ট্রেনে কর্মস্থলে ফিরতে দুর্ভোগ ক্ষোভ নাজেহাল যাত্রীদের

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদুল ফিতরে ঈদ উদযাপন শেষে রাজধানী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবী মানুষরা। ঈদের আগে ঘরে ফেরার মতো এবার ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতেও পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ট্রেন যাত্রীদের। বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে আর টিকিটের জন্য যাত্রীদের হাহাকার অবস্থা। অর্থাৎ বাড়ি ফিরতে যেমন ট্রেনের টিকিটের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টার দীর্ঘ লাইনের দাঁড়িয়ে টিকিট নেওয়ার ভোগান্তি পোহাতে হয় ঠিক একই ভাবে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফিরতেও সেই একই রকম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ট্রেন যাত্রীদের।

সান্তাহার জংশন স্টেশনে ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের ছুটি শেষদিন থেকে ঢাকাগামী ট্রেন যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীরা ঢাকামুখী ট্রেনের ভিড় ছিল দেখার মতো। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্টেশনে থেকে ৭টি ট্রেন যাত্রী নিয়ে সান্তাহার হয়ে ঢাকা যাচ্ছে। তার মধ্যে কোন ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে স্টেশনে পৌঁছায়নি। তবে প্রতিটি ট্রেনেই ছিল উপচেপড়া ভিড়। ভিড় ঠেলে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবাই ব্যস্ত ট্রেনে উঠতে। ঈদের ছুটি কাটিয়ে রাজধানী ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে। তবে ট্রেন যাত্রীদের সংখ্যা আসনের চেয়ে দ্বিগুণ যাত্রী ছিল। ঈদের সরকারি ছুটির পর থেকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিস খুলেছে।

নওগাঁ থেকে কর্মস্থল ঢাকায় ফেরার পথে সান্তাহার স্টেশনে আলমগীর রহমান বলেন, ঈদের সময় ঢাকা থেকে ট্রেনে আসতে যে ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল ঠিক গ্রাম থেকে ঢাকা ফিরতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে সান্তাহার আসি। তবে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৩ ঘণ্টা দেরি করে স্টেশনে পৌঁছেছে ট্রেনটি। তার ওপর ট্রেনে যাত্রীদের অধিক চাপ। গরমে হাঁসফাঁস করার মতো অবস্থা। ট্রেনের আসন সংখ্যার তুলনায় দাঁড়ানো যাত্রী বেশি থাকার ফলে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের যাত্রী সুর্বনা আক্তার বলেন, নারী যাত্রী হিসেবে পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু নির্বিঘেœ যাত্রা করার জন্য ট্রেনকে বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু ট্রেন পথে বিভিন্ন দুর্ভোগের পর অবশেষে আবারও ঢাকায় যাত্রা করছি। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে ট্রেন আসছে, প্রতিটা স্টেশনেই বেশিক্ষণ বিরতির ফলে নির্ধারিত সময়ের ছেয়ে কয়েক ঘণ্টা বিলম্বে স্টেশনে আসছে ট্রেন।

সান্তাহার ট্রেন যাত্রী ফিরোজ হোসেনের সাথে টিকিট কাউন্টারের কথা হলে তিনি অভিযোগ করে বলেন, টিকিট কাউন্টারের টিকিট পাওয়া যায় না। সেই টিকিটগুলো অনেক বেশি দামে কাউন্টারের আশপাশে বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যায়। তিনি রংপুরের ট্রেনের এসি স্নিœগ্ধা ১টি টিকিট ১৫ শত টাকায় কিনেছেন। কাউন্টারের ৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে তাকে টিকিট দেয়া হয়নি। কাউন্টার থেকে বলা হয়েছে টিকিট শেষ হয়ে গেছে। অথচ তিনি লাইনে ৩ নাম্বার সিরিয়ালের যাত্রী ছিলেন। তাহলে টিকিট কেমন করে শেষ হয় আপনারা বলেন এম প্রশ্ন করছেন ?

লালমনি এক্সপ্রেসের যাত্রী আমিনুল হক বলেন, প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদুল ফিতরে ঈদ উদযাপন জন্য আমাদের কে তিন দফা যুদ্ধ করে বাড়ি আসতে হয়। আবার ৩ দফা যুদ্ধ করে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফিরতে হয়। যেমন ট্রেনের টিকিটের জন্য ঘন্টার ঘন্টার পর লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট নিতে হয়। আবার সেই ট্রেনে উঠতে গিয়ে আবার একবার যুদ্ধ করতে হয় এবং শেষ যুদ্ধ করতে হয় ট্রেন থেকে নামতে।

দুপচাঁচিয়া উপজেলার আরেক ট্রেন যাত্রী আলাল হোসেন বলেন, ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থল ঢাকায় যাবো। তিনি একটি ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছে। তিনি বলেন, আসার সময় ট্রেনে এত ভিড় ছিল যে তার নিধারিত আসনে যেতে পারেনি। টিকিট কেটেও ৬ ঘন্টার ট্রেনে দাঁড়িয়ে এসেছে। এবারও টিকিট কেটেছে তবে ট্রেনে যে পরিমান ভিড় দেখা যাচ্ছে তাতে করে কি ট্রেনে উঠতে পারবো কি না চিন্তায় আছে। আবার ছুটি শেষে নির্ধারিত সময়ে অফিসে পৌঁছাতে না পারায় চাকরি থাকবে কিনা তাও জানি না।

এ বিষয়ে সান্তাহার রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার রেজাউল করিম ডালিম বলেন, যে সব যাত্রীরা গ্রামে ঈদ করতে গিয়েছিল তারা আবার ঢাকায় ফিরছে।

তাই যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় এবং যাত্রীদের ট্রেনে ওঠার সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রতিটি স্টেশনে একটু বেশি সময় ট্রেন দাঁড়াচ্ছে। এতে কিছুটা দেরি করে ট্রেন আসছে এবং ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে।

রবিবার, ০৮ মে ২০২২ , ২৪ বৈশাখ ১৪২৮ ০৫ শাওয়াল ১৪৪৩

ট্রেনে কর্মস্থলে ফিরতে দুর্ভোগ ক্ষোভ নাজেহাল যাত্রীদের

প্রতিনিধি, আদমদীঘি (বগুড়া)

image

আদমদীঘি (বগুড়া) : ট্রেনে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের ভিড়। আসন না পেয়ে অপেক্ষমান শত শত যাত্রী -সংবাদ

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদুল ফিতরে ঈদ উদযাপন শেষে রাজধানী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবী মানুষরা। ঈদের আগে ঘরে ফেরার মতো এবার ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতেও পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ট্রেন যাত্রীদের। বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে আর টিকিটের জন্য যাত্রীদের হাহাকার অবস্থা। অর্থাৎ বাড়ি ফিরতে যেমন ট্রেনের টিকিটের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টার দীর্ঘ লাইনের দাঁড়িয়ে টিকিট নেওয়ার ভোগান্তি পোহাতে হয় ঠিক একই ভাবে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফিরতেও সেই একই রকম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ট্রেন যাত্রীদের।

সান্তাহার জংশন স্টেশনে ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের ছুটি শেষদিন থেকে ঢাকাগামী ট্রেন যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সান্তাহার রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীরা ঢাকামুখী ট্রেনের ভিড় ছিল দেখার মতো। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্টেশনে থেকে ৭টি ট্রেন যাত্রী নিয়ে সান্তাহার হয়ে ঢাকা যাচ্ছে। তার মধ্যে কোন ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে স্টেশনে পৌঁছায়নি। তবে প্রতিটি ট্রেনেই ছিল উপচেপড়া ভিড়। ভিড় ঠেলে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবাই ব্যস্ত ট্রেনে উঠতে। ঈদের ছুটি কাটিয়ে রাজধানী ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে। তবে ট্রেন যাত্রীদের সংখ্যা আসনের চেয়ে দ্বিগুণ যাত্রী ছিল। ঈদের সরকারি ছুটির পর থেকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিস খুলেছে।

নওগাঁ থেকে কর্মস্থল ঢাকায় ফেরার পথে সান্তাহার স্টেশনে আলমগীর রহমান বলেন, ঈদের সময় ঢাকা থেকে ট্রেনে আসতে যে ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল ঠিক গ্রাম থেকে ঢাকা ফিরতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে সান্তাহার আসি। তবে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৩ ঘণ্টা দেরি করে স্টেশনে পৌঁছেছে ট্রেনটি। তার ওপর ট্রেনে যাত্রীদের অধিক চাপ। গরমে হাঁসফাঁস করার মতো অবস্থা। ট্রেনের আসন সংখ্যার তুলনায় দাঁড়ানো যাত্রী বেশি থাকার ফলে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের যাত্রী সুর্বনা আক্তার বলেন, নারী যাত্রী হিসেবে পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু নির্বিঘেœ যাত্রা করার জন্য ট্রেনকে বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু ট্রেন পথে বিভিন্ন দুর্ভোগের পর অবশেষে আবারও ঢাকায় যাত্রা করছি। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে ট্রেন আসছে, প্রতিটা স্টেশনেই বেশিক্ষণ বিরতির ফলে নির্ধারিত সময়ের ছেয়ে কয়েক ঘণ্টা বিলম্বে স্টেশনে আসছে ট্রেন।

সান্তাহার ট্রেন যাত্রী ফিরোজ হোসেনের সাথে টিকিট কাউন্টারের কথা হলে তিনি অভিযোগ করে বলেন, টিকিট কাউন্টারের টিকিট পাওয়া যায় না। সেই টিকিটগুলো অনেক বেশি দামে কাউন্টারের আশপাশে বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যায়। তিনি রংপুরের ট্রেনের এসি স্নিœগ্ধা ১টি টিকিট ১৫ শত টাকায় কিনেছেন। কাউন্টারের ৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে তাকে টিকিট দেয়া হয়নি। কাউন্টার থেকে বলা হয়েছে টিকিট শেষ হয়ে গেছে। অথচ তিনি লাইনে ৩ নাম্বার সিরিয়ালের যাত্রী ছিলেন। তাহলে টিকিট কেমন করে শেষ হয় আপনারা বলেন এম প্রশ্ন করছেন ?

লালমনি এক্সপ্রেসের যাত্রী আমিনুল হক বলেন, প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদুল ফিতরে ঈদ উদযাপন জন্য আমাদের কে তিন দফা যুদ্ধ করে বাড়ি আসতে হয়। আবার ৩ দফা যুদ্ধ করে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফিরতে হয়। যেমন ট্রেনের টিকিটের জন্য ঘন্টার ঘন্টার পর লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট নিতে হয়। আবার সেই ট্রেনে উঠতে গিয়ে আবার একবার যুদ্ধ করতে হয় এবং শেষ যুদ্ধ করতে হয় ট্রেন থেকে নামতে।

দুপচাঁচিয়া উপজেলার আরেক ট্রেন যাত্রী আলাল হোসেন বলেন, ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থল ঢাকায় যাবো। তিনি একটি ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছে। তিনি বলেন, আসার সময় ট্রেনে এত ভিড় ছিল যে তার নিধারিত আসনে যেতে পারেনি। টিকিট কেটেও ৬ ঘন্টার ট্রেনে দাঁড়িয়ে এসেছে। এবারও টিকিট কেটেছে তবে ট্রেনে যে পরিমান ভিড় দেখা যাচ্ছে তাতে করে কি ট্রেনে উঠতে পারবো কি না চিন্তায় আছে। আবার ছুটি শেষে নির্ধারিত সময়ে অফিসে পৌঁছাতে না পারায় চাকরি থাকবে কিনা তাও জানি না।

এ বিষয়ে সান্তাহার রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার রেজাউল করিম ডালিম বলেন, যে সব যাত্রীরা গ্রামে ঈদ করতে গিয়েছিল তারা আবার ঢাকায় ফিরছে।

তাই যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় এবং যাত্রীদের ট্রেনে ওঠার সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রতিটি স্টেশনে একটু বেশি সময় ট্রেন দাঁড়াচ্ছে। এতে কিছুটা দেরি করে ট্রেন আসছে এবং ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে।