গভীর রাতেও জমজমাট শপিংমল বিপণিবিতান, ফুটপাত

শনিবার। ঘড়ির কাঁটা জানিয়ে দিচ্ছে রাত ১২টা। বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের পেছনে বিশাল গাড়ির লাইন। সামনের রাস্তার লাইন বড় দেখে ডা. এরশাদ হোসেন পেছন দিকের রাস্তায় এসে যেন বোকা বনে গেছেন গাড়ির লাইন দেখে। স্ত্রী-সন্তানদের মলে পাঠিয়ে বসে আছেন গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হাত দিয়ে। ৬-৭টা গাড়ির পেছেনে তার গাড়ি। পাকির্ং করতে আরও ৩০ মিনিটের মতো লাগবে জানালো সিকিউরিটির একজন।

দেখে বোঝার উপায় নেই মধ্যরাত। মনে হচ্ছে কেবল সন্ধ্যা। এত রাতে শপিং করতে এসেছেন কেন জানতে চাইলে ডা. এরশাদ বলেন, ‘ইচ্ছা করেই এসেছি। ভিড়বাট্টা কম হবে। রাস্তায় জ্যাম থাকবে না। দিনে তো অনেক ভিড় ঠিক মতো কথাই বলা যায় না। রাতে দেখে শুনে বউ-বাচ্চা তাদের পছন্দের জিনিস কিনতে পারবে। কিন্তু এখন তো দেখছি আমার মতো সবাই ভেবেছে।’

বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের ভেতরে গিয়ে দেখা যায় প্রচুর মানুষ। প্রায় প্রতিটা দোকানেই ক্রেতা সমাগম চোখে পড়ার মতো। তবে ব্রান্ডের দোকানগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। ইলিয়ন, আড়ং, দেশীদশ, ইয়োলো, বুনন, এসপ্লাস, লারিভসহ অন্য দোকানগুলোতে লাইন দিয়ে ঢুকছেন ক্রেতারা।

জুতোর দোকানিরাও প্রচ- ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এখানে। বাটায় বাচ্চার জুতো কিনতে এসেছেন ঈশিতা মাহবুব। পছন্দমতো পেয়েও গেছেন। কিন্তু পাঞ্জাবি কিনতে পারেননি এখনও। বাবা ছেলের এক রকম পাঞ্জাবি কিনবেন, সাইজ মিলছে না জানিয়ে ঈশিতা বলেন, ‘এবার কাপড়ের দাম অনেক। যেটা পছন্দ হয় সেটার দাম কমপক্ষে ৫ হাজার। এত টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব নয় জন্যই দেরি হচ্ছে। আড়াই হাজারের নিচে কোন পাঞ্জাবি নেই মনে হচ্ছে।’

পাশেই দাঁড়ানো থাকা একজন ক্রেতা ঈশিতার কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলেন, ‘দুই বছর কেনাকাটা করতে হয় নাই, মানে করি নাই। ভালোই ছিলাম। এবার তো কিনতেই হবে। জিনিসের যে দাম! যাদের টাকা আছে তারা তো চট করে কিনে ফেলতে পারে। আমাদের হইছে সমস্যা।’

আড়ং আউটলেটে গিয়ে দেখা যায় এত রাতেও বিক্রয়কর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন সাইজ মেলানো ট্রায়াল দেয়া নিয়ে। শারমীন সুলতানা নামের একজনের গলা বসে গছে কথা বলতে বলতে। শারমীন বলেন, ‘অনেক কথা বলতে হয়।’ কখন যাবেন জানতে চাইলে বলেন, ‘দেড়টা দুইটা বেজে যাবে।’

তিন মাসের বাচ্চাকে নিয়েই শপিংয়ে এসেছেন আলী হাসান। বাচ্চাকে তিনি কোলে নিয়ে স্ত্রীকে পাঠিয়েছেন সবার পোশাক পছন্দ

করতে। গতকাল দুপুরে বসুন্ধরা সিটির ইয়োলো আউটলেটের সামনে গিয়ে দেখা যায় একজন সিকিউরিটি রবিউল ইসলাম (ছদ্মনাম) ঝিমুচ্ছেন। কেউ একজন এসে ডাকাতেই ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়ান। একটু সহজ হয়ে বসলে কাছে গিয়ে এই প্রতিবেদক জিজ্ঞেস করেন, রাতে ঘুমান নাই। কত রাত পর্যন্ত দোকান খোলা ছিল। রবিউল বলেন, ‘রাত আড়াইটার সময়ও মানুষজন ভর্তি ছিল। আমরা আর ঢুকতে দেই নাই। আর ধানমন্ডির আউটলেট তো রাত তিনটায় কাস্টমারকে বাইর কইরা দিয়া বন্ধ করছে। এ দুই দিন সারারাতই খোলা থাকবে বসুন্ধরা সিটি।’

গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউসিয়া, চাঁদনিচক এলাকায় গিয়ে একই রকম অবস্থা দেখা যায়। আলো ঝলমলে দোকানগুলোতে ক্রেতার ভিড় আর ফুটপাতগুলোতে হকারদের হাঁকডাকে মনে হবে সবে দিনের শুরু। শাড়ি, গয়না, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, বিছানার চাদর, শিশুদের পোশাক থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর নানা পসরা নিয়ে বসেছেন ফুটপাতজুড়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

ঈদের বাকি আর দুইদিন শেষ বেলার বেচা বিক্রিতে যেন কোন কমতি না থকে এজন্য প্রায় সব দোকানেই দিয়েছে মূল্যছাড়। গাউসিয়া মার্কেটের তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, ‘মাঝে কয়দিন তো সবই বন্ধ ছিল, দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। একদম শেষে আইসা একটু ব্যবসা হইছে। যা হোক চালানটা উঠবে আশা করতেছি।’

রাতের বেলা বয়স্ক পুরুষ-নারীদের চেয়ে কম বয়সীদের ভিড় করতে দেখা যায়। রোয়াজা ও রাইম দুইবোনের সঙ্গে ৫ কাজিন এসেছেন নিউমার্কেটে। রাতে শপিং করতে খুব ভালো লাগছে জানিয়ে রোয়াজা বলেন, ‘রাতে গরম কম। আর এ সময় একটু দামও কম রাখে বলে এসেছি। সেহরি বাইরেই করবো বলে রাতে এসেছি। আব্বু আম্মুও আসবেন।’

রাইম বলেন, ‘জ্যাম নাই মিরপুর থেকে মাত্র ৩০ মিনিটে চলে এসেছি। ভাবা যায়।’

ঈদকে সামনে রেখে ফার্মগেটে রাত দশটার পর থেকে অস্থায়ী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভিড় চোখে পড়ে। এখানে ২শ’ টাকা থেকে শুরু করে হাজার ১২শ’ টাকায় নানা ধরনের জুতা-স্যান্ডেল কিনতে পাওয়া যায়। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তদের ভিড় দেখা যায় জুতার দোকানে।

বাস ড্রাইভার মো. সুজন ও তার সহযোগী ফরহাদ হোসেন এখান থেকে জুতা কিনলেন ৫শ’ টাকা করে। তারা বলেন, দিনের বেলা সময় নাই মার্কেটে গিয়া দরদাম করে জুতা কেনার। এখানে পছন্দ হয়ে যাওয়ায় তারা কিনে ফেললেন।

ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট খোলা রাখছে রাতেও। রাতে বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, অন্যবারের মতো এবারও নিজ নিজ দোকান সাজিয়েছেন দোকানিরা ক্রেতা আকৃষ্ট করতে। এবার ঈদ হচ্ছে গ্রীষ্মকালে। অনেক গরম থাকবে বলে বেশিরভাগে মানুষই ভালো সুতি কাপড় কিনছেন বলে জানান বিশ্ব রঙয়ের স্বত্তাধিকারী বিপ্লব সাহা।

অতিমারী করোনার কারণে গত ২ বছর উৎসব ছিল না, ব্যবসায় ছিল ভাটা। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার ব্যবসায়ীরা রাতেও দোকান পাট খোলা রাখছেন বলে জানান দোকান মালিক সমতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন।

রবিবার, ০১ মে ২০২২ , ১৮ বৈশাখ ১৪২৮ ২৯ রমাদ্বান ১৪৪৩

গভীর রাতেও জমজমাট শপিংমল বিপণিবিতান, ফুটপাত

জাহিদা পারভেজ ছন্দা

image

জমজমাট শপিংমল, রাজধানীর বসুন্ধরা মার্কেট থেকে তোলা - সংবাদ

শনিবার। ঘড়ির কাঁটা জানিয়ে দিচ্ছে রাত ১২টা। বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের পেছনে বিশাল গাড়ির লাইন। সামনের রাস্তার লাইন বড় দেখে ডা. এরশাদ হোসেন পেছন দিকের রাস্তায় এসে যেন বোকা বনে গেছেন গাড়ির লাইন দেখে। স্ত্রী-সন্তানদের মলে পাঠিয়ে বসে আছেন গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হাত দিয়ে। ৬-৭টা গাড়ির পেছেনে তার গাড়ি। পাকির্ং করতে আরও ৩০ মিনিটের মতো লাগবে জানালো সিকিউরিটির একজন।

দেখে বোঝার উপায় নেই মধ্যরাত। মনে হচ্ছে কেবল সন্ধ্যা। এত রাতে শপিং করতে এসেছেন কেন জানতে চাইলে ডা. এরশাদ বলেন, ‘ইচ্ছা করেই এসেছি। ভিড়বাট্টা কম হবে। রাস্তায় জ্যাম থাকবে না। দিনে তো অনেক ভিড় ঠিক মতো কথাই বলা যায় না। রাতে দেখে শুনে বউ-বাচ্চা তাদের পছন্দের জিনিস কিনতে পারবে। কিন্তু এখন তো দেখছি আমার মতো সবাই ভেবেছে।’

বসুন্ধরা সিটি শপিংমলের ভেতরে গিয়ে দেখা যায় প্রচুর মানুষ। প্রায় প্রতিটা দোকানেই ক্রেতা সমাগম চোখে পড়ার মতো। তবে ব্রান্ডের দোকানগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। ইলিয়ন, আড়ং, দেশীদশ, ইয়োলো, বুনন, এসপ্লাস, লারিভসহ অন্য দোকানগুলোতে লাইন দিয়ে ঢুকছেন ক্রেতারা।

জুতোর দোকানিরাও প্রচ- ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এখানে। বাটায় বাচ্চার জুতো কিনতে এসেছেন ঈশিতা মাহবুব। পছন্দমতো পেয়েও গেছেন। কিন্তু পাঞ্জাবি কিনতে পারেননি এখনও। বাবা ছেলের এক রকম পাঞ্জাবি কিনবেন, সাইজ মিলছে না জানিয়ে ঈশিতা বলেন, ‘এবার কাপড়ের দাম অনেক। যেটা পছন্দ হয় সেটার দাম কমপক্ষে ৫ হাজার। এত টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব নয় জন্যই দেরি হচ্ছে। আড়াই হাজারের নিচে কোন পাঞ্জাবি নেই মনে হচ্ছে।’

পাশেই দাঁড়ানো থাকা একজন ক্রেতা ঈশিতার কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলেন, ‘দুই বছর কেনাকাটা করতে হয় নাই, মানে করি নাই। ভালোই ছিলাম। এবার তো কিনতেই হবে। জিনিসের যে দাম! যাদের টাকা আছে তারা তো চট করে কিনে ফেলতে পারে। আমাদের হইছে সমস্যা।’

আড়ং আউটলেটে গিয়ে দেখা যায় এত রাতেও বিক্রয়কর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন সাইজ মেলানো ট্রায়াল দেয়া নিয়ে। শারমীন সুলতানা নামের একজনের গলা বসে গছে কথা বলতে বলতে। শারমীন বলেন, ‘অনেক কথা বলতে হয়।’ কখন যাবেন জানতে চাইলে বলেন, ‘দেড়টা দুইটা বেজে যাবে।’

তিন মাসের বাচ্চাকে নিয়েই শপিংয়ে এসেছেন আলী হাসান। বাচ্চাকে তিনি কোলে নিয়ে স্ত্রীকে পাঠিয়েছেন সবার পোশাক পছন্দ

করতে। গতকাল দুপুরে বসুন্ধরা সিটির ইয়োলো আউটলেটের সামনে গিয়ে দেখা যায় একজন সিকিউরিটি রবিউল ইসলাম (ছদ্মনাম) ঝিমুচ্ছেন। কেউ একজন এসে ডাকাতেই ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়ান। একটু সহজ হয়ে বসলে কাছে গিয়ে এই প্রতিবেদক জিজ্ঞেস করেন, রাতে ঘুমান নাই। কত রাত পর্যন্ত দোকান খোলা ছিল। রবিউল বলেন, ‘রাত আড়াইটার সময়ও মানুষজন ভর্তি ছিল। আমরা আর ঢুকতে দেই নাই। আর ধানমন্ডির আউটলেট তো রাত তিনটায় কাস্টমারকে বাইর কইরা দিয়া বন্ধ করছে। এ দুই দিন সারারাতই খোলা থাকবে বসুন্ধরা সিটি।’

গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউসিয়া, চাঁদনিচক এলাকায় গিয়ে একই রকম অবস্থা দেখা যায়। আলো ঝলমলে দোকানগুলোতে ক্রেতার ভিড় আর ফুটপাতগুলোতে হকারদের হাঁকডাকে মনে হবে সবে দিনের শুরু। শাড়ি, গয়না, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, বিছানার চাদর, শিশুদের পোশাক থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর নানা পসরা নিয়ে বসেছেন ফুটপাতজুড়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

ঈদের বাকি আর দুইদিন শেষ বেলার বেচা বিক্রিতে যেন কোন কমতি না থকে এজন্য প্রায় সব দোকানেই দিয়েছে মূল্যছাড়। গাউসিয়া মার্কেটের তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, ‘মাঝে কয়দিন তো সবই বন্ধ ছিল, দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। একদম শেষে আইসা একটু ব্যবসা হইছে। যা হোক চালানটা উঠবে আশা করতেছি।’

রাতের বেলা বয়স্ক পুরুষ-নারীদের চেয়ে কম বয়সীদের ভিড় করতে দেখা যায়। রোয়াজা ও রাইম দুইবোনের সঙ্গে ৫ কাজিন এসেছেন নিউমার্কেটে। রাতে শপিং করতে খুব ভালো লাগছে জানিয়ে রোয়াজা বলেন, ‘রাতে গরম কম। আর এ সময় একটু দামও কম রাখে বলে এসেছি। সেহরি বাইরেই করবো বলে রাতে এসেছি। আব্বু আম্মুও আসবেন।’

রাইম বলেন, ‘জ্যাম নাই মিরপুর থেকে মাত্র ৩০ মিনিটে চলে এসেছি। ভাবা যায়।’

ঈদকে সামনে রেখে ফার্মগেটে রাত দশটার পর থেকে অস্থায়ী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভিড় চোখে পড়ে। এখানে ২শ’ টাকা থেকে শুরু করে হাজার ১২শ’ টাকায় নানা ধরনের জুতা-স্যান্ডেল কিনতে পাওয়া যায়। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তদের ভিড় দেখা যায় জুতার দোকানে।

বাস ড্রাইভার মো. সুজন ও তার সহযোগী ফরহাদ হোসেন এখান থেকে জুতা কিনলেন ৫শ’ টাকা করে। তারা বলেন, দিনের বেলা সময় নাই মার্কেটে গিয়া দরদাম করে জুতা কেনার। এখানে পছন্দ হয়ে যাওয়ায় তারা কিনে ফেললেন।

ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট খোলা রাখছে রাতেও। রাতে বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, অন্যবারের মতো এবারও নিজ নিজ দোকান সাজিয়েছেন দোকানিরা ক্রেতা আকৃষ্ট করতে। এবার ঈদ হচ্ছে গ্রীষ্মকালে। অনেক গরম থাকবে বলে বেশিরভাগে মানুষই ভালো সুতি কাপড় কিনছেন বলে জানান বিশ্ব রঙয়ের স্বত্তাধিকারী বিপ্লব সাহা।

অতিমারী করোনার কারণে গত ২ বছর উৎসব ছিল না, ব্যবসায় ছিল ভাটা। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার ব্যবসায়ীরা রাতেও দোকান পাট খোলা রাখছেন বলে জানান দোকান মালিক সমতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন।