দেশে গ্যাস সংকট দীর্ঘদিনের, মজুদও ফুরিয়ে আসছে। গ্যাসের অভাবে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে শিল্পোৎপাদন। আবাসিক খাতে নতুন সংযোগ এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে লোডবৃদ্ধিও বন্ধ আছে। চাহিদা পূরণে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে এবার হাইপ্রেসার জোনে (উচ্চচাপ এলাকা) গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর হাইপ্রেসার জোনে প্রচুর গ্যাস মজুদ আছে। গভীরে অনুসন্ধান করে সেই গ্যাস উত্তোলন সম্ভব।
পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিশ্বে মজুদ গ্যাসের এক তৃতীয়াংশ রয়েছে উচ্চচাপযুক্ত কাঠামোতে (টাইট স্যান্ড), যা হাইপ্রেসার জোনের নিচে অবস্থিত। সাধারণত বাংলাদেশের মাটির পাঁচ হাজার মিটারের নিচে হাইপ্রেসার জোন রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশে এই কাঠামোতে এখনো অনুসন্ধান চালানো হয়নি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘দেশের অনেক আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে হাইপ্রেসার জোন পাওয়া গেছে। তবে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন অজুহাতে হাইপ্রেসার জোন পর্যন্ত কূপ খনন করা হয়নি। ফলে আমাদের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর হাইপ্রেসার জোনে কী পরিমাণ গ্যাস আছে তা প্রমাণিত নয়।’ তবে অনুসন্ধানের আগে এ সম্পর্কে একটি ডাটাবেইস করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা (ভূতত্ববিদ) বলেন, ‘দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে এখন যেসব কূপ খনন করা হয়, সেগুলোর চাপ থাকে সাধারণ তিন হাজার থেকে ৪ হাজার পিএসআই (পাউন্ড পার স্কয়ার ইঞ্চি)। সর্বোচ্চ চাপ পাওয়া গেছে ভোলার গ্যাসে। সেখানে চাপ পাঁচ হাজার পিএসআই। উচ্চচাপ এলাকা অতিত্রক্রম করতে হলে ১৫ হাজার পিএসআই গ্যাসের চাপ সহ্য করার সক্ষমতা থাকতে হবে, যে অভিজ্ঞতা বা সক্ষমতা বাপেক্সের নেই।’
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সংবাদকে বলেন, ‘এতদিন গ্যাস সংকট এত প্রকট ছিল না। হাইপ্রেসার জোনে তাই অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ কাজে বাপেক্সের অভিজ্ঞতাও নেই। তবে এখন গ্যাসের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে, তা ভাবনার বিষয়।’
প্রতিমন্ত্রী বিপু বলেন, ‘আমরা হাইপ্রেসার জোনে অনুসন্ধান করব। তবে এজন্য প্রথমে পরমর্শক নিয়োগ করতে হবে। কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে, কাদের সহযোগিতায় অনুসন্ধান এবং উত্তোলন সহজ হবে সেটা ঠিক করতে হবে।’
পেট্রোবাংলার তথ্য মতে, দেশের সবচেয়ে গভীর কূপ ফেঞ্চুগঞ্জ-২। কূপটি ৪ হাজার ৯৭৭ মিটার গভীর পর্যন্ত খনন করা হয়। এখানে তিনটি স্তরে গ্যাস পাওয়া যায়। যদিও কূপটি ৫ হাজার ৫০০ মিটার পর্যন্ত খনন করার পরিকল্পনা ছিল। বাপেক্স গঠনের আগে ১৯৮৬-৮৭ সালে এই কূপ খোঁড়া হয়েছিল।
জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে এখনো প্রচুর গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রয়োজন সঠিকভাবে অনুসন্ধান। তারা বলছেন, সাগরে অনুসন্ধানের সক্ষমতা যেহেতু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের নেই, স্থালে অনুসন্ধান জোরদার করা উচিত।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম সংবাদকে বলেন, ‘দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে গুরুত্ব নেই। কয়লা মাটির নিচে পড়ে আছে। দেশীয় প্রাকৃতিক সম্পদের সাশ্রয়ী ব্যবহার; বঙ্গবন্ধুর যে ভিশন, তার থেকে দেশকে দূরে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, হাইপ্রেসার জোনে কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই উচ্চচাপ স্তরে তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান, সেভাবে হয়নি। এজন্য আধুনিক প্রযুক্তি, দক্ষ জনবল ও শক্তিশালী রিগ প্রয়োজন। এজন্য অভিজ্ঞ কোন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা যেতে পারে।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, ইতোমধ্যে হাইপ্রেশার জোনে পাঁচটি কূপ খননের উদ্যোগ তারা নিয়েছেন। এগুলো হলো- মোবারকপুর, শ্রীকাইল, তিতাস, বাখরাবাদ ও সিলেটের রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্র। কূপগুলো ৬ হাজার মিটার পর্যন্ত খননের পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য রিগ ভাড়া করা হবে।
বুধবার, ১১ মে ২০২২ , ২৮ বৈশাখ ১৪২৮ ০৮ শাওয়াল ১৪৪৩
ফয়েজ আহমেদ তুষার
দেশে গ্যাস সংকট দীর্ঘদিনের, মজুদও ফুরিয়ে আসছে। গ্যাসের অভাবে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে শিল্পোৎপাদন। আবাসিক খাতে নতুন সংযোগ এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে লোডবৃদ্ধিও বন্ধ আছে। চাহিদা পূরণে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে এবার হাইপ্রেসার জোনে (উচ্চচাপ এলাকা) গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর হাইপ্রেসার জোনে প্রচুর গ্যাস মজুদ আছে। গভীরে অনুসন্ধান করে সেই গ্যাস উত্তোলন সম্ভব।
পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিশ্বে মজুদ গ্যাসের এক তৃতীয়াংশ রয়েছে উচ্চচাপযুক্ত কাঠামোতে (টাইট স্যান্ড), যা হাইপ্রেসার জোনের নিচে অবস্থিত। সাধারণত বাংলাদেশের মাটির পাঁচ হাজার মিটারের নিচে হাইপ্রেসার জোন রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বাংলাদেশে এই কাঠামোতে এখনো অনুসন্ধান চালানো হয়নি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘দেশের অনেক আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে হাইপ্রেসার জোন পাওয়া গেছে। তবে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন অজুহাতে হাইপ্রেসার জোন পর্যন্ত কূপ খনন করা হয়নি। ফলে আমাদের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর হাইপ্রেসার জোনে কী পরিমাণ গ্যাস আছে তা প্রমাণিত নয়।’ তবে অনুসন্ধানের আগে এ সম্পর্কে একটি ডাটাবেইস করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা (ভূতত্ববিদ) বলেন, ‘দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে এখন যেসব কূপ খনন করা হয়, সেগুলোর চাপ থাকে সাধারণ তিন হাজার থেকে ৪ হাজার পিএসআই (পাউন্ড পার স্কয়ার ইঞ্চি)। সর্বোচ্চ চাপ পাওয়া গেছে ভোলার গ্যাসে। সেখানে চাপ পাঁচ হাজার পিএসআই। উচ্চচাপ এলাকা অতিত্রক্রম করতে হলে ১৫ হাজার পিএসআই গ্যাসের চাপ সহ্য করার সক্ষমতা থাকতে হবে, যে অভিজ্ঞতা বা সক্ষমতা বাপেক্সের নেই।’
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সংবাদকে বলেন, ‘এতদিন গ্যাস সংকট এত প্রকট ছিল না। হাইপ্রেসার জোনে তাই অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ কাজে বাপেক্সের অভিজ্ঞতাও নেই। তবে এখন গ্যাসের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে, তা ভাবনার বিষয়।’
প্রতিমন্ত্রী বিপু বলেন, ‘আমরা হাইপ্রেসার জোনে অনুসন্ধান করব। তবে এজন্য প্রথমে পরমর্শক নিয়োগ করতে হবে। কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে, কাদের সহযোগিতায় অনুসন্ধান এবং উত্তোলন সহজ হবে সেটা ঠিক করতে হবে।’
পেট্রোবাংলার তথ্য মতে, দেশের সবচেয়ে গভীর কূপ ফেঞ্চুগঞ্জ-২। কূপটি ৪ হাজার ৯৭৭ মিটার গভীর পর্যন্ত খনন করা হয়। এখানে তিনটি স্তরে গ্যাস পাওয়া যায়। যদিও কূপটি ৫ হাজার ৫০০ মিটার পর্যন্ত খনন করার পরিকল্পনা ছিল। বাপেক্স গঠনের আগে ১৯৮৬-৮৭ সালে এই কূপ খোঁড়া হয়েছিল।
জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে এখনো প্রচুর গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্রয়োজন সঠিকভাবে অনুসন্ধান। তারা বলছেন, সাগরে অনুসন্ধানের সক্ষমতা যেহেতু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের নেই, স্থালে অনুসন্ধান জোরদার করা উচিত।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম সংবাদকে বলেন, ‘দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে গুরুত্ব নেই। কয়লা মাটির নিচে পড়ে আছে। দেশীয় প্রাকৃতিক সম্পদের সাশ্রয়ী ব্যবহার; বঙ্গবন্ধুর যে ভিশন, তার থেকে দেশকে দূরে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, হাইপ্রেসার জোনে কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই উচ্চচাপ স্তরে তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান, সেভাবে হয়নি। এজন্য আধুনিক প্রযুক্তি, দক্ষ জনবল ও শক্তিশালী রিগ প্রয়োজন। এজন্য অভিজ্ঞ কোন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা যেতে পারে।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, ইতোমধ্যে হাইপ্রেশার জোনে পাঁচটি কূপ খননের উদ্যোগ তারা নিয়েছেন। এগুলো হলো- মোবারকপুর, শ্রীকাইল, তিতাস, বাখরাবাদ ও সিলেটের রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্র। কূপগুলো ৬ হাজার মিটার পর্যন্ত খননের পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য রিগ ভাড়া করা হবে।