ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর মাত্র দুই মাসে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি বিক্রির আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বিক্রির পরিমাণ কমলেও ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে এ-সংক্রান্ত আয় বেড়েছে দেশটির। এ রাজস্ব আয়ের বড় অংশ এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোয় জ্বালানি বিক্রি করে। দ্য গার্ডিয়ান।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) করা একটি বিশ্লেষণ বলছে, ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকে মাত্র দুই মাসে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লা রফতানি করে ৬ হাজার ২০০ কোটি ইউরো আয় করেছে রাশিয়া। ইইউর দিকে তাকালে দেখা যাবে, গত দুই মাসেই ২৭ দেশের ব্লকটি ৪ হাজার ৪০০ কোটি ইউরোর পণ্য আমদানি করেছে। যেখানে আগের পুরো বছরে আমদানি হয়েছিল ১৪ হাজার কোটি ইউরোর। সে সময় মাসে খুব বেশি হলে আমদানি করা হয়েছিল ১ হাজার ২০০ কোটি ইউরোর পণ্য।
এসব চিত্র থেকে বোঝা যায়, ইউরোপের জ্বালানি সরবরাহের ওপর শ্বাসরোধ অবস্থা তৈরি করে কীভাবে ফায়দা লুটেছে রাশিয়া। এমনকি সেই সময়েও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের কাছে জ্বালানি তেল ও গ্যাসকে অর্থনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার না করার উদ্দাত্ত আহ্বান জানান বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানরা।
যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার রপ্তানিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু দেশটির গ্যাসক্ষেত্র এত বেশি সমৃদ্ধ যে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঊর্ধ্বমুখী হয় দাম। তাছাড়া কভিড-১৯ মহামারীর কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘœ ঘটায় আগে থেকেই দাম কিছুটা বাড়তি ছিল, সেটাও প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। সিআরইএ জানিয়েছে, আগ্রাসনের আগের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির কথা বিবেচনা করলে প্রথম তিন সপ্তাহে রাশিয়া থেকে বিদেশি বন্দরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের রপ্তানি কমে গেছে ৩০ শতাংশ।
জ্বালানি তেল ও গ্যাসের এ বাড়তি মূল্যই রাশিয়ার রাজস্ব আয় বৃদ্ধির একটি উপায় হিসেবে কাজ করছে। যেটা সরাসরি রাষ্ট্রচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে রাশিয়া সরকারের কাছে পৌঁছায়। এমনকি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও রাজস্ব আয় বেড়েছে। বলাই যায়, রাশিয়া খুব কার্যকরভাবে ইইউকে নিজের জালে আটকে ফেলেছে। ফলে পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, যত বেশি নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে তত বেশি দাম বাড়বে। অর্থাৎ ইইউ সরকারের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রাশিয়ার রাজস্ব আয় বাড়তেই থাকবে।
সম্প্রতি পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় জীবাশ্ম জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া, যা ক্ষোভ আরও উসকে দিয়েছে। প্রচারণা সংস্থা গ্লোবাল উইটনেসের সিনিয়র অ্যাডভাইজার লুইস জে উইলসন বলেন, নিজেদের করা চুক্তি ভেঙে ফেলতে রাশিয়ার যে ইচ্ছা, তার অর্থ ব্যবসাগুলোর এখন আর রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই। এত দিন রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করে আসা জীবাশ্ম জ্বালানির ট্রেডাররা অভিযোগ করছেন, তাদের দীর্ঘকালীন চুক্তির দোহাই দিয়ে বাণিজ্য চালিয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। সিআরইএর তথ্য বলছে, এমন পরিস্থিতিতেও অনেক প্রতিষ্ঠান যেমন বিপি, শেল, এক্সনমবিল রাশিয়ার সঙ্গে বড় বড় মাপের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
গত দুই মাসে রুশ পণ্যের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক ছিল জার্মানি। এ সময়ে দেশটি ৯০০ কোটি ইউরোর পণ্য আমদানি করে। ইতালি ও নেদারল্যান্ডসও বড় আমদানিকারক ছিল। দেশ দুটি যথাক্রমে ৬৮০ কোটি ও ৫৬০ কোটি ইউরোর পণ্য আমদানি করে।
রবিবার, ০৮ মে ২০২২ , ২৪ বৈশাখ ১৪২৮ ০৫ শাওয়াল ১৪৪৩
সংবাদ ডেস্ক
ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর মাত্র দুই মাসে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি বিক্রির আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বিক্রির পরিমাণ কমলেও ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে এ-সংক্রান্ত আয় বেড়েছে দেশটির। এ রাজস্ব আয়ের বড় অংশ এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোয় জ্বালানি বিক্রি করে। দ্য গার্ডিয়ান।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) করা একটি বিশ্লেষণ বলছে, ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পর থেকে মাত্র দুই মাসে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লা রফতানি করে ৬ হাজার ২০০ কোটি ইউরো আয় করেছে রাশিয়া। ইইউর দিকে তাকালে দেখা যাবে, গত দুই মাসেই ২৭ দেশের ব্লকটি ৪ হাজার ৪০০ কোটি ইউরোর পণ্য আমদানি করেছে। যেখানে আগের পুরো বছরে আমদানি হয়েছিল ১৪ হাজার কোটি ইউরোর। সে সময় মাসে খুব বেশি হলে আমদানি করা হয়েছিল ১ হাজার ২০০ কোটি ইউরোর পণ্য।
এসব চিত্র থেকে বোঝা যায়, ইউরোপের জ্বালানি সরবরাহের ওপর শ্বাসরোধ অবস্থা তৈরি করে কীভাবে ফায়দা লুটেছে রাশিয়া। এমনকি সেই সময়েও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের কাছে জ্বালানি তেল ও গ্যাসকে অর্থনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার না করার উদ্দাত্ত আহ্বান জানান বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানরা।
যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার রপ্তানিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু দেশটির গ্যাসক্ষেত্র এত বেশি সমৃদ্ধ যে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঊর্ধ্বমুখী হয় দাম। তাছাড়া কভিড-১৯ মহামারীর কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘœ ঘটায় আগে থেকেই দাম কিছুটা বাড়তি ছিল, সেটাও প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। সিআরইএ জানিয়েছে, আগ্রাসনের আগের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির কথা বিবেচনা করলে প্রথম তিন সপ্তাহে রাশিয়া থেকে বিদেশি বন্দরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের রপ্তানি কমে গেছে ৩০ শতাংশ।
জ্বালানি তেল ও গ্যাসের এ বাড়তি মূল্যই রাশিয়ার রাজস্ব আয় বৃদ্ধির একটি উপায় হিসেবে কাজ করছে। যেটা সরাসরি রাষ্ট্রচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে রাশিয়া সরকারের কাছে পৌঁছায়। এমনকি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও রাজস্ব আয় বেড়েছে। বলাই যায়, রাশিয়া খুব কার্যকরভাবে ইইউকে নিজের জালে আটকে ফেলেছে। ফলে পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, যত বেশি নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে তত বেশি দাম বাড়বে। অর্থাৎ ইইউ সরকারের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রাশিয়ার রাজস্ব আয় বাড়তেই থাকবে।
সম্প্রতি পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় জীবাশ্ম জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া, যা ক্ষোভ আরও উসকে দিয়েছে। প্রচারণা সংস্থা গ্লোবাল উইটনেসের সিনিয়র অ্যাডভাইজার লুইস জে উইলসন বলেন, নিজেদের করা চুক্তি ভেঙে ফেলতে রাশিয়ার যে ইচ্ছা, তার অর্থ ব্যবসাগুলোর এখন আর রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই। এত দিন রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করে আসা জীবাশ্ম জ্বালানির ট্রেডাররা অভিযোগ করছেন, তাদের দীর্ঘকালীন চুক্তির দোহাই দিয়ে বাণিজ্য চালিয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। সিআরইএর তথ্য বলছে, এমন পরিস্থিতিতেও অনেক প্রতিষ্ঠান যেমন বিপি, শেল, এক্সনমবিল রাশিয়ার সঙ্গে বড় বড় মাপের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
গত দুই মাসে রুশ পণ্যের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক ছিল জার্মানি। এ সময়ে দেশটি ৯০০ কোটি ইউরোর পণ্য আমদানি করে। ইতালি ও নেদারল্যান্ডসও বড় আমদানিকারক ছিল। দেশ দুটি যথাক্রমে ৬৮০ কোটি ও ৫৬০ কোটি ইউরোর পণ্য আমদানি করে।