মুহিত, একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় শেষ বিদায়

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় চিরবিদায় জানানো হয়। গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ, (সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠন)। মুহিতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে বিশিষ্টজনরা বলেন, মুহিত একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন, সততা ও অত্যন্ত সরল, সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষ ছিলেন।

গতকাল রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে আবুল মাল আবদুল মুহিত ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে দেশের অর্থনীতির শক্তিশালী ভিত রচনায় আবুল মাল আবদুল মুহিত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের অগ্রযাত্রায় আবুল মাল আবদুল মুহিতের অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’ রাষ্ট্রপতি প্রয়াত মুহিতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত সফল এ অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ স্বীয় কর্মের মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’ শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের সদস্য মুহিতের ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তান দূতাবাসে চাকরিরত অবস্থায় পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রথম সরকারে যোগ দেয়ার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত মুহিতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

গতকাল পৌনে ১টার দিকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আবুল মাল আবদুল মুহিতের কফিন নিয়ে আসা হয়। প্রথমে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাউদ্দিন ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব ব্রিগ্রিডিয়ার জেনারেল কবির আহমেদ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিনের পক্ষে তার সার্জেন্ট অ্যান্ড আর্মস কমোডোর এম নাইম রহমান শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, জাহাঙ্গীর কবির নানাক ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মুহিতের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আবুল মাল আবদুল মুহিত ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীতে অসাধারণ কৃতিত্ব, হার্ভাডেও পড়াশোনা করেছেন। তিনি বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১২টি বাজেট পেশ করেছেন। ১০টি শেখ হাসিনা সরকারের সময়, এটি একটি রেকর্ড।’ তিনি বলেন, আমি এরকম কাজ পাগল মানুষ কমই দেখেছি। কাজে আর পড়াশোনায় ডুবে থাকতেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছুটির দিনেও অফিসে দেখা যেতো, সচিবালয় বন্ধ আবুল মাল আবদুল মুহিতের অফিসে আলো জ্বলছে। তিনি এ রকম মানুষ ছিলেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থনীতিবিদ হিসেবেও সফল, অর্থমন্ত্রী হিসেবেও সফল। সবচেয়ে বড় কথা এ দেশের রাজনীতিতে সৎ মানুষ খুব বেশি নেই। মুহিত শতভাগ সৎ লোক ছিলেন উল্লেখ ওবায়দুল কাদেরের।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই একে আবদুল মোমেন বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন। তিনি সারাজীবন সততার ও আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের জন্য কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন, তিনিও সেই দায়িত্ব সততার সঙ্গে পালন করেছেন। মুহিত কাজে প্রমাণ করে দিয়েছেন, তিনি অত্যন্ত মেধাবী ও কর্মঠ ছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মুহিত ভাই শেষ কয়েকদিন যাবত বারবার বলছিলেন চলে যেতে চান। বলতেন আমার কাজ শেষ এবার আমি চলে যেতে চাই, বাকিটা তোমরা দেখো। অবশেষে তিনি চলেই গেলেন। তিনি যে স্বপ্ন দেখতের আমরা যেন তেমন একটি সুন্দর আগামীর বাংলাদেশ গড়তে পারি, সেই লক্ষ্যে কাজ করে যেতে পারি।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যারা স্বাধীনতা এনেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম আবুল মাল আবদুল মুহিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ওয়াশিংটনে ছিলেন এবং প্রবাসীদের সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে, প্রবাসীদের প্রচেষ্টা না থাকলে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি আন্দোলনে সম্ভব ছিল না। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তিতে জাতি গড়ার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন।

আওয়ামী লীগে প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বে একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন। তার মধ্যে দায়িত্ববোধ ও মানবিক গুণাবলি ছিল। তার মতো সফল আমাদের কয়জনের আছে।

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, দেশের অর্থনীতিতে নানাভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন আবদুল মুহিত। দেশের অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদান রাখা একজন মানুষকে হারানো বেদনাদায়ক। উনি (মুহিত) যে কাজের মধ্যে ছিলেন এটা আমরা ধরে রাখতে পারলে দেশের কল্যাণ হবেই।

সাবেক মন্ত্রী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত আপাদমস্তক একজন ভালো মানুষ ছিলেন। অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিকে চমৎকারভাবে সন্নিবেশ করেছিলেন। তিনি যা ভাবতেন তা বাস্তবায়নও করতে পারেন, এটা দেখিয়েছন।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, অত্যন্ত সরল, সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষ ছিলেন মুহিত সাহেব। আমলাতন্ত্র বলি, রাজনৈতিক ব্যক্তি বলি আর মন্ত্রী বলি তিনি বিরল ব্যক্তিত্ব।

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বহু গুণে গুণান্বিত মুহিত ভাই। আমরা বুদ্ধিভিত্তিক জগত থেকে একজন মেধাবী লোককে হারালাম, সাংস্কৃতিক জগতের একজন পৃষ্ঠপোষককে হারালাম। অর্থনৈতিক জগতের একজন বাস্তবভিত্তিক অর্থনীতিবিদ হারালাম, শিক্ষিত গুণি মেধাবীকে হারালাম।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে গুলশান আজাদ মসজিদে আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় তার (মুহিত) ছোট ভাই ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালসহ সরকারের বিভিন্ন এমপি, আমলা ও তার শুভাকাক্সক্ষীরা অংশ নেন। দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে মুহিতের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এই জানাজায় নানাস্তরের মানুষ অংশ নেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ও সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরীর ১৪ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সন্তান তিনি। স্ত্রী সৈয়দা সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তিন সন্তানের মধ্যে কন্যা সামিনা মুহিত ব্যাংকার ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ। বড় ছেলে সাহেদ মুহিত বাস্তুকলাবিদ এবং ছোট ছেলে সামির মুহিত শিক্ষক।

২০২১ সালের ২৫ জুলাই আবদুল মুহিত করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত মার্চের শুরুতে আবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন কিছুদিন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে ১৪ মার্চ সিলেট ঘুরে আসেন। সিলেট সিটি করপোরেশন ১৬ মার্চ তাকে ‘গুণীশ্রেষ্ঠ সম্মাননা’ দেয়।

আজ আবুল মাল আবদুল মুহিতকে পারিবারিক কবরস্থানে মা সৈয়দা শাহারা বানু চৌধুরী ও বাবা আবদুল হাফিজের কবরের পাশে দাফন করা হবে।

জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার লাশ নেয়া হবে। দুপুর ২টার দিকে দরগাহ মসজিদে জোহরের নামাজ শেষে জানাজার নামাজের জন্য আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নেয়া হবে মুহিতের লাশ।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, আবুল মাল আবদুল মুহিতের দাফনকে কেন্দ্র করে সিলেট নগরীর রায়নগর এলাকায় ডিপ্টি বাড়ি হিসেবে পরিচিত মুহিতের পৈতৃক নিবাস লাগোয়া পারিবারিক কবরস্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ করা হচ্ছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের একদল পরিচ্ছন্নকর্মী গতকাল দুপুর থেকে এই পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেন।

রবিবার, ০১ মে ২০২২ , ১৮ বৈশাখ ১৪২৮ ২৯ রমাদ্বান ১৪৪৩

মুহিত, একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় শেষ বিদায়

নিজস্ব বার্র্তা পরিবেশক

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় চিরবিদায় জানানো হয়। গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ, (সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠন)। মুহিতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে বিশিষ্টজনরা বলেন, মুহিত একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন, সততা ও অত্যন্ত সরল, সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষ ছিলেন।

গতকাল রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে আবুল মাল আবদুল মুহিত ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে দেশের অর্থনীতির শক্তিশালী ভিত রচনায় আবুল মাল আবদুল মুহিত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের অগ্রযাত্রায় আবুল মাল আবদুল মুহিতের অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’ রাষ্ট্রপতি প্রয়াত মুহিতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত সফল এ অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ স্বীয় কর্মের মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’ শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের সদস্য মুহিতের ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তান দূতাবাসে চাকরিরত অবস্থায় পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রথম সরকারে যোগ দেয়ার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত মুহিতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

গতকাল পৌনে ১টার দিকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আবুল মাল আবদুল মুহিতের কফিন নিয়ে আসা হয়। প্রথমে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাউদ্দিন ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব ব্রিগ্রিডিয়ার জেনারেল কবির আহমেদ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিনের পক্ষে তার সার্জেন্ট অ্যান্ড আর্মস কমোডোর এম নাইম রহমান শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, জাহাঙ্গীর কবির নানাক ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মুহিতের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আবুল মাল আবদুল মুহিত ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীতে অসাধারণ কৃতিত্ব, হার্ভাডেও পড়াশোনা করেছেন। তিনি বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১২টি বাজেট পেশ করেছেন। ১০টি শেখ হাসিনা সরকারের সময়, এটি একটি রেকর্ড।’ তিনি বলেন, আমি এরকম কাজ পাগল মানুষ কমই দেখেছি। কাজে আর পড়াশোনায় ডুবে থাকতেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছুটির দিনেও অফিসে দেখা যেতো, সচিবালয় বন্ধ আবুল মাল আবদুল মুহিতের অফিসে আলো জ্বলছে। তিনি এ রকম মানুষ ছিলেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থনীতিবিদ হিসেবেও সফল, অর্থমন্ত্রী হিসেবেও সফল। সবচেয়ে বড় কথা এ দেশের রাজনীতিতে সৎ মানুষ খুব বেশি নেই। মুহিত শতভাগ সৎ লোক ছিলেন উল্লেখ ওবায়দুল কাদেরের।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই একে আবদুল মোমেন বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন। তিনি সারাজীবন সততার ও আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের জন্য কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন, তিনিও সেই দায়িত্ব সততার সঙ্গে পালন করেছেন। মুহিত কাজে প্রমাণ করে দিয়েছেন, তিনি অত্যন্ত মেধাবী ও কর্মঠ ছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মুহিত ভাই শেষ কয়েকদিন যাবত বারবার বলছিলেন চলে যেতে চান। বলতেন আমার কাজ শেষ এবার আমি চলে যেতে চাই, বাকিটা তোমরা দেখো। অবশেষে তিনি চলেই গেলেন। তিনি যে স্বপ্ন দেখতের আমরা যেন তেমন একটি সুন্দর আগামীর বাংলাদেশ গড়তে পারি, সেই লক্ষ্যে কাজ করে যেতে পারি।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যারা স্বাধীনতা এনেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম আবুল মাল আবদুল মুহিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ওয়াশিংটনে ছিলেন এবং প্রবাসীদের সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে, প্রবাসীদের প্রচেষ্টা না থাকলে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি আন্দোলনে সম্ভব ছিল না। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তিতে জাতি গড়ার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন।

আওয়ামী লীগে প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বে একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন। তার মধ্যে দায়িত্ববোধ ও মানবিক গুণাবলি ছিল। তার মতো সফল আমাদের কয়জনের আছে।

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, দেশের অর্থনীতিতে নানাভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন আবদুল মুহিত। দেশের অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদান রাখা একজন মানুষকে হারানো বেদনাদায়ক। উনি (মুহিত) যে কাজের মধ্যে ছিলেন এটা আমরা ধরে রাখতে পারলে দেশের কল্যাণ হবেই।

সাবেক মন্ত্রী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত আপাদমস্তক একজন ভালো মানুষ ছিলেন। অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিকে চমৎকারভাবে সন্নিবেশ করেছিলেন। তিনি যা ভাবতেন তা বাস্তবায়নও করতে পারেন, এটা দেখিয়েছন।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, অত্যন্ত সরল, সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষ ছিলেন মুহিত সাহেব। আমলাতন্ত্র বলি, রাজনৈতিক ব্যক্তি বলি আর মন্ত্রী বলি তিনি বিরল ব্যক্তিত্ব।

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বহু গুণে গুণান্বিত মুহিত ভাই। আমরা বুদ্ধিভিত্তিক জগত থেকে একজন মেধাবী লোককে হারালাম, সাংস্কৃতিক জগতের একজন পৃষ্ঠপোষককে হারালাম। অর্থনৈতিক জগতের একজন বাস্তবভিত্তিক অর্থনীতিবিদ হারালাম, শিক্ষিত গুণি মেধাবীকে হারালাম।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে গুলশান আজাদ মসজিদে আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় তার (মুহিত) ছোট ভাই ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালসহ সরকারের বিভিন্ন এমপি, আমলা ও তার শুভাকাক্সক্ষীরা অংশ নেন। দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে মুহিতের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এই জানাজায় নানাস্তরের মানুষ অংশ নেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ও সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরীর ১৪ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সন্তান তিনি। স্ত্রী সৈয়দা সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তিন সন্তানের মধ্যে কন্যা সামিনা মুহিত ব্যাংকার ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ। বড় ছেলে সাহেদ মুহিত বাস্তুকলাবিদ এবং ছোট ছেলে সামির মুহিত শিক্ষক।

২০২১ সালের ২৫ জুলাই আবদুল মুহিত করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত মার্চের শুরুতে আবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন কিছুদিন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে ১৪ মার্চ সিলেট ঘুরে আসেন। সিলেট সিটি করপোরেশন ১৬ মার্চ তাকে ‘গুণীশ্রেষ্ঠ সম্মাননা’ দেয়।

আজ আবুল মাল আবদুল মুহিতকে পারিবারিক কবরস্থানে মা সৈয়দা শাহারা বানু চৌধুরী ও বাবা আবদুল হাফিজের কবরের পাশে দাফন করা হবে।

জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার লাশ নেয়া হবে। দুপুর ২টার দিকে দরগাহ মসজিদে জোহরের নামাজ শেষে জানাজার নামাজের জন্য আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নেয়া হবে মুহিতের লাশ।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, আবুল মাল আবদুল মুহিতের দাফনকে কেন্দ্র করে সিলেট নগরীর রায়নগর এলাকায় ডিপ্টি বাড়ি হিসেবে পরিচিত মুহিতের পৈতৃক নিবাস লাগোয়া পারিবারিক কবরস্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ করা হচ্ছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের একদল পরিচ্ছন্নকর্মী গতকাল দুপুর থেকে এই পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেন।