সাত বছরে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে পড়তে যাচ্ছে জাপান

জাপানে খুচরা পর্যায়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এপ্রিলে বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতিটির মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশে পৌঁছতে পারে। এতে সাত বছরের সর্বোচ্চে দাঁড়াবে দেশটির মূল্যস্ফীতি। মূলত তাজা খাবার ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিই এর কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির কারণে বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। নিক্কেই এশিয়া।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ মূল্যস্ফীতির কারণ হলো ইয়েনের মান দুর্বল হয়ে যাওয়া ও ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়া। এর পেছনে রয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ। এর আগে ২০১৫ সালে সর্বশেষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছিল। সে সময় অবশ্য ভোক্তা কর বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশে পৌঁছে।

সময়ের সঙ্গে জাপানের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি বেশ স্থিতিশীল ছিল। একটি পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, চলতি বছর দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের একটি জরিপে দেখা গিয়েছে, অক্টোবরে দ্রব্যমূল্য বেশি বেড়েছে। অন্য দুটি জরিপে আগস্ট ও চলতি এপ্রিলে দাম বাড়ার কথা বলা হয়েছে। তবে সব জরিপই বলছে যে মূল্যস্ফীতি অন্তত ২ শতাংশ হবে।

এরই মধ্যে ব্যাংক অব জাপান মুদ্রা লেনদেনের বিষয়টি সহজ করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার হয়তো ব্যাংকের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এর আগে গত জানুয়ারিতে ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এপ্রিলে শুরু হওয়া বছরের জন্য মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস বাড়িয়ে ১ দশমিক ১ শতাংশ করা হয়।

মিজুহো রিসার্চ অ্যান্ড টেকনোলজি মনে করছে, আগস্ট নাগাদ মূল্যস্ফীতি ২ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছতে পারে। এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে জ্বালানির দাম। যেহেতু তেলের দাম বাড়তি তাই বিদ্যুৎ উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী গ্রীষ্ম নাগাদ দাম সমন্বয় করতে হবে। সেক্ষেত্রে বিদ্যুতের জন্যও বাড়তি দাম গুনতে হবে।

এনএলআই রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ তারো সাইতো বলেন, ২০২২ সালজুড়ে মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশই থাকতে পারে। যদি বাড়েও তবে তা ২ দশমিক ৩ শতাংশের বেশি হবে না। দুর্বল ইয়েনের উচ্চমূল্য ভোক্তাদের ব্যয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে। এতে ভোক্তার নিত্যপণ্যের দাম ও পোশাকের দাম বাড়বে।

সব মিলিয়ে ২০২২ সালের জন্য মূল্যস্ফীতি গড়ে ২ শতাংশ হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, ডলারের এক্সচেঞ্জ রেট হবে ১২৮ ইয়েন, যা বর্তমান সময়ের বেশ কাছাকাছি। মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তা ব্যয় কমে যাবে বলে শঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ২০২৩ সাল নাগাদ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এ ধারা কমে আসবে বলেও পূর্বাভাসে জানানো হচ্ছে।

এসএমবিসি নিক্কো সিকিউরিটিজের অর্থনীতিবিদ ইয়োশিমা মারুইয়ামা বলেন, বেতন বাড়ছে না, তাই দ্রব্যমূল্য বাড়লে তার সঙ্গে পরিবারগুলোকে ব্যয় সমন্বয় করতে হবে। যদিও জাপানের দ্রব্যমূল্য ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাড়েনি, তবু তার রেশ ভোক্তাদের ওপর ঠিকই পড়েছে।

শুধু জাপানই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হারও বাড়ছে। বলা যায়, মূল্যস্ফীতি যেন পাগলা ঘোড়ায় সওয়ার হয়েছে। প্রতি মাসেই নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে অর্থনীতির অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। গত মাসে জানা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এবার জানা গেল, মার্চে মূল্যস্ফীতির হার ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মূলত জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৫ শতাংশে উঠেছে ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরের পর সর্বোচ্চ।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়া থেকে তেল, গ্যাসসহ সব ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানির মূল্যের রেকর্ড বৃদ্ধি হয়। গত ২৪ ফেব্রুয়রি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারকের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ঢেউ আসতে শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছরের মার্চ মাসে সেখানে জ্বালানির মূল্য ৩২ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানির সঙ্গে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। গম ও সূর্যমুখী তেলের মতো বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের বড় রপ্তানিকারক এই দুই দেশ এর জেরে সারা বিশ্বেই খাদ্যমূল্য বাড়ছে।

উন্নত দেশে সাধারণত মূল্যস্ফীতির সহনীয় হার ধরা হয় ২ শতাংশ। অথচ এখন মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমিত আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছে। নর্থ ক্যারোলাইনার ক্রিস্টেন হাভলিক বলেন, মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় নিজেকে এখন তার উন্মাদের মতো মনে হয়।

রবিবার, ০১ মে ২০২২ , ১৮ বৈশাখ ১৪২৮ ২৯ রমাদ্বান ১৪৪৩

সাত বছরে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির কবলে পড়তে যাচ্ছে জাপান

সংবাদ ডেস্ক

image

জাপানে খুচরা পর্যায়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এপ্রিলে বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতিটির মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশে পৌঁছতে পারে। এতে সাত বছরের সর্বোচ্চে দাঁড়াবে দেশটির মূল্যস্ফীতি। মূলত তাজা খাবার ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিই এর কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির কারণে বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। নিক্কেই এশিয়া।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ মূল্যস্ফীতির কারণ হলো ইয়েনের মান দুর্বল হয়ে যাওয়া ও ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়া। এর পেছনে রয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ। এর আগে ২০১৫ সালে সর্বশেষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছিল। সে সময় অবশ্য ভোক্তা কর বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশে পৌঁছে।

সময়ের সঙ্গে জাপানের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি বেশ স্থিতিশীল ছিল। একটি পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, চলতি বছর দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের একটি জরিপে দেখা গিয়েছে, অক্টোবরে দ্রব্যমূল্য বেশি বেড়েছে। অন্য দুটি জরিপে আগস্ট ও চলতি এপ্রিলে দাম বাড়ার কথা বলা হয়েছে। তবে সব জরিপই বলছে যে মূল্যস্ফীতি অন্তত ২ শতাংশ হবে।

এরই মধ্যে ব্যাংক অব জাপান মুদ্রা লেনদেনের বিষয়টি সহজ করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার হয়তো ব্যাংকের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এর আগে গত জানুয়ারিতে ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এপ্রিলে শুরু হওয়া বছরের জন্য মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস বাড়িয়ে ১ দশমিক ১ শতাংশ করা হয়।

মিজুহো রিসার্চ অ্যান্ড টেকনোলজি মনে করছে, আগস্ট নাগাদ মূল্যস্ফীতি ২ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছতে পারে। এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে জ্বালানির দাম। যেহেতু তেলের দাম বাড়তি তাই বিদ্যুৎ উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী গ্রীষ্ম নাগাদ দাম সমন্বয় করতে হবে। সেক্ষেত্রে বিদ্যুতের জন্যও বাড়তি দাম গুনতে হবে।

এনএলআই রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ তারো সাইতো বলেন, ২০২২ সালজুড়ে মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশই থাকতে পারে। যদি বাড়েও তবে তা ২ দশমিক ৩ শতাংশের বেশি হবে না। দুর্বল ইয়েনের উচ্চমূল্য ভোক্তাদের ব্যয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে। এতে ভোক্তার নিত্যপণ্যের দাম ও পোশাকের দাম বাড়বে।

সব মিলিয়ে ২০২২ সালের জন্য মূল্যস্ফীতি গড়ে ২ শতাংশ হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, ডলারের এক্সচেঞ্জ রেট হবে ১২৮ ইয়েন, যা বর্তমান সময়ের বেশ কাছাকাছি। মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তা ব্যয় কমে যাবে বলে শঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ২০২৩ সাল নাগাদ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এ ধারা কমে আসবে বলেও পূর্বাভাসে জানানো হচ্ছে।

এসএমবিসি নিক্কো সিকিউরিটিজের অর্থনীতিবিদ ইয়োশিমা মারুইয়ামা বলেন, বেতন বাড়ছে না, তাই দ্রব্যমূল্য বাড়লে তার সঙ্গে পরিবারগুলোকে ব্যয় সমন্বয় করতে হবে। যদিও জাপানের দ্রব্যমূল্য ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাড়েনি, তবু তার রেশ ভোক্তাদের ওপর ঠিকই পড়েছে।

শুধু জাপানই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হারও বাড়ছে। বলা যায়, মূল্যস্ফীতি যেন পাগলা ঘোড়ায় সওয়ার হয়েছে। প্রতি মাসেই নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে অর্থনীতির অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। গত মাসে জানা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এবার জানা গেল, মার্চে মূল্যস্ফীতির হার ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মূলত জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৫ শতাংশে উঠেছে ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরের পর সর্বোচ্চ।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়া থেকে তেল, গ্যাসসহ সব ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানির মূল্যের রেকর্ড বৃদ্ধি হয়। গত ২৪ ফেব্রুয়রি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারকের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ঢেউ আসতে শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছরের মার্চ মাসে সেখানে জ্বালানির মূল্য ৩২ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানির সঙ্গে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। গম ও সূর্যমুখী তেলের মতো বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের বড় রপ্তানিকারক এই দুই দেশ এর জেরে সারা বিশ্বেই খাদ্যমূল্য বাড়ছে।

উন্নত দেশে সাধারণত মূল্যস্ফীতির সহনীয় হার ধরা হয় ২ শতাংশ। অথচ এখন মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমিত আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছে। নর্থ ক্যারোলাইনার ক্রিস্টেন হাভলিক বলেন, মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় নিজেকে এখন তার উন্মাদের মতো মনে হয়।