মহামারীর ক্ষত শুকাতে নতুন সংগ্রামে শ্রমজীবীরা

‘আগের মতো ব্যবসা নাই স্যার। লোকজনের পকেটে টাকা থাকলে তো খাইব। বেচাকিনি কম। কোনরহম (কোন রকম) চলতাছে আরকি,’ কথাগুলো রাস্তার পাশের চা বিক্রেতা রমজান আলীর। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত দুই বছর পারিস্থিতি এর চেয়ে খারাপ ছিল বলে জানালেন তিনি।

নয় বছর আগে মতলব (চাঁদপুর) থেকে ঢাকায় এসেছেন পেটের টানে। শুরুতে দিনমজুরি করেছেন। এরপর কিছুদিন রিকশা চালিয়েছেন। ফুটপাতের টং-দোকান ভাড়া নিয়ে চা বিক্রি করেছেন কিছুদিন। বললেন, ‘ভাড়া দিয়ে পুষতো না।’

‘এরপর একটা ভেনগাড়ি কিইন্না, দোকান বানাইছি। রাইতে ঠেইল্লা বাসায় নিয়া যাই। সহালে (সকালে) আবার এইহানে (এখানে) নিয়ে আসি।’ ভেতর একটা ডাবল বার্ণার (দ্বিমুখী চুলা), পাশে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার। চায়ের সঙ্গে রুটি, কলা, বিস্কুট, পান-সিগারেটও আছে তার ভাসমান দোকানে।

জানালেন, তার কাস্টমার বেশিরভাগ রিকশাওয়ালা আর পথচারী। আগে মহল্লার ভেতরে দোকান নিয়ে দাঁড়াতেন। স্থানীয় অনেকের কাছে বাকি বিক্রি করতে হতো। অনেকের কাছে এখনও টাকা পাবেন। তাদের মধ্যে আবার কয়েকজন করোনা সংকটে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন।

বললেন, ‘গরীব মাইনষে ব্যবসা করবো ক্যামনে স্যার। পুঞ্জি (মূলধন) নাই। তার ওপর বাকি যায়।’ স্থানীয় সমিতি থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে তার পরিচিত কয়েকজন চা বিক্রেতা সর্বস্বান্ত হয়েছেন বলেও জানালেন রমজান।

কথা হয়, আলাউদ্দিন নামে মধ্যবয়স্ক এক রিকশাচালকের সঙ্গেও। জানা গেল, তিনিও ভালো নেই। বললেন, ‘কামাই রোজগার আগের মতনই আছে। তবে জিনিসপত্রের যেই দাম, সংসার চালাইতে টানাটানি অয় (হয়)।’ জানালেন করোনার দুই বছর বেশিরভাগ গ্রামেই ছিলেন। লকডাউন খুললে ঢাকা আসতেন। তবে কামাই রোজগাার খুব একটা ভালো ছিল না। এখন আবার থাকা-খাওয়ায় খরচ বেড়েছে। বাড়িতে আগের মতো টাকা পাঠালে, স্ত্রী বলছে, ওই টাকায় সংসার চালানো যাচ্ছে না।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশছোঁয়া দামের কারণে, পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে পরে বাঁচতে কষ্ট হচ্ছে বলে জানালেন- বাসায় ‘ছুটা কাজ করা বুয়া’, মহল্লার ছোট মুদি দোকানদার, ভবনের দারোয়ান, পোশাক শ্রমিক, দিন-মজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নিম্ন আয়ের মানুষ। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষত শুকাতে যে সংগ্রাম নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীরা শুরু করেছেন তাতে বাদ সেধেছে দ্রবমূল্যের আকাশছোঁয়া মূল্য।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মানুষের গড় আয় বেড়েছে। তবে এই হিসাবকে ‘কাগজে কলমে হিসাব’ বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদদের অনেকে।

একাধিক অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারের পরিসংখ্যানে দেশের মানুষের আয়ের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে দ্রুত ধনী এবং অতি ধনী হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু গরিব মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। একইসঙ্গে সমাজে বৈষম্য এবং মানুষের আয়ের ফারাক অনেক বেশি হচ্ছে। এই পরিস্থিতির প্রতিফলন সরকারি পরিসংখ্যানে বা হিসাবে আসছে না। সেজন্য তা মানুষের কাছে গুরুত্ব পায় না।

আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস, যা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন হিসেবে পরিচিত। ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওই দিন তাদের আত্মদানের মধ্যদিয়ে শ্রমিকশ্রেণীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এই দিনকে তখন থেকেই সারাবিশ্বে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে।

আজকের আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি হলো শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের নিরলস পরিশ্রম। হাজার হাজার বছর ধরে যে শ্রমজীবী মানুষের শ্রম-ঘামে মানবসভ্যতার উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে, তা থেকে সেই শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীই থেকেছে উপেক্ষিত।

ঈদুল ফিতরের আগে এবার মহান মে দিবস পালিত হতে যাচ্ছে। শ্রমিকের অধিকার হচ্ছে তার মজুরি ও বোনাসসহ অন্য সুবিধা। যা বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানেই নিশ্চিত করা হয় না।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৬ কোটি ৮২ লাখ শ্রমিক আছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এদের সবার সামাজিক সুরক্ষার কথা ভাবতে হবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। এখন একটা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দরকার। সরকারকে ধন্যবাদ এজন্য যে এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু এ উদ্যোগগুলো সব জায়গায় সমপর্যায়ে পৌঁছায়নি। মোট বয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৩৯ শতাংশ, শিশুদের ২৯ শতাংশ, গর্ভবতী নারীদের ২১ শতাংশ ও আহতদের ১৮ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা পান। কিন্তু সেই তুলনায় শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা একেবারেই কম। কেবল আহত শ্রমিকের ১২ দশমিক ৫ শতাংশ এ ভাতা পান। কিন্তু শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা কম।

শ্রমজীবী গর্ভবতী নারী, অসুস্থ শ্রমিক, আহত শ্রমিক, বেকার শ্রমিক, এদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, এই সময় তাদের আয় থাকে না। তারা ভীষণ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন। এসব ক্ষেত্রে শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা নেই। তবে আশার কথা হলো, সরকারের দিক থেকে ইউনিভার্সাল পেনশন স্কিমের কথা বলা হচ্ছে। এটা কার্যকর হওয়া উচিত।

মাতৃত্বকালীন ছুটি, বয়স্ক, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ অনেকের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা আছে। কিন্তু শ্রমিক আহত ও বেকার হলে তার জন্য তেমন কোন নিরাপত্তা নেই। কিন্তু করোনার সময় ইউরোপিয়ান তহবিলের সহযোগিতায় বেকার শ্রমিকদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।

এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা’।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মে দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

মহান মে দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, শ্রমিক সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মহান মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় পত্রিকাগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো দিনটি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে।

রবিবার, ০১ মে ২০২২ , ১৮ বৈশাখ ১৪২৮ ২৯ রমাদ্বান ১৪৪৩

মহামারীর ক্ষত শুকাতে নতুন সংগ্রামে শ্রমজীবীরা

ফয়েজ আহমেদ তুষার

image

‘আগের মতো ব্যবসা নাই স্যার। লোকজনের পকেটে টাকা থাকলে তো খাইব। বেচাকিনি কম। কোনরহম (কোন রকম) চলতাছে আরকি,’ কথাগুলো রাস্তার পাশের চা বিক্রেতা রমজান আলীর। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত দুই বছর পারিস্থিতি এর চেয়ে খারাপ ছিল বলে জানালেন তিনি।

নয় বছর আগে মতলব (চাঁদপুর) থেকে ঢাকায় এসেছেন পেটের টানে। শুরুতে দিনমজুরি করেছেন। এরপর কিছুদিন রিকশা চালিয়েছেন। ফুটপাতের টং-দোকান ভাড়া নিয়ে চা বিক্রি করেছেন কিছুদিন। বললেন, ‘ভাড়া দিয়ে পুষতো না।’

‘এরপর একটা ভেনগাড়ি কিইন্না, দোকান বানাইছি। রাইতে ঠেইল্লা বাসায় নিয়া যাই। সহালে (সকালে) আবার এইহানে (এখানে) নিয়ে আসি।’ ভেতর একটা ডাবল বার্ণার (দ্বিমুখী চুলা), পাশে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার। চায়ের সঙ্গে রুটি, কলা, বিস্কুট, পান-সিগারেটও আছে তার ভাসমান দোকানে।

জানালেন, তার কাস্টমার বেশিরভাগ রিকশাওয়ালা আর পথচারী। আগে মহল্লার ভেতরে দোকান নিয়ে দাঁড়াতেন। স্থানীয় অনেকের কাছে বাকি বিক্রি করতে হতো। অনেকের কাছে এখনও টাকা পাবেন। তাদের মধ্যে আবার কয়েকজন করোনা সংকটে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন।

বললেন, ‘গরীব মাইনষে ব্যবসা করবো ক্যামনে স্যার। পুঞ্জি (মূলধন) নাই। তার ওপর বাকি যায়।’ স্থানীয় সমিতি থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে তার পরিচিত কয়েকজন চা বিক্রেতা সর্বস্বান্ত হয়েছেন বলেও জানালেন রমজান।

কথা হয়, আলাউদ্দিন নামে মধ্যবয়স্ক এক রিকশাচালকের সঙ্গেও। জানা গেল, তিনিও ভালো নেই। বললেন, ‘কামাই রোজগার আগের মতনই আছে। তবে জিনিসপত্রের যেই দাম, সংসার চালাইতে টানাটানি অয় (হয়)।’ জানালেন করোনার দুই বছর বেশিরভাগ গ্রামেই ছিলেন। লকডাউন খুললে ঢাকা আসতেন। তবে কামাই রোজগাার খুব একটা ভালো ছিল না। এখন আবার থাকা-খাওয়ায় খরচ বেড়েছে। বাড়িতে আগের মতো টাকা পাঠালে, স্ত্রী বলছে, ওই টাকায় সংসার চালানো যাচ্ছে না।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশছোঁয়া দামের কারণে, পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে পরে বাঁচতে কষ্ট হচ্ছে বলে জানালেন- বাসায় ‘ছুটা কাজ করা বুয়া’, মহল্লার ছোট মুদি দোকানদার, ভবনের দারোয়ান, পোশাক শ্রমিক, দিন-মজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নিম্ন আয়ের মানুষ। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষত শুকাতে যে সংগ্রাম নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীরা শুরু করেছেন তাতে বাদ সেধেছে দ্রবমূল্যের আকাশছোঁয়া মূল্য।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মানুষের গড় আয় বেড়েছে। তবে এই হিসাবকে ‘কাগজে কলমে হিসাব’ বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদদের অনেকে।

একাধিক অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারের পরিসংখ্যানে দেশের মানুষের আয়ের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে দ্রুত ধনী এবং অতি ধনী হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু গরিব মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। একইসঙ্গে সমাজে বৈষম্য এবং মানুষের আয়ের ফারাক অনেক বেশি হচ্ছে। এই পরিস্থিতির প্রতিফলন সরকারি পরিসংখ্যানে বা হিসাবে আসছে না। সেজন্য তা মানুষের কাছে গুরুত্ব পায় না।

আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস, যা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন হিসেবে পরিচিত। ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওই দিন তাদের আত্মদানের মধ্যদিয়ে শ্রমিকশ্রেণীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এই দিনকে তখন থেকেই সারাবিশ্বে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে।

আজকের আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি হলো শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের নিরলস পরিশ্রম। হাজার হাজার বছর ধরে যে শ্রমজীবী মানুষের শ্রম-ঘামে মানবসভ্যতার উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে, তা থেকে সেই শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীই থেকেছে উপেক্ষিত।

ঈদুল ফিতরের আগে এবার মহান মে দিবস পালিত হতে যাচ্ছে। শ্রমিকের অধিকার হচ্ছে তার মজুরি ও বোনাসসহ অন্য সুবিধা। যা বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানেই নিশ্চিত করা হয় না।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৬ কোটি ৮২ লাখ শ্রমিক আছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এদের সবার সামাজিক সুরক্ষার কথা ভাবতে হবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। এখন একটা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দরকার। সরকারকে ধন্যবাদ এজন্য যে এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু এ উদ্যোগগুলো সব জায়গায় সমপর্যায়ে পৌঁছায়নি। মোট বয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৩৯ শতাংশ, শিশুদের ২৯ শতাংশ, গর্ভবতী নারীদের ২১ শতাংশ ও আহতদের ১৮ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা পান। কিন্তু সেই তুলনায় শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা একেবারেই কম। কেবল আহত শ্রমিকের ১২ দশমিক ৫ শতাংশ এ ভাতা পান। কিন্তু শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা কম।

শ্রমজীবী গর্ভবতী নারী, অসুস্থ শ্রমিক, আহত শ্রমিক, বেকার শ্রমিক, এদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, এই সময় তাদের আয় থাকে না। তারা ভীষণ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন। এসব ক্ষেত্রে শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা নেই। তবে আশার কথা হলো, সরকারের দিক থেকে ইউনিভার্সাল পেনশন স্কিমের কথা বলা হচ্ছে। এটা কার্যকর হওয়া উচিত।

মাতৃত্বকালীন ছুটি, বয়স্ক, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ অনেকের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা আছে। কিন্তু শ্রমিক আহত ও বেকার হলে তার জন্য তেমন কোন নিরাপত্তা নেই। কিন্তু করোনার সময় ইউরোপিয়ান তহবিলের সহযোগিতায় বেকার শ্রমিকদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।

এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা’।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মে দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

মহান মে দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, শ্রমিক সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মহান মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় পত্রিকাগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো দিনটি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে।