সামাজিকমাধ্যমে শিশুখাদ্যের প্রচার অমার্জনীয় : ডব্লিউএইচও

শিশুখাদ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো অন্তঃসত্ত্বা ও নতুন মায়েদের কাছে পণ্য পৌঁছানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পেছনে অর্থ ব্যয় করছে। তারা এমনভাবে পণ্যের কথা তুলে ধরছে, যা বিজ্ঞাপন হিসেবে স্বীকৃত না। তাদের এ কর্মকা- অমার্জনীয় বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

গত সপ্তাহে সংস্থাটির সদর দপ্তর জেনেভা থেকে প্রকাশিত মায়ের দুধের বিকল্প শিশুখাদ্যের ডিজিটাল বিপণন কৌশল নিয়ে এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিপণন কৌশলের কারণে মানুষ শিশুখাদ্যের ক্রয় বাড়িয়েছে এবং মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকছে।

বিভিন্ন অ্যাপ, বেবি ক্লাবের মতো ভার্চুয়াল গ্রুপ, স্যোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, প্রচার ও প্রতিযোগিতা, পরামর্শ ফোরামের মাধ্যমে কোম্পানিগুলো মায়েদের কাছে পৌঁছাতে পারছে। এভাবে শিশুকে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করছে তারাম বলে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশুদের খাওয়ানো নিয়ে ৪০ লাখ পোস্ট বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এসব পোস্ট করা হয়েছিল ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে। পোস্টগুলো ২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মানুষের কাছে গেছে। আর তাতে ১২ মিলিয়ন লাইক, শেয়ার বা মতামত পড়েছে। কোম্পানিগুলো তাদের বিষয়বস্তু দৈনিক গড়ে ৯০ বার পোস্ট করে। বুকের দুধ খাওয়ানো ও বুকের দুধের ব্যাপারে বিভ্রান্তিকর তথ্য থাকে এসব পোস্টে। এছাড়া মায়েদের বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষমতাকেও তাতে খাটো করে দেখানো হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ডিজিটাল বিপণনের কারণে বিকল্প শিশুখাদ্যের বিক্রি বেড়েছে। বৈশ্বিক শিশুখাদ্যের বাজার এখন ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। সংস্থাটি বলছে, শিশুখাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গর্ভবতী নারী ও নতুন মায়েদের ব্যক্তিগত তথ্য কিনতে বা সংগ্রহ করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ, বেবি ক্লাবের মতো ভার্চুয়াল গ্রুপ, স্যোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, প্রচার ও প্রতিযোগিতা, পরামর্শ ফোরামের মাধ্যমে কোম্পানিগুলো মায়েদের কাছে পৌঁছাতে পারছে। এভাবে শিশুকে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করছে তারা।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ, চীন, মেক্সিকো, মরক্কো, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের নারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক সপ্তাহে কী পরিমাণ প্রচারসামগ্রী পান তা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশের নারীরা সপ্তাহে গড়ে দুটি প্রচার সামগ্রীর মুখোমুখি হন। এই অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বেশি হয় মেক্সিকোর নারীদের। সপ্তাহের সাত দিন তারা এসবের মুখোমুখি হন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই বিপণন কৌশলের কারণে মানুষ শিশুখাদ্যের ক্রয় বাড়িয়েছে এবং মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকছে।

এটা প্রমাণিত যে, ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ ও দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়া অব্যাহত রাখা শিশু, নারী ও সমাজের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।

তারপরও অনেক শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো হয় না। কৃত্রিম দুধ খাওয়ানোর বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে বুকের দুধ খাওয়া শিশুর সংখ্যা কমবে, কোম্পানির মুনাফা বাড়বে।

অনেক দেশেই শিশুখাদ্যের ডিজিটাল বিপণন বাড়ছে। কোন কোন দেশে শিশুখাদ্যের ৮০ শতাংশ বিজ্ঞাপন হচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে। শিশুখাদ্য বিপণন আইন ও নীতি কৌশলে এড়িয়ে এসব করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন নীতি ও আইন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক ড. ফ্রান্সেসকো ব্রাংকা বলেন, ‘বাণিজ্যিক দুধের প্রচার কয়েক দশক আগেই বাতিল করা হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, দুধ কোম্পানিগুলো পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর জন্য আরও শক্তিশালী ও গোপন বিপণন কৌশল ব্যবহার করছে; যা অমার্জনীয় এবং তা অবশ্যই থামাতে হবে।’

শনিবার, ০৭ মে ২০২২ , ২৩ বৈশাখ ১৪২৮ ০৪ শাওয়াল ১৪৪৩

সামাজিকমাধ্যমে শিশুখাদ্যের প্রচার অমার্জনীয় : ডব্লিউএইচও

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

শিশুখাদ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো অন্তঃসত্ত্বা ও নতুন মায়েদের কাছে পণ্য পৌঁছানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পেছনে অর্থ ব্যয় করছে। তারা এমনভাবে পণ্যের কথা তুলে ধরছে, যা বিজ্ঞাপন হিসেবে স্বীকৃত না। তাদের এ কর্মকা- অমার্জনীয় বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

গত সপ্তাহে সংস্থাটির সদর দপ্তর জেনেভা থেকে প্রকাশিত মায়ের দুধের বিকল্প শিশুখাদ্যের ডিজিটাল বিপণন কৌশল নিয়ে এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিপণন কৌশলের কারণে মানুষ শিশুখাদ্যের ক্রয় বাড়িয়েছে এবং মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকছে।

বিভিন্ন অ্যাপ, বেবি ক্লাবের মতো ভার্চুয়াল গ্রুপ, স্যোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, প্রচার ও প্রতিযোগিতা, পরামর্শ ফোরামের মাধ্যমে কোম্পানিগুলো মায়েদের কাছে পৌঁছাতে পারছে। এভাবে শিশুকে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করছে তারাম বলে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশুদের খাওয়ানো নিয়ে ৪০ লাখ পোস্ট বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এসব পোস্ট করা হয়েছিল ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে। পোস্টগুলো ২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মানুষের কাছে গেছে। আর তাতে ১২ মিলিয়ন লাইক, শেয়ার বা মতামত পড়েছে। কোম্পানিগুলো তাদের বিষয়বস্তু দৈনিক গড়ে ৯০ বার পোস্ট করে। বুকের দুধ খাওয়ানো ও বুকের দুধের ব্যাপারে বিভ্রান্তিকর তথ্য থাকে এসব পোস্টে। এছাড়া মায়েদের বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষমতাকেও তাতে খাটো করে দেখানো হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ডিজিটাল বিপণনের কারণে বিকল্প শিশুখাদ্যের বিক্রি বেড়েছে। বৈশ্বিক শিশুখাদ্যের বাজার এখন ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। সংস্থাটি বলছে, শিশুখাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গর্ভবতী নারী ও নতুন মায়েদের ব্যক্তিগত তথ্য কিনতে বা সংগ্রহ করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ, বেবি ক্লাবের মতো ভার্চুয়াল গ্রুপ, স্যোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, প্রচার ও প্রতিযোগিতা, পরামর্শ ফোরামের মাধ্যমে কোম্পানিগুলো মায়েদের কাছে পৌঁছাতে পারছে। এভাবে শিশুকে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করছে তারা।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ, চীন, মেক্সিকো, মরক্কো, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের নারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক সপ্তাহে কী পরিমাণ প্রচারসামগ্রী পান তা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশের নারীরা সপ্তাহে গড়ে দুটি প্রচার সামগ্রীর মুখোমুখি হন। এই অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বেশি হয় মেক্সিকোর নারীদের। সপ্তাহের সাত দিন তারা এসবের মুখোমুখি হন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই বিপণন কৌশলের কারণে মানুষ শিশুখাদ্যের ক্রয় বাড়িয়েছে এবং মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকছে।

এটা প্রমাণিত যে, ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ ও দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়া অব্যাহত রাখা শিশু, নারী ও সমাজের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।

তারপরও অনেক শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো হয় না। কৃত্রিম দুধ খাওয়ানোর বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে বুকের দুধ খাওয়া শিশুর সংখ্যা কমবে, কোম্পানির মুনাফা বাড়বে।

অনেক দেশেই শিশুখাদ্যের ডিজিটাল বিপণন বাড়ছে। কোন কোন দেশে শিশুখাদ্যের ৮০ শতাংশ বিজ্ঞাপন হচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে। শিশুখাদ্য বিপণন আইন ও নীতি কৌশলে এড়িয়ে এসব করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন নীতি ও আইন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলে মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক ড. ফ্রান্সেসকো ব্রাংকা বলেন, ‘বাণিজ্যিক দুধের প্রচার কয়েক দশক আগেই বাতিল করা হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, দুধ কোম্পানিগুলো পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর জন্য আরও শক্তিশালী ও গোপন বিপণন কৌশল ব্যবহার করছে; যা অমার্জনীয় এবং তা অবশ্যই থামাতে হবে।’