জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান কেন কমছে

এস এম জাহাঙ্গীর আলম

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে ইতোমধ্যে দানাদার ফসলের উৎপাদন সাড়ে ৪ কোটি টন ছাড়িয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৪ কোটি ৭০ লাখ টন প্রায়। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ধান, গম ও ভুট্টাসহ দানাদার ফসলের উৎপাদন ছিল ৪ কোটি ৫৫ লাখ টন। এছাড়া কন্দাল ফসলের (আলু, শাকসবজি, পাট ইত্যাদি) উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৯৭ লাখ টনের বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ চাহিদার চেয়ে চালের উৎপাদন বেশি হচ্ছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে চালের উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৮৬ লাখ টন, গম ১২ লাখ এবং ভুট্টা ৫৭ লাখ টন। অপরদিকে শাকসবজি, মসলা, তেল জাতীয় পণ্যের উৎপাদনও বাড়ছে। গত অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৬ লাখ টন, শাকসবজি ১ কোটি ৯৭ লাখ টন, তেলজাতীয় ফসল ১২ লাখ টন ও ডাল ৯ লাখ টন। এ ছাড়া ডাল ১১ লাখ ২০ হাজার, তেলবীজ সাড়ে ১০ লাখ টন, পেঁয়াজ ২৩ লাখ, রসুন ৬ লাখ, ধনিয়া ৭ হাজার, আড়া ২ লাখ ৫০ হাজার ও হলুদ ১ লাখ ৫০ হাজার টন উৎপাদন হয়। মোট মসলাজাতীয় পণ্যে উৎপাদন ছিল ৩৫ লাখ টন। অভ্যন্তরীণ চাহিদার চেয়ে চালের উৎপাদন বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) থেকে জানা যায়, মাথাপিছু বার্ষিক চালের (দানাদার) চাহিদা ১৫২ কেজি। এতে করে ১৬ কোটি ৬৪ লাখ জনসংখ্যার জন্য বার্ষিক চাহিদা ২ কোটি ৫৩ লাখ টন। যদি জনসংখ্যা ১৭ কোটি হয়, তাহলে বার্ষিক চাহিদা দাঁড়ায় প্রায় ৩ কোটি টন। অর্থাৎ বর্তমানে চাহিদার চেয়ে খাদ্যের উৎপাদন বেশি।

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে এখাতে স্থির মূল্যে জিডিপির অবদান গত অর্থবছরে ছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। বিবিএসের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশে খানা পরিবারের সংখ্যা ২ কোটি ৮৬ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬৩টি। কৃষি পরিবার ১ কোটি ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ১৮৩টি। মোট ফসলি জমির পরিমাণ ১ কোটি ৫৪ লাখ ৩৮ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ যোগ্য জমির পরিমাণ ৮৫ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর। সেচের আওয়তায় ৭৪ লাখ ৪৮ হাজার হেক্টর, পতিত ২ লাখ ২৩ হাজার, এক ফসলি জমি ২২ লাখ ৫৩ হাজার, ২ ফসলি জমি ৩৯ লাখ ১৪ হাজার ও ৩ ফসলি জমির পরিমাণ ১৭ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর।

কৃষিতে সরকার মোটা অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এখাতে ভর্তুকি রাখা হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা, এর আগের অর্থবছরেও সমপরিমাণ ভর্তুকি রাখা হয়েছিল। জ্বালানি ও সারে বেশির ভাগ ভর্তুকি যাচ্ছে। বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ইউরিয়া সারের চাহিদা ২৮ লাখ টনের বেশি। এর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ টন তারা উৎপাদন করতে পারছে, বাকিটা আমদানি করতে হচ্ছে। বেশি দামে সার আমদানি করে কম দামে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। প্রতি কেজি ইউরিয়া কৃষকদের মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে ১৪ টাকা কেজি।

এদিকে জিডিপিতে কৃষির অবদান কমতে শুরু করেছে। গত একদশকে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী একদশক আগেও কৃষিতে জিডিপির অবদান বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু তা ক্রমেই কমে আসছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে কৃষিতে জিডিপির অবদান ছিল ১৮ দশমিক ১ শতাংশ, যা গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে এসে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে (২০২০-২১) অর্থবছরে আরও কমে এসে দাঁড়ায় প্রায় ১২ শতাংশে।

সরকার কৃষিতে মোটা অঙ্কের ভতুর্কি দিচ্ছে ঠিকই, তবে এ খাতকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল নিশ্চিত করতে হবে, মাঠপর্যায়ে যাতে কৃষিক সরাসরি ভতুর্কির সুফল পায় তাও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি রক্ষা করতে হবে কৃষিজমি।

[লেখক : সাবেক করকমিশনার]

সোমবার, ০৯ মে ২০২২ , ২৬ বৈশাখ ১৪২৮ ০৬ শাওয়াল ১৪৪৩

জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান কেন কমছে

এস এম জাহাঙ্গীর আলম

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে ইতোমধ্যে দানাদার ফসলের উৎপাদন সাড়ে ৪ কোটি টন ছাড়িয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৪ কোটি ৭০ লাখ টন প্রায়। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ধান, গম ও ভুট্টাসহ দানাদার ফসলের উৎপাদন ছিল ৪ কোটি ৫৫ লাখ টন। এছাড়া কন্দাল ফসলের (আলু, শাকসবজি, পাট ইত্যাদি) উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৯৭ লাখ টনের বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ চাহিদার চেয়ে চালের উৎপাদন বেশি হচ্ছে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে চালের উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৮৬ লাখ টন, গম ১২ লাখ এবং ভুট্টা ৫৭ লাখ টন। অপরদিকে শাকসবজি, মসলা, তেল জাতীয় পণ্যের উৎপাদনও বাড়ছে। গত অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৬ লাখ টন, শাকসবজি ১ কোটি ৯৭ লাখ টন, তেলজাতীয় ফসল ১২ লাখ টন ও ডাল ৯ লাখ টন। এ ছাড়া ডাল ১১ লাখ ২০ হাজার, তেলবীজ সাড়ে ১০ লাখ টন, পেঁয়াজ ২৩ লাখ, রসুন ৬ লাখ, ধনিয়া ৭ হাজার, আড়া ২ লাখ ৫০ হাজার ও হলুদ ১ লাখ ৫০ হাজার টন উৎপাদন হয়। মোট মসলাজাতীয় পণ্যে উৎপাদন ছিল ৩৫ লাখ টন। অভ্যন্তরীণ চাহিদার চেয়ে চালের উৎপাদন বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) থেকে জানা যায়, মাথাপিছু বার্ষিক চালের (দানাদার) চাহিদা ১৫২ কেজি। এতে করে ১৬ কোটি ৬৪ লাখ জনসংখ্যার জন্য বার্ষিক চাহিদা ২ কোটি ৫৩ লাখ টন। যদি জনসংখ্যা ১৭ কোটি হয়, তাহলে বার্ষিক চাহিদা দাঁড়ায় প্রায় ৩ কোটি টন। অর্থাৎ বর্তমানে চাহিদার চেয়ে খাদ্যের উৎপাদন বেশি।

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে এখাতে স্থির মূল্যে জিডিপির অবদান গত অর্থবছরে ছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। বিবিএসের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশে খানা পরিবারের সংখ্যা ২ কোটি ৮৬ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬৩টি। কৃষি পরিবার ১ কোটি ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ১৮৩টি। মোট ফসলি জমির পরিমাণ ১ কোটি ৫৪ লাখ ৩৮ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ যোগ্য জমির পরিমাণ ৮৫ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর। সেচের আওয়তায় ৭৪ লাখ ৪৮ হাজার হেক্টর, পতিত ২ লাখ ২৩ হাজার, এক ফসলি জমি ২২ লাখ ৫৩ হাজার, ২ ফসলি জমি ৩৯ লাখ ১৪ হাজার ও ৩ ফসলি জমির পরিমাণ ১৭ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর।

কৃষিতে সরকার মোটা অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এখাতে ভর্তুকি রাখা হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা, এর আগের অর্থবছরেও সমপরিমাণ ভর্তুকি রাখা হয়েছিল। জ্বালানি ও সারে বেশির ভাগ ভর্তুকি যাচ্ছে। বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ইউরিয়া সারের চাহিদা ২৮ লাখ টনের বেশি। এর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ টন তারা উৎপাদন করতে পারছে, বাকিটা আমদানি করতে হচ্ছে। বেশি দামে সার আমদানি করে কম দামে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। প্রতি কেজি ইউরিয়া কৃষকদের মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে ১৪ টাকা কেজি।

এদিকে জিডিপিতে কৃষির অবদান কমতে শুরু করেছে। গত একদশকে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী একদশক আগেও কৃষিতে জিডিপির অবদান বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু তা ক্রমেই কমে আসছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে কৃষিতে জিডিপির অবদান ছিল ১৮ দশমিক ১ শতাংশ, যা গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে এসে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে (২০২০-২১) অর্থবছরে আরও কমে এসে দাঁড়ায় প্রায় ১২ শতাংশে।

সরকার কৃষিতে মোটা অঙ্কের ভতুর্কি দিচ্ছে ঠিকই, তবে এ খাতকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল নিশ্চিত করতে হবে, মাঠপর্যায়ে যাতে কৃষিক সরাসরি ভতুর্কির সুফল পায় তাও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি রক্ষা করতে হবে কৃষিজমি।

[লেখক : সাবেক করকমিশনার]