রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি গ্রামের দিনমজুর মমিনুর রহমানের মেয়ে মরিয়ম বেগমকে দাবিকৃত এক লাখ টাকা যৌতুক না দেয়ায় অমানুষিক নির্যাতন করে তার মাথার চুল কেটে দিয়েছে স্বামী ও তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ স্বামী ইমান আলী ও তার শাশুড়ি রেনু বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি গ্রামের দিনমজুর মমিনুর রহমানের মেয়ে মরিয়ম বেগমের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী শংকরদহ গ্রামের আমিনুর রহমানের ছেলে ইমান আলীর সঙ্গে আড়াই বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নগদ ৬০ হাজার টাকাসহ আসবাবপত্র যৌতুক হিসেবে প্রদান করে কিন্তু বিয়ের ৬ মাস পার না হতেই আবারও এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন স্বামী ইমান আলী ও তার শাশুড়ি রেনু বেগমসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
দিনমজুর বাবার পক্ষে টাকা দেয়া সম্ভব নয় জানালে মরিয়মের ওপর প্রায়শই অমানুষিক নির্যাতন করতো স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। গত শনিবার রাতে আবারও যৌতুকের এক লাখ টাকা দাবি করে স্ত্রী মরিয়ম বেগমকে চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে লাঠি দিয়ে মারধর করে। এরপর তার মাথার চুল কেটে দেয়া হয়। মরিয়ম বেগম জ্ঞান হারিয়ে ফেললে এলাকার লোকজন গঙ্গাচড়া থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। তার মুখসহ সারাশরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এ ব্যাপারে মরিয়ম বেগমের সঙ্গে কথা বলতে গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে তিনি জানান, আড়াই বছর আগে তার বিয়ে হয়েছিল। প্রথম ৬ মাস ভালোভাবেই দিন কাটছিল কিন্তু এরপর থেকে এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করা শুরু হয়। এতে স্বামী ইমান আলী তার মা রেনু বেগম তার ভাই বোনও তাকে নির্যাতন করতো। অনেক সহ্য করে সে সংসার করেছে। একটি পুত্র সন্তান হয়েছে ভেবেছিলাম হয়তো ভালো হয়ে যাবে।
কিন্তু দিন দিন নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। মরিয়ম বেগম জানান, আমি বার বার বলেছি আমার বাবা দিনমজুর, বাড়ির ভিটা ছাড়া কিছুই নেই। এক লাখ টাকা তাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। গত শনিবার রাতে যৌতুকের এক লাখ টাকা দাবি করে আবারও নির্যাতন শুরু হয়।
তার চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে লাথি ঘুসি লাঠি দিয়ে সারাশরীরে নির্যাতন চালানো হয়। এক পর্যায়ে মাথার চুল কেটে দিয়ে নির্যাতন করতে থাকলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আশপাশের লোকজন সহ্য করতে না পেরে গঙ্গাচড়া থানায় খবর দেয় পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। মরিয়ম বেগম তার ওপর অকথ্য নির্যাতন ও চুল কেটে দেয়ার বিচার দাবি করেন।
এদিকে গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর আবাসিক চিকিৎসক ডা. আশফাক রহমান জানান মরিয়ম বেগমের সারা শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার চুল কেটে দেয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টি অমানবিক। তার চিকিৎসা চলছে বলে জানান তিনি।
নির্যাতিতা গৃহবধূ মরিয়ম বেগমের বাবা মমিনুর রহমান জানান তার মেয়েকে যে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে তার ন্যায্য বিচার চান তিনি। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় নারী ও নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে স্বামী ইমান আলী ও শাশুড়ি রেনু বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এলাকাবাসি সাহাবুল মিয়া , আয়েশা আখতার , জোনাব আলী এভাবে একজন নারীকে অকথ্য নির্যাতন করে মাথার চুল কেটে দেয়ার আমানবিক ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষিদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবি করেছে।
এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়া থানার ওসি তদন্ত আরিফ আলী জানিয়েছেন খবর পেয়ে তারা ঘটনা স্থলে গিয়ে নির্যাতিতা গৃহবধু মরিয়ম বেগমকে উদ্ধার করে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত স্বামী ও শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার, ১০ মে ২০২২ , ২৭ বৈশাখ ১৪২৮ ০৭ শাওয়াল ১৪৪৩
লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি গ্রামের দিনমজুর মমিনুর রহমানের মেয়ে মরিয়ম বেগমকে দাবিকৃত এক লাখ টাকা যৌতুক না দেয়ায় অমানুষিক নির্যাতন করে তার মাথার চুল কেটে দিয়েছে স্বামী ও তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ স্বামী ইমান আলী ও তার শাশুড়ি রেনু বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি গ্রামের দিনমজুর মমিনুর রহমানের মেয়ে মরিয়ম বেগমের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী শংকরদহ গ্রামের আমিনুর রহমানের ছেলে ইমান আলীর সঙ্গে আড়াই বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নগদ ৬০ হাজার টাকাসহ আসবাবপত্র যৌতুক হিসেবে প্রদান করে কিন্তু বিয়ের ৬ মাস পার না হতেই আবারও এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন স্বামী ইমান আলী ও তার শাশুড়ি রেনু বেগমসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
দিনমজুর বাবার পক্ষে টাকা দেয়া সম্ভব নয় জানালে মরিয়মের ওপর প্রায়শই অমানুষিক নির্যাতন করতো স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। গত শনিবার রাতে আবারও যৌতুকের এক লাখ টাকা দাবি করে স্ত্রী মরিয়ম বেগমকে চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে লাঠি দিয়ে মারধর করে। এরপর তার মাথার চুল কেটে দেয়া হয়। মরিয়ম বেগম জ্ঞান হারিয়ে ফেললে এলাকার লোকজন গঙ্গাচড়া থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। তার মুখসহ সারাশরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এ ব্যাপারে মরিয়ম বেগমের সঙ্গে কথা বলতে গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে তিনি জানান, আড়াই বছর আগে তার বিয়ে হয়েছিল। প্রথম ৬ মাস ভালোভাবেই দিন কাটছিল কিন্তু এরপর থেকে এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করা শুরু হয়। এতে স্বামী ইমান আলী তার মা রেনু বেগম তার ভাই বোনও তাকে নির্যাতন করতো। অনেক সহ্য করে সে সংসার করেছে। একটি পুত্র সন্তান হয়েছে ভেবেছিলাম হয়তো ভালো হয়ে যাবে।
কিন্তু দিন দিন নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। মরিয়ম বেগম জানান, আমি বার বার বলেছি আমার বাবা দিনমজুর, বাড়ির ভিটা ছাড়া কিছুই নেই। এক লাখ টাকা তাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। গত শনিবার রাতে যৌতুকের এক লাখ টাকা দাবি করে আবারও নির্যাতন শুরু হয়।
তার চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে লাথি ঘুসি লাঠি দিয়ে সারাশরীরে নির্যাতন চালানো হয়। এক পর্যায়ে মাথার চুল কেটে দিয়ে নির্যাতন করতে থাকলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আশপাশের লোকজন সহ্য করতে না পেরে গঙ্গাচড়া থানায় খবর দেয় পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। মরিয়ম বেগম তার ওপর অকথ্য নির্যাতন ও চুল কেটে দেয়ার বিচার দাবি করেন।
এদিকে গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর আবাসিক চিকিৎসক ডা. আশফাক রহমান জানান মরিয়ম বেগমের সারা শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার চুল কেটে দেয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টি অমানবিক। তার চিকিৎসা চলছে বলে জানান তিনি।
নির্যাতিতা গৃহবধূ মরিয়ম বেগমের বাবা মমিনুর রহমান জানান তার মেয়েকে যে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে তার ন্যায্য বিচার চান তিনি। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় নারী ও নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে স্বামী ইমান আলী ও শাশুড়ি রেনু বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এলাকাবাসি সাহাবুল মিয়া , আয়েশা আখতার , জোনাব আলী এভাবে একজন নারীকে অকথ্য নির্যাতন করে মাথার চুল কেটে দেয়ার আমানবিক ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষিদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবি করেছে।
এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়া থানার ওসি তদন্ত আরিফ আলী জানিয়েছেন খবর পেয়ে তারা ঘটনা স্থলে গিয়ে নির্যাতিতা গৃহবধু মরিয়ম বেগমকে উদ্ধার করে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত স্বামী ও শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।