বিক্রি কমায় তিন মাসে ৩৮৪ কোটি ডলার লোকসান করলো অ্যামাজন

করোনা সংকটে গৃহবন্দী অবস্থায় অনলাইন কেনাকাটায় নির্ভরশীল হন ক্রেতারা। তবে সম্প্রতি করোনার প্রকোপ কাটতে শুরু করায় আবার শপিংমলমুখী হতে শুরু করেছে মানুষ। এতে লোকসানের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন। ২০১৫ সালের পর এই প্রথম চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) লোকসান গুনেছে প্রতিষ্ঠানটি। এপি।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে অ্যামাজন ৩৮৪ কোটি ডলার লোকসান করেছে। শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৭ ডলার ৫৬ সেন্ট। অথচ গত বছর একই সময়ে অ্যামাজনের লাভ ছিল ৮১০ কোটি ডলার। ওই বছর শেয়ারপ্রতি লাভ ছিল ১৫ ডলার ৭৯ সেন্ট।

ফ্যাক্টসেটের তথ্য বলছে, ওয়াল স্ট্রিটের বিশ্লেষকরা এর আগে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে অ্যামাজনের শেয়ারপ্রতি লাভ ৮ ডলার ৩৫ সেন্ট হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। উত্তর আমেরিকায় অ্যামাজনের পরিচালন লোকসান হয়েছে ১৫৭ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২৮ কোটি ডলার।

এদিকে প্রথম প্রান্তিকে লোকসান করলেও অ্যামাজনের ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবসা বেশ ভালো চলেছে। ফলে নেটফ্লিক্স, ম্যাকডোনাল্ড’স ও অন্য প্রতিষ্ঠানের অনলাইন কার্যক্রমগুলো লাভবান হচ্ছে। বছরের প্রথম তিন মাসে অ্যামাজনের অনলাইন ব্যবসা ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া বিজ্ঞাপন ব্যবসা বেড়েছে ২৫ শতাংশ।

এ সত্ত্বেও অনলাইনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কেনাকাটা কমিয়েছেন ভোক্তারা। মাস্টারকার্ড স্পেনডিংপালসের তথ্য বলছে, দোকানের বিক্রি বাড়লেও মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর থেকে গত মার্চে এই প্রথম অনলাইন বিক্রি কমেছে অ্যামাজনের।

কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব হলে মানুষের সংস্পর্শ এড়াতে অনলাইনে কেনাকাটার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন ক্রেতারা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্যের জন্যই বিকল্প হিসেবে অনলাইনের শরণাপন্ন হন ভোক্তারা। তবে সম্প্রতি ভাইরাসের সংক্রমণপ্রবাহ কিছুটা স্তিমিত হয়ে এসেছে। আক্রান্তের সংখ্যাও পড়তির দিকে। পাশাপাশি কোভিডের টিকা নেয়াও শুরু করেছে মার্কিনরা। ফলে অনলাইনে কেনাকাটার চেয়ে দোকানে গিয়ে পণ্য দেখে বাছাই করে কেনার প্রবণতা আবারও বেড়েছে ভোক্তাদের মধ্যে।

অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতোই অনিয়ন্ত্রিত হারে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কায় আছে অ্যামাজন। এছাড়া মহামারীর সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধও যুক্ত হয়ে সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা আরও বেড়েছে।

এ বিষয়ে অ্যামাজনের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ব্রায়ান ওলসাভস্কি জানান, গত দুই বছরে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়া কর্মীর সংখ্যাও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে শ্রম সংকট ও স্থান সংকুলান কোন বড় সমস্যা নয়। তবে নতুন নতুন বাধা আসছে অ্যামাজনের জন্য। এর মধ্যে অন্যতম হলো পণ্য পরিবহন ব্যয়।

অ্যামাজনের সিইও অ্যান্ডি জেসি এক বিবৃতিতে জানান, মহামারী ও ইউক্রেন যুদ্ধ অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হয়েছে। আমাদের দল উৎপাদন কার্যক্রম বাড়ানোর বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগী। পাশাপাশি ব্যয় নিয়ন্ত্রণের বিষয়েও সতর্ক আছি। আমরা জানি কী করে তা করতে হবে। এর আগেও আমরা তা করেছি।

এদিকে মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানি মূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবন্ধকতা ঠেকাতে তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতাদের জন্য ৫ শতাংশ চার্জ বাড়িয়েছে খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বার্ষিক প্রাইম মেম্বারশিপ ফি ২০ ডলার বাড়িয়েছে অ্যামাজন। ২০১৮ সালের পর এই প্রথম ফি বাড়াল প্রতিষ্ঠানটি।

শনিবার, ০৭ মে ২০২২ , ২৩ বৈশাখ ১৪২৮ ০৪ শাওয়াল ১৪৪৩

বিক্রি কমায় তিন মাসে ৩৮৪ কোটি ডলার লোকসান করলো অ্যামাজন

সংবাদ ডেস্ক

image

করোনা সংকটে গৃহবন্দী অবস্থায় অনলাইন কেনাকাটায় নির্ভরশীল হন ক্রেতারা। তবে সম্প্রতি করোনার প্রকোপ কাটতে শুরু করায় আবার শপিংমলমুখী হতে শুরু করেছে মানুষ। এতে লোকসানের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন। ২০১৫ সালের পর এই প্রথম চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) লোকসান গুনেছে প্রতিষ্ঠানটি। এপি।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে অ্যামাজন ৩৮৪ কোটি ডলার লোকসান করেছে। শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৭ ডলার ৫৬ সেন্ট। অথচ গত বছর একই সময়ে অ্যামাজনের লাভ ছিল ৮১০ কোটি ডলার। ওই বছর শেয়ারপ্রতি লাভ ছিল ১৫ ডলার ৭৯ সেন্ট।

ফ্যাক্টসেটের তথ্য বলছে, ওয়াল স্ট্রিটের বিশ্লেষকরা এর আগে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে অ্যামাজনের শেয়ারপ্রতি লাভ ৮ ডলার ৩৫ সেন্ট হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। উত্তর আমেরিকায় অ্যামাজনের পরিচালন লোকসান হয়েছে ১৫৭ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২৮ কোটি ডলার।

এদিকে প্রথম প্রান্তিকে লোকসান করলেও অ্যামাজনের ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবসা বেশ ভালো চলেছে। ফলে নেটফ্লিক্স, ম্যাকডোনাল্ড’স ও অন্য প্রতিষ্ঠানের অনলাইন কার্যক্রমগুলো লাভবান হচ্ছে। বছরের প্রথম তিন মাসে অ্যামাজনের অনলাইন ব্যবসা ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া বিজ্ঞাপন ব্যবসা বেড়েছে ২৫ শতাংশ।

এ সত্ত্বেও অনলাইনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কেনাকাটা কমিয়েছেন ভোক্তারা। মাস্টারকার্ড স্পেনডিংপালসের তথ্য বলছে, দোকানের বিক্রি বাড়লেও মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর থেকে গত মার্চে এই প্রথম অনলাইন বিক্রি কমেছে অ্যামাজনের।

কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাব হলে মানুষের সংস্পর্শ এড়াতে অনলাইনে কেনাকাটার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন ক্রেতারা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্যের জন্যই বিকল্প হিসেবে অনলাইনের শরণাপন্ন হন ভোক্তারা। তবে সম্প্রতি ভাইরাসের সংক্রমণপ্রবাহ কিছুটা স্তিমিত হয়ে এসেছে। আক্রান্তের সংখ্যাও পড়তির দিকে। পাশাপাশি কোভিডের টিকা নেয়াও শুরু করেছে মার্কিনরা। ফলে অনলাইনে কেনাকাটার চেয়ে দোকানে গিয়ে পণ্য দেখে বাছাই করে কেনার প্রবণতা আবারও বেড়েছে ভোক্তাদের মধ্যে।

অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতোই অনিয়ন্ত্রিত হারে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কায় আছে অ্যামাজন। এছাড়া মহামারীর সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধও যুক্ত হয়ে সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা আরও বেড়েছে।

এ বিষয়ে অ্যামাজনের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ব্রায়ান ওলসাভস্কি জানান, গত দুই বছরে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়া কর্মীর সংখ্যাও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে শ্রম সংকট ও স্থান সংকুলান কোন বড় সমস্যা নয়। তবে নতুন নতুন বাধা আসছে অ্যামাজনের জন্য। এর মধ্যে অন্যতম হলো পণ্য পরিবহন ব্যয়।

অ্যামাজনের সিইও অ্যান্ডি জেসি এক বিবৃতিতে জানান, মহামারী ও ইউক্রেন যুদ্ধ অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হয়েছে। আমাদের দল উৎপাদন কার্যক্রম বাড়ানোর বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগী। পাশাপাশি ব্যয় নিয়ন্ত্রণের বিষয়েও সতর্ক আছি। আমরা জানি কী করে তা করতে হবে। এর আগেও আমরা তা করেছি।

এদিকে মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানি মূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবন্ধকতা ঠেকাতে তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতাদের জন্য ৫ শতাংশ চার্জ বাড়িয়েছে খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বার্ষিক প্রাইম মেম্বারশিপ ফি ২০ ডলার বাড়িয়েছে অ্যামাজন। ২০১৮ সালের পর এই প্রথম ফি বাড়াল প্রতিষ্ঠানটি।