প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষা

সন্ধ্যা রানী সাহা

আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজির বিকল্প নেই। সেটা অনুধাবন করেই সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই ইংরেজি শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছে। কাজেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষার অবস্থা যাচাই করে তা মানসম্মত করার বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষায় কর্তব্যরত সব পরিদর্শকের গুরুদায়িত্ব বলে মনে করি।

গত ২০ এপ্রিল একটি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ইংরেজি বিষয়ের পাঠদান পর্যবেক্ষণকালে লক্ষ্য করলাম, “My home district” পাঠটি পড়াতে গিয়ে শিক্ষক বোর্ডে literature কে লিখেছেন literatur এবং শিখাচ্ছেনও তাই। এই গল্পে যড়ি how far? অর্থাৎ কতদূরে প্রশ্নটি রয়েছে যা ইতোমধ্যে পড়ানো হয়েছে। আমি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলাম যড়ি how far is Jamtoil railway station from here? কোন শিক্ষার্থী তার উত্তর দিতে পারল না। শ্রেণী শিক্ষককে এ বিষয়ে অফিসকক্ষে বলতেই তিনি সদর্পে বলে উঠলেন “এতদিন তো অক্ষরই চিনতো না”। অর্থাৎ তিনি অনেক করেছেন। পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের এতদিনে ইংরেজি অক্ষর চিনিয়েছেন।

আমরা সাধারণত বাংলা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকি। কিন্তু না। বাংলার মতো ইংরেজিতেও যুগের প্রয়োজনে সব শিক্ষার্থীকে সমান দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। আজকে আমরা যারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব পদে রয়েছি তারা কারা? তারা আগে ভাগে অভিভাবকদের তত্ত্ব¡াবধানে বাংলা এবং ইংরেজি রিডিং পড়তে শেখা সৌভাগ্যবানেরা। আর আজকে যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়া শিখতে এসেছে তাদের অভিভাবক কারা? নিশ্চয়ই আমরা তাই তো? প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হচ্ছেন বর্তমানকালে শিশুর প্রথম এবং প্রধান অভিভাবক। এই অভিভাবককে যেমন নিজের উপলব্ধির মাত্রাটি বৃদ্ধি করতে হবে তেমনি তাকে সমাজের সর্বস্তর থেকে সহযোগিতা করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত বলে তাকে রাখতে হবে সব ধরনণর দুশ্চিন্তামুক্ত করে। নিয়োগদানকালেও মেধাবীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করতে হবে। আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ইংরেজি বই গুলি comunicative । বইগুলো শিক্ষক যেন শুদ্ধ উচ্চারণে পড়তে পারেন, বুঝতে পারেন এবং শিক্ষার্থীদের instruction দিতে পারেন তা যাচাই করে শিক্ষক নিয়োগ আবশ্যক। অন্যথায় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও এর কুপ্রভাব দৃশ্যমান থাকবে। আমাদের বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য নির্ধারিত ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতার ১০ নম্বর প্রান্তিক যোগ্যতাটি এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। আর তা হলো “বিদেশি ভাষা হিষেবে ইংরেজি ভাষায় মৌলিক দক্ষতা অর্জন ও ব্যবহার করা”।বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীদের এ যোগ্যতা অর্জন করিয়ে পঞ্চম শ্রেণী পার করে দিতে হবে।

শিক্ষকদের পিটিআই, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহ থেকে ইতোমধ্যেই প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। তথাপি শিক্ষকবৃন্দের বেশির ভাগ এ বিষয়ে উদাসীন। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনবিষয়ক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার যে ৪নং লক্ষ্য জাতিসংঘ কর্তৃক ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনযোগ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। একজন চিকিৎসককে সারা জীবন পড়তে হয়। একজন সঙ্গীত/নৃত্য শিল্পীকে সারা বছর চর্চা করতে হয়। অনুরূপভাবে একজন শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে কী পড়াবেন তার জন্য নিজের পূর্ব প্রস্তুতিমূলক যথেষ্ট পড়াশোনা করার অভ্যাস রাখতে হবে। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে একজন শিক্ষক আজকের এ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বিশে^র সব শিশুর শিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। তাহলে রাষ্ট্রও তাকে পুরস্কৃত করতে পারে।

আজকাল শিশুদের হাতের নাগালে টেলিভিশন, Google ইউটিউব-ফেসবুক। সেখান থেকে ইচ্ছে করলে তারা অনেক কিছুই শিখতে পারে। সর্বোপরি পিতামাতা, অভিভাবক এমনকি সহপাঠীর কাছ থেকেও তারা শিখছে। এমন অবস্থায় শিক্ষক ভুল শিখালে কিংবা না শিখালে শিশু পরবর্তীকালে যে কোনোভাবে সেসব হয়ত ঠিকই বুঝে ফেলবে। তখন কিন্তু শিক্ষককে আজকের না শেখানোর দায় থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে না। ভাবুন তো এমন হলে শিক্ষক হিসেবে নিজের মর্যাদা রক্ষার উপায় কী? ইংরেজিতে একটি কথা আছে “death is preferable to dishonour”। একজন শিক্ষক অনায়াসে একজন শিশুর জীবনে আর্শিবাদ হয়ে উঠতে পারেন। শিশুকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যও তাই। এই লক্ষ্য অর্জনে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করতে হবে। রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত কর্মচারী হয়ে এর ব্যত্যয় ঘটালে রাষ্ট্র নির্ধারিত আইনের আওতায় আমরা পড়ে যেতে পারি। সে সব বিবেচনায় এনে যথানিয়মে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব সম্পাদন করা শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবার জন্য মঙ্গলজনক। তাই আমরা যেন আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারি, সমাজে ন্যয্যতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন বিদ্যালয়ের সোনার আলোয় ভরিয়ে দিতে পারি। এ কথা সত্য এদেশের গরিব মানুষের সন্তান যারা তারাই মূলত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের মৌলিক চাহিদাগুলোর একটি হলো শিক্ষা। আমরা তাদের এই শিক্ষা নামক মৌলিক চাহিদাটি পূরণের মহান দায়িত্বে নিয়োজিত হতে পেরেছি। এ দায়িত্ব আমরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে সমাজে পরিবর্তন আনয়নের প্রতিজ্ঞা করতে পারি।

শিশু যখন পড়তে পারে ও কি পড়ছে তা বুঝতে পারে তখনই তার আরও পড়ার এবং জানার আকাক্সক্ষা তৈরি হয়। সে তখন আর ঝরে পড়ে না। কাজেই শুধু চাকরির জন্য শিক্ষকতা নয় বরং শেখানোর জন্যই শিক্ষকতা: এই ধারণাকে দৃঢ়ভাবে লালন করতে হবে। আমাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা যাচাই করে শিক্ষক নিয়োগ হয় না। নিয়োগের পর শিক্ষকবৃন্দকে বিভিন্ন বিষয়ে সময়ে সময়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়। কাজেই সব শিক্ষককেই সব বিষয় পড়াতে হয়। এখানে সবাই ইংরেজি পড়িয়ে থাকেন। ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমেই শুধু ভাষা শিখন ফলপ্রসূ হয়। ইংরেজি ভাষা আন্তর্জাতিক ভাষা। পৃথিবীর সব দেশেই এ ভাষার কম বেশি ব্যবহার রয়েছে। তই এ ভাষাকে ভয় না করে শিক্ষক নিজে তা শিখে শিশুদের শেখাবেন। ইংরেজি ভাষা শেখার জন্য যে চারটি দক্ষতার প্রয়োজন তা হলো Listening, Speaking, Reading, এবং Writing। শিক্ষক asking question and answer বা প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে পাঠবিষয়ক ছোট ছোট সহজ প্রশ্ন করে এবং তার উত্তর আদায়ের মাধ্যমে শিশুদের ইংরেজি শেখাতে পারেন। শিশুরা যেন আনন্দঘন পরিবেশে শিখতে পারে সেজন্য পাঠ্যপুস্তকে কিছু Rhymes বা ছড়া এবং Poem বা কবিতা সংযোজিত হয়েছে। তালে তালে, ছন্দে ছন্দে Rhymes গুলো বলতে পারলেও শিশুরা আনন্দ ও আত্মতৃপ্তি লাভ করবে। এভাবে তারা ইংরেজি ভাষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। তারা ইংরেজি ভাষা সাবলীল ও স্পষ্ট উচ্চারণে বলতে পারবে। ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীতে Listening I Speaking ছাড়াও Reading এবং Writing Skill এর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইংরেজি ক্লাসে যথারীতি স্পষ্ট ও শুদ্ধ উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে অর্থ, ভাবার্থ এবং বানানসহ পাঠবিষয়ক শিখন শেখানো কার্যাবলি সম্পাদন করতে হবে। আর এই গুরু দায়িত্বটি ন্যস্ত করা হয়েছে প্রধানত শিক্ষকদের ওপর।

শব্দ এবং বাক্য মুখস্থ করানোর পরিবর্তে মুখের ভাষার ন্যূনতম ছন্দের একক বা Syllable অনুযায়ী ভেঙে ভেঙে এমনভাবে বানান করতে শিখাতে হবে যেন শিশু নিজ থেকে স্বাধীন এবং সাবলীলভাবে পড়তে পারে। এক বচন এবং বহুবচনের ধারণা দিতে হবে। ইংরেজি শব্দের বানান অনেক ক্ষেত্রেই উচ্চারণকে নির্দেশ করে না। উচ্চারণ সঠিকভাবে না শিখলে শিক্ষার্থী রেডিও টেলিভিশনে ইংরেজিতে প্রচারিত কোন কিছু শুনে বুঝতে পারবে না। স্মার্টফোন ব্যবহার করে সহজেই শিক্ষক নিজে উচ্চারণ যথাযথভাবে শিখে শিক্ষার্থীদের শিখাতে পারেন।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দকে যেমন পাঠ্য সব বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে তেমনি খেলাধুলা, কাবিং, প্রাথমিক চিকিৎসা তথা first aid box-এর ব্যবহারবিধি, অভিনয়, সংগীত, নৃত্য, গল্প, বলা (ইংরেজি এবং বাংলায়) ইত্যাদি সবই আয়ত্ত করতে হবে। শিশুরদের শিখন চাহিদা অনুযায়ী সুদক্ষ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে গঠন করার কাজে তিনি সদাব্যস্ত হয়ে থাকবেন। তিনি তার বুদ্ধি দিয়ে, বিবেক দিয়ে, হৃদয় দিয়ে, চারিত্রিক সততা দিয়ে, সহমর্মিতা দিয়ে, সাহস দিয়ে, একাগ্রতা দিয়ে এবং দায়িত্ববোধের মতো মৌলিক গুণাবলি দিয়ে নিজেকে সুসজ্জিত রাখবেন। তিনি যেমন জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ভালোবাসতে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করবেন। অনুরূপভাবে তিনি ইংরেজি ভাষায় শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তাদের বিশ্ব মানবাধিকার, আন্তর্জাতিকতাবোধ, বিশ্বভাতৃত্ববোধ ও বিশ্ব সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে সহায়তা করবেন।

[লেখক : উপজেলা শিক্ষা অফিসার, কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ]

মঙ্গলবার, ১০ মে ২০২২ , ২৭ বৈশাখ ১৪২৮ ০৭ শাওয়াল ১৪৪৩

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষা

সন্ধ্যা রানী সাহা

আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজির বিকল্প নেই। সেটা অনুধাবন করেই সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই ইংরেজি শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছে। কাজেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষার অবস্থা যাচাই করে তা মানসম্মত করার বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষায় কর্তব্যরত সব পরিদর্শকের গুরুদায়িত্ব বলে মনে করি।

গত ২০ এপ্রিল একটি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ইংরেজি বিষয়ের পাঠদান পর্যবেক্ষণকালে লক্ষ্য করলাম, “My home district” পাঠটি পড়াতে গিয়ে শিক্ষক বোর্ডে literature কে লিখেছেন literatur এবং শিখাচ্ছেনও তাই। এই গল্পে যড়ি how far? অর্থাৎ কতদূরে প্রশ্নটি রয়েছে যা ইতোমধ্যে পড়ানো হয়েছে। আমি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলাম যড়ি how far is Jamtoil railway station from here? কোন শিক্ষার্থী তার উত্তর দিতে পারল না। শ্রেণী শিক্ষককে এ বিষয়ে অফিসকক্ষে বলতেই তিনি সদর্পে বলে উঠলেন “এতদিন তো অক্ষরই চিনতো না”। অর্থাৎ তিনি অনেক করেছেন। পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের এতদিনে ইংরেজি অক্ষর চিনিয়েছেন।

আমরা সাধারণত বাংলা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকি। কিন্তু না। বাংলার মতো ইংরেজিতেও যুগের প্রয়োজনে সব শিক্ষার্থীকে সমান দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। আজকে আমরা যারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব পদে রয়েছি তারা কারা? তারা আগে ভাগে অভিভাবকদের তত্ত্ব¡াবধানে বাংলা এবং ইংরেজি রিডিং পড়তে শেখা সৌভাগ্যবানেরা। আর আজকে যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়া শিখতে এসেছে তাদের অভিভাবক কারা? নিশ্চয়ই আমরা তাই তো? প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হচ্ছেন বর্তমানকালে শিশুর প্রথম এবং প্রধান অভিভাবক। এই অভিভাবককে যেমন নিজের উপলব্ধির মাত্রাটি বৃদ্ধি করতে হবে তেমনি তাকে সমাজের সর্বস্তর থেকে সহযোগিতা করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত বলে তাকে রাখতে হবে সব ধরনণর দুশ্চিন্তামুক্ত করে। নিয়োগদানকালেও মেধাবীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করতে হবে। আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ইংরেজি বই গুলি comunicative । বইগুলো শিক্ষক যেন শুদ্ধ উচ্চারণে পড়তে পারেন, বুঝতে পারেন এবং শিক্ষার্থীদের instruction দিতে পারেন তা যাচাই করে শিক্ষক নিয়োগ আবশ্যক। অন্যথায় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও এর কুপ্রভাব দৃশ্যমান থাকবে। আমাদের বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য নির্ধারিত ২৯টি প্রান্তিক যোগ্যতার ১০ নম্বর প্রান্তিক যোগ্যতাটি এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। আর তা হলো “বিদেশি ভাষা হিষেবে ইংরেজি ভাষায় মৌলিক দক্ষতা অর্জন ও ব্যবহার করা”।বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীদের এ যোগ্যতা অর্জন করিয়ে পঞ্চম শ্রেণী পার করে দিতে হবে।

শিক্ষকদের পিটিআই, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহ থেকে ইতোমধ্যেই প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। তথাপি শিক্ষকবৃন্দের বেশির ভাগ এ বিষয়ে উদাসীন। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনবিষয়ক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার যে ৪নং লক্ষ্য জাতিসংঘ কর্তৃক ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনযোগ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। একজন চিকিৎসককে সারা জীবন পড়তে হয়। একজন সঙ্গীত/নৃত্য শিল্পীকে সারা বছর চর্চা করতে হয়। অনুরূপভাবে একজন শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে কী পড়াবেন তার জন্য নিজের পূর্ব প্রস্তুতিমূলক যথেষ্ট পড়াশোনা করার অভ্যাস রাখতে হবে। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে একজন শিক্ষক আজকের এ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বিশে^র সব শিশুর শিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। তাহলে রাষ্ট্রও তাকে পুরস্কৃত করতে পারে।

আজকাল শিশুদের হাতের নাগালে টেলিভিশন, Google ইউটিউব-ফেসবুক। সেখান থেকে ইচ্ছে করলে তারা অনেক কিছুই শিখতে পারে। সর্বোপরি পিতামাতা, অভিভাবক এমনকি সহপাঠীর কাছ থেকেও তারা শিখছে। এমন অবস্থায় শিক্ষক ভুল শিখালে কিংবা না শিখালে শিশু পরবর্তীকালে যে কোনোভাবে সেসব হয়ত ঠিকই বুঝে ফেলবে। তখন কিন্তু শিক্ষককে আজকের না শেখানোর দায় থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে না। ভাবুন তো এমন হলে শিক্ষক হিসেবে নিজের মর্যাদা রক্ষার উপায় কী? ইংরেজিতে একটি কথা আছে “death is preferable to dishonour”। একজন শিক্ষক অনায়াসে একজন শিশুর জীবনে আর্শিবাদ হয়ে উঠতে পারেন। শিশুকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্যও তাই। এই লক্ষ্য অর্জনে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করতে হবে। রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত কর্মচারী হয়ে এর ব্যত্যয় ঘটালে রাষ্ট্র নির্ধারিত আইনের আওতায় আমরা পড়ে যেতে পারি। সে সব বিবেচনায় এনে যথানিয়মে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব সম্পাদন করা শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবার জন্য মঙ্গলজনক। তাই আমরা যেন আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারি, সমাজে ন্যয্যতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন বিদ্যালয়ের সোনার আলোয় ভরিয়ে দিতে পারি। এ কথা সত্য এদেশের গরিব মানুষের সন্তান যারা তারাই মূলত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের মৌলিক চাহিদাগুলোর একটি হলো শিক্ষা। আমরা তাদের এই শিক্ষা নামক মৌলিক চাহিদাটি পূরণের মহান দায়িত্বে নিয়োজিত হতে পেরেছি। এ দায়িত্ব আমরা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে সমাজে পরিবর্তন আনয়নের প্রতিজ্ঞা করতে পারি।

শিশু যখন পড়তে পারে ও কি পড়ছে তা বুঝতে পারে তখনই তার আরও পড়ার এবং জানার আকাক্সক্ষা তৈরি হয়। সে তখন আর ঝরে পড়ে না। কাজেই শুধু চাকরির জন্য শিক্ষকতা নয় বরং শেখানোর জন্যই শিক্ষকতা: এই ধারণাকে দৃঢ়ভাবে লালন করতে হবে। আমাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা যাচাই করে শিক্ষক নিয়োগ হয় না। নিয়োগের পর শিক্ষকবৃন্দকে বিভিন্ন বিষয়ে সময়ে সময়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়। কাজেই সব শিক্ষককেই সব বিষয় পড়াতে হয়। এখানে সবাই ইংরেজি পড়িয়ে থাকেন। ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমেই শুধু ভাষা শিখন ফলপ্রসূ হয়। ইংরেজি ভাষা আন্তর্জাতিক ভাষা। পৃথিবীর সব দেশেই এ ভাষার কম বেশি ব্যবহার রয়েছে। তই এ ভাষাকে ভয় না করে শিক্ষক নিজে তা শিখে শিশুদের শেখাবেন। ইংরেজি ভাষা শেখার জন্য যে চারটি দক্ষতার প্রয়োজন তা হলো Listening, Speaking, Reading, এবং Writing। শিক্ষক asking question and answer বা প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে পাঠবিষয়ক ছোট ছোট সহজ প্রশ্ন করে এবং তার উত্তর আদায়ের মাধ্যমে শিশুদের ইংরেজি শেখাতে পারেন। শিশুরা যেন আনন্দঘন পরিবেশে শিখতে পারে সেজন্য পাঠ্যপুস্তকে কিছু Rhymes বা ছড়া এবং Poem বা কবিতা সংযোজিত হয়েছে। তালে তালে, ছন্দে ছন্দে Rhymes গুলো বলতে পারলেও শিশুরা আনন্দ ও আত্মতৃপ্তি লাভ করবে। এভাবে তারা ইংরেজি ভাষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। তারা ইংরেজি ভাষা সাবলীল ও স্পষ্ট উচ্চারণে বলতে পারবে। ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীতে Listening I Speaking ছাড়াও Reading এবং Writing Skill এর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইংরেজি ক্লাসে যথারীতি স্পষ্ট ও শুদ্ধ উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে অর্থ, ভাবার্থ এবং বানানসহ পাঠবিষয়ক শিখন শেখানো কার্যাবলি সম্পাদন করতে হবে। আর এই গুরু দায়িত্বটি ন্যস্ত করা হয়েছে প্রধানত শিক্ষকদের ওপর।

শব্দ এবং বাক্য মুখস্থ করানোর পরিবর্তে মুখের ভাষার ন্যূনতম ছন্দের একক বা Syllable অনুযায়ী ভেঙে ভেঙে এমনভাবে বানান করতে শিখাতে হবে যেন শিশু নিজ থেকে স্বাধীন এবং সাবলীলভাবে পড়তে পারে। এক বচন এবং বহুবচনের ধারণা দিতে হবে। ইংরেজি শব্দের বানান অনেক ক্ষেত্রেই উচ্চারণকে নির্দেশ করে না। উচ্চারণ সঠিকভাবে না শিখলে শিক্ষার্থী রেডিও টেলিভিশনে ইংরেজিতে প্রচারিত কোন কিছু শুনে বুঝতে পারবে না। স্মার্টফোন ব্যবহার করে সহজেই শিক্ষক নিজে উচ্চারণ যথাযথভাবে শিখে শিক্ষার্থীদের শিখাতে পারেন।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দকে যেমন পাঠ্য সব বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে তেমনি খেলাধুলা, কাবিং, প্রাথমিক চিকিৎসা তথা first aid box-এর ব্যবহারবিধি, অভিনয়, সংগীত, নৃত্য, গল্প, বলা (ইংরেজি এবং বাংলায়) ইত্যাদি সবই আয়ত্ত করতে হবে। শিশুরদের শিখন চাহিদা অনুযায়ী সুদক্ষ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে গঠন করার কাজে তিনি সদাব্যস্ত হয়ে থাকবেন। তিনি তার বুদ্ধি দিয়ে, বিবেক দিয়ে, হৃদয় দিয়ে, চারিত্রিক সততা দিয়ে, সহমর্মিতা দিয়ে, সাহস দিয়ে, একাগ্রতা দিয়ে এবং দায়িত্ববোধের মতো মৌলিক গুণাবলি দিয়ে নিজেকে সুসজ্জিত রাখবেন। তিনি যেমন জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ভালোবাসতে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করবেন। অনুরূপভাবে তিনি ইংরেজি ভাষায় শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তাদের বিশ্ব মানবাধিকার, আন্তর্জাতিকতাবোধ, বিশ্বভাতৃত্ববোধ ও বিশ্ব সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে সহায়তা করবেন।

[লেখক : উপজেলা শিক্ষা অফিসার, কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ]