ইউক্রেন যুদ্ধে শুধু বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহেই সংকট সৃষ্টি করবে না, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটও সৃষ্টি করতে পারে। এরই মধ্যে পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। পুরো ইউরোপেই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার একটি প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়ে রেখেছে দেশটি।
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের কারণে বৈশ্বিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। একই সঙ্গে জানিয়েছেন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক খাদ্য সরবরাহসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সীমাহীন বৈশ্বিক ক্ষতির বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে দিয়েছেন গুতেরেস।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ পরিধিতে বোধহীন, মাত্রায় নির্মম এবং বৈশ্বিক ক্ষতির সম্ভাবনায় সীমাহীন। ধ্বংস, ক্ষতি, স্থানচ্যুতির এ চক্র বন্ধ করতে হবে। এখনই সময় ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই যুদ্ধ শেষ করার। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার একটি অর্থবহ সমাধানের জন্য যুদ্ধ সত্ত্বেও ইউক্রেনের কৃষি উৎপাদন এবং রাশিয়া ও বেলারুশের খাদ্য ও সার উৎপাদনকে বিশ্ব বাজারে পুনরায় একীভূত করা প্রয়োজন। আমি এই বাস্তবতায় নিয়ে আসার জন্য সংলাপের সুবিধার্থে যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’ এর আগে গত সপ্তাহে যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে শাটল কূটনীতির (বিরোধে উভয় পক্ষে যোগাযোগ রাখা মধ্যস্থতাকারী) অংশ হিসেবে রাশিয়া ও ইউক্রেন সফর করেন। সে সময় তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তার কিয়েভ সফরের সময় পূর্ব ইউক্রেনে সর্বাত্মক যুদ্ধ চলছিল। এমনকি তার হোটেলের পাশেও রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছিল।
ইউক্রেন যুদ্ধে শুধু বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহেই সংকট সৃষ্টি করবে না, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটও সৃষ্টি করতে পারে। এরই মধ্যে পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। পুরো ইউরোপেই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার একটি প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়ে রেখেছে দেশটি। এমনকি পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন খোদ রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যদিও রাশিয়া ও ইউক্রেনের কেউই আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করেনি।
রাশিয়া শত শত হাসপাতাল
ধ্বংস করে দিয়েছে
সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে ইউক্রেনের শত শত হাসপাতাল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে রাশিয়া ধ্বংস করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার অভিযোগ, রুশ এই ধ্বংসযজ্ঞের কারণে ক্যান্সার মোকাবিলা করার মতো ওষুধ নেই এমনকি অস্ত্রোপচারও করতে পারছেন না ডাক্তাররা।
এক ভিডিওবার্তায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি একথা বলেন। গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার মেডিকেল দাতব্য গোষ্ঠীর উদ্দেশে ভাষণ দেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেখানি তিনি বলেন, ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলীয় অনেক জায়গায় চিকিৎসা সামগ্রীর সংকট রয়েছে। এমনকি অনেক জায়গায় মৌলিক অ্যান্টিবায়োটিকেরও অভাব রয়েছে।
ইউক্রেনেীয় প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আপনারা যদি শুধু চিকিৎসা অবকাঠামোর কথা চিন্তা করেন, তাহলে দেখবেন আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্যরা প্রায় ৪০০টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। এর মধ্যে হাসপাতাল, প্রসূতি ওয়ার্ড, বহিরাগত (আউট পেশেন্ট) ক্লিনিকও রয়েছে।’ তিনি বলেন, রুশ বাহিনীর দখলকৃত এলাকায় পরিস্থিতি বিপর্যয়কর। জেলেনস্কির ভাষায়, ‘ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের পুরোপুরি অভাব রয়েছে। এর মানে চরম অসুবিধা বা ডায়াবেটিসের জন্য ইনসুলিনের সম্পূর্ণ অভাব। রোগীদের অস্ত্রোপচার করা অসম্ভব। এমনকি অ্যান্টিবায়োটিকেরও অভাব রয়েছে।’
রাশিয়া অবশ্য এ ধরনের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সরকারি বাসভবন ও কার্যালয় ক্রেমলিনের দাবি, রুশ সেনারা শুধু ইউক্রেনের সামরিক ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্য করেই হামলা করছে। তবে ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানে হাসপাতাল ও স্কুলের মতো বেসামরিক স্থাপনায় রাশিয়ার সেনাদের হামলার খবর গণমাধ্যমে বেশ কয়েকবারই এসেছে। গত ৯ মার্চ রুশ সেনাদের হামলায় ইউক্রেনের মারিউপোল শহরের একটি প্রসূতি হাসপাতাল ধ্বংস হয়ে যায়। অবশ্য রাশিয়ার দাবি, হামলার ছবি মঞ্চস্থ করা হয়েছে এবং হাসপাতাল বলে দাবি করা ওই স্থাপনাটি সশস্ত্র ইউক্রেনীয় গোষ্ঠীগুলো ব্যবহার করছিল।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
শনিবার, ০৭ মে ২০২২ , ২৩ বৈশাখ ১৪২৮ ০৪ শাওয়াল ১৪৪৩
ইউক্রেন যুদ্ধে শুধু বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহেই সংকট সৃষ্টি করবে না, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটও সৃষ্টি করতে পারে। এরই মধ্যে পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। পুরো ইউরোপেই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার একটি প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়ে রেখেছে দেশটি।
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের কারণে বৈশ্বিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। একই সঙ্গে জানিয়েছেন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক খাদ্য সরবরাহসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সীমাহীন বৈশ্বিক ক্ষতির বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে দিয়েছেন গুতেরেস।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ পরিধিতে বোধহীন, মাত্রায় নির্মম এবং বৈশ্বিক ক্ষতির সম্ভাবনায় সীমাহীন। ধ্বংস, ক্ষতি, স্থানচ্যুতির এ চক্র বন্ধ করতে হবে। এখনই সময় ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই যুদ্ধ শেষ করার। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার একটি অর্থবহ সমাধানের জন্য যুদ্ধ সত্ত্বেও ইউক্রেনের কৃষি উৎপাদন এবং রাশিয়া ও বেলারুশের খাদ্য ও সার উৎপাদনকে বিশ্ব বাজারে পুনরায় একীভূত করা প্রয়োজন। আমি এই বাস্তবতায় নিয়ে আসার জন্য সংলাপের সুবিধার্থে যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’ এর আগে গত সপ্তাহে যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে শাটল কূটনীতির (বিরোধে উভয় পক্ষে যোগাযোগ রাখা মধ্যস্থতাকারী) অংশ হিসেবে রাশিয়া ও ইউক্রেন সফর করেন। সে সময় তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তার কিয়েভ সফরের সময় পূর্ব ইউক্রেনে সর্বাত্মক যুদ্ধ চলছিল। এমনকি তার হোটেলের পাশেও রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছিল।
ইউক্রেন যুদ্ধে শুধু বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহেই সংকট সৃষ্টি করবে না, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটও সৃষ্টি করতে পারে। এরই মধ্যে পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। পুরো ইউরোপেই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার একটি প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়ে রেখেছে দেশটি। এমনকি পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন খোদ রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যদিও রাশিয়া ও ইউক্রেনের কেউই আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করেনি।
রাশিয়া শত শত হাসপাতাল
ধ্বংস করে দিয়েছে
সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে ইউক্রেনের শত শত হাসপাতাল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে রাশিয়া ধ্বংস করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার অভিযোগ, রুশ এই ধ্বংসযজ্ঞের কারণে ক্যান্সার মোকাবিলা করার মতো ওষুধ নেই এমনকি অস্ত্রোপচারও করতে পারছেন না ডাক্তাররা।
এক ভিডিওবার্তায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি একথা বলেন। গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার মেডিকেল দাতব্য গোষ্ঠীর উদ্দেশে ভাষণ দেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেখানি তিনি বলেন, ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলীয় অনেক জায়গায় চিকিৎসা সামগ্রীর সংকট রয়েছে। এমনকি অনেক জায়গায় মৌলিক অ্যান্টিবায়োটিকেরও অভাব রয়েছে।
ইউক্রেনেীয় প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আপনারা যদি শুধু চিকিৎসা অবকাঠামোর কথা চিন্তা করেন, তাহলে দেখবেন আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্যরা প্রায় ৪০০টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। এর মধ্যে হাসপাতাল, প্রসূতি ওয়ার্ড, বহিরাগত (আউট পেশেন্ট) ক্লিনিকও রয়েছে।’ তিনি বলেন, রুশ বাহিনীর দখলকৃত এলাকায় পরিস্থিতি বিপর্যয়কর। জেলেনস্কির ভাষায়, ‘ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের পুরোপুরি অভাব রয়েছে। এর মানে চরম অসুবিধা বা ডায়াবেটিসের জন্য ইনসুলিনের সম্পূর্ণ অভাব। রোগীদের অস্ত্রোপচার করা অসম্ভব। এমনকি অ্যান্টিবায়োটিকেরও অভাব রয়েছে।’
রাশিয়া অবশ্য এ ধরনের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সরকারি বাসভবন ও কার্যালয় ক্রেমলিনের দাবি, রুশ সেনারা শুধু ইউক্রেনের সামরিক ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্য করেই হামলা করছে। তবে ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানে হাসপাতাল ও স্কুলের মতো বেসামরিক স্থাপনায় রাশিয়ার সেনাদের হামলার খবর গণমাধ্যমে বেশ কয়েকবারই এসেছে। গত ৯ মার্চ রুশ সেনাদের হামলায় ইউক্রেনের মারিউপোল শহরের একটি প্রসূতি হাসপাতাল ধ্বংস হয়ে যায়। অবশ্য রাশিয়ার দাবি, হামলার ছবি মঞ্চস্থ করা হয়েছে এবং হাসপাতাল বলে দাবি করা ওই স্থাপনাটি সশস্ত্র ইউক্রেনীয় গোষ্ঠীগুলো ব্যবহার করছিল।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।