জাফলংয়ের উন্মুক্ত স্থানে ঘুরতে টাকা লাগবে কেন, প্রশ্ন পর্যটকদের

উন্মুক্ত স্থানে ঘুরতে টাকা লাগবে কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত সেপ্টেম্বরে জাফলং পর্যটন কেন্দ্রে ১০ টাকার টিকেট চালুর পর থেকে অনেকেই এর সমালোচনা করেন। তবে গত বৃহস্পতিবার পর্যটকদের ওপর হামলার পর এ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন করে আলোচনা। বলা হচ্ছে, দেশের অন্য কোথাও উন্মুক্ত স্থানে রশিদের মাধ্যমে টাকা আদায় করা না হলেও জাফলংয়ে প্রশাসন চাঁদাবাজির আশ্রয় নিয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন জিরো পয়েন্ট এলাকায় যাওয়ার জন্য প্রবেশ ফি চালু করে। এজন্য বসানো হয় একাধিক টিকেট কাউন্টার। অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পায় কিছু কর্মী। তারা প্রতিটি দর্শনার্থীর কাছ থেকে ১০ টাকা করে ফি নেন।

গত বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে টিকেট কেনা নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে কাউন্টারে থাকা উপজেলা প্রশাসনের কর্মীদের বাগ?বিত-া হয়। একপর্যায়ে ওই কর্মীরা লাঠি দিয়ে পর্যটকদের মারধর করেন। ওই সময় কয়েকজন নারীকেও লাঞ্ছিত করে তারা।

আগে পর্যটকরা জাফলং জিরো পয়েন্টে যেতেন বল্লাঘাট এলাকা দিয়ে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন গুচ্ছগ্রাম এলাকা দিয়ে পর্যটক প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যটকদের উঠানামার সুবিধার জন্য বানানো হয়েছে সিঁড়ি। আর গুচ্ছগ্রামে বিজিবি ক্যাম্পের পাশেই বসানো হয়েছে টিকেট কাউন্টার।

কাউন্টারের পাশে টানানো সাইনবোর্ডে লেখা, ‘জাফলং পর্যটন এলাকার উন্নয়ন ও পর্যটন সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলা পর্যটন কমিটি ও উপজেলা পর্যটন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পর্যটক প্রবেশে পর্যটকপ্রতি ১০ টাকা হারে ফি নির্ধারণ করা হলো।’

সাইন বোর্ডের নিচে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নাম আছে। তাদের একজন জেলা পর্যটন কমিটির; অন্যজন উপজেলা পর্যটন কমিটির সভাপতি।

এই সাইনবোর্ডের ছবি বৃহস্পতিবার ফেইসবুকে শেয়ার দিয়ে সাংবাদিক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক লেখেন, ‘কোন আইনে চাঁদাবাজি, প্রশাসন জবাব চাই।’

প্রবেশ ফি চালুর বিষয়ে গোয়াইনঘাটের ইউএনও তাহমিলুর রহমান বলেন, ‘গত বছর জেলা পর্যটন কমিটির সভায় ফি চালুর সিদ্ধান্ত হয়। উপজেলা প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে। এটি কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। চুক্তিভিত্তিক কিছু কর্মীর মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসন ফি আদায় করে। এটাকে আমি অন্যায় মনে করি না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এই সিস্টেম আছে।’

পর্যটকদের সেবার মান বাড়াতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘১০ টাকার বিনিময়ে আমরা পর্যটকদের কয়েকটি সেবা দেই। পর্যটন এলাকায় ড্রেস চেঞ্জ করার রুম ও টয়লেট করা হয়েছে। পর্যটকরা এগুলো বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারেন। সেই সঙ্গে রয়েছে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবস্থা। এছাড়া প্রবেশ ফি দিয়ে পর্যটন এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখারও কাজ করা হয়।

জেলা প্রশাসক দর্শনার্থীর কাছ থেকে ফি আদায়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে জানান জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান।

তিনি বলেন, ‘পর্যটন কমিটির সিদ্ধান্তে এটি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক তার কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এই ফি আদায় অবৈধ নয়।’

ইউএনও তাহমিলুর বলেন, ‘টিকেট ফি থেকে প্রতিদিন সমান টাকা ওঠে না। একেক দিন একেক রকম হয়। আমি দিনে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা আদায় হতে দেখেছি।

‘জাফলং পরিষ্কার রাখাসহ পর্যটকদের সেবা দেয়ার জন্য কিছু অস্থায়ী কর্মী রাখা হয়েছে। এই টাকায় ঘণ্টাপ্রতি ৫০ টাকা হিসাবে তাদের বেতন দেয়া হয়। কর্মীর সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। সর্বনিম্ন পাঁচ-ছয়জন থেকে সর্বোচ্চ ৩০ জন কাজ করেন।’

তিনি জানান, উপজেলা পর্যটন কমিটি নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট টাকা আছে। এই অ্যাকাউন্টে প্রবেশ ফি জমা হয়। ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেন। এখন পর্যন্ত ৪০ লাখ টাকা জমা হয়েছে।

জাফলংয়ের অবস্থান সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় ভারতের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে। পাহাড়ের বুকে আছে নদী ও ঝরনা, যার পানিতেই তৈরি হয়েছে জাফলং। স্বচ্ছ পানির নিচে দেখা যায় নানা আকার ও রঙের পাথর।

সীমান্তের ওপারে ডাউকি নদীর ওপর আছে ঝুলন্ত সেতু, যা দুটি পাহাড়কে যুক্ত করেছে। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক এখানে আসেন। পর্যটকদের ভিড় সবচেয়ে বেশি থাকে সীমান্তে জিরো পয়েন্ট এলাকায় ডাউকি নদীতে।

শনিবার, ০৭ মে ২০২২ , ২৩ বৈশাখ ১৪২৮ ০৪ শাওয়াল ১৪৪৩

জাফলংয়ের উন্মুক্ত স্থানে ঘুরতে টাকা লাগবে কেন, প্রশ্ন পর্যটকদের

বিশেষ প্রতিনিধি, সিলেট

উন্মুক্ত স্থানে ঘুরতে টাকা লাগবে কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত সেপ্টেম্বরে জাফলং পর্যটন কেন্দ্রে ১০ টাকার টিকেট চালুর পর থেকে অনেকেই এর সমালোচনা করেন। তবে গত বৃহস্পতিবার পর্যটকদের ওপর হামলার পর এ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন করে আলোচনা। বলা হচ্ছে, দেশের অন্য কোথাও উন্মুক্ত স্থানে রশিদের মাধ্যমে টাকা আদায় করা না হলেও জাফলংয়ে প্রশাসন চাঁদাবাজির আশ্রয় নিয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন জিরো পয়েন্ট এলাকায় যাওয়ার জন্য প্রবেশ ফি চালু করে। এজন্য বসানো হয় একাধিক টিকেট কাউন্টার। অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পায় কিছু কর্মী। তারা প্রতিটি দর্শনার্থীর কাছ থেকে ১০ টাকা করে ফি নেন।

গত বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে টিকেট কেনা নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে কাউন্টারে থাকা উপজেলা প্রশাসনের কর্মীদের বাগ?বিত-া হয়। একপর্যায়ে ওই কর্মীরা লাঠি দিয়ে পর্যটকদের মারধর করেন। ওই সময় কয়েকজন নারীকেও লাঞ্ছিত করে তারা।

আগে পর্যটকরা জাফলং জিরো পয়েন্টে যেতেন বল্লাঘাট এলাকা দিয়ে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন গুচ্ছগ্রাম এলাকা দিয়ে পর্যটক প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যটকদের উঠানামার সুবিধার জন্য বানানো হয়েছে সিঁড়ি। আর গুচ্ছগ্রামে বিজিবি ক্যাম্পের পাশেই বসানো হয়েছে টিকেট কাউন্টার।

কাউন্টারের পাশে টানানো সাইনবোর্ডে লেখা, ‘জাফলং পর্যটন এলাকার উন্নয়ন ও পর্যটন সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলা পর্যটন কমিটি ও উপজেলা পর্যটন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পর্যটক প্রবেশে পর্যটকপ্রতি ১০ টাকা হারে ফি নির্ধারণ করা হলো।’

সাইন বোর্ডের নিচে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নাম আছে। তাদের একজন জেলা পর্যটন কমিটির; অন্যজন উপজেলা পর্যটন কমিটির সভাপতি।

এই সাইনবোর্ডের ছবি বৃহস্পতিবার ফেইসবুকে শেয়ার দিয়ে সাংবাদিক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক লেখেন, ‘কোন আইনে চাঁদাবাজি, প্রশাসন জবাব চাই।’

প্রবেশ ফি চালুর বিষয়ে গোয়াইনঘাটের ইউএনও তাহমিলুর রহমান বলেন, ‘গত বছর জেলা পর্যটন কমিটির সভায় ফি চালুর সিদ্ধান্ত হয়। উপজেলা প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে। এটি কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। চুক্তিভিত্তিক কিছু কর্মীর মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসন ফি আদায় করে। এটাকে আমি অন্যায় মনে করি না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এই সিস্টেম আছে।’

পর্যটকদের সেবার মান বাড়াতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘১০ টাকার বিনিময়ে আমরা পর্যটকদের কয়েকটি সেবা দেই। পর্যটন এলাকায় ড্রেস চেঞ্জ করার রুম ও টয়লেট করা হয়েছে। পর্যটকরা এগুলো বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারেন। সেই সঙ্গে রয়েছে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবস্থা। এছাড়া প্রবেশ ফি দিয়ে পর্যটন এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখারও কাজ করা হয়।

জেলা প্রশাসক দর্শনার্থীর কাছ থেকে ফি আদায়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে জানান জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান।

তিনি বলেন, ‘পর্যটন কমিটির সিদ্ধান্তে এটি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক তার কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এই ফি আদায় অবৈধ নয়।’

ইউএনও তাহমিলুর বলেন, ‘টিকেট ফি থেকে প্রতিদিন সমান টাকা ওঠে না। একেক দিন একেক রকম হয়। আমি দিনে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা আদায় হতে দেখেছি।

‘জাফলং পরিষ্কার রাখাসহ পর্যটকদের সেবা দেয়ার জন্য কিছু অস্থায়ী কর্মী রাখা হয়েছে। এই টাকায় ঘণ্টাপ্রতি ৫০ টাকা হিসাবে তাদের বেতন দেয়া হয়। কর্মীর সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। সর্বনিম্ন পাঁচ-ছয়জন থেকে সর্বোচ্চ ৩০ জন কাজ করেন।’

তিনি জানান, উপজেলা পর্যটন কমিটি নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট টাকা আছে। এই অ্যাকাউন্টে প্রবেশ ফি জমা হয়। ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেন। এখন পর্যন্ত ৪০ লাখ টাকা জমা হয়েছে।

জাফলংয়ের অবস্থান সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় ভারতের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে। পাহাড়ের বুকে আছে নদী ও ঝরনা, যার পানিতেই তৈরি হয়েছে জাফলং। স্বচ্ছ পানির নিচে দেখা যায় নানা আকার ও রঙের পাথর।

সীমান্তের ওপারে ডাউকি নদীর ওপর আছে ঝুলন্ত সেতু, যা দুটি পাহাড়কে যুক্ত করেছে। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক এখানে আসেন। পর্যটকদের ভিড় সবচেয়ে বেশি থাকে সীমান্তে জিরো পয়েন্ট এলাকায় ডাউকি নদীতে।