জীবন এখানে এত সস্তা!

মোহাম্মদ আবু নোমান

আহ্ মানবতা! আহ্ সমাজ! আহ্ আমাদের শিক্ষা! আহ্ আমাদের ঘুমন্ত বিবেক! কোন শিক্ষার্থী একজন মানুষকে এভাবে কোপাতে পারে, তা কল্পনা করা যায় কী? জীবন এখানে এত সস্তা? ইটের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়া দুই তরুণকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা! তুচ্ছ বিষয়ে এমন করে তরুণদের জীবনহানি মেনে নেয়া যায় কী? কোন কারণ ছাড়াই ঘটে যাবে বড় সংঘাত, সংঘর্ষ, রাস্তা হবে রণক্ষেত্র, মারা যাবে মানুষ! গত ১৮ এপ্রিল ও পরদিন ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার মঞ্চায়ন হয়ে গেল ঢাকার নিউমার্কেটে। রড ও ধারালো অস্ত্রের নিচে নিহত নাহিদ ও মুরসালিনের ছবিটা কীভাবে দেখছে সংসারের একমাত্র নির্ভরশীল তাদের প্রিয় স্ত্রী-সন্তান, মমতাময়ী মা-বাবা, ভাইবোন?

আমারা এক অসহনশীল, পারস্পরিক অবিশ্বাস, নিষ্ঠুর ও ভেঙে পড়া সমাজে বসবাস করছি। যার প্রমাণ ওই দিন নিউমার্কেটে দিনের আলোয় প্রকাশ্যে সাপের মতো পিটিয়ে মানুষ হত্যা! শুধুই তা-ই নয়, মরার পরও একটি মানুষকে পেটানো হচ্ছে! নাহিদকে মারার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। গা শিউরে ওঠা ওই ভিডিওতে দেখা যায়, নিহত নাহিদকে লাঠি দিয়ে বারবার আঘাত করা হচ্ছে।

কোন রাজনৈতিক দল বা ছাত্র সংগঠনে জড়িত না থাকলে এই ধরনের মারামারি বা কাউকে মেরে ফেলা অসম্ভব। মারামারিতে দলহীন কেউ এভাবে প্রকাশ্যে রাজপথে কাউকে কোপাতে পারে না। যে রাজনীতি শুধু হিংস্রতার লালন ও বিকাশ ঘটাচ্ছে। হেলমেট বাহিনীর জন্ম দিচ্ছে। কচি শিক্ষার্থীদের অমানুষ, বিবেকহীন খুনি বানাচ্ছে। অবিলম্বে এই ছাত্র রাজনীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। তরুণদের মধ্যে এই সর্বনাশা হিতাহিত বোধশূন্যতা, বিভাজন-ঘৃণা আর নৃশংসতার যে সংস্কৃতি দানা বেঁধেছে, তারই কারণ কী? যে ছাত্ররা বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে একসময় পথ দেখিয়েছে, তাদেরই একদল উত্তরসূরি দুই দোকানকর্মীর মধ্যেকার ঝগড়ায় ভাড়াটে হিসেবে গেছে মাস্তানি করতে। এর থেকে নৈতিক পচন, সর্বনাশা অধঃপতন আর কী হতে পারে?

কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারিম্যান নাহিদ হোসেন তার পেশার কাজে গিয়েছিলেন নিউমার্কেট এলাকায়। মাত্র সাত মাস আগে বিয়ে করেছেন। নাহিদের ১৮ বছর বয়সের স্ত্রী, সদ্য-বিধবা, স্বামী নাহিদের ছবি দেখিয়ে বিলাপ করতে দেখা গেছে। নাহিদ হোসেনের মা কাঁদছেন, বাবা কাঁদছেন। তার দুটো ছোট ভাই আছে, তারা কাঁদছে। নিহত নাহিদের স্ত্রী ডালিয়ার হাতে দেখা গেছে মেহেদি দিয়ে লেখা, ‘আই লাভ ইউ নাহিদ’। নাহিদ হোসেন ছাড়াও নিহত ২৫ বছর বয়সের দোকান কর্মচারী মুরসালিন। তিনিও থাকতেন কামরাঙ্গীরচরে। স্ত্রী মিতু, তার দুটো শিশুসন্তান আছে। ওই দুই শিশু বাবাহারা হলো, মিতু স্বামীহারা হলেন।

নিহত নাহিদ বা মুরসালিনের রাজনৈতিক কোন পরিচয় ছিল না। তার মানে খুনিরা ছাত্রলীগ হলেও তাদের এই জিঘাংসা রাজনৈতিক চরিতার্থের উদ্দেশ্যে ছিল না। ছিল চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব।

নিউমার্কেটসহ আশপাশের বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীদের দাবি, ঢাকা কলেজের ছাত্র পরিচয়ে রেস্তোরাঁয় খেয়ে টাকা কম দেয়া, কাপড়-বই ইত্যাদি কিনে টাকা কম দেয়া এবং কখনো কখনো টাকা না দেয়ার ঘটনা ঘটে। এসব নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরেই মূলত তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সংঘাত বাধে। অনেক সময় ছাত্রদের একটা অংশ কিছু ব্যবসায়ীর পক্ষে মার্কেটে গিয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে বলে কারও কারও অভিযোগ। ব্যবসায়ীদের একটা অংশের ভাষ্য, ঈদের মতো বড় উৎসবের আগে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এককালীন মোটা অঙ্কের চাঁদা চান রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ছাত্ররা। এসব নিয়েও সংঘাতের সূত্রপাত হয়।

অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা ও তাদের কর্মচারীরা প্রায়ই দুর্ব্যবহার করেন। পণ্যের অতিরিক্ত দাম চান। বিশেষ করে নারীদের সঙ্গে তারা অশোভন আচরণ করেন। প্রতিবাদ করতে গেলেই তারা মারমুখী হন। নিউমার্কেট এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন বিপণিবিতানের নিরাপত্তাকর্মীরা গণমাধ্যমকে বলেন, নীলক্ষেত থেকে সায়েন্স ল্যাব পর্যন্ত ফুটপাতের জায়গা অনেক দিন ধরে কতিপয় ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে। তারা আবার তা অন্যদের কাছে ‘ভাড়া’ দেন। দোকানভেদে মাসিক ১০-১৫ হাজার বা এর বেশি টাকায় ফুটপাতের জায়গা ভাড়া দেয়া হয়। এই অর্থের একটি অংশ পুলিশ, আরেকটি অংশ নিয়ন্ত্রকদের পকেটে যায়। যেসব দোকানের জায়গা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে, সেগুলোতে পুলিশের ‘লাইনম্যান’দেরও নিয়মিত অর্থ দিতে হয়। অর্থ না দিলে দোকান তুলে দেয়া হয়। ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতা ফুটপাতের দখল ধরে রাখতে ছাত্রলীগের বর্তমান নেতাকর্মীদের ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

আমরা বলতে চাই, নিউমার্কেটে যখন প্রথম দিন বিকালে সংঘর্ষ হলো, এরপর তো দ্বিতীয় দিন সকাল থেকেই পুলিশ আর বিজিবি দিয়ে জায়গাটা ভরিয়ে ফেলার কথা ছিল, যাতে কেউ নাশকতা করলেই তাকে আইনের আওতায় আনা যায়! অথচ, পুলিশ সুযোগ দিয়েছে দাঙ্গা বাধানোর। এটা সম্পূর্ণভাবেই পুলিশ বাহিনীর ব্যর্থতা। একটা দেশের রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নিল, তার ফলস্বরূপ লাখ লাখ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হলো, আর বসে বসে যেন তামাশা উপভোগ করল সরকার, পুলিশ বা প্রশাসন।

সংঘর্ষের সময় হেলমেট পরা এক গোষ্ঠীকে তৎপর দেখা গেছে। তারা কারা? তদন্ত করে দেখতে হবে পুলিশ কেন যথাসময়ে তৎপর হলো না, সংঘাত থামানোর কার্যকর উদ্যোগ নিল না।

আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার অধিকার কারও নেই। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে যারা ভাঙচুর করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। পুলিশ সময়মতো হস্তক্ষেপ করলে হয়তো নাহিদ ও মুরসালিনকে এভাবে জীবন দিতে হতো না। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দিনদুপুরে দুই পক্ষ দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষ লিপ্ত হলো আর পুলিশ নির্বাক দর্শকের ভূমিকা পালন করল? গণমাধ্যমে দেখা গেছে, হেলমেটধারী এক ব্যক্তি আঘাতে ফুটপাতে লুটিয়ে পড়া কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেনকে দেশি অস্ত্র দিয়ে কোপাচ্ছেন। তার পেছনে আরও ছয় হেলমেটধারী দাঁড়িয়ে আছেন। পুলিশ তাৎক্ষণিক তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা না করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা সেই ষড়যন্ত্র তত্ত্বকেই সামনে এনেছে, যা সব সময় ক্ষমতাসীনেরা করে থাকে।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদী হতে পারে, কিন্তু নিষ্ঠুর হতে পারে না। তাদের সাহসী হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন, কিন্তু বিবেকহীন হওয়া অনুচিত।

[লেখক : সাংবাদিক]

সোমবার, ০৯ মে ২০২২ , ২৬ বৈশাখ ১৪২৮ ০৬ শাওয়াল ১৪৪৩

জীবন এখানে এত সস্তা!

মোহাম্মদ আবু নোমান

image

আহ্ মানবতা! আহ্ সমাজ! আহ্ আমাদের শিক্ষা! আহ্ আমাদের ঘুমন্ত বিবেক! কোন শিক্ষার্থী একজন মানুষকে এভাবে কোপাতে পারে, তা কল্পনা করা যায় কী? জীবন এখানে এত সস্তা? ইটের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়া দুই তরুণকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা! তুচ্ছ বিষয়ে এমন করে তরুণদের জীবনহানি মেনে নেয়া যায় কী? কোন কারণ ছাড়াই ঘটে যাবে বড় সংঘাত, সংঘর্ষ, রাস্তা হবে রণক্ষেত্র, মারা যাবে মানুষ! গত ১৮ এপ্রিল ও পরদিন ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার মঞ্চায়ন হয়ে গেল ঢাকার নিউমার্কেটে। রড ও ধারালো অস্ত্রের নিচে নিহত নাহিদ ও মুরসালিনের ছবিটা কীভাবে দেখছে সংসারের একমাত্র নির্ভরশীল তাদের প্রিয় স্ত্রী-সন্তান, মমতাময়ী মা-বাবা, ভাইবোন?

আমারা এক অসহনশীল, পারস্পরিক অবিশ্বাস, নিষ্ঠুর ও ভেঙে পড়া সমাজে বসবাস করছি। যার প্রমাণ ওই দিন নিউমার্কেটে দিনের আলোয় প্রকাশ্যে সাপের মতো পিটিয়ে মানুষ হত্যা! শুধুই তা-ই নয়, মরার পরও একটি মানুষকে পেটানো হচ্ছে! নাহিদকে মারার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। গা শিউরে ওঠা ওই ভিডিওতে দেখা যায়, নিহত নাহিদকে লাঠি দিয়ে বারবার আঘাত করা হচ্ছে।

কোন রাজনৈতিক দল বা ছাত্র সংগঠনে জড়িত না থাকলে এই ধরনের মারামারি বা কাউকে মেরে ফেলা অসম্ভব। মারামারিতে দলহীন কেউ এভাবে প্রকাশ্যে রাজপথে কাউকে কোপাতে পারে না। যে রাজনীতি শুধু হিংস্রতার লালন ও বিকাশ ঘটাচ্ছে। হেলমেট বাহিনীর জন্ম দিচ্ছে। কচি শিক্ষার্থীদের অমানুষ, বিবেকহীন খুনি বানাচ্ছে। অবিলম্বে এই ছাত্র রাজনীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। তরুণদের মধ্যে এই সর্বনাশা হিতাহিত বোধশূন্যতা, বিভাজন-ঘৃণা আর নৃশংসতার যে সংস্কৃতি দানা বেঁধেছে, তারই কারণ কী? যে ছাত্ররা বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে একসময় পথ দেখিয়েছে, তাদেরই একদল উত্তরসূরি দুই দোকানকর্মীর মধ্যেকার ঝগড়ায় ভাড়াটে হিসেবে গেছে মাস্তানি করতে। এর থেকে নৈতিক পচন, সর্বনাশা অধঃপতন আর কী হতে পারে?

কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারিম্যান নাহিদ হোসেন তার পেশার কাজে গিয়েছিলেন নিউমার্কেট এলাকায়। মাত্র সাত মাস আগে বিয়ে করেছেন। নাহিদের ১৮ বছর বয়সের স্ত্রী, সদ্য-বিধবা, স্বামী নাহিদের ছবি দেখিয়ে বিলাপ করতে দেখা গেছে। নাহিদ হোসেনের মা কাঁদছেন, বাবা কাঁদছেন। তার দুটো ছোট ভাই আছে, তারা কাঁদছে। নিহত নাহিদের স্ত্রী ডালিয়ার হাতে দেখা গেছে মেহেদি দিয়ে লেখা, ‘আই লাভ ইউ নাহিদ’। নাহিদ হোসেন ছাড়াও নিহত ২৫ বছর বয়সের দোকান কর্মচারী মুরসালিন। তিনিও থাকতেন কামরাঙ্গীরচরে। স্ত্রী মিতু, তার দুটো শিশুসন্তান আছে। ওই দুই শিশু বাবাহারা হলো, মিতু স্বামীহারা হলেন।

নিহত নাহিদ বা মুরসালিনের রাজনৈতিক কোন পরিচয় ছিল না। তার মানে খুনিরা ছাত্রলীগ হলেও তাদের এই জিঘাংসা রাজনৈতিক চরিতার্থের উদ্দেশ্যে ছিল না। ছিল চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব।

নিউমার্কেটসহ আশপাশের বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীদের দাবি, ঢাকা কলেজের ছাত্র পরিচয়ে রেস্তোরাঁয় খেয়ে টাকা কম দেয়া, কাপড়-বই ইত্যাদি কিনে টাকা কম দেয়া এবং কখনো কখনো টাকা না দেয়ার ঘটনা ঘটে। এসব নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরেই মূলত তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সংঘাত বাধে। অনেক সময় ছাত্রদের একটা অংশ কিছু ব্যবসায়ীর পক্ষে মার্কেটে গিয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে বলে কারও কারও অভিযোগ। ব্যবসায়ীদের একটা অংশের ভাষ্য, ঈদের মতো বড় উৎসবের আগে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এককালীন মোটা অঙ্কের চাঁদা চান রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ছাত্ররা। এসব নিয়েও সংঘাতের সূত্রপাত হয়।

অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা ও তাদের কর্মচারীরা প্রায়ই দুর্ব্যবহার করেন। পণ্যের অতিরিক্ত দাম চান। বিশেষ করে নারীদের সঙ্গে তারা অশোভন আচরণ করেন। প্রতিবাদ করতে গেলেই তারা মারমুখী হন। নিউমার্কেট এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন বিপণিবিতানের নিরাপত্তাকর্মীরা গণমাধ্যমকে বলেন, নীলক্ষেত থেকে সায়েন্স ল্যাব পর্যন্ত ফুটপাতের জায়গা অনেক দিন ধরে কতিপয় ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে। তারা আবার তা অন্যদের কাছে ‘ভাড়া’ দেন। দোকানভেদে মাসিক ১০-১৫ হাজার বা এর বেশি টাকায় ফুটপাতের জায়গা ভাড়া দেয়া হয়। এই অর্থের একটি অংশ পুলিশ, আরেকটি অংশ নিয়ন্ত্রকদের পকেটে যায়। যেসব দোকানের জায়গা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে, সেগুলোতে পুলিশের ‘লাইনম্যান’দেরও নিয়মিত অর্থ দিতে হয়। অর্থ না দিলে দোকান তুলে দেয়া হয়। ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতা ফুটপাতের দখল ধরে রাখতে ছাত্রলীগের বর্তমান নেতাকর্মীদের ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

আমরা বলতে চাই, নিউমার্কেটে যখন প্রথম দিন বিকালে সংঘর্ষ হলো, এরপর তো দ্বিতীয় দিন সকাল থেকেই পুলিশ আর বিজিবি দিয়ে জায়গাটা ভরিয়ে ফেলার কথা ছিল, যাতে কেউ নাশকতা করলেই তাকে আইনের আওতায় আনা যায়! অথচ, পুলিশ সুযোগ দিয়েছে দাঙ্গা বাধানোর। এটা সম্পূর্ণভাবেই পুলিশ বাহিনীর ব্যর্থতা। একটা দেশের রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নিল, তার ফলস্বরূপ লাখ লাখ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হলো, আর বসে বসে যেন তামাশা উপভোগ করল সরকার, পুলিশ বা প্রশাসন।

সংঘর্ষের সময় হেলমেট পরা এক গোষ্ঠীকে তৎপর দেখা গেছে। তারা কারা? তদন্ত করে দেখতে হবে পুলিশ কেন যথাসময়ে তৎপর হলো না, সংঘাত থামানোর কার্যকর উদ্যোগ নিল না।

আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার অধিকার কারও নেই। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে যারা ভাঙচুর করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। পুলিশ সময়মতো হস্তক্ষেপ করলে হয়তো নাহিদ ও মুরসালিনকে এভাবে জীবন দিতে হতো না। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দিনদুপুরে দুই পক্ষ দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষ লিপ্ত হলো আর পুলিশ নির্বাক দর্শকের ভূমিকা পালন করল? গণমাধ্যমে দেখা গেছে, হেলমেটধারী এক ব্যক্তি আঘাতে ফুটপাতে লুটিয়ে পড়া কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেনকে দেশি অস্ত্র দিয়ে কোপাচ্ছেন। তার পেছনে আরও ছয় হেলমেটধারী দাঁড়িয়ে আছেন। পুলিশ তাৎক্ষণিক তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা না করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা সেই ষড়যন্ত্র তত্ত্বকেই সামনে এনেছে, যা সব সময় ক্ষমতাসীনেরা করে থাকে।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদী হতে পারে, কিন্তু নিষ্ঠুর হতে পারে না। তাদের সাহসী হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন, কিন্তু বিবেকহীন হওয়া অনুচিত।

[লেখক : সাংবাদিক]