খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি সরকার ও জনগণ

বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার লিটার তেল মজুদ

সারাদেশে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় অতিরিক্ত মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সারাদেশে অভিযান চালিয়ে দোকান-গুদাম থেকে মজুদ করা সয়াবিন তেল উদ্ধারের পরও বাজার স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। সাধারণ মানুষ উপায় না পেয়ে অধিক দাম দিয়ে তেল কিনছে। আবার কোথাও সেই তেলের দেখাও মিলছে না। অনেকেই দাবি করেন, আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ ও সরকার।

গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী সিরাজুল হকের মালিকানাধীন সিরাজ স্টোরের তিনটি গোডাউন থেকে ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পাহাড়তলী বাজারের সিরাজ স্টোরের তিনটি গোডাউন থেকে ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে। অভিযান শেষে সিরাজ স্টোরের মালিক সিরাজুল হককে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি তেলগুলো আগের দামে বিক্রি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক আনিছুর রহমান বলেন, ঈদের আগেই পাহাড়তলী বাজারের সিরাজ স্টোরের তিনটি গোডাউনের ১ হাজার কার্টনে ১৫ হাজার লিটার তেল গুদামজাত করে রাখা হয়। এসব তেল খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি না করে গুদামে রেখে দিয়েছেন সিরাজ স্টোরের মালিক। আগের দামে কেনা এসব তেল বর্তমান বাজার দরে বিক্রির অপচেষ্টা করেছিলেন দোকানের মালিক। আমরা অভিযান চালিয়ে সব তেল জব্দ করেছি।

এর আগের দিন রোববার নগরের কর্ণফুলী মার্কেটের অভিযান চালিয়ে ১ হাজার ৫০ লিটারের বেশি মজুদ করা তেল উদ্ধার করেছিল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ ঘটনায় খাজা স্টোরকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনিছুর রহমান আরও বলেন, বর্তমানে মানুষ বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে তেলই পাচ্ছেন না। এ ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে আসছে। আমাদের কাজ ভোক্তার অধিকার রক্ষা করা। তাই আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালাচ্ছি এবং তেল মজুদের বিষয়টিও বারংবার প্রমাণিত হচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারে আরও কঠোর হবো, আমাদের অভিযান আরও জোরদার করব।

তিনি বলেন, বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি মুনাফা আদায়ের উদ্দেশে তেলের বোতলগুলো ঈদের আগেই মজুদ করা হয়েছিল।

এর আগে, গত শনিবার রাতে জেলার ফটিকছড়ির ব্যবসায়ীর বাড়িতে ২৩২৮ লিটার, গত রোববার মহানগরীর কর্ণফুলী মার্কেটের গোডাউন থেকে লুকানো অবস্থায় ১ হাজার ৫০ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধারের অন্যদিকে গতকাল রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অবৈধ মজুদ এবং অতিরিক্ত দামে সয়াবিন তেল বিক্রির অভিযোগে ৩ প্রতিষ্ঠানকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রতিষ্ঠান তিনটি হলোÑ উত্তর যাত্রাবাড়ীর অদ্বিতি ট্রেডার্স, মেসার্স সিফাত ট্রেডিং ও মেসার্স মিন্টু স্টোর। অভিযানে অবৈধভাবে মজুদ থাকা মোট ৭৫ ব্যারেল সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়।

র‌্যাব-৩ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) এর সহযোগিতায় গতকাল দুপুরে এ অভিযান পরিচালনা করে র?্যাব-৩ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তের যৌথ দল। অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাজহারুল ইসলাম ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকার সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার ম-ল।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের জিজ্ঞাসাবাদে ও অভিযান পরিচালনাকালে এর প্রমাণ মেলে। এজন্য ৫০ হাজার টাকা করে তিন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয় মোট দেড় লাখ টাকা। অভিযান শেষে তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে বলে জানান র‌্যাব-৩ এর সহকারী পরিচালক।

দেশে যথেষ্ট সয়াবিন তেল থাকা সত্ত্বেও ঈদের আগে-পরে তা দোকানে আসেনি। এতে ১০ দিনে ৪০ হাজার টনের মতো সয়াবিন তেল মজুদ হয়েছে বলে ধারণা করছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। দেশের বিভিন্ন গুদামে অভিযানের পর এই দাবি তাদের।

মঙ্গলবার, ১০ মে ২০২২ , ২৭ বৈশাখ ১৪২৮ ০৭ শাওয়াল ১৪৪৩

খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি সরকার ও জনগণ

বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার লিটার তেল মজুদ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সারাদেশে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় অতিরিক্ত মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সারাদেশে অভিযান চালিয়ে দোকান-গুদাম থেকে মজুদ করা সয়াবিন তেল উদ্ধারের পরও বাজার স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। সাধারণ মানুষ উপায় না পেয়ে অধিক দাম দিয়ে তেল কিনছে। আবার কোথাও সেই তেলের দেখাও মিলছে না। অনেকেই দাবি করেন, আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ ও সরকার।

গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী সিরাজুল হকের মালিকানাধীন সিরাজ স্টোরের তিনটি গোডাউন থেকে ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পাহাড়তলী বাজারের সিরাজ স্টোরের তিনটি গোডাউন থেকে ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে। অভিযান শেষে সিরাজ স্টোরের মালিক সিরাজুল হককে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি তেলগুলো আগের দামে বিক্রি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক আনিছুর রহমান বলেন, ঈদের আগেই পাহাড়তলী বাজারের সিরাজ স্টোরের তিনটি গোডাউনের ১ হাজার কার্টনে ১৫ হাজার লিটার তেল গুদামজাত করে রাখা হয়। এসব তেল খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি না করে গুদামে রেখে দিয়েছেন সিরাজ স্টোরের মালিক। আগের দামে কেনা এসব তেল বর্তমান বাজার দরে বিক্রির অপচেষ্টা করেছিলেন দোকানের মালিক। আমরা অভিযান চালিয়ে সব তেল জব্দ করেছি।

এর আগের দিন রোববার নগরের কর্ণফুলী মার্কেটের অভিযান চালিয়ে ১ হাজার ৫০ লিটারের বেশি মজুদ করা তেল উদ্ধার করেছিল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ ঘটনায় খাজা স্টোরকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনিছুর রহমান আরও বলেন, বর্তমানে মানুষ বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে তেলই পাচ্ছেন না। এ ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে আসছে। আমাদের কাজ ভোক্তার অধিকার রক্ষা করা। তাই আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালাচ্ছি এবং তেল মজুদের বিষয়টিও বারংবার প্রমাণিত হচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারে আরও কঠোর হবো, আমাদের অভিযান আরও জোরদার করব।

তিনি বলেন, বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি মুনাফা আদায়ের উদ্দেশে তেলের বোতলগুলো ঈদের আগেই মজুদ করা হয়েছিল।

এর আগে, গত শনিবার রাতে জেলার ফটিকছড়ির ব্যবসায়ীর বাড়িতে ২৩২৮ লিটার, গত রোববার মহানগরীর কর্ণফুলী মার্কেটের গোডাউন থেকে লুকানো অবস্থায় ১ হাজার ৫০ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধারের অন্যদিকে গতকাল রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অবৈধ মজুদ এবং অতিরিক্ত দামে সয়াবিন তেল বিক্রির অভিযোগে ৩ প্রতিষ্ঠানকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রতিষ্ঠান তিনটি হলোÑ উত্তর যাত্রাবাড়ীর অদ্বিতি ট্রেডার্স, মেসার্স সিফাত ট্রেডিং ও মেসার্স মিন্টু স্টোর। অভিযানে অবৈধভাবে মজুদ থাকা মোট ৭৫ ব্যারেল সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়।

র‌্যাব-৩ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) এর সহযোগিতায় গতকাল দুপুরে এ অভিযান পরিচালনা করে র?্যাব-৩ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তের যৌথ দল। অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাজহারুল ইসলাম ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকার সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার ম-ল।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের জিজ্ঞাসাবাদে ও অভিযান পরিচালনাকালে এর প্রমাণ মেলে। এজন্য ৫০ হাজার টাকা করে তিন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয় মোট দেড় লাখ টাকা। অভিযান শেষে তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে বলে জানান র‌্যাব-৩ এর সহকারী পরিচালক।

দেশে যথেষ্ট সয়াবিন তেল থাকা সত্ত্বেও ঈদের আগে-পরে তা দোকানে আসেনি। এতে ১০ দিনে ৪০ হাজার টনের মতো সয়াবিন তেল মজুদ হয়েছে বলে ধারণা করছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। দেশের বিভিন্ন গুদামে অভিযানের পর এই দাবি তাদের।