে জাতিসংঘের ১ হাজার ৪০০ জন স্টাফ রয়েছে যারা (ইউক্রেনের মানুষকে) সহায়তা, খাদ্য, নগদ অর্থ এবং অন্যান্য ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য কাজ করছে।’

এদিকে জাতিসংঘের প্রধানের সফরের সময় রাজধানী কিয়েভের কেন্দ্রীয় শেভচেঙ্কো জেলায় দুটি বিস্ফোরণ ঘটে। কিয়েভের মেয়রের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় তিনজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। এর একটি ২৫তলা আবাসিক ভবনের নিচ তলায় আঘাত করেছে। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।

কিয়েভে হামলার লক্ষ্য জাতিসংঘকে অপমান করা : জেলেনস্কি

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের সফরের মধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাশিয়া এই হামলা চালিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই হামলার লক্ষ্য বিশ্ব সংস্থাটিকে অপমান করা।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আজ কিয়েভে আমাদের আলোচনা শেষ হওয়ার পরপরই রুশ ক্ষেপণাস্ত্র শহরে আছড়ে পড়ে। পাঁচটি রকেট। আর এতে... জাতিসংঘ এবং সংস্থাটির প্রতিনিধিত্ব করা সবকিছুকে অপমান করতে রুশ নেতৃত্বের পদক্ষেপের বহু কিছু বলা হয়ে গেছে।’

এ সপ্তাহে মস্কো সফরের পর বৃহস্পতিবার কিয়েভ সফর করেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস। এই সফরের সময় কিয়েভের উপকণ্ঠে ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণ ঘটলে রাশিয়াকে দায়ী করে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে বিস্ফোরণে একটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে জেলেনস্কি বলেন, এই হামলার ‘একইরকমভাবে শক্ত জবাব’ দেয়া প্রয়োজন।

শনিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২২ , ১৭ বৈশাখ ১৪২৮ ২৮ রমাদ্বান ১৪৪৩

গুতেরেসের সফরের মধ্যেই কিয়েভে হামলা

image

কিয়েভে বিস্ফোরণের পর অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে -বিবিসি

দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির রাজধানী কিয়েভ সফর করছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস। তবে তার সফরের মধ্যেই রাজধানী কিয়েভে রকেট হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সমালোচনা করেছেন গুতেরেস।

গুতেরেস জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এতে কিয়েভ এখনও রাশিয়ার ভারী অস্ত্রের হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে এমন উদ্বেগ ফুটে উঠেছে

আন্তেনিও গুতেরেস বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদ ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রতিরোধ বা শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এটি বিশাল হতাশা ও ক্রোধের বিষয়। তিনি আরও বলেন, ‘খুব স্পষ্ট করে বললে : নিরাপত্তা পরিষদ এই যুদ্ধ প্রতিরোধ ও শেষ করার জন্য তার ক্ষমতার সবকিছু করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

বিবিসি বলছে, ১৫ সদস্যের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এই কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছে সংস্থাটি।

এতে করে ইউক্রেনীয় সরকার-সহ অন্যদের কাছ থেকে নিরাপত্তা পরিষদ তথা জাতিসংঘ সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। মূলত, রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের একটি এবং এই দেশটি সংঘাতের একাধিক প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে। কিয়েভে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অ্যান্তনিও গুতেরেস। জেলেনস্কি আগে থেকেই নিরাপত্তা পরিষদের সমালোচনা করে আসছেন।

সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস বলেন, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আপনাকে এবং ইউক্রেনের জনগণকে বলতে এসেছি, আমরা হাল ছাড়বো না। নিরাপত্তা কাউন্সিল ‘অচল’ হয়ে পড়েছে বলে স্বীকার করে করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। ইউক্রেনে জাতিসংঘের এক হাজার চারশ কর্মী, খাবার, অর্থ এবং অন্যান্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সমালোচনা সত্ত্বেও মঙ্গলবার রাশিয়া সফরে যান জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। মস্কোতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে জাতিসংঘ প্রধানের বৈঠকও হয়। বৈঠকে মারিওপোলের আজভস্টাল স্টিল প্ল্যান্ট থেকে বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ‘নীতিগতভাবে’ সম্মত হন পুতিন। অবশ্য সমালোচনা থেকে রক্ষায় নিজের সংস্থার পক্ষেও কথা বলেছেন গুতেরেস। তিনি স্বীকার করেছেন, নিরাপত্তা পরিষদ যখন ‘পঙ্গু হয়ে গেছে’ তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী অন্যান্য পদক্ষেপ নিয়েছে জাতিসংঘ।

গুতেরেস বলেন, ‘ইউক্রেনে জাতিসংঘের ১ হাজার ৪০০ জন স্টাফ রয়েছে যারা (ইউক্রেনের মানুষকে) সহায়তা, খাদ্য, নগদ অর্থ এবং অন্যান্য ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য কাজ করছে।’

এদিকে জাতিসংঘের প্রধানের সফরের সময় রাজধানী কিয়েভের কেন্দ্রীয় শেভচেঙ্কো জেলায় দুটি বিস্ফোরণ ঘটে। কিয়েভের মেয়রের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় তিনজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। এর একটি ২৫তলা আবাসিক ভবনের নিচ তলায় আঘাত করেছে। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।

কিয়েভে হামলার লক্ষ্য জাতিসংঘকে অপমান করা : জেলেনস্কি

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের সফরের মধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাশিয়া এই হামলা চালিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই হামলার লক্ষ্য বিশ্ব সংস্থাটিকে অপমান করা।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আজ কিয়েভে আমাদের আলোচনা শেষ হওয়ার পরপরই রুশ ক্ষেপণাস্ত্র শহরে আছড়ে পড়ে। পাঁচটি রকেট। আর এতে... জাতিসংঘ এবং সংস্থাটির প্রতিনিধিত্ব করা সবকিছুকে অপমান করতে রুশ নেতৃত্বের পদক্ষেপের বহু কিছু বলা হয়ে গেছে।’

এ সপ্তাহে মস্কো সফরের পর বৃহস্পতিবার কিয়েভ সফর করেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস। এই সফরের সময় কিয়েভের উপকণ্ঠে ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণ ঘটলে রাশিয়াকে দায়ী করে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে বিস্ফোরণে একটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে জেলেনস্কি বলেন, এই হামলার ‘একইরকমভাবে শক্ত জবাব’ দেয়া প্রয়োজন।