ভিন্ন ধর্ম ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক শহীদজননী জাহানারা ইমামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মৌলবাদীদের সাম্প্রদায়িক জিহাদ প্রতিরোধ’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, এ বছর ৩ মে ঈদুল ফিতরের দিন ছিল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক শহীদজননী জাহানারা ইমামের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী। ঈদের কারণে এই দিন আমাদের নেত্রী শহীদজননী জাহানারা ইমামের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ছাড়া অন্য কর্মসূচি যথাসময়ে পালন করা সম্ভব হয়নি।

নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা জব্বার। ওয়েবিনারে ধারণাপত্র পাঠ করেন নির্মূল কমিটির বহুভাষিক সাময়িকী ’জাগরণ’-এর যুগ্ম সম্পাদক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লেখক মারুফ রসুল।

আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিটি তুরস্ক সাধারণ সম্পাদক লেখক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি, সর্ব ইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সভাপতি সমাজকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, সুইডেনে অবস্থানকারী নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা ও জাগরণ-এর যুগ্ম সম্পাদক লেখক সাংবাদিক সাব্বির খান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লেখক সুইজারল্যান্ডপ্রবাসী অমি রহমান পিয়াল, ‘জাগরণ’-এর হিন্দি বিভাগের সম্পাদক ভারতের সমাজকর্মী তাপস দাস, সাম্প্রদায়িক ভারত থেকে অনলাইন একটিভিস্ট আইনজীবী সালমান আখতার, নির্মূল কমিটি আইটি সেল সভাপতি শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক-এর সভাপতি ড. কানিজ আকলিমা সুলতানা, কলামিস্ট ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সমাজকর্মী লীনা পারভীন, নির্মূল কমিটির আইন সহায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নাসির মিঞা, নির্মূল কমিটি কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক দিলিপ মজুমদার, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার সুনামগঞ্জের ঝুমন দাস, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রসরাজ দাস, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার কুমিল্লার অনীক ভৌমিক, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, সিলেট জেলার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার সমাজকর্মী রাকেশ রায়, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র জয়দেব চন্দ্র শীল ও নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী কাজী মুকুল।

ওয়েবিনারের সভাপতির প্রারম্ভিক বক্তব্যে নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনকালে শহীদজননী জাহানারা ইমামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবদেন করে বলেন, ‘তিন দশকেরও অধিককাল পূর্বে আমরা শহীদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যে অভূতপূর্ব নাগরিক আন্দোলনের সূচনা করেছিলাম তার দুটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, ’৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং স্বাধীনতাবিরোধী গণহত্যাকারীদের ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধর্মনিরপেক্ষ কল্যাণ রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তোলা। আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য আংশিকভাবে সফল হলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি। স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বিভিন্ন মাধ্যমে ইসলামের দোহাই দিয়ে ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন মত এবং ভিন্ন জীবনধারার অনুসারী নাগরিকদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অমুসলিম ও মুক্তচিন্তকদের পাশাপাশি বাংলাদেশের সংবিধান এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনার প্রতি তারা ক্রমাগত বিষোদগার করছে। ইসলাম অবমাননার অপবাদ দিয়ে ‘ডিজিটার নিরাপত্তা আইনে’ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে এবং তাদের ঘরবাড়ি, পাড়া মহল্লা, গ্রামে হামলা হচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও মুক্তচিন্তার অনুসারীরা বার বার মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন, বিনা অপরাধে মাসের পর মাস কারানির্যাতন ভোগ করছেন বিভিন্নভাবে, বিড়ম্ভিত হচ্ছেন এবং তাদের জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত হচ্ছে।’

প্রধান অতিথির ভাষণে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা জব্বার শহীদজননী জাহানারা ইমামের জন্মবার্ষিকীতে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘তিনি যে পথ দেখিয়ে গেছেন সেই পথে আমরা চলছি। স্বাধীনতাবিরোধী মুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে তার কর্মজীবন আমাদের কাছে পাথেয়।’

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ভিকটিমদের কাছ থেকে সরাসরি হয়রানির চিত্র জানতে পেরে এই আয়োজনের জন্য একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ইসলামিক রিপালিক পাকিস্তানকে পরাস্ত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা পিপলস রিপাবলিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এসব মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক ঘটনা হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশ বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত। মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যেভাবে শেকড় গেড়েছে বাংলাদেশে তা উপড়ে ফেলা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে যে স্বাধীনতাবিরোধীদের মৌলবাদী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি দীর্ঘদিন যাবত মৌলবাদী সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে, তাদের সাধুবাদ জানাই।’

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার ভিকটিমদের তাদের মামলার বিবরণ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী নির্মূল কমিটির প্রতি আহ্বান জানান।

ওয়েবিনারে ধারণাপত্র পাঠকালে নির্মূল কমিটির বহুভাষিক সাময়িকী ’জাগরণ’-এর যুগ্ম সম্পাদক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লেখক মারুফ রসুল বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার বিস্তারকে জঙ্গিবাদের মতোই শূন্য সহিষ্ণুতায় দেখতে হবে। রামু, নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জসহ গত এক দশকে বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসগুলো অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সরকার কোন আইনি পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ যাদের ভিকটিম বানানো হয়েছে, তারা বিনা কারণে জেল খেটেছেন, অনেকে বাড়িঘর ছেড়েছেন, এমনকি দেশ ছাড়তেও বাধ্য হয়েছেন। এ কারণেই সরকারের কাছে দাবি, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসগুলোর বিচার করতে হবে। ডিএসএর কতোগুলো ধারার বিষয় সুস্পষ্ট করতে হবে।’

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের এই পৃথিবীতে একটু শান্তিতে বসবাস করতে হলে প্রথমত দরকার হয় অসম্প্রদায়িক ও মানবিক গুণাবলির অধিকারী হওয়া, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মতামতকে সম্মান দেখানো। গোটা বিশ্বেই আজ এমন একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে যা কিনা মানবসভ্যতার জন্য হুমকি স্বরূপ। এসব অপতৎপরতা থেকে সমাজ ও সমাজের মানুষকে রক্ষা করতে সমাজের সুশীল মানুষগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকারকে কঠোরভাবে অতিদ্রুত মৌলবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার সুনামগঞ্জের ঝুমন দাস বলেন, ‘আপনারা জানেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মৌলবাদীদের উগ্র থাবায় আমি পড়েছিলাম। মামুনুল হকের সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের গঠনমূলক সমালোচনা করে আমি প্রতিবাদ করেছিলাম ফেইসবুকে। এর পরের ঘটনা আপনাদের সবারেই জানা আছে। সাত মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়েছি আমি। মামলা চালাতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাকে। সুনামগঞ্জ থেকে মামলা এখন সিলেট ট্রাইব্যুনালে, এখন আবার মামলা চলে যাচ্ছে ঢাকায়। আমি আশা করছি, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি এবং বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র আমাকে এই মামলা থেকে অবিলম্বে রেহাই দেবে। আমাকে নিশ্চিত নিরাপত্তা দেবে এই রাষ্ট্র।’

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রসরাজ দাস বলেন, ‘ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা ফেইসবুক আইডি থেকে পবিত্র ‘কাবাঘর’ অবমাননার অভিযোগে ৩০ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে গ্রেপ্তার করা হয়ে ২ মাস ১৬ দিন জেলে খেটে কারাগার থেকে বের হয়ে আসি। আমি ৫ বছর ধরে প্রতিমাসে আদালতে হাজিরা দিতে দিতে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি। প্রতিমাসে গ্রাম থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে গিয়ে হাজিরা দিতে যে টাকা খরচ হয় তা বহন করার অবস্থা আমার নেই। আমি রাষ্ট্রের কাছে এই মামলা থেকে বেকসুর খালাস চাই। এই মামলা থেকে রেহাই পেতে চাই।’

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার কুমিল্লার অনীক ভৌমিক বলেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ১৯৭১ সালের এই দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল দেশ স্বাধীনের জন্য কিন্তু আমার জীবনের যুদ্ধ আরম্ভ হয়েছে ২০২০ সালের ১ নভেম্বর, সেই দিনটা এখনো আমার মনে পড়ে। ফেইসবুকে নির্দোষ একটা লাইক দেয়ায় কারণে আমার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে।’

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার বাংলাদেশ কৃষক লীগ, সিলেট জেলার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাকেশ রায় বলেন, ‘কথিত ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে করা মামলায় এক বছর জেল খাটতে হয়েছে আমাকে। ৫ বছর ধরে চলা এই মামলা চালাতে গিয়ে রীতিমতো নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। সরকারের কাছে আমার দাবি, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির করা মিথ্যা মামলাগুলো তুলে নিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জয়দেব চন্দ্র শীল বলেন, ‘২০১৭ সালের ১৭ মে মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ভয়ঙ্কর নির্যাতন করে আমাকে দিয়ে জোর করে ধর্ম অবমাননার কথা বলিয়ে থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ১৮ মে ২০১৭ সালে সেই সময়টাতে থানাতেও আমাকে নির্যাতন করা হয়। পরদিন আদালতে মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হলেও নির্যাতন থেকে রেহাই পাইনি। নির্মূল কমিটিকে ধন্যবাদ, তাদের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ছাত্রত্ব বাতিল হওয়ার বিষয় থেকে রক্ষা পেয়েছি। তবে মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সরকারের কাছে আমার দাবি, আমি আমার মামলা প্রত্যাহার চাই।’

নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ‘সাইবার ক্ষেত্র জিহাদ আকৃষ্ট করার নতুন একটি প্লাটফর্ম। জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সাইবার কাউন্টার জিহাদ কেমন করে করতে হবে তার একটি রূপরেখা আমাদের তৈরি করতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমাদের সামনে এগোতে হবে। জঙ্গি গোষ্ঠীরা অনলাইনে একের পর এক জিহাদের মোটিভেশন দিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রতিহত করতে হলে সরকার এবং আমাদের মধ্যে একটি সমন্বয় থাকা দরকার এবং সেই সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা তাদের প্রতিহত করতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।’

টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিটি তুরস্ক সাধারণ সম্পাদক লেখক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি বলেন, ‘মা যেভাবে সন্তানকে সব দুর্যোগ দুঃসময়ে পরম মমতায় আগলে রাখে, শহীদজননী জাহানারা ইমামও ঠিক সেভাবে কখনও নিজের পরিবারকে যুদ্ধে পাঠিয়ে সন্তানহারা হয়ে, কখনও আবার ঘাতক দালাল রাজাকারদের শাস্তির দাবিতে পথে নেমে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে চেয়েছেন স্বাধীনতাবিরোধী শত্রুদের হাত থেকে।’

সুইডেনে অবস্থানকারী নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা ও জাগরণ-এর যুগ্ম সম্পাদক লেখক সাংবাদিক সাব্বির খান বলেন, ‘ডিজিটাল আইনের প্রয়োজন আছে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য। তবে এই আইনের ব্যাপক অপপ্রয়োগ হচ্ছে।’

‘জাগরণ’-এর হিন্দি বিভাগের সম্পাদক ভারতের সমাজকর্মী তাপস দাস বলেন, ‘মৌলবাদী চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ সামাজিক গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে বাংলাদেশসহ পৃথিবীতে হিংসা এবং বিভাজনের রাজনীতির জন্ম দিয়েছে তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না। আমি মনে করি যদি সরকার প্রভাবিত ক্ষেত্র থেকে নিরপেক্ষ আন্দোলন না গড়ে তোলা যায় তাহলে এদের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব না।’

নির্মূল কমিটি আইটি সেল সভাপতি শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর তন্ময় বলেন, ‘বর্তমানে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক সুসংগঠিত এবং বিস্তৃত। সেই তুলনায় অসাম্প্রদায়িক শক্তির পাল্টা জবাব এই মাধ্যমে সুসংগঠিত নয়। এজন্য অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের নিয়মিত মতবিনিময় প্রয়োজন। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালায় সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদ উস্কানিমূলক অপতৎপরতার জন্য শাস্তির বিধান ও প্রতিরোধমূলক কর্মকাণ্ডের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং পৃষ্ঠপোষকতার বিধান থাকতে হবে।’

শনিবার, ০৭ মে ২০২২ , ২৩ বৈশাখ ১৪২৮ ০৪ শাওয়াল ১৪৪৩

ভিন্ন ধর্ম ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক শহীদজননী জাহানারা ইমামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মৌলবাদীদের সাম্প্রদায়িক জিহাদ প্রতিরোধ’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, এ বছর ৩ মে ঈদুল ফিতরের দিন ছিল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক শহীদজননী জাহানারা ইমামের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী। ঈদের কারণে এই দিন আমাদের নেত্রী শহীদজননী জাহানারা ইমামের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ছাড়া অন্য কর্মসূচি যথাসময়ে পালন করা সম্ভব হয়নি।

নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা জব্বার। ওয়েবিনারে ধারণাপত্র পাঠ করেন নির্মূল কমিটির বহুভাষিক সাময়িকী ’জাগরণ’-এর যুগ্ম সম্পাদক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লেখক মারুফ রসুল।

আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিটি তুরস্ক সাধারণ সম্পাদক লেখক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি, সর্ব ইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সভাপতি সমাজকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, সুইডেনে অবস্থানকারী নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা ও জাগরণ-এর যুগ্ম সম্পাদক লেখক সাংবাদিক সাব্বির খান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লেখক সুইজারল্যান্ডপ্রবাসী অমি রহমান পিয়াল, ‘জাগরণ’-এর হিন্দি বিভাগের সম্পাদক ভারতের সমাজকর্মী তাপস দাস, সাম্প্রদায়িক ভারত থেকে অনলাইন একটিভিস্ট আইনজীবী সালমান আখতার, নির্মূল কমিটি আইটি সেল সভাপতি শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময়, ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক-এর সভাপতি ড. কানিজ আকলিমা সুলতানা, কলামিস্ট ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সমাজকর্মী লীনা পারভীন, নির্মূল কমিটির আইন সহায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নাসির মিঞা, নির্মূল কমিটি কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক দিলিপ মজুমদার, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার সুনামগঞ্জের ঝুমন দাস, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রসরাজ দাস, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার কুমিল্লার অনীক ভৌমিক, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, সিলেট জেলার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার সমাজকর্মী রাকেশ রায়, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র জয়দেব চন্দ্র শীল ও নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী কাজী মুকুল।

ওয়েবিনারের সভাপতির প্রারম্ভিক বক্তব্যে নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনকালে শহীদজননী জাহানারা ইমামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবদেন করে বলেন, ‘তিন দশকেরও অধিককাল পূর্বে আমরা শহীদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যে অভূতপূর্ব নাগরিক আন্দোলনের সূচনা করেছিলাম তার দুটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, ’৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং স্বাধীনতাবিরোধী গণহত্যাকারীদের ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধর্মনিরপেক্ষ কল্যাণ রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তোলা। আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য আংশিকভাবে সফল হলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি। স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বিভিন্ন মাধ্যমে ইসলামের দোহাই দিয়ে ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন মত এবং ভিন্ন জীবনধারার অনুসারী নাগরিকদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অমুসলিম ও মুক্তচিন্তকদের পাশাপাশি বাংলাদেশের সংবিধান এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনার প্রতি তারা ক্রমাগত বিষোদগার করছে। ইসলাম অবমাননার অপবাদ দিয়ে ‘ডিজিটার নিরাপত্তা আইনে’ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে এবং তাদের ঘরবাড়ি, পাড়া মহল্লা, গ্রামে হামলা হচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও মুক্তচিন্তার অনুসারীরা বার বার মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন, বিনা অপরাধে মাসের পর মাস কারানির্যাতন ভোগ করছেন বিভিন্নভাবে, বিড়ম্ভিত হচ্ছেন এবং তাদের জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত হচ্ছে।’

প্রধান অতিথির ভাষণে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা জব্বার শহীদজননী জাহানারা ইমামের জন্মবার্ষিকীতে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘তিনি যে পথ দেখিয়ে গেছেন সেই পথে আমরা চলছি। স্বাধীনতাবিরোধী মুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে তার কর্মজীবন আমাদের কাছে পাথেয়।’

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ভিকটিমদের কাছ থেকে সরাসরি হয়রানির চিত্র জানতে পেরে এই আয়োজনের জন্য একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ইসলামিক রিপালিক পাকিস্তানকে পরাস্ত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা পিপলস রিপাবলিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এসব মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক ঘটনা হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশ বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত। মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যেভাবে শেকড় গেড়েছে বাংলাদেশে তা উপড়ে ফেলা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে যে স্বাধীনতাবিরোধীদের মৌলবাদী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি দীর্ঘদিন যাবত মৌলবাদী সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে, তাদের সাধুবাদ জানাই।’

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার ভিকটিমদের তাদের মামলার বিবরণ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী নির্মূল কমিটির প্রতি আহ্বান জানান।

ওয়েবিনারে ধারণাপত্র পাঠকালে নির্মূল কমিটির বহুভাষিক সাময়িকী ’জাগরণ’-এর যুগ্ম সম্পাদক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লেখক মারুফ রসুল বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার বিস্তারকে জঙ্গিবাদের মতোই শূন্য সহিষ্ণুতায় দেখতে হবে। রামু, নাসিরনগর, গোবিন্দগঞ্জসহ গত এক দশকে বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসগুলো অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সরকার কোন আইনি পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ যাদের ভিকটিম বানানো হয়েছে, তারা বিনা কারণে জেল খেটেছেন, অনেকে বাড়িঘর ছেড়েছেন, এমনকি দেশ ছাড়তেও বাধ্য হয়েছেন। এ কারণেই সরকারের কাছে দাবি, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসগুলোর বিচার করতে হবে। ডিএসএর কতোগুলো ধারার বিষয় সুস্পষ্ট করতে হবে।’

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার মুন্সীগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের এই পৃথিবীতে একটু শান্তিতে বসবাস করতে হলে প্রথমত দরকার হয় অসম্প্রদায়িক ও মানবিক গুণাবলির অধিকারী হওয়া, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মতামতকে সম্মান দেখানো। গোটা বিশ্বেই আজ এমন একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে যা কিনা মানবসভ্যতার জন্য হুমকি স্বরূপ। এসব অপতৎপরতা থেকে সমাজ ও সমাজের মানুষকে রক্ষা করতে সমাজের সুশীল মানুষগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকারকে কঠোরভাবে অতিদ্রুত মৌলবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার সুনামগঞ্জের ঝুমন দাস বলেন, ‘আপনারা জানেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মৌলবাদীদের উগ্র থাবায় আমি পড়েছিলাম। মামুনুল হকের সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের গঠনমূলক সমালোচনা করে আমি প্রতিবাদ করেছিলাম ফেইসবুকে। এর পরের ঘটনা আপনাদের সবারেই জানা আছে। সাত মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়েছি আমি। মামলা চালাতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাকে। সুনামগঞ্জ থেকে মামলা এখন সিলেট ট্রাইব্যুনালে, এখন আবার মামলা চলে যাচ্ছে ঢাকায়। আমি আশা করছি, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি এবং বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র আমাকে এই মামলা থেকে অবিলম্বে রেহাই দেবে। আমাকে নিশ্চিত নিরাপত্তা দেবে এই রাষ্ট্র।’

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রসরাজ দাস বলেন, ‘ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা ফেইসবুক আইডি থেকে পবিত্র ‘কাবাঘর’ অবমাননার অভিযোগে ৩০ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে গ্রেপ্তার করা হয়ে ২ মাস ১৬ দিন জেলে খেটে কারাগার থেকে বের হয়ে আসি। আমি ৫ বছর ধরে প্রতিমাসে আদালতে হাজিরা দিতে দিতে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি। প্রতিমাসে গ্রাম থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে গিয়ে হাজিরা দিতে যে টাকা খরচ হয় তা বহন করার অবস্থা আমার নেই। আমি রাষ্ট্রের কাছে এই মামলা থেকে বেকসুর খালাস চাই। এই মামলা থেকে রেহাই পেতে চাই।’

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার কুমিল্লার অনীক ভৌমিক বলেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ১৯৭১ সালের এই দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল দেশ স্বাধীনের জন্য কিন্তু আমার জীবনের যুদ্ধ আরম্ভ হয়েছে ২০২০ সালের ১ নভেম্বর, সেই দিনটা এখনো আমার মনে পড়ে। ফেইসবুকে নির্দোষ একটা লাইক দেয়ায় কারণে আমার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে।’

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার বাংলাদেশ কৃষক লীগ, সিলেট জেলার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাকেশ রায় বলেন, ‘কথিত ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে করা মামলায় এক বছর জেল খাটতে হয়েছে আমাকে। ৫ বছর ধরে চলা এই মামলা চালাতে গিয়ে রীতিমতো নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। সরকারের কাছে আমার দাবি, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির করা মিথ্যা মামলাগুলো তুলে নিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জয়দেব চন্দ্র শীল বলেন, ‘২০১৭ সালের ১৭ মে মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ভয়ঙ্কর নির্যাতন করে আমাকে দিয়ে জোর করে ধর্ম অবমাননার কথা বলিয়ে থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ১৮ মে ২০১৭ সালে সেই সময়টাতে থানাতেও আমাকে নির্যাতন করা হয়। পরদিন আদালতে মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হলেও নির্যাতন থেকে রেহাই পাইনি। নির্মূল কমিটিকে ধন্যবাদ, তাদের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ছাত্রত্ব বাতিল হওয়ার বিষয় থেকে রক্ষা পেয়েছি। তবে মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সরকারের কাছে আমার দাবি, আমি আমার মামলা প্রত্যাহার চাই।’

নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ‘সাইবার ক্ষেত্র জিহাদ আকৃষ্ট করার নতুন একটি প্লাটফর্ম। জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সাইবার কাউন্টার জিহাদ কেমন করে করতে হবে তার একটি রূপরেখা আমাদের তৈরি করতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমাদের সামনে এগোতে হবে। জঙ্গি গোষ্ঠীরা অনলাইনে একের পর এক জিহাদের মোটিভেশন দিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রতিহত করতে হলে সরকার এবং আমাদের মধ্যে একটি সমন্বয় থাকা দরকার এবং সেই সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা তাদের প্রতিহত করতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।’

টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম ফর হিউম্যানিটি তুরস্ক সাধারণ সম্পাদক লেখক ও চলচ্চিত্রনির্মাতা শাকিল রেজা ইফতি বলেন, ‘মা যেভাবে সন্তানকে সব দুর্যোগ দুঃসময়ে পরম মমতায় আগলে রাখে, শহীদজননী জাহানারা ইমামও ঠিক সেভাবে কখনও নিজের পরিবারকে যুদ্ধে পাঠিয়ে সন্তানহারা হয়ে, কখনও আবার ঘাতক দালাল রাজাকারদের শাস্তির দাবিতে পথে নেমে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে চেয়েছেন স্বাধীনতাবিরোধী শত্রুদের হাত থেকে।’

সুইডেনে অবস্থানকারী নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা ও জাগরণ-এর যুগ্ম সম্পাদক লেখক সাংবাদিক সাব্বির খান বলেন, ‘ডিজিটাল আইনের প্রয়োজন আছে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য। তবে এই আইনের ব্যাপক অপপ্রয়োগ হচ্ছে।’

‘জাগরণ’-এর হিন্দি বিভাগের সম্পাদক ভারতের সমাজকর্মী তাপস দাস বলেন, ‘মৌলবাদী চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ সামাজিক গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে বাংলাদেশসহ পৃথিবীতে হিংসা এবং বিভাজনের রাজনীতির জন্ম দিয়েছে তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না। আমি মনে করি যদি সরকার প্রভাবিত ক্ষেত্র থেকে নিরপেক্ষ আন্দোলন না গড়ে তোলা যায় তাহলে এদের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব না।’

নির্মূল কমিটি আইটি সেল সভাপতি শহীদ সন্তান আসিফ মুনীর তন্ময় বলেন, ‘বর্তমানে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক সুসংগঠিত এবং বিস্তৃত। সেই তুলনায় অসাম্প্রদায়িক শক্তির পাল্টা জবাব এই মাধ্যমে সুসংগঠিত নয়। এজন্য অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের নিয়মিত মতবিনিময় প্রয়োজন। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালায় সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদ উস্কানিমূলক অপতৎপরতার জন্য শাস্তির বিধান ও প্রতিরোধমূলক কর্মকাণ্ডের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং পৃষ্ঠপোষকতার বিধান থাকতে হবে।’