ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ প্রভাব পড়বে না বাংলাদেশ উপকূলে

পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’র প্রভাবে সারাদেশে হালকা থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের উড়িষ্যা উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের উপকূলে তেমন প্রভাব পড়বে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা।

এই অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ বজলুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এটি মঙ্গলবার ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। পরে নিম্নচাপে নিয়ে এটি দুর্বল হতে যেতে পারে।’

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাবে দেশের চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে মাঝারি থেকে প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সারাদেশে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে বিদ্যুৎ চমকানোসহ বৃষ্টি বাবজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিন বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, আসানি উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িষ্যা উপকূলের কাছাকাছি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে পৌঁছাবে মঙ্গলবার। এরপর এটি বাঁক খেয়ে উত্তর-পূর্বদিকে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের দিকে এগোবে। ততক্ষণে শক্তিক্ষয় হতে থাকবে আসানির। এমনকি উপকূলে না উঠেই বৃহস্পতিবার সমুদ্রেই এটি নিম্নচাপে পরিণত হয়ে শান্ত হয়ে যেতে পারে।

মোকাবিলায় নানা প্রস্তুতি

ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’র বাংলাদেশে আঘাত হানার আশঙ্কা এখন পর্যন্ত নেই বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তবে এটি মোকাবিলায় নানা প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি।’

প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, আবহাওয়াবিদ এবং আন্তর্জাতিক আবহাওয়া অফিস ধারণা করছে, ঘূর্ণিঝড়টি আগামী বৃহস্পতিবার সকালে বিশাখাপট্টনম, ভুবনেশ্বর, পশ্চিমবঙ্গ স্পর্শ করে দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হবে। বাংলাদেশে আঘাত হানার সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ‘আসানি’র প্রভাবে বাংলাদেশে ঝড়-বৃষ্টি হবে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস হবে না বলেই মনে হয়।

এনামুর রহমান আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় যেকোন সময় যেকোন দিকে মোড় নিতে পারে। এখন এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে ধাবিত হচ্ছে। এটি যদি মোড় নিয়ে উত্তর দিকে ধাবিত হয়, তাহলে আমাদের দেশের সাতক্ষীরা, খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালীতে আঘাত হানতে পারে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবাইকে নিয়ে সভা করেছি, তাদের সচেতন করে দেয়া হয়েছে। মাঠে আছে সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকেরা। তারা ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা প্রচার করছেন। আমরা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করার নির্দেশনা দিয়েছি। সেগুলোর প্রস্তুতি প্রায় শেষ। সেখানে রান্না করা খাবার দেয়ার জন্য চাল ও অর্থ দিয়েছি। মাঠপর্যায়ে মোটামুটি প্রস্তুতি আছে। করোনার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষকে আশ্রয় দেয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’

মঙ্গলবার, ১০ মে ২০২২ , ২৭ বৈশাখ ১৪২৮ ০৭ শাওয়াল ১৪৪৩

ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ প্রভাব পড়বে না বাংলাদেশ উপকূলে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’র প্রভাবে সারাদেশে হালকা থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের উড়িষ্যা উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের উপকূলে তেমন প্রভাব পড়বে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা।

এই অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ বজলুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এটি মঙ্গলবার ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। পরে নিম্নচাপে নিয়ে এটি দুর্বল হতে যেতে পারে।’

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাবে দেশের চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে মাঝারি থেকে প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সারাদেশে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে বিদ্যুৎ চমকানোসহ বৃষ্টি বাবজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিন বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, আসানি উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িষ্যা উপকূলের কাছাকাছি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে পৌঁছাবে মঙ্গলবার। এরপর এটি বাঁক খেয়ে উত্তর-পূর্বদিকে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের দিকে এগোবে। ততক্ষণে শক্তিক্ষয় হতে থাকবে আসানির। এমনকি উপকূলে না উঠেই বৃহস্পতিবার সমুদ্রেই এটি নিম্নচাপে পরিণত হয়ে শান্ত হয়ে যেতে পারে।

মোকাবিলায় নানা প্রস্তুতি

ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’র বাংলাদেশে আঘাত হানার আশঙ্কা এখন পর্যন্ত নেই বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তবে এটি মোকাবিলায় নানা প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি।’

প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, আবহাওয়াবিদ এবং আন্তর্জাতিক আবহাওয়া অফিস ধারণা করছে, ঘূর্ণিঝড়টি আগামী বৃহস্পতিবার সকালে বিশাখাপট্টনম, ভুবনেশ্বর, পশ্চিমবঙ্গ স্পর্শ করে দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হবে। বাংলাদেশে আঘাত হানার সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ‘আসানি’র প্রভাবে বাংলাদেশে ঝড়-বৃষ্টি হবে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস হবে না বলেই মনে হয়।

এনামুর রহমান আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় যেকোন সময় যেকোন দিকে মোড় নিতে পারে। এখন এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে ধাবিত হচ্ছে। এটি যদি মোড় নিয়ে উত্তর দিকে ধাবিত হয়, তাহলে আমাদের দেশের সাতক্ষীরা, খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালীতে আঘাত হানতে পারে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবাইকে নিয়ে সভা করেছি, তাদের সচেতন করে দেয়া হয়েছে। মাঠে আছে সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকেরা। তারা ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা প্রচার করছেন। আমরা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করার নির্দেশনা দিয়েছি। সেগুলোর প্রস্তুতি প্রায় শেষ। সেখানে রান্না করা খাবার দেয়ার জন্য চাল ও অর্থ দিয়েছি। মাঠপর্যায়ে মোটামুটি প্রস্তুতি আছে। করোনার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষকে আশ্রয় দেয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।’