শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সৌরবিদ্যুৎ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রতিবেদন চালাচালিতেই আটকে আছে

সাত বছর আগে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নবায়নযোগ্য জ্বালানি অনুবিভাগ, স্রেডা এবং বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় ৬টি প্রতিষ্ঠানের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের কথা ছিল। তবে ওই নির্দেশনা এখনো প্রতিবেদন চালাচালিতেই আটকে আছে বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠান (আরইবি, পিডিবি, ডিপিডিসি, ডেসকো, ওজোপাডিকো এবং নেসকো) থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ক্যাটাগরিভিত্তিক ৯২ হাজার ৫১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদের আয়তন (রুফটপ এরিয়া) ২ কোটি ৩১ হাজার ৩৩৪ বর্গমিটার। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপন করে এক হাজার ১৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সংবাদকে বলেন, ‘কিছু স্কুলে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। তাদের বিদ্যুতের দামও তুলনামূলক কম পড়ছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’

তবে তিনি বলেন, ‘যে সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল, তখন অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অফ-গ্রিডে ছিল। এরপর দ্রুতগতিতে গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ চলে গেছে। এখন শতভাগ বিদ্যুতায়নের প্রেক্ষাপটে এর উপযোগিতা নতুন করে ভাবা হচ্ছে। ’

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে জমির প্রাপ্যতা। এই বিবেচনায় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদ হতে পারতো আদর্শ স্থান। অল্প কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপন করার পর ওই উদ্যোগ আর আগায়নি।

প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে সোলার (সৌর) প্যানেল স্থাপন বিষয়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

কোন প্রক্রিয়ায় এবং কোন কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপন করা যেতে পারে, সে বিষয়ে ‘টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)’ এবং বিদ্যুৎ খাতের সরকারি নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পাওয়ার সেল’ সমন্বিতভাবে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। প্রতিবেদন প্রস্ততের পর একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনার জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্তও হয় সভায়।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সংক্রান্ত অগ্রগতি নিয়ে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সভাপতি বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মু. মোহসিন চৌধুরী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সোলার প্যানেল স্থাপনের অগ্রগতি সম্পর্কে সভায় উপস্থিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি অনুবিভাগের প্রতিনিধির কাছে জানতে চান।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, পাওয়ার সেলকে সম্পৃক্ত করে স্রেডা এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ২০২১ সালের মে মাসে বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠিয়েছে। প্রতিবেদনটি নথিতে উপস্থাপন করা হলে তা পুনরায় পর্যালোচনার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যা আবার স্রেডাতে পাঠানো হবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষপটে কেপেক্স (ক্যাপিটেল এক্সপেনডিচার বা মূলধন ব্যয়) কিংবা ওপেক্স (অপারেটিং এক্সপেনডিচার) মডেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর বা বিভাগকে বড় ধরনের বাজেটের সংস্থান করতে হবে অথবা বিনিয়োগকারী প্রয়োজন হবে। এসব বিবেচনায় প্রতিবেদনটি পুনরায় পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়।’

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গড়ে প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদে এক হাজার ২০০ বর্গফুট জায়গা রয়েছে। এই হিসাবে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ১৫ কিলোওয়াটের সোলার প্যানেল বসানো সম্ভব। এই হিসাব ধরেই সব বিদ্যালয়ে সোলার প্যানেল স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এছাড়া মাদ্রাসা, হাইস্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়েও সোলার প্যানেল বসানোর কথা। পকিল্পনায় বলা হয়, উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ যেখানে গ্রিডে দেয়া সম্ভব, দেয়া হবে। অথবা বিদ্যালয়গুলো নিজেরা ব্যবহার করবে।

সূত্র জানায়, শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নয়, কৃষি, স্বাস্থ্য, রেল, ধর্ম, শিল্প, গৃহায়ন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কেও পরিকল্পনায় যুক্ত করা হয়েছিল। সেচে সোলার, কমিউনিটি ক্লিনিকের ছাদে, রেল স্টেশনের ছাদে সোলার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান- মসজিদ, মন্দির, গির্জার ছাদে সোলার, বড় বড় শিল্প-প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সরকারি ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনের কথা ছিল পরিকল্পনায়।

স্রেডার সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন সংবাদকে বলেন, ‘আসলে প্রধানমন্ত্রীর একটা নির্দেশনা ছিল। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন করা হয়েছে। তবে পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। স্রেডা এবং পাওয়ার সেল এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বিদ্যুৎ বিভাগে জমা দিয়েছিল। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে প্রতিবেদনটি পুনরায় পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে।’

‘শতভাগ বিদ্যুতায়ন’ বিবেচনায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপন কতটা উপযোগী, এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘নেট মিটারিংয়ের আওতায় এটা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট থেকে এটা বাস্তাবয়ন করা হলে স্রেডা পরামর্শ এবং কারিগরি সহযোগিতা দেবে। এছাড়া কোন বিনিয়োগকারী বাণিজ্যিকভাবে উপজেলাভিত্তিক প্রকল্প নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে পারে।’

২০০৮ সালের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫ শতাংশ এবং ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব না হলেও ২০৩০ সালের মধ্যে ৪ হাজার ১০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেয় সরকার।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই উৎপাদনের অর্ধেক অর্থাৎ ২ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াট আসবে সৌরশক্তি থেকে। পানি ও বায়ুর ব্যবহার করে উৎপাদন হবে যথাক্রমে এক হাজার ও ৫৯৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

গত বছর ‘জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৬’ এ অংশ নেয়ার আগে জলবায়ু পরিবর্তন রূপরেখা সম্মেলনে (ইউএনএফসিসিসি) এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা জমা দেয়া হয়। গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ উল্লেখযোগ্য হারে কমানোর জন্যই মূলত এই উদ্যোগ।

পাওয়ার সেলের তথ্য অনুযায়ী, আমদানিসহ দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৫৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৭৮৭ মেগাওয়াট; যা মোট উৎপাদন সক্ষমতার ৩ শতাংশের একটু বেশি।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে অফগ্রিড ও অনগ্রিড সোলার মিলিয়ে উৎপাদন হয় ৫৫৩ মেগাওয়াট, বায়ু থেকে দুই দশমিক ৯ মেগাওয়াট, জল বিদ্যুৎ ২৩০ মেগাওয়াট এবং বায়োগ্যাস ও বায়োমাস বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় প্রায় এক মেগাওয়াট।

শনিবার, ০৭ মে ২০২২ , ২৩ বৈশাখ ১৪২৮ ০৪ শাওয়াল ১৪৪৩

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সৌরবিদ্যুৎ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রতিবেদন চালাচালিতেই আটকে আছে

ফয়েজ আহমেদ তুষার

সাত বছর আগে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নবায়নযোগ্য জ্বালানি অনুবিভাগ, স্রেডা এবং বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় ৬টি প্রতিষ্ঠানের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের কথা ছিল। তবে ওই নির্দেশনা এখনো প্রতিবেদন চালাচালিতেই আটকে আছে বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠান (আরইবি, পিডিবি, ডিপিডিসি, ডেসকো, ওজোপাডিকো এবং নেসকো) থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ক্যাটাগরিভিত্তিক ৯২ হাজার ৫১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদের আয়তন (রুফটপ এরিয়া) ২ কোটি ৩১ হাজার ৩৩৪ বর্গমিটার। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপন করে এক হাজার ১৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সংবাদকে বলেন, ‘কিছু স্কুলে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। তাদের বিদ্যুতের দামও তুলনামূলক কম পড়ছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’

তবে তিনি বলেন, ‘যে সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল, তখন অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অফ-গ্রিডে ছিল। এরপর দ্রুতগতিতে গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ চলে গেছে। এখন শতভাগ বিদ্যুতায়নের প্রেক্ষাপটে এর উপযোগিতা নতুন করে ভাবা হচ্ছে। ’

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে জমির প্রাপ্যতা। এই বিবেচনায় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদ হতে পারতো আদর্শ স্থান। অল্প কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপন করার পর ওই উদ্যোগ আর আগায়নি।

প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে সোলার (সৌর) প্যানেল স্থাপন বিষয়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

কোন প্রক্রিয়ায় এবং কোন কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপন করা যেতে পারে, সে বিষয়ে ‘টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)’ এবং বিদ্যুৎ খাতের সরকারি নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পাওয়ার সেল’ সমন্বিতভাবে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। প্রতিবেদন প্রস্ততের পর একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনার জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্তও হয় সভায়।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সংক্রান্ত অগ্রগতি নিয়ে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সভাপতি বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মু. মোহসিন চৌধুরী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সোলার প্যানেল স্থাপনের অগ্রগতি সম্পর্কে সভায় উপস্থিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি অনুবিভাগের প্রতিনিধির কাছে জানতে চান।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, পাওয়ার সেলকে সম্পৃক্ত করে স্রেডা এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ২০২১ সালের মে মাসে বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠিয়েছে। প্রতিবেদনটি নথিতে উপস্থাপন করা হলে তা পুনরায় পর্যালোচনার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যা আবার স্রেডাতে পাঠানো হবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষপটে কেপেক্স (ক্যাপিটেল এক্সপেনডিচার বা মূলধন ব্যয়) কিংবা ওপেক্স (অপারেটিং এক্সপেনডিচার) মডেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর বা বিভাগকে বড় ধরনের বাজেটের সংস্থান করতে হবে অথবা বিনিয়োগকারী প্রয়োজন হবে। এসব বিবেচনায় প্রতিবেদনটি পুনরায় পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়।’

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গড়ে প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদে এক হাজার ২০০ বর্গফুট জায়গা রয়েছে। এই হিসাবে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ১৫ কিলোওয়াটের সোলার প্যানেল বসানো সম্ভব। এই হিসাব ধরেই সব বিদ্যালয়ে সোলার প্যানেল স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এছাড়া মাদ্রাসা, হাইস্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়েও সোলার প্যানেল বসানোর কথা। পকিল্পনায় বলা হয়, উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ যেখানে গ্রিডে দেয়া সম্ভব, দেয়া হবে। অথবা বিদ্যালয়গুলো নিজেরা ব্যবহার করবে।

সূত্র জানায়, শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নয়, কৃষি, স্বাস্থ্য, রেল, ধর্ম, শিল্প, গৃহায়ন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কেও পরিকল্পনায় যুক্ত করা হয়েছিল। সেচে সোলার, কমিউনিটি ক্লিনিকের ছাদে, রেল স্টেশনের ছাদে সোলার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান- মসজিদ, মন্দির, গির্জার ছাদে সোলার, বড় বড় শিল্প-প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সরকারি ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনের কথা ছিল পরিকল্পনায়।

স্রেডার সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন সংবাদকে বলেন, ‘আসলে প্রধানমন্ত্রীর একটা নির্দেশনা ছিল। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন করা হয়েছে। তবে পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। স্রেডা এবং পাওয়ার সেল এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বিদ্যুৎ বিভাগে জমা দিয়েছিল। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে প্রতিবেদনটি পুনরায় পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে।’

‘শতভাগ বিদ্যুতায়ন’ বিবেচনায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপন কতটা উপযোগী, এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘নেট মিটারিংয়ের আওতায় এটা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট থেকে এটা বাস্তাবয়ন করা হলে স্রেডা পরামর্শ এবং কারিগরি সহযোগিতা দেবে। এছাড়া কোন বিনিয়োগকারী বাণিজ্যিকভাবে উপজেলাভিত্তিক প্রকল্প নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে পারে।’

২০০৮ সালের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫ শতাংশ এবং ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব না হলেও ২০৩০ সালের মধ্যে ৪ হাজার ১০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেয় সরকার।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই উৎপাদনের অর্ধেক অর্থাৎ ২ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াট আসবে সৌরশক্তি থেকে। পানি ও বায়ুর ব্যবহার করে উৎপাদন হবে যথাক্রমে এক হাজার ও ৫৯৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

গত বছর ‘জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৬’ এ অংশ নেয়ার আগে জলবায়ু পরিবর্তন রূপরেখা সম্মেলনে (ইউএনএফসিসিসি) এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা জমা দেয়া হয়। গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ উল্লেখযোগ্য হারে কমানোর জন্যই মূলত এই উদ্যোগ।

পাওয়ার সেলের তথ্য অনুযায়ী, আমদানিসহ দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৫৬ মেগাওয়াট। এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৭৮৭ মেগাওয়াট; যা মোট উৎপাদন সক্ষমতার ৩ শতাংশের একটু বেশি।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে অফগ্রিড ও অনগ্রিড সোলার মিলিয়ে উৎপাদন হয় ৫৫৩ মেগাওয়াট, বায়ু থেকে দুই দশমিক ৯ মেগাওয়াট, জল বিদ্যুৎ ২৩০ মেগাওয়াট এবং বায়োগ্যাস ও বায়োমাস বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় প্রায় এক মেগাওয়াট।