কর-জিডিপি বাড়াতে কর অব্যাহতি বাদ দিতে হবে : এনবিআর

দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। এতে দেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে। কর-জিডিপি বাড়াতে হলে কর অব্যাহতি বাদ দিতে হবে বলে মনে করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। ২১ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক অব্যাহতি ও প্রকল্প সুবিধা শাখা থেকে ‘রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা প্রদানের নিমিত্তে অনুরোধপত্র’ পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা বিভাগের সচিবের কাছে। রাজস্ব বোর্ডের পাঠানো চিঠিটি পরিকল্পনা বিভাগের বাজেট উইং ও সব সেক্টরে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।

চিঠিতে রাজস্ব বোর্ড জানায়, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশের চলমান উন্নয়নকে টেকসই করতে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর বিকল্প নেই। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- বিবেচনায় কর-জিডিপির অনুপাত পরিমাণে কম। মূলত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে শুল্ক-কর অব্যাহতির এ ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থানের উন্নতিতে এটি বড় একটি প্রতিবন্ধকতা। এ কর আদায় করা গেলে প্রকৃত কর-জিডিপি অনুপাত বর্তমানের দ্বিগুণ হয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নকে অধিক মাত্রায় ত্বরান্বিত করা সম্ভব।

রাজস্ব বোর্ড জানায়, অব্যাহতির পরিবর্তে প্রযোজ্য শুল্ক-করাদি পরিশোধ সাপেক্ষে পণ্য ছাড়ের মাধ্যমে কর-জিডিপির হার বৃদ্ধির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বিগত ২০১৬ সালের ১০ মে এনইসি সম্মেলন কক্ষে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিবদের উপস্থিতিতে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় নিম্নরূপ অনুশাসন দেন।

ক. প্রতিটি কার্যক্রম, তা প্রকল্প বাস্তবায়ন হোক বা কোন মেরামত, সংরক্ষণ বা পরিচালনার বিষয় হোক, যে পণ্যদ্রব্য বা বিভিন্ন রসদ বা উপাদান সংগ্রহ বা খরিদ করা হবে, তার জন্য কোন কর বা শুল্ক রেয়াতের জন্য আবেদন করা যাবে না। পরিবর্তে হিসাব করে, সমুদয় সংগ্রহ বা খরিদ সম্পন্ন করতে, কত কর, কোন খাতে দিতে হবে (মুসক, আমদানি শুল্ক বা সম্পূরক শুল্ক), তার হিসাব করে প্রয়োজনীয় অর্থ বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং সেই বরাদ্দ থেকে শুল্ক, কর ইত্যাদি পরিশোধ করতে হবে।

খ. কোন কোন ক্ষেত্রে কর শুল্কাদি মওকুফ করা বা নির্দিষ্ট হারে রেয়াত দেয়া হবে সেগুলো স্পষ্টভাবে আইন বা বিধিতে উল্লেখ থাকবে। যেমন- জনকল্যাণকর প্রকল্প, স্থাপনা বা কাজের জন্য আমদানিকৃত অনুদান সামগ্রী।

গ. দেশে করভিত্তি সম্প্রসারণসহ কর-জিডিপির অনুপাত কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নীত করতে হলে কর অব্যাহতির বিদ্যমান সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সব ক্ষেত্রে কর দেয়ার বিষয়ে করদাতাদের উৎসাহিত করা এবং তাদের এ বিষয়ে অভ্যস্ত করে তোলা দরকার।

এছাড়া অর্থমন্ত্রী ২০১৯-২০ এর বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, বিভিন্ন খাতে কর অব্যাহতি যতটা সম্ভব পরিহার করা হবে। অস্বাভাবিক কোন কারণ ছাড়া এসআরও জারি পরিহার করা হবে। এতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আসবে। সরকারের প্রতি ব্যবসায়ীদেরও আস্থা বেড়ে যাবে।

রাজস্ব বোর্ড জানায়, সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পে আমদানি শুল্ক, আয়কর ও ভ্যাট অব্যাহতির পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট শুল্ক-করাদি যাতে হিসাব প্রাক্কলনপূর্বক অর্থ বিভাগ থেকে যথাযথ বরাদ্দ গ্রহণ করা যায়, সে লক্ষ্যে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে পরিকল্পনা বিভাগকে।

শনিবার, ০৭ মে ২০২২ , ২৩ বৈশাখ ১৪২৮ ০৪ শাওয়াল ১৪৪৩

কর-জিডিপি বাড়াতে কর অব্যাহতি বাদ দিতে হবে : এনবিআর

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। এতে দেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে। কর-জিডিপি বাড়াতে হলে কর অব্যাহতি বাদ দিতে হবে বলে মনে করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। ২১ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক অব্যাহতি ও প্রকল্প সুবিধা শাখা থেকে ‘রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা প্রদানের নিমিত্তে অনুরোধপত্র’ পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা বিভাগের সচিবের কাছে। রাজস্ব বোর্ডের পাঠানো চিঠিটি পরিকল্পনা বিভাগের বাজেট উইং ও সব সেক্টরে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।

চিঠিতে রাজস্ব বোর্ড জানায়, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশের চলমান উন্নয়নকে টেকসই করতে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর বিকল্প নেই। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- বিবেচনায় কর-জিডিপির অনুপাত পরিমাণে কম। মূলত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে শুল্ক-কর অব্যাহতির এ ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থানের উন্নতিতে এটি বড় একটি প্রতিবন্ধকতা। এ কর আদায় করা গেলে প্রকৃত কর-জিডিপি অনুপাত বর্তমানের দ্বিগুণ হয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নকে অধিক মাত্রায় ত্বরান্বিত করা সম্ভব।

রাজস্ব বোর্ড জানায়, অব্যাহতির পরিবর্তে প্রযোজ্য শুল্ক-করাদি পরিশোধ সাপেক্ষে পণ্য ছাড়ের মাধ্যমে কর-জিডিপির হার বৃদ্ধির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বিগত ২০১৬ সালের ১০ মে এনইসি সম্মেলন কক্ষে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিবদের উপস্থিতিতে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় নিম্নরূপ অনুশাসন দেন।

ক. প্রতিটি কার্যক্রম, তা প্রকল্প বাস্তবায়ন হোক বা কোন মেরামত, সংরক্ষণ বা পরিচালনার বিষয় হোক, যে পণ্যদ্রব্য বা বিভিন্ন রসদ বা উপাদান সংগ্রহ বা খরিদ করা হবে, তার জন্য কোন কর বা শুল্ক রেয়াতের জন্য আবেদন করা যাবে না। পরিবর্তে হিসাব করে, সমুদয় সংগ্রহ বা খরিদ সম্পন্ন করতে, কত কর, কোন খাতে দিতে হবে (মুসক, আমদানি শুল্ক বা সম্পূরক শুল্ক), তার হিসাব করে প্রয়োজনীয় অর্থ বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং সেই বরাদ্দ থেকে শুল্ক, কর ইত্যাদি পরিশোধ করতে হবে।

খ. কোন কোন ক্ষেত্রে কর শুল্কাদি মওকুফ করা বা নির্দিষ্ট হারে রেয়াত দেয়া হবে সেগুলো স্পষ্টভাবে আইন বা বিধিতে উল্লেখ থাকবে। যেমন- জনকল্যাণকর প্রকল্প, স্থাপনা বা কাজের জন্য আমদানিকৃত অনুদান সামগ্রী।

গ. দেশে করভিত্তি সম্প্রসারণসহ কর-জিডিপির অনুপাত কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নীত করতে হলে কর অব্যাহতির বিদ্যমান সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সব ক্ষেত্রে কর দেয়ার বিষয়ে করদাতাদের উৎসাহিত করা এবং তাদের এ বিষয়ে অভ্যস্ত করে তোলা দরকার।

এছাড়া অর্থমন্ত্রী ২০১৯-২০ এর বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, বিভিন্ন খাতে কর অব্যাহতি যতটা সম্ভব পরিহার করা হবে। অস্বাভাবিক কোন কারণ ছাড়া এসআরও জারি পরিহার করা হবে। এতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আসবে। সরকারের প্রতি ব্যবসায়ীদেরও আস্থা বেড়ে যাবে।

রাজস্ব বোর্ড জানায়, সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পে আমদানি শুল্ক, আয়কর ও ভ্যাট অব্যাহতির পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট শুল্ক-করাদি যাতে হিসাব প্রাক্কলনপূর্বক অর্থ বিভাগ থেকে যথাযথ বরাদ্দ গ্রহণ করা যায়, সে লক্ষ্যে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে পরিকল্পনা বিভাগকে।