যৌতুক : স্বামীর আগুনে দগ্ধ সাদিয়ার মৃত্যু

কুমিল্লার দেবিদ্বারে চাহিদামতো যৌতুকের দাবি পূরণ না করায়, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে পেট্রোলের আগুনে পুড়িয়ে দেয়া সাদিয়া আক্তার মারা গেছে। এক সপ্তাহ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জালড়ে অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে। সাদিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ কুমিল্লা উত্তর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আলহাজ মো. হুমায়ুন কবির। তিনি জানান, আজ ভোর পৌনে ৫টায় সাদিয়া মারা যায়, শাহবাগ থানা পুলিশের তত্ত্বাবধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাদিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে দেবিদ্বার উপজেলার পদ্মকোট মরহুমার পিত্রালয়ে জানাযা সম্পন্ন শেষে দাফন করা হবে।

যৌতুকের দাবি মিটিয়ে দুই বছর আগে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার গুনাইঘর গ্রামের নুরুল ইসলাম (নুরু) সরকারের ছেলে আসাদ সরকারের সাথে বিয়ে হয় সাদিয়ার। নিহত সাদিয়া একই উপজেলার পদ্মকোট গ্রামের মো. ফরিদুল আলম অপুল সরকারের মেয়ে।

সাদিয়ার পরিবারের অভিযোগ, ঈদের আগে আরও পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে সে। টাকা দিতে না পারায়, গত শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে দেবীদ্বার উপজেলা সদরের বানিয়াপাড়ার ভাড়া বাসায় সাদিয়ার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় আসাদ।

গুরুতর আহত অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ সাদিয়াকে প্রথমে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে দ্রুত ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে’ নেয়া হয়। সেখানে তিনি এক সপ্তাহ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শনিবার ভোর পৌনে পাঁচটায় মারা যান।

এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান এলাকাবাসীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সাদিয়া আক্তার হত্যায় জড়িতদের ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ।

ওই ঘটনায় সাদিয়ার বাবা ফরিদুল আলম অপুল সরকারের দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত স্বামী আসাদ সরকারকে গত বুধবার (২৭ এপ্রিল) রাতেই আটক করেছে থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেবীদ্বার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান।

গত বৃহস্পতিবার (২৮ এপিল) সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গুরুতর আহত থাকা সাদিয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, আমার স্বামী আমাকে এর আগেও কয়েকবার বলেছেন যে পেট্টোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করবে। গত ৫ মাস ধরে যৌতুকের জন্য আমাকে প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিল। আমার স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির সবাই শুধু বলত, বাপের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আয়। টাকা না দেয়ায় আমার শরীরে পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় আমার স্বামী। আমি আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও আমাকে বাঁধা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার চেষ্টা করে।

সাদিয়ার চাচা মো. আলমগীর হোসেন আলম বলেন, প্রায় আড়াই বছর পূর্বে সাদিয়ার বিয়ে হয়েছিল, গত ৩ মাস পূর্বে একটি কন্যা সন্তান জন্ম দিলেও জন্মের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌতুকের টাকা নিয়ে বনিবনা হচ্ছিল না। সাদিয়ার স্বামী দেবীদ্বার সদর বানিয়াপাড়া মাটিয়া মসজিদ সংলগ্ন একটি ওয়ার্কশপের দোকানদারি করত। ব্যবসার সুবাদে ওই এলাকায় সে ভাড়া বাসায় থাকা অবস্থাই সাদিয়াকে আগুনে পুড়ে হত্যার চেষ্টা করেছিল।

আহত সাদিয়া অচেতন থাকায় বিষয়টি ওরা প্রায় ৫ দিন গোপন রাখার পর জ্ঞান ফিরে আসার পর সাদিয়া তার ভিডিও বার্তায় যৌতুকের টাকা না এনে দেয়ায় পেট্রোলে পুড়িয়ে তাকে কিভাবে হত্যার চেষ্টা করেছিল তার সত্যতা প্রকাশ পায়।

রবিবার, ০১ মে ২০২২ , ১৮ বৈশাখ ১৪২৮ ২৯ রমাদ্বান ১৪৪৩

যৌতুক : স্বামীর আগুনে দগ্ধ সাদিয়ার মৃত্যু

প্রতিনিধি, দেবিদ্বার (কুমিল্লা)

কুমিল্লার দেবিদ্বারে চাহিদামতো যৌতুকের দাবি পূরণ না করায়, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে পেট্রোলের আগুনে পুড়িয়ে দেয়া সাদিয়া আক্তার মারা গেছে। এক সপ্তাহ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জালড়ে অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে। সাদিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ কুমিল্লা উত্তর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আলহাজ মো. হুমায়ুন কবির। তিনি জানান, আজ ভোর পৌনে ৫টায় সাদিয়া মারা যায়, শাহবাগ থানা পুলিশের তত্ত্বাবধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাদিয়ার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে দেবিদ্বার উপজেলার পদ্মকোট মরহুমার পিত্রালয়ে জানাযা সম্পন্ন শেষে দাফন করা হবে।

যৌতুকের দাবি মিটিয়ে দুই বছর আগে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার গুনাইঘর গ্রামের নুরুল ইসলাম (নুরু) সরকারের ছেলে আসাদ সরকারের সাথে বিয়ে হয় সাদিয়ার। নিহত সাদিয়া একই উপজেলার পদ্মকোট গ্রামের মো. ফরিদুল আলম অপুল সরকারের মেয়ে।

সাদিয়ার পরিবারের অভিযোগ, ঈদের আগে আরও পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে সে। টাকা দিতে না পারায়, গত শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে দেবীদ্বার উপজেলা সদরের বানিয়াপাড়ার ভাড়া বাসায় সাদিয়ার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় আসাদ।

গুরুতর আহত অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ সাদিয়াকে প্রথমে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে দ্রুত ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে’ নেয়া হয়। সেখানে তিনি এক সপ্তাহ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শনিবার ভোর পৌনে পাঁচটায় মারা যান।

এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান এলাকাবাসীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সাদিয়া আক্তার হত্যায় জড়িতদের ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ।

ওই ঘটনায় সাদিয়ার বাবা ফরিদুল আলম অপুল সরকারের দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত স্বামী আসাদ সরকারকে গত বুধবার (২৭ এপ্রিল) রাতেই আটক করেছে থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেবীদ্বার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান।

গত বৃহস্পতিবার (২৮ এপিল) সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গুরুতর আহত থাকা সাদিয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, আমার স্বামী আমাকে এর আগেও কয়েকবার বলেছেন যে পেট্টোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করবে। গত ৫ মাস ধরে যৌতুকের জন্য আমাকে প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিল। আমার স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির সবাই শুধু বলত, বাপের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আয়। টাকা না দেয়ায় আমার শরীরে পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় আমার স্বামী। আমি আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও আমাকে বাঁধা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার চেষ্টা করে।

সাদিয়ার চাচা মো. আলমগীর হোসেন আলম বলেন, প্রায় আড়াই বছর পূর্বে সাদিয়ার বিয়ে হয়েছিল, গত ৩ মাস পূর্বে একটি কন্যা সন্তান জন্ম দিলেও জন্মের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌতুকের টাকা নিয়ে বনিবনা হচ্ছিল না। সাদিয়ার স্বামী দেবীদ্বার সদর বানিয়াপাড়া মাটিয়া মসজিদ সংলগ্ন একটি ওয়ার্কশপের দোকানদারি করত। ব্যবসার সুবাদে ওই এলাকায় সে ভাড়া বাসায় থাকা অবস্থাই সাদিয়াকে আগুনে পুড়ে হত্যার চেষ্টা করেছিল।

আহত সাদিয়া অচেতন থাকায় বিষয়টি ওরা প্রায় ৫ দিন গোপন রাখার পর জ্ঞান ফিরে আসার পর সাদিয়া তার ভিডিও বার্তায় যৌতুকের টাকা না এনে দেয়ায় পেট্রোলে পুড়িয়ে তাকে কিভাবে হত্যার চেষ্টা করেছিল তার সত্যতা প্রকাশ পায়।