আইডিয়ার মধ্যবিত্তের ব্যতিক্রমী ঈদ বাজার

রমজানের একমাস সফলভাবে ‘লস প্রজেক্ট’ শেষ করার পর এবার ব্যতিক্রমী ‘মধ্যবিত্তের ঈদ বাজারের’ মধ্যদিয়ে মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্তের পাশে দাঁড়ালো আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা। রমজানে অর্ধেক মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা ৪৭২টি পরিবারকে এই বাজার থেকে ৩শ’ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করা হয়েছে। সঙ্গে ছিল স্বল্পমূল্যের পোলাও চাল, চিনিসহ উপহারসামগ্রী। গতকাল যশোর শহরের খড়কিতে আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা চত্বরে বসেছিল ব্যতিক্রমী এই ‘মধ্যবিত্তের ঈদ বাজার’।

আয়োজকরা জানান, মধ্যবিত্তের ঈদ বাজারে দেশি গরুর মাংস ৩শ’ টাকা কেজি, পোলও চাল ৫০ টাকা কেজি ও চিনি ৫০ টাকা কেজি দরে প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া এর সঙ্গে সেমাই, মাংসের মসলা, বাদাম, কিসমিস উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে। ‘আইডিয়া লস প্রজেক্টের’ সুফলভোগী ৪৭২টি মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে এই পণ্য প্রদান করা হয়।

এর আগে ‘মানব কল্যাণে আমরা ঠকতে চাই’ শ্লোগান দিয়ে রমজান মাসকে সামনে রেখে আইডিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে পণ্য বিক্রির মধ্যে দিয়ে এই লস প্রজেক্টের যাত্রা শুরু করে। এই প্রোজেক্টের আওতায় পুরো রমজান মাসে ৪৭২টি পরিবারের কাছে লোকসানে পণ্য বিক্রি করা হয়। পরিবার প্রতি ৫০ টাকা কেজি দরের চাল ২৫ টাকায় ৫ কেজি, ১৬৮ টাকা লিটারের সয়াবিন তেল ১২০ টাকায়, দেড়শ’ টাকার খেজুর ৮০ টাকায়, ৩৫০ টাকা দরের খেজুর ২০০ টাকায়, ৪০ টাকা দামের ২ কেজি আলু ২০ টাকায়, ৫০ টাকার চিড়া ৩৫ টাকায়, ৮০ টাকা কেজির ছোলা ৫০ টাকায়, ৮০ টাকা কেজি দরের চিনি ৫০ টাকায়, ৯০ টাকা কেজি দরের মসুর ডাল ৬০ টাকায় এবং ৩০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ ১৫ টাকায় প্রদান করা হয়।

খেজুর দু’রকম হওয়ায় প্রতি প্যাকেজ ৫৫৫/ ৬৭৫ টাকায় প্রদান করা হয়। স্বাভাবিক বাজার মূল্যে এই প্যাকেজের দাম ছিল ৯৪০/১১৪০ টাকা। গোটা রমজান মাসে প্রতি পরিবার সপ্তাহে একবার করে চার সপ্তাহে মোট চারবার এই পণ্য ক্রয়ের সুযোগ গ্রহণ করে। সবমিলিয়ে আইডিয়া রমজান মাসের এই প্রজেক্টে তিন লক্ষাধিক টাকা ভর্তুকি দিয়ে লস প্রজেক্ট শেষ করে।

আইডিয়া’র লস প্রজেক্টের কো-অর্ডিনেটর সংস্থার সাবেক সভাপতি হারুণ অর রশিদ জানান, আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত সমাজকল্যাণমূলক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। এই প্রোজেক্টের আওতায় শিক্ষার্থীরা পবিত্র রমজান মাস জুড়ে ‘লস’ করার উদ্দেশ্যেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর ব্যবসা করেছে। সহজ কথায়, তারা বেশি দামে জিনিস কিনে নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মাঝে কম দামে বিক্রি করেছে।

আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা যশোর সরকারি এমএম কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, পবিত্র রমজানে মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত শ্রেণীর পাশে দাঁড়াতে আইডিয়া লস প্রজেক্ট শুরু করেছিল। সমাজের উচ্চবিত্তরা সবকিছুই কিনতে পারেন। নিম্নবিত্তের মানুষেরা সরকারি/বেসরকারি বিভিন্ন ‘ত্রাণ’ সুবিধার জন্যে মানুষের কাছে হাত পাততে পারলেও চক্ষু লজ্জার খাতিরে ‘মধ্যবিত্ত’ তাদের কান্না লুকিয়েই রাখে। ‘আইডিয়া লস প্রোজেক্ট’ পরোক্ষভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সহনশীলতার মধ্যে নিয়ে আসার একটি প্রকল্প। এই লস প্রজেক্টের খবর গণমাধ্যমে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। আইডিয়ার নিজস্ব তহবিল ও সহযোগিতা মিলিয়ে লস প্রজেক্টের পর এই ‘মধ্যবিত্তের ঈদ বাজার’ স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে ওই পরিবারগুলো অর্ধেকের কমদামে গরুর মাংস, পোলাও চাল ও চিনি ক্রয় করছেন। আর ক্রেতাদের উপহার হিসেবে সেমাই, মসলা দেয়া হচ্ছে।

সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রজেক্টে ‘লস’ করেছে সমাজের লাভের জন্যে। আর সমাজটা আমাদের সবার। মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণী- যারা কারো কাছেই হাত পাততে পারে না, আবার কারো অনুদানও গ্রহণ করতে লজ্জাবোধ করেন, তাদের সসম্মানে ক্রয় ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের ‘লসকে সাদকাহ হিসেবে বিবেচনা করেছে। লস্ প্রজেক্ট নিয়ে রমজানে পাশে থাকার পর ওই পরিবারগুলোকে ঈদের আনন্দ দিতে এই ঈদ বাজার স্থাপন করা হয়।

আইডিয়া থেকে ঈদবাজার করতে আসা খড়কি পীরবাড়ি এলাকার ইজিবাইক চালক জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা যারা খেটেখুটে বাজার করে খেতে চাই, তাদের বাজারে যেয়ে গরুর গোশ কেনার ক্ষমতা নেই। এখানে সাড়ে ৬শ’ টাকার গরুর গোশ ৩শ’ টাকায়, ১২০ টাকার পোলাও চাল ৫০ টাকায় ও ৯০টাকার চিনি ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কম টাকায় আমরা আনন্দের সঙ্গে ঈদের দিন গরুর গোশ খেতে পারবো।

খড়কি দক্ষিণ পাড়া এলাকার ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি আবদুল আলীম বললেন, ৩শ’ টাকায় গরুর গোশ্, ৫০ টাকায় পোলাও চাল, চিনির পাশাপাশি সেমাই মসলা উপহার হিসেবে দিচ্ছে। ঈদের দিন সবার মুখে গরুর গোশ্ তুলে দিতে পারবো, এতে খুব আনন্দ হচ্ছে।

গাজীর বাজার এলাকার সাজেদা বেগম বললেন, ‘রমজান মাসে কম দামে চাল, তেল, চিড়ে, ছোলা কিনিছি। এখন অর্ধেক দামে গরুর গোস্ত, পোলাও চাল পাচ্ছি। আমি আল্লার কাছে দোয়া করি, এরা যেন আর বেশি বেশি মানুষের জন্য করতে পারে।’

শনিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২২ , ১৭ বৈশাখ ১৪২৮ ২৮ রমাদ্বান ১৪৪৩

আইডিয়ার মধ্যবিত্তের ব্যতিক্রমী ঈদ বাজার

যশোর অফিস

রমজানের একমাস সফলভাবে ‘লস প্রজেক্ট’ শেষ করার পর এবার ব্যতিক্রমী ‘মধ্যবিত্তের ঈদ বাজারের’ মধ্যদিয়ে মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্তের পাশে দাঁড়ালো আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা। রমজানে অর্ধেক মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা ৪৭২টি পরিবারকে এই বাজার থেকে ৩শ’ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করা হয়েছে। সঙ্গে ছিল স্বল্পমূল্যের পোলাও চাল, চিনিসহ উপহারসামগ্রী। গতকাল যশোর শহরের খড়কিতে আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা চত্বরে বসেছিল ব্যতিক্রমী এই ‘মধ্যবিত্তের ঈদ বাজার’।

আয়োজকরা জানান, মধ্যবিত্তের ঈদ বাজারে দেশি গরুর মাংস ৩শ’ টাকা কেজি, পোলও চাল ৫০ টাকা কেজি ও চিনি ৫০ টাকা কেজি দরে প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া এর সঙ্গে সেমাই, মাংসের মসলা, বাদাম, কিসমিস উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে। ‘আইডিয়া লস প্রজেক্টের’ সুফলভোগী ৪৭২টি মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে এই পণ্য প্রদান করা হয়।

এর আগে ‘মানব কল্যাণে আমরা ঠকতে চাই’ শ্লোগান দিয়ে রমজান মাসকে সামনে রেখে আইডিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে পণ্য বিক্রির মধ্যে দিয়ে এই লস প্রজেক্টের যাত্রা শুরু করে। এই প্রোজেক্টের আওতায় পুরো রমজান মাসে ৪৭২টি পরিবারের কাছে লোকসানে পণ্য বিক্রি করা হয়। পরিবার প্রতি ৫০ টাকা কেজি দরের চাল ২৫ টাকায় ৫ কেজি, ১৬৮ টাকা লিটারের সয়াবিন তেল ১২০ টাকায়, দেড়শ’ টাকার খেজুর ৮০ টাকায়, ৩৫০ টাকা দরের খেজুর ২০০ টাকায়, ৪০ টাকা দামের ২ কেজি আলু ২০ টাকায়, ৫০ টাকার চিড়া ৩৫ টাকায়, ৮০ টাকা কেজির ছোলা ৫০ টাকায়, ৮০ টাকা কেজি দরের চিনি ৫০ টাকায়, ৯০ টাকা কেজি দরের মসুর ডাল ৬০ টাকায় এবং ৩০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ ১৫ টাকায় প্রদান করা হয়।

খেজুর দু’রকম হওয়ায় প্রতি প্যাকেজ ৫৫৫/ ৬৭৫ টাকায় প্রদান করা হয়। স্বাভাবিক বাজার মূল্যে এই প্যাকেজের দাম ছিল ৯৪০/১১৪০ টাকা। গোটা রমজান মাসে প্রতি পরিবার সপ্তাহে একবার করে চার সপ্তাহে মোট চারবার এই পণ্য ক্রয়ের সুযোগ গ্রহণ করে। সবমিলিয়ে আইডিয়া রমজান মাসের এই প্রজেক্টে তিন লক্ষাধিক টাকা ভর্তুকি দিয়ে লস প্রজেক্ট শেষ করে।

আইডিয়া’র লস প্রজেক্টের কো-অর্ডিনেটর সংস্থার সাবেক সভাপতি হারুণ অর রশিদ জানান, আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত সমাজকল্যাণমূলক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। এই প্রোজেক্টের আওতায় শিক্ষার্থীরা পবিত্র রমজান মাস জুড়ে ‘লস’ করার উদ্দেশ্যেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর ব্যবসা করেছে। সহজ কথায়, তারা বেশি দামে জিনিস কিনে নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মাঝে কম দামে বিক্রি করেছে।

আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা যশোর সরকারি এমএম কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, পবিত্র রমজানে মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত শ্রেণীর পাশে দাঁড়াতে আইডিয়া লস প্রজেক্ট শুরু করেছিল। সমাজের উচ্চবিত্তরা সবকিছুই কিনতে পারেন। নিম্নবিত্তের মানুষেরা সরকারি/বেসরকারি বিভিন্ন ‘ত্রাণ’ সুবিধার জন্যে মানুষের কাছে হাত পাততে পারলেও চক্ষু লজ্জার খাতিরে ‘মধ্যবিত্ত’ তাদের কান্না লুকিয়েই রাখে। ‘আইডিয়া লস প্রোজেক্ট’ পরোক্ষভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সহনশীলতার মধ্যে নিয়ে আসার একটি প্রকল্প। এই লস প্রজেক্টের খবর গণমাধ্যমে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। আইডিয়ার নিজস্ব তহবিল ও সহযোগিতা মিলিয়ে লস প্রজেক্টের পর এই ‘মধ্যবিত্তের ঈদ বাজার’ স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে ওই পরিবারগুলো অর্ধেকের কমদামে গরুর মাংস, পোলাও চাল ও চিনি ক্রয় করছেন। আর ক্রেতাদের উপহার হিসেবে সেমাই, মসলা দেয়া হচ্ছে।

সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রজেক্টে ‘লস’ করেছে সমাজের লাভের জন্যে। আর সমাজটা আমাদের সবার। মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণী- যারা কারো কাছেই হাত পাততে পারে না, আবার কারো অনুদানও গ্রহণ করতে লজ্জাবোধ করেন, তাদের সসম্মানে ক্রয় ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের ‘লসকে সাদকাহ হিসেবে বিবেচনা করেছে। লস্ প্রজেক্ট নিয়ে রমজানে পাশে থাকার পর ওই পরিবারগুলোকে ঈদের আনন্দ দিতে এই ঈদ বাজার স্থাপন করা হয়।

আইডিয়া থেকে ঈদবাজার করতে আসা খড়কি পীরবাড়ি এলাকার ইজিবাইক চালক জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা যারা খেটেখুটে বাজার করে খেতে চাই, তাদের বাজারে যেয়ে গরুর গোশ কেনার ক্ষমতা নেই। এখানে সাড়ে ৬শ’ টাকার গরুর গোশ ৩শ’ টাকায়, ১২০ টাকার পোলাও চাল ৫০ টাকায় ও ৯০টাকার চিনি ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কম টাকায় আমরা আনন্দের সঙ্গে ঈদের দিন গরুর গোশ খেতে পারবো।

খড়কি দক্ষিণ পাড়া এলাকার ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি আবদুল আলীম বললেন, ৩শ’ টাকায় গরুর গোশ্, ৫০ টাকায় পোলাও চাল, চিনির পাশাপাশি সেমাই মসলা উপহার হিসেবে দিচ্ছে। ঈদের দিন সবার মুখে গরুর গোশ্ তুলে দিতে পারবো, এতে খুব আনন্দ হচ্ছে।

গাজীর বাজার এলাকার সাজেদা বেগম বললেন, ‘রমজান মাসে কম দামে চাল, তেল, চিড়ে, ছোলা কিনিছি। এখন অর্ধেক দামে গরুর গোস্ত, পোলাও চাল পাচ্ছি। আমি আল্লার কাছে দোয়া করি, এরা যেন আর বেশি বেশি মানুষের জন্য করতে পারে।’