শেয়ার কিনছেন বিনিয়োগকারীরা

বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা ও তারল্য সংকটে থেমে থেমে দর পতন চলছিল পুঁজিবাজারে। লেনদেনও নেমেছিল তলানিতে। কিন্তু ঈদের পরের তৃতীয় কার্যদিবস থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। আবারও শেয়ার কিনছেন বিনিয়োগকারীরা। এরই ধারাবাহিকতায় বাজার মূলধন, লেনদেন ও সূচক ঊর্ধ্বমূখী।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পুঁজিবাজারে বিগত ৫ মাসের ধারাবাহিক দর পতনের নেপথ্যে উল্লেখযোগ্য কোন কারণ নাই। তবে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তা দর পতনে দীর্ঘায়িত্ব হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে লোকসান থাকায় নতুন বিনিয়োগ আসেনি। কিন্তু ঈদের পর থেকে বাজারে ছন্দ ফিরছে। ধারণা করা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগে ফিরছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, রমজান মাসে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও ওই সময় বাজারের লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমে যায়। ঈদের পরের প্রথম কার্যদিবসে, ৫ মে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন ৪৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকায় স্থিতি পেলেও দ্বিতীয় কার্যদিবসে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা অতিক্রম করে।

এদিকে গতকাল ডিএসইর সার্বিক লেনদেন ১ হাজার ২০৮ কোটি টাকা অতিক্রম করে। যা দুই মাস ২৩ দিন বা ৫০ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি আজকের চেয়ে বেশি অর্থাৎ ওই দিন এক হাজার ২১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৮.৬৬ পয়েন্ট বা ০.৪২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৯৮.০৮ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৬.৭১ পয়েন্ট বা ০.৪৬ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ০.১৪ পয়েন্ট বা ০.০০৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪৫৪.১৩ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৪৪৯.৩৯ পয়েন্টে।

ডিএসইতে এদিন ৩৮০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪২টির বা ৬৩.৬৮ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ৭৭টির বা ২০.২৬ শতাংশের এবং ৬১টির বা ১৬.০৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ সিংহভাগ কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার-ইউনিট কিনেছে বিনিয়োগকারীরা।

বিনিয়োগকারীদের ক্রয় প্রবণতায় একদিনের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৩৫১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ৮ মে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। গতকাল দিন শেষে বাজার মূলধন ৫ লাখ ৪০ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে যারা: এদিন ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল এসিআই ফর্মূলেশন। দিনশেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৬.৯০ টাকা বা ৯.৯৯ শতাংশ বেড়েছে গেইনার তালিকায় শীর্ষে ওঠে। টপটেন গেইনার তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্সের ৯.৯৭ শতাংশ, শাইনপুকুর সিরামিকের ৯.৯৪ শতাংশ, ন্যাশনাল ফিড মিলসের ৯.৯৩ শতাংশ, ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ৯.৯৩ শতাংশ, সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের ৯.০৫ শতাংশ, এপেক্স ট্যানারির ৮.২০ শতাংশ, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ৬.৯৪ শতাংশ, বিডি থাইয়ের ৬.৭৪ শতাংশ এবং এডিএন টেলিকমের শেয়ার দর ৬.২৭ শতাংশ বেড়েছে।

দর পতনের শীর্ষে যারা: দিন শেষে দর পতনের শীর্ষে নেমেছিল ইমাম বাটন। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর ২.৯০ টাকা বা ৪.৯২ শতাংশ কমেছে। টপটেন লুজার তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ৪.৫৪ শতাংশ, পূবালী ব্যাংকের ৩.৯৭ শতাংশ, জেনেক্সের ৩.৪৯ শতাংশ, কপারটেকের ৩.৪৬ শতাংশ, নাহি অ্যালুমিনিয়ামের ৩.২৪ শতাংশ, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের ৩.২২ শতাংশ, আইপিডিসির ২.৯৩ শতাংশ, লাভেলোর ২.৬৩ শতাংশ এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের শেয়ার দর ২.৩৫ শতাংশ কমেছে।

অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৬৩৯ পয়েন্টে। দিন শেষে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ১৭৮টির, কমেছে ৯২টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টির। এতে ৩১ কোটি ৯৪ লাখ ১৬ হাজার ৭০২ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩১ কোটি ৭৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫৪৯ টাকার শেয়ার।

মঙ্গলবার, ১০ মে ২০২২ , ২৭ বৈশাখ ১৪২৮ ০৭ শাওয়াল ১৪৪৩

শেয়ার কিনছেন বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা ও তারল্য সংকটে থেমে থেমে দর পতন চলছিল পুঁজিবাজারে। লেনদেনও নেমেছিল তলানিতে। কিন্তু ঈদের পরের তৃতীয় কার্যদিবস থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। আবারও শেয়ার কিনছেন বিনিয়োগকারীরা। এরই ধারাবাহিকতায় বাজার মূলধন, লেনদেন ও সূচক ঊর্ধ্বমূখী।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পুঁজিবাজারে বিগত ৫ মাসের ধারাবাহিক দর পতনের নেপথ্যে উল্লেখযোগ্য কোন কারণ নাই। তবে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তা দর পতনে দীর্ঘায়িত্ব হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে লোকসান থাকায় নতুন বিনিয়োগ আসেনি। কিন্তু ঈদের পর থেকে বাজারে ছন্দ ফিরছে। ধারণা করা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগে ফিরছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, রমজান মাসে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও ওই সময় বাজারের লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমে যায়। ঈদের পরের প্রথম কার্যদিবসে, ৫ মে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন ৪৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকায় স্থিতি পেলেও দ্বিতীয় কার্যদিবসে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা অতিক্রম করে।

এদিকে গতকাল ডিএসইর সার্বিক লেনদেন ১ হাজার ২০৮ কোটি টাকা অতিক্রম করে। যা দুই মাস ২৩ দিন বা ৫০ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি আজকের চেয়ে বেশি অর্থাৎ ওই দিন এক হাজার ২১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৮.৬৬ পয়েন্ট বা ০.৪২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৯৮.০৮ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৬.৭১ পয়েন্ট বা ০.৪৬ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ০.১৪ পয়েন্ট বা ০.০০৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪৫৪.১৩ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৪৪৯.৩৯ পয়েন্টে।

ডিএসইতে এদিন ৩৮০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪২টির বা ৬৩.৬৮ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ৭৭টির বা ২০.২৬ শতাংশের এবং ৬১টির বা ১৬.০৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ সিংহভাগ কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার-ইউনিট কিনেছে বিনিয়োগকারীরা।

বিনিয়োগকারীদের ক্রয় প্রবণতায় একদিনের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৩৫১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ৮ মে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। গতকাল দিন শেষে বাজার মূলধন ৫ লাখ ৪০ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে যারা: এদিন ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল এসিআই ফর্মূলেশন। দিনশেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৬.৯০ টাকা বা ৯.৯৯ শতাংশ বেড়েছে গেইনার তালিকায় শীর্ষে ওঠে। টপটেন গেইনার তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্সের ৯.৯৭ শতাংশ, শাইনপুকুর সিরামিকের ৯.৯৪ শতাংশ, ন্যাশনাল ফিড মিলসের ৯.৯৩ শতাংশ, ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ৯.৯৩ শতাংশ, সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের ৯.০৫ শতাংশ, এপেক্স ট্যানারির ৮.২০ শতাংশ, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ৬.৯৪ শতাংশ, বিডি থাইয়ের ৬.৭৪ শতাংশ এবং এডিএন টেলিকমের শেয়ার দর ৬.২৭ শতাংশ বেড়েছে।

দর পতনের শীর্ষে যারা: দিন শেষে দর পতনের শীর্ষে নেমেছিল ইমাম বাটন। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর ২.৯০ টাকা বা ৪.৯২ শতাংশ কমেছে। টপটেন লুজার তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ৪.৫৪ শতাংশ, পূবালী ব্যাংকের ৩.৯৭ শতাংশ, জেনেক্সের ৩.৪৯ শতাংশ, কপারটেকের ৩.৪৬ শতাংশ, নাহি অ্যালুমিনিয়ামের ৩.২৪ শতাংশ, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের ৩.২২ শতাংশ, আইপিডিসির ২.৯৩ শতাংশ, লাভেলোর ২.৬৩ শতাংশ এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের শেয়ার দর ২.৩৫ শতাংশ কমেছে।

অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৬৩৯ পয়েন্টে। দিন শেষে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ১৭৮টির, কমেছে ৯২টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টির। এতে ৩১ কোটি ৯৪ লাখ ১৬ হাজার ৭০২ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩১ কোটি ৭৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫৪৯ টাকার শেয়ার।