আ’লীগ ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি

আগামী জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির অংশগ্রহণ জরুরি বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। এজন্য ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে নানা প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ‘ইভিএমে নির্বাচন হবে, নির্বাচন ফেয়ার হবে। বিএনপির সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোন বাধা থাকবে না।’

তবে বিএনপি বলছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দিলে, সে নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমাদের কথা পরিষ্কার, আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করলে, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে নির্বাচনের কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না।’

তবে বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএমে হবে। নির্বাচন ফেয়ার (নিরপেক্ষ) হবে।’ তাই ‘নিরপেক্ষ ভোট’ নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলামকে ‘দুশ্চিন্তা’ না করার পরমর্শ দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।

তবে বিএনপি মহাসচিবের জবাব, ‘ইভিএম তো পরে, ইলেকশনেই তো আমরা যাব না যদি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকেন।’

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল। বিএনপিবিহীন ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রশ্ন ছিল।

পরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। তবে নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ‘ব্যাপক ভোট জালিয়াতির’ অভিযোগ তোলে দলটি। এই পরিপ্রেক্ষিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ফের নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলেছে বিএনপি।

আর গত শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদে সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিকে আনার ব্যাপারে ‘আগ্রহ দেখিয়েছেন’ বলে জানান দলের সাধারণ সম্পাদক।

সভার বরাত দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী খোলা মনে বলেছেন, সব দল নির্বাচনে আসুক। সব দলকে নিয়েই আমরা ভোট করতে চাই। বিএনপিসহ সব দলকে নিয়ে ভোট করতে চাই। নির্বাচন ফেয়ার হবে নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’

তবে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ যে কথা বলে কোন দিন, কখনো তা তারা রাখে না। এটা হচ্ছে তাদের চরিত্র। তারা ভদ্রলোকের মতো কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে। তারা সভা-সমাবেশ তো দূরের কথা, একটা মিলাদ করতেও দেয় না, ঈদ পুনর্মিলনীতে আক্রমণ করে।’ আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যায় না বলেও মন্তব্য তার।

তাই বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ছাড়া বিএনপির নির্বাচনের যাওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না, মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি মনে করি, কোন কথাই হবে না যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে। পরবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের কথা পরিষ্কার, আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করলে, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে, নির্বাচনের কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না।’

‘তবে বিএনপি যাই বলুক, এবার নির্বাচনে আসবে। না হলে দলটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে’ বলে মনে করছেন ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা বলব তাদের নির্বাচনে আসতে। যদিও এটি বলা উচিত না। নির্বাচনে আসা তাদের অধিকার। এটা সুযোগের ব্যাপার না। তারা দেশের একটি বড় দল হিসেবে রাজনীতির আঙিনায় আছেন।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার মতে, বিএনপি এবারের নির্বাচনে না আসলে, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে নানা প্রশ্ন উঠবে। তাই বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে ক্ষমতাসীনদের প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে। তবে এজন্য ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ইস্যুতে আপোষ হবে না বলেও জানান তারা। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য বলেন, বিএনপিকে তো আর জোর করে নির্বাচনে আনা যাবে না। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও যথাসময়ে নির্বাচন হবে। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়িই হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেয়ার কোন সুযোগ নেই।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনে (নবম সংসদ নির্বাচন) জয়লাভের পর টানা তিন মেয়াদে ১৩ বছরের বেশি ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। আগামী ডিসেম্বরে বা জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সোমবার, ০৯ মে ২০২২ , ২৬ বৈশাখ ১৪২৮ ০৬ শাওয়াল ১৪৪৩

আ’লীগ ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি

ফয়েজ আহমেদ তুষার

আগামী জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির অংশগ্রহণ জরুরি বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। এজন্য ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে নানা প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ‘ইভিএমে নির্বাচন হবে, নির্বাচন ফেয়ার হবে। বিএনপির সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোন বাধা থাকবে না।’

তবে বিএনপি বলছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দিলে, সে নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমাদের কথা পরিষ্কার, আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করলে, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে নির্বাচনের কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না।’

তবে বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএমে হবে। নির্বাচন ফেয়ার (নিরপেক্ষ) হবে।’ তাই ‘নিরপেক্ষ ভোট’ নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলামকে ‘দুশ্চিন্তা’ না করার পরমর্শ দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।

তবে বিএনপি মহাসচিবের জবাব, ‘ইভিএম তো পরে, ইলেকশনেই তো আমরা যাব না যদি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকেন।’

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল। বিএনপিবিহীন ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রশ্ন ছিল।

পরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। তবে নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ‘ব্যাপক ভোট জালিয়াতির’ অভিযোগ তোলে দলটি। এই পরিপ্রেক্ষিতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ফের নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলেছে বিএনপি।

আর গত শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদে সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিকে আনার ব্যাপারে ‘আগ্রহ দেখিয়েছেন’ বলে জানান দলের সাধারণ সম্পাদক।

সভার বরাত দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী খোলা মনে বলেছেন, সব দল নির্বাচনে আসুক। সব দলকে নিয়েই আমরা ভোট করতে চাই। বিএনপিসহ সব দলকে নিয়ে ভোট করতে চাই। নির্বাচন ফেয়ার হবে নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’

তবে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ যে কথা বলে কোন দিন, কখনো তা তারা রাখে না। এটা হচ্ছে তাদের চরিত্র। তারা ভদ্রলোকের মতো কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে। তারা সভা-সমাবেশ তো দূরের কথা, একটা মিলাদ করতেও দেয় না, ঈদ পুনর্মিলনীতে আক্রমণ করে।’ আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যায় না বলেও মন্তব্য তার।

তাই বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ছাড়া বিএনপির নির্বাচনের যাওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না, মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি মনে করি, কোন কথাই হবে না যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে। পরবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের কথা পরিষ্কার, আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করলে, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে, নির্বাচনের কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না।’

‘তবে বিএনপি যাই বলুক, এবার নির্বাচনে আসবে। না হলে দলটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে’ বলে মনে করছেন ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা বলব তাদের নির্বাচনে আসতে। যদিও এটি বলা উচিত না। নির্বাচনে আসা তাদের অধিকার। এটা সুযোগের ব্যাপার না। তারা দেশের একটি বড় দল হিসেবে রাজনীতির আঙিনায় আছেন।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার মতে, বিএনপি এবারের নির্বাচনে না আসলে, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে নানা প্রশ্ন উঠবে। তাই বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে ক্ষমতাসীনদের প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে। তবে এজন্য ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ইস্যুতে আপোষ হবে না বলেও জানান তারা। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য বলেন, বিএনপিকে তো আর জোর করে নির্বাচনে আনা যাবে না। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও যথাসময়ে নির্বাচন হবে। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়িই হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেয়ার কোন সুযোগ নেই।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনে (নবম সংসদ নির্বাচন) জয়লাভের পর টানা তিন মেয়াদে ১৩ বছরের বেশি ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। আগামী ডিসেম্বরে বা জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।