মোবাইল ফোন ছিনতাইকারী চক্র, সারাদেশেই নেটওয়ার্ক

সাইফ বাবলু

বাংলাদেশ থেকে চুরি হওয়া আইফোনের একটি বড় অংশই পাচার হয়ে যায় ভারতে। দেশীয় মোবাইল ফোন চোর ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা ভারতে তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে চোরাই আইফোন ভারতে বিক্রি করে দেয়। পরে সেগুলো নতুনভাবে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে সেখানকার লোকজন। এছাড়া আইফোন ছাড়া অন্য দামী স্মার্টফোনের বেশিরভাগ অংশ চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জে বিক্রি হয়। আন্তঃজেলা চোর সিন্ডিকেটের দলনেতাসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য পেয়েছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

ডিবির ভাষ্য তারা (গ্রেপ্তারকৃতরা) সবাই দাগী অপরাধী। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। এসব অপরাধীরা একত্রিত হয়েছে একজন ছিনতাইকারীর নেতৃত্বে। যাদের কাজ হলো যেকোন পরিস্থিতিতে দামী ফোন চুরি করা। রাজধানীসহ সারাদেশেই এ চক্রের নেটওয়ার্ক। ৩ চক্রে শতাধিক চোর রয়েছে। যারা রাজনৈতিক সমাবেশ থেকে শুরু করে যেকোন অনুষ্ঠান, বাস, লঞ্চ, ট্রেনের যাত্রীদের ফোন চুরি করতে দারুণ পারদর্শী। গত ৪ থেকে ৫ বছর ধরে এ চক্রের সদস্যরা দামী ফোন চুরি করে সেগুলো ভারতেও পাচার করে আসছিল। চক্রের দলনেতা হিসেবে যে ছিনতাইকারী রয়েছে তার নাম জাকির হোসেন। একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার হলেও ৩ থেকে ৪ মাসের বেশি জেলে ছিল না সে। গ্রেপ্তারকৃতদের নামে মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় তাদের গত বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হয়। আদালত তাদের জেলে পাঠিয়েছে।

গত ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে কাজ করার পর দলনেতা জাকিরসহ ১৩ জনকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাপাইনবাবগঞ্জ জেলায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফজলুর রহমানের তত্ত্বাবধায়নে এডিসি আশরাফুজ্জামান নেতৃত দেন। অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ১৫৬টির বেশি চুরি করা মোবাইল ফোন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলোÑ মো. জাকির হোসেন, জিয়াউল মোরøা, মো. আরিফুল ইসলাম, মো. শাহ আলম কাজল, মো. সাইফুল ইসলাম লাভলু, মো. নুর আলম, মো. আনোয়ার হোসেন নান্টু, মো. জামাল, মো. কামাল, আবদুল শুকুর সোহেল, আবদুল মান্নান সুমন, মো. নজরুল ইসলাম এবং মো. খোরশেদ আলম রাজা।

ডিবির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন থেকে মোবাইল চুরি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। তারা গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন জনসমাগমস্থল, বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন ও মার্কেটে অবস্থান করে মোবাইল চুরি-ছিনতাই করে। মোবাইল চুরির পর মোবাইলটি বন্ধ

করে অন্য সদস্যের কাছে দিয়ে আবারও চুরির কাজে লেগে যায়। পরবর্তীতে চুরি করা মোবাইলগুলো সফটওয়্যার ব্যবহার করে আইএমইআই পরিবর্তন ও স্ক্রিনলক খুলে লোকাল মার্কেটে বিক্রি করে।

তিনি বলেন, তবে আইফোনের লক খোলার ক্ষেত্রে এ চক্রের সদস্যরা আইটি এক্সপার্ট মো. খোরশেদ আলম ওরফে রাজার সহায়তা গ্রহণ করতো। আইফোন চুরির পর চক্রের সদস্যরা রাজার সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করতো। ‘অ্যাপল সাপোর্ট সার্ভিস’ নামে রাজা চোরাই মোবাইলের প্রকৃত মালিকের কাছে ফিশিং লিংক পাঠাতো। ফোনের মালিক সত্যিকার অ্যাপল এর অফিসিয়াল লিংক মনে করে প্রকৃত আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ওই লিংকে ঢুকলেই রাজা আইক্লাউডের সব তথ্য পেয়ে যেত। এভাবে রাজা আইক্লাউডের তথ্য রিমুভ করে চোরাই মোবাইলটি বিক্রির জন্য প্রস্তুত করতো।

তিনি আরও বলেন, যে সব আইফোন ব্যবহারকারী রাজার পাঠানো ফিশিং লিংকে ব্যক্তিগত তথ্য না দিত সেগুলো সে কিট প্রো সাইট ব্যবহার করে ২৫/৩০ ডলারের বিনিময়ে আইক্লাউড রিমুভের রিকুয়েস্ট পাঠাতো। কখনো কখনো ব্রিলিয়ান্ট নাম্বার ব্যবহার করে মালিকের কাছে ফোন দিত। নিজেকে বিটিআরসির কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে হারানো ফোনের আইক্লাউড ও স্ক্রিনলক এর তথ্য সংগ্রহ করতো।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, এ চক্রের সদস্য আইফোন চুরি করলে সেগুলো ফিসিং লিংকের মাধ্যমে আইএমই নম্বর পরিবর্তন করে। এরপর সেগুলো ভারতে পাচার করে দেয়। ভারতে এ চক্রের সহযোগী রয়েছে যারা কেবল আইফোনই এদের কাছ থেকে কিনে নেয়।

প্রত্যেকেই দাগী অপরাধী : ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম যে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা প্রত্যেকেই দাগী অপরাধ। চক্রের মহাজন মো. জাকির হোসেনের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। ৩ বার গ্রেপ্তার হয়ে জেলেও গিয়েছিল। একইভাবে জিয়াউল মোল্লা মাদকদ্রব্য আইন, পেনালকোডসহ বিভিন্ন অভিযোগে বাগেরহাটে দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। শাহ আলম ওরফে কাজলের বিরুদ্ধে জামালপুর সদর থানায় মামলা রয়েছে। লাভলু তালুকদারের বিরুদ্ধে রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা রয়েছে। নুর আলমের বিরুদ্ধে রাজধানী বাগমারা থানায় মামলা রয়েছে। আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্রাক্ষণবাড়িয়া থানায় মামলা রয়েছে। মো. জামালের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় মামলা রয়েছে।

শনিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২২ , ১৭ বৈশাখ ১৪২৮ ২৮ রমাদ্বান ১৪৪৩

মোবাইল ফোন ছিনতাইকারী চক্র, সারাদেশেই নেটওয়ার্ক

সাইফ বাবলু

বাংলাদেশ থেকে চুরি হওয়া আইফোনের একটি বড় অংশই পাচার হয়ে যায় ভারতে। দেশীয় মোবাইল ফোন চোর ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা ভারতে তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে চোরাই আইফোন ভারতে বিক্রি করে দেয়। পরে সেগুলো নতুনভাবে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে সেখানকার লোকজন। এছাড়া আইফোন ছাড়া অন্য দামী স্মার্টফোনের বেশিরভাগ অংশ চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জে বিক্রি হয়। আন্তঃজেলা চোর সিন্ডিকেটের দলনেতাসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য পেয়েছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

ডিবির ভাষ্য তারা (গ্রেপ্তারকৃতরা) সবাই দাগী অপরাধী। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। এসব অপরাধীরা একত্রিত হয়েছে একজন ছিনতাইকারীর নেতৃত্বে। যাদের কাজ হলো যেকোন পরিস্থিতিতে দামী ফোন চুরি করা। রাজধানীসহ সারাদেশেই এ চক্রের নেটওয়ার্ক। ৩ চক্রে শতাধিক চোর রয়েছে। যারা রাজনৈতিক সমাবেশ থেকে শুরু করে যেকোন অনুষ্ঠান, বাস, লঞ্চ, ট্রেনের যাত্রীদের ফোন চুরি করতে দারুণ পারদর্শী। গত ৪ থেকে ৫ বছর ধরে এ চক্রের সদস্যরা দামী ফোন চুরি করে সেগুলো ভারতেও পাচার করে আসছিল। চক্রের দলনেতা হিসেবে যে ছিনতাইকারী রয়েছে তার নাম জাকির হোসেন। একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার হলেও ৩ থেকে ৪ মাসের বেশি জেলে ছিল না সে। গ্রেপ্তারকৃতদের নামে মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় তাদের গত বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হয়। আদালত তাদের জেলে পাঠিয়েছে।

গত ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে কাজ করার পর দলনেতা জাকিরসহ ১৩ জনকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাপাইনবাবগঞ্জ জেলায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফজলুর রহমানের তত্ত্বাবধায়নে এডিসি আশরাফুজ্জামান নেতৃত দেন। অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ১৫৬টির বেশি চুরি করা মোবাইল ফোন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলোÑ মো. জাকির হোসেন, জিয়াউল মোরøা, মো. আরিফুল ইসলাম, মো. শাহ আলম কাজল, মো. সাইফুল ইসলাম লাভলু, মো. নুর আলম, মো. আনোয়ার হোসেন নান্টু, মো. জামাল, মো. কামাল, আবদুল শুকুর সোহেল, আবদুল মান্নান সুমন, মো. নজরুল ইসলাম এবং মো. খোরশেদ আলম রাজা।

ডিবির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন থেকে মোবাইল চুরি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। তারা গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন জনসমাগমস্থল, বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন ও মার্কেটে অবস্থান করে মোবাইল চুরি-ছিনতাই করে। মোবাইল চুরির পর মোবাইলটি বন্ধ

করে অন্য সদস্যের কাছে দিয়ে আবারও চুরির কাজে লেগে যায়। পরবর্তীতে চুরি করা মোবাইলগুলো সফটওয়্যার ব্যবহার করে আইএমইআই পরিবর্তন ও স্ক্রিনলক খুলে লোকাল মার্কেটে বিক্রি করে।

তিনি বলেন, তবে আইফোনের লক খোলার ক্ষেত্রে এ চক্রের সদস্যরা আইটি এক্সপার্ট মো. খোরশেদ আলম ওরফে রাজার সহায়তা গ্রহণ করতো। আইফোন চুরির পর চক্রের সদস্যরা রাজার সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করতো। ‘অ্যাপল সাপোর্ট সার্ভিস’ নামে রাজা চোরাই মোবাইলের প্রকৃত মালিকের কাছে ফিশিং লিংক পাঠাতো। ফোনের মালিক সত্যিকার অ্যাপল এর অফিসিয়াল লিংক মনে করে প্রকৃত আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ওই লিংকে ঢুকলেই রাজা আইক্লাউডের সব তথ্য পেয়ে যেত। এভাবে রাজা আইক্লাউডের তথ্য রিমুভ করে চোরাই মোবাইলটি বিক্রির জন্য প্রস্তুত করতো।

তিনি আরও বলেন, যে সব আইফোন ব্যবহারকারী রাজার পাঠানো ফিশিং লিংকে ব্যক্তিগত তথ্য না দিত সেগুলো সে কিট প্রো সাইট ব্যবহার করে ২৫/৩০ ডলারের বিনিময়ে আইক্লাউড রিমুভের রিকুয়েস্ট পাঠাতো। কখনো কখনো ব্রিলিয়ান্ট নাম্বার ব্যবহার করে মালিকের কাছে ফোন দিত। নিজেকে বিটিআরসির কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে হারানো ফোনের আইক্লাউড ও স্ক্রিনলক এর তথ্য সংগ্রহ করতো।

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, এ চক্রের সদস্য আইফোন চুরি করলে সেগুলো ফিসিং লিংকের মাধ্যমে আইএমই নম্বর পরিবর্তন করে। এরপর সেগুলো ভারতে পাচার করে দেয়। ভারতে এ চক্রের সহযোগী রয়েছে যারা কেবল আইফোনই এদের কাছ থেকে কিনে নেয়।

প্রত্যেকেই দাগী অপরাধী : ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম যে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা প্রত্যেকেই দাগী অপরাধ। চক্রের মহাজন মো. জাকির হোসেনের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। ৩ বার গ্রেপ্তার হয়ে জেলেও গিয়েছিল। একইভাবে জিয়াউল মোল্লা মাদকদ্রব্য আইন, পেনালকোডসহ বিভিন্ন অভিযোগে বাগেরহাটে দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। শাহ আলম ওরফে কাজলের বিরুদ্ধে জামালপুর সদর থানায় মামলা রয়েছে। লাভলু তালুকদারের বিরুদ্ধে রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা রয়েছে। নুর আলমের বিরুদ্ধে রাজধানী বাগমারা থানায় মামলা রয়েছে। আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্রাক্ষণবাড়িয়া থানায় মামলা রয়েছে। মো. জামালের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় মামলা রয়েছে।