টাঙ্গাইল শহরের ভোর সকাল ভয়ঙ্কর। গভীর রাতের পর থেকে ভোর পর্যন্ত অরক্ষিত হয়ে পড়ে টাঙ্গাইল শহর। ক্লান্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তখন ঘুমকাতর। ঘুমিয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের আপামর মানুষজন। সেই সুযোগে রাস্তাঘাট হয়ে ওঠে দুর্বৃত্তদের অভয়ারণ্য। মাদকসেবী আর ছিনতাইকারীদের দখলে চলে যায় শহরের প্রতিটি প্রান্তর। জরুরী কাজের প্রয়োজনে রাস্তায় বের হলে সর্বস্ব খোয়ানোর ঝুঁকি তো আছেই, এমনকি খুন বা গুরুতর আহত হবেন না- এমন নিশ্চয়তা নেই। প্রতিমাসে গড়ে ২০-৩০টির বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে শহর, উপশহর, উপজেলা ও এমনকি গ্রামগুলোতে।
টাঙ্গাইলের শহরে ঘুমের আমেজে মোড়ানো স্নিগ্ধ সকাল। শহরের চিরচেনা কোলাহল তখনও শুরু হয়নি। শহরের মুখখানিতে যেন জড়িয়ে আছে মায়াবী সুন্দর ঘুম। ক্লান্ত শরীর নিয়ে যে শহর প্রতিদিন মধ্যরাতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে, তার জেগে উঠতে ঢের বাকি। তবে এমন পরিবেশেও চঞ্চল থাকে বাস ও ট্রেন স্টেশন। সারাদেশ থেকে টাঙ্গাইলে মানুষ আসে আবার টাঙ্গাইল থেকে মানুষ যায় সারাদেশে। তবে শান্ত সুনিবিড় আর কোলাহলমুক্ত ভোরকে ভয়ঙ্কর করে তুলছে বেপরোয়া মাদকসেবিরা ও ছিনতাইকারীরা। শহরের অনিন্দ্যসুন্দর সকালের পিচঢালা পথকে রক্তাক্ত করে তুলছে তারা। রাস্তা থেকে নির্বিঘেœ কেউ বাসা বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে- এমন নিশ্চয়তা নেই। পথে পথে দুর্বৃত্ত চক্রের আনাগোনা, ছিনতাই আতঙ্ক। ভোরের টাঙ্গাইলে পুলিশি নিরাপত্তার ঢিলেঢালা দৃশ্যপটের সুযোগ নিচ্ছে অপরাধী চক্ররা।
টাঙ্গাইরের বিভিন্ন থানা এলাকার বেশ কিছু স্পটে কয়েকদিনের গভীররাত থেকে ভোর পর্যন্ত খোঁজ খবর নিয়ে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, দুর্বৃত্ত-ছিনতাইকারী চক্র কতটা ভয়ঙ্কর। কাগজপত্রে রাতের বেলা থেকে ভোরে টাঙ্গাইল শহরের সড়কে পুলিশের ডিউটি থাকলেও মাঠে গিয়ে দেখা যায়, গাড়িতেই তারা ঘুমাচ্ছেন। টাঙ্গাইল শহরের বেবিস্ট্যান্ড, নিরালা মোড়, কলেজ পাড়া, প্যারাডাইজ পাড়া, ভিক্টোরিয়া রোড, আদালত পাড়া, বাজিতপুর, আকুরটাকুর পাড়া, উদ্যানের পাশে ক্লাব রোড, আশেকপুর বাইপাস, রাবনা বাইপাস, আকুরটাকুর পাড়া, পার্কবাজার মোড়, শান্তিকুঞ্জের মোড়, বেপারিপাড়া, গোডাউন ব্রিজ, ডিস্টিক এলাকায় ছিনতাই প্রবণ এলাকায় এমন চিত্র খুবই করুণ।
এছাড়া পৌর শহরের শান্তিকুঞ্জের মোড়, কলেজ পাড়া, প্যারাডাইজ পাড়া, কুমুদিনী কলেজ মোড়, বাঁকা মিয়ার ব্রিজ, শামসুল হক তোরণ মোড়ে সড়কের উপর আবাসিক এলাকাগুলোতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে সিএনজি, অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল স্ট্যান্ড। এসব অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে শহরের পাড়ামহল্লাগুলোতে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে।
করোনার আগে জেলা পুলিশের প্রাপ্ত তথ্য সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল শহরের প্রায় ৫০টি স্পটে অন্তত অর্ধশতাধিক সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্ত ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা সক্রিয়। যা এখন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্যরাত ও ভোর পর্যন্ত শহরের অনেক স্থানই চলে যায় এই ধরনের দুর্বৃত্তদের দখলে। বিশেষ করে নির্জন সড়ক এবং অলিগতি হলে তো কথাই নেই। ভাসমান পতিতা আর তৃতীয় লিঙ্গের সঙ্গে সখ্য গড়ে মাদক সেবনে নেশাগ্রস্ত হয়ে অপরাধী কর্মকান্ডে ব্যস্ত হয়ে পড়ে অপরাধীরা। খোদ পুলিশ কর্মকর্তারাই ছিনতাইসহ অপরাধ বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে ছিনতাই এড়াতে জনগণকে নির্জন ও অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া মাঠ-পুলিশকে তৎপর থাকার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ছিনতাইয়ের প্রকৃত পরিসংখ্যান পুলিশের কাছে থাকে না। কারণ ভুক্তভোগীরা বড় ধরনের ছিনতাইয়ের শিকার না হলে থানায় যান না। ছিনতাইকারীদের একটি বড় অংশ ভাসমান মাদকাসক্ত। তাদের প্রতিরোধে পুলিশের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এ ধরনের অপরাধের ঘটনা অহরহ ঘটছে। ছিনতাইকারীরা এতোটাই বেপরোয়া, কেউ প্রতিরোধ করতে গেলেই তারা ভুক্তভোগীর ওপর মারমুখী হয়। এমনকি খুন করতেও দ্বিধা করে না। এ চক্রের সদস্যরা মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার কিংবা মাইক্রোবাস নিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার ধরে। সুযোগ বুঝে রাস্তায় মানুষের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। শহরের রাস্তার বিভিন্ন নির্জন স্থানে এরা শিকার ধরে। দূরদূরান্ত থেকে আসা লোকজনকে টার্গেট করে। ট্রেন স্টেশনে ও বাস টার্মিনালে যাত্রীরা ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়েন বেশি। ছিনতাইকারীরা মধ্যরাত ও কাকডাকা ভোরকেই নিরাপদ সময় হিসাবে বেছে নেয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, মধ্যরাতে পুলিশি টহল শিথিল থাকে। আর ভোরে রাস্তাগুলো ফাঁকা থাকে। টহল পুলিশের ডিউটি বদলের সময়টাকেও ছিনতাইকারীরা নিরাপদ সময় হিসাবে বেছে নিয়ে রাস্তায় নামে। যত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে ততটা মামলা হয় না।
রবিবার, ০৮ মে ২০২২ , ২৪ বৈশাখ ১৪২৮ ০৫ শাওয়াল ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইল শহরের ভোর সকাল ভয়ঙ্কর। গভীর রাতের পর থেকে ভোর পর্যন্ত অরক্ষিত হয়ে পড়ে টাঙ্গাইল শহর। ক্লান্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তখন ঘুমকাতর। ঘুমিয়ে পড়ে টাঙ্গাইলের আপামর মানুষজন। সেই সুযোগে রাস্তাঘাট হয়ে ওঠে দুর্বৃত্তদের অভয়ারণ্য। মাদকসেবী আর ছিনতাইকারীদের দখলে চলে যায় শহরের প্রতিটি প্রান্তর। জরুরী কাজের প্রয়োজনে রাস্তায় বের হলে সর্বস্ব খোয়ানোর ঝুঁকি তো আছেই, এমনকি খুন বা গুরুতর আহত হবেন না- এমন নিশ্চয়তা নেই। প্রতিমাসে গড়ে ২০-৩০টির বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে শহর, উপশহর, উপজেলা ও এমনকি গ্রামগুলোতে।
টাঙ্গাইলের শহরে ঘুমের আমেজে মোড়ানো স্নিগ্ধ সকাল। শহরের চিরচেনা কোলাহল তখনও শুরু হয়নি। শহরের মুখখানিতে যেন জড়িয়ে আছে মায়াবী সুন্দর ঘুম। ক্লান্ত শরীর নিয়ে যে শহর প্রতিদিন মধ্যরাতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে, তার জেগে উঠতে ঢের বাকি। তবে এমন পরিবেশেও চঞ্চল থাকে বাস ও ট্রেন স্টেশন। সারাদেশ থেকে টাঙ্গাইলে মানুষ আসে আবার টাঙ্গাইল থেকে মানুষ যায় সারাদেশে। তবে শান্ত সুনিবিড় আর কোলাহলমুক্ত ভোরকে ভয়ঙ্কর করে তুলছে বেপরোয়া মাদকসেবিরা ও ছিনতাইকারীরা। শহরের অনিন্দ্যসুন্দর সকালের পিচঢালা পথকে রক্তাক্ত করে তুলছে তারা। রাস্তা থেকে নির্বিঘেœ কেউ বাসা বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে- এমন নিশ্চয়তা নেই। পথে পথে দুর্বৃত্ত চক্রের আনাগোনা, ছিনতাই আতঙ্ক। ভোরের টাঙ্গাইলে পুলিশি নিরাপত্তার ঢিলেঢালা দৃশ্যপটের সুযোগ নিচ্ছে অপরাধী চক্ররা।
টাঙ্গাইরের বিভিন্ন থানা এলাকার বেশ কিছু স্পটে কয়েকদিনের গভীররাত থেকে ভোর পর্যন্ত খোঁজ খবর নিয়ে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, দুর্বৃত্ত-ছিনতাইকারী চক্র কতটা ভয়ঙ্কর। কাগজপত্রে রাতের বেলা থেকে ভোরে টাঙ্গাইল শহরের সড়কে পুলিশের ডিউটি থাকলেও মাঠে গিয়ে দেখা যায়, গাড়িতেই তারা ঘুমাচ্ছেন। টাঙ্গাইল শহরের বেবিস্ট্যান্ড, নিরালা মোড়, কলেজ পাড়া, প্যারাডাইজ পাড়া, ভিক্টোরিয়া রোড, আদালত পাড়া, বাজিতপুর, আকুরটাকুর পাড়া, উদ্যানের পাশে ক্লাব রোড, আশেকপুর বাইপাস, রাবনা বাইপাস, আকুরটাকুর পাড়া, পার্কবাজার মোড়, শান্তিকুঞ্জের মোড়, বেপারিপাড়া, গোডাউন ব্রিজ, ডিস্টিক এলাকায় ছিনতাই প্রবণ এলাকায় এমন চিত্র খুবই করুণ।
এছাড়া পৌর শহরের শান্তিকুঞ্জের মোড়, কলেজ পাড়া, প্যারাডাইজ পাড়া, কুমুদিনী কলেজ মোড়, বাঁকা মিয়ার ব্রিজ, শামসুল হক তোরণ মোড়ে সড়কের উপর আবাসিক এলাকাগুলোতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে সিএনজি, অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল স্ট্যান্ড। এসব অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে শহরের পাড়ামহল্লাগুলোতে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে।
করোনার আগে জেলা পুলিশের প্রাপ্ত তথ্য সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল শহরের প্রায় ৫০টি স্পটে অন্তত অর্ধশতাধিক সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্ত ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা সক্রিয়। যা এখন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্যরাত ও ভোর পর্যন্ত শহরের অনেক স্থানই চলে যায় এই ধরনের দুর্বৃত্তদের দখলে। বিশেষ করে নির্জন সড়ক এবং অলিগতি হলে তো কথাই নেই। ভাসমান পতিতা আর তৃতীয় লিঙ্গের সঙ্গে সখ্য গড়ে মাদক সেবনে নেশাগ্রস্ত হয়ে অপরাধী কর্মকান্ডে ব্যস্ত হয়ে পড়ে অপরাধীরা। খোদ পুলিশ কর্মকর্তারাই ছিনতাইসহ অপরাধ বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে ছিনতাই এড়াতে জনগণকে নির্জন ও অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া মাঠ-পুলিশকে তৎপর থাকার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ছিনতাইয়ের প্রকৃত পরিসংখ্যান পুলিশের কাছে থাকে না। কারণ ভুক্তভোগীরা বড় ধরনের ছিনতাইয়ের শিকার না হলে থানায় যান না। ছিনতাইকারীদের একটি বড় অংশ ভাসমান মাদকাসক্ত। তাদের প্রতিরোধে পুলিশের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এ ধরনের অপরাধের ঘটনা অহরহ ঘটছে। ছিনতাইকারীরা এতোটাই বেপরোয়া, কেউ প্রতিরোধ করতে গেলেই তারা ভুক্তভোগীর ওপর মারমুখী হয়। এমনকি খুন করতেও দ্বিধা করে না। এ চক্রের সদস্যরা মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার কিংবা মাইক্রোবাস নিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার ধরে। সুযোগ বুঝে রাস্তায় মানুষের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। শহরের রাস্তার বিভিন্ন নির্জন স্থানে এরা শিকার ধরে। দূরদূরান্ত থেকে আসা লোকজনকে টার্গেট করে। ট্রেন স্টেশনে ও বাস টার্মিনালে যাত্রীরা ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়েন বেশি। ছিনতাইকারীরা মধ্যরাত ও কাকডাকা ভোরকেই নিরাপদ সময় হিসাবে বেছে নেয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, মধ্যরাতে পুলিশি টহল শিথিল থাকে। আর ভোরে রাস্তাগুলো ফাঁকা থাকে। টহল পুলিশের ডিউটি বদলের সময়টাকেও ছিনতাইকারীরা নিরাপদ সময় হিসাবে বেছে নিয়ে রাস্তায় নামে। যত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে ততটা মামলা হয় না।