রেমিট্যান্সে বড় উত্থান, এপ্রিলে আসলো ২০০ কোটি ডলার

ঈদকে কেন্দ্র করে রেমিট্যান্সে বড় উত্থান হয়েছে। সদ্যসমাপ্ত এপ্রিল মাসে ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত বছরের মে মাসে ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। এরপর গত ১১ মাসের কোন মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, টানা পাঁচ মাস কমার পর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বেড়েছিল অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে ফের হোঁচট খায়। ওই মাসে ১৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। মার্চ মাসে এসেছিল ১৮৬ কোটি ডলার। সবশেষ এপ্রিল মাসে এসেছে ২০০ কোটি ৯৫ লাখ ডলার যা গত বছরের এপ্রিল মাসের প্রায় সমান। ২০২১ সালের এপ্রিলে এসেছিল ২০৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। তার আগের দুই মাস ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে এসেছিল যথাক্রমে ১৬৩ কোটি ৬ লাখ ও ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিন হওয়ায় ওই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছিল বলে জানায় ব্যাংকগুলো। তবে মার্চ মাসে এই সূচকে ফের গতি ফিরে, ওই মাসে ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর রেমিট্যান্স প্রবাহেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ওই বছরের এপ্রিলে মাত্র ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। এরপর থেকে অবশ্য মহামারির মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরোটা সময়ে (২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন দেখা যায়। ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। কিন্তু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটার টান দেখা যায়। প্রথম মাস জুলাইয়ে আসে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার। আগস্টে আসে ১৮১ কোটি ডলার। সেপ্টেম্বরে আসে ১৭২ কোটি ৬২ লাখ ডলার। অক্টোবরে আসে ১৬৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। নভেম্বরে আসে আরও কম, ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।

দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা সোয়া কোটি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিয়ে আসছিল সরকার। গত জানুয়ারি থেকে তা বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ কোন প্রবাসী এখন ১০০ টাকা দেশে পাঠালে যার নামে পাঠাচ্ছেন তিনি ১০২ টাকা ৫০ পয়সা তুলতে পারছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে আরও দেখা যায়, মার্চ মাসে যে রেমিট্যান্স এসেছে, তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ৪২টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৬১ কোটি ২৭ লাখ ডলার। আর পাঁচটি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

তবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের দশ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) হিসাবে এখনও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে রেমিট্যান্স। এই দশ মাসে ১ হাজার ৭৩০ কোটি ৭৭ লাখ (১৭.৩০ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে পাঠিয়েছিলেন ২ হাজার ৬৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার (২০.৬৬ বিলিয়ন) ডলার।

এ হিসাবে জুলাই-এপ্রিল সময়ে রেমিট্যান্স কমেছে ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। গত বছরের এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন (২১৬ কোটি) ডলারের রেকর্ড আমদানি বিল পরিশোধের পর ৬ মার্চ বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। যা ছিল গত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় মাস দেড়েক হলো তা ৪৪ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে তা ৪৪ দশমিক শুণ্য ৯ বিলিয়ন ডলার।

শনিবার, ০৭ মে ২০২২ , ২৩ বৈশাখ ১৪২৮ ০৪ শাওয়াল ১৪৪৩

রেমিট্যান্সে বড় উত্থান, এপ্রিলে আসলো ২০০ কোটি ডলার

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

ঈদকে কেন্দ্র করে রেমিট্যান্সে বড় উত্থান হয়েছে। সদ্যসমাপ্ত এপ্রিল মাসে ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত বছরের মে মাসে ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। এরপর গত ১১ মাসের কোন মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, টানা পাঁচ মাস কমার পর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বেড়েছিল অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে ফের হোঁচট খায়। ওই মাসে ১৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। মার্চ মাসে এসেছিল ১৮৬ কোটি ডলার। সবশেষ এপ্রিল মাসে এসেছে ২০০ কোটি ৯৫ লাখ ডলার যা গত বছরের এপ্রিল মাসের প্রায় সমান। ২০২১ সালের এপ্রিলে এসেছিল ২০৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। তার আগের দুই মাস ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে এসেছিল যথাক্রমে ১৬৩ কোটি ৬ লাখ ও ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিন হওয়ায় ওই মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছিল বলে জানায় ব্যাংকগুলো। তবে মার্চ মাসে এই সূচকে ফের গতি ফিরে, ওই মাসে ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর রেমিট্যান্স প্রবাহেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ওই বছরের এপ্রিলে মাত্র ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। এরপর থেকে অবশ্য মহামারির মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরোটা সময়ে (২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন দেখা যায়। ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। কিন্তু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটার টান দেখা যায়। প্রথম মাস জুলাইয়ে আসে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার। আগস্টে আসে ১৮১ কোটি ডলার। সেপ্টেম্বরে আসে ১৭২ কোটি ৬২ লাখ ডলার। অক্টোবরে আসে ১৬৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। নভেম্বরে আসে আরও কম, ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।

দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা সোয়া কোটি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিয়ে আসছিল সরকার। গত জানুয়ারি থেকে তা বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ কোন প্রবাসী এখন ১০০ টাকা দেশে পাঠালে যার নামে পাঠাচ্ছেন তিনি ১০২ টাকা ৫০ পয়সা তুলতে পারছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে আরও দেখা যায়, মার্চ মাসে যে রেমিট্যান্স এসেছে, তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ৪২টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৬১ কোটি ২৭ লাখ ডলার। আর পাঁচটি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

তবে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের দশ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) হিসাবে এখনও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে রেমিট্যান্স। এই দশ মাসে ১ হাজার ৭৩০ কোটি ৭৭ লাখ (১৭.৩০ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে পাঠিয়েছিলেন ২ হাজার ৬৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার (২০.৬৬ বিলিয়ন) ডলার।

এ হিসাবে জুলাই-এপ্রিল সময়ে রেমিট্যান্স কমেছে ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। গত বছরের এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন (২১৬ কোটি) ডলারের রেকর্ড আমদানি বিল পরিশোধের পর ৬ মার্চ বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। যা ছিল গত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় মাস দেড়েক হলো তা ৪৪ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে তা ৪৪ দশমিক শুণ্য ৯ বিলিয়ন ডলার।