ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তারের পর আড়াই বছর পর হাসপাতাল থেকে জামিনে কারামুক্ত হলেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। ৪ মামলার মধ্যে সবশেষ অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় জামিন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতলে চিকিৎসাধীন সম্রাট মুক্তি পেলেন। এর আগে মাদকদ্রুব্য, অর্থপাচার ও অস্ত্র মামলায় জামিন পেলেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় জামিন না হওয়ায় তাকে বন্দী থাকতে হয়েছে। যদিও তিনি অসুস্থতাজনিত কারণে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে সিসিইউতে ভর্তি ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে গতকাল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় জামিন পান সম্রাট। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান শুনানি শেষে তিন শর্তে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় ৯ জুন পর্যন্ত সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করেন। শর্তসমূহ হলো- আদালতের অনুমতি ছাড়া দেশত্যাগ করা যাবে না, পাসপোর্ট জমা দিতে হবে এবং স্বাস্থ্যগত পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতের ধার্য করা আগামী তারিখে জমা দিতে হবে।
সম্রাটের জামিনের বিষয়ে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনায় নিয়ে মানবিক কারণে আদালত ইসমাইল হোসেনের জামিন মঞ্জুর করেছেন। আগামী ৯ জুন পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কারা কর্মকর্তা জামিনের কাগজ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সিসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা সম্রাটের কাছে নিয়ম-কানুন মেনে তাকে জামিনে মুক্ত করেন। এ সময় তার পাহারায় থাকা কারারক্ষীদের সরিয়ে নেয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে জামিনে মুক্ত করা হয়। ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে করা চার মামলাতেই জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। নতুন করে আর কোন মামলা না থাকায় কারামুক্তি পেলেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় চার্জশিট দেয়ার পর এ মামলার অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য ছিল গতকাল। সম্রাটের আইনজীবী অভিযোগ গঠন শুনানি পেছানোর জন্য সময়ের আবেদন করেন। একই সঙ্গে তার জামিন আবেদনও করেন। অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে তিন শর্তে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় ৯ জুন পর্যন্ত সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ১১ এপ্রিল রমনা থানার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় শুনানি শেষে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করেন ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তেহসিন ইফতেখার। আগের দিন ১০ এপ্রিল অস্ত্র মামলায় ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফায়সাল আতিক বিন কাদের ও অর্থপাচার মামলায় ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করেন।
আড়াই বছর পর মুক্ত সম্রাট
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে আত্মগোপনে চলে যান ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। সে সময় অভিযান চালিয়ে যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক সম্রাটের অন্যতম সহযোগী খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ওরফে ল্যাংরা খালেককে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর র্যাবের অভিযানে সম্রাটের সাম্রাজ্যের অনেক নেতা কর্মী গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্র্মীদের বক্তব্যে উঠে আসে অবৈধ ক্যাসিনো টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ ঢাকা অপরাধ জগতের বড় নিয়ন্ত্রক ছিলেন সম্রাট। কাকরাইল মোড়ে ভূঁইয়া ম্যানসন দখলে নিয়ে সম্রাটের সাম্রাজ্যের রাজত্য চলত। নানা অভিযোগের পর ওই বছরের ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেদিন বিকেলে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া ঢাকার রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়। রমনা থানার অস্ত্র মামলায় ওই বছর ৬ নভেম্বর স¤্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ১২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে দুদক। আর অর্থ পাচারের মামলা হয় ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। গত ৯ ডিসেম্বর মাদক মামলায় সম্রাট ও সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে র্যাব। সম্রাটকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া ছয় মাসের সাজা অনেক আগেই শেষ হয়েছিল। এর মধ্যে অস্ত্র ও অর্থপাচারের দুই মামলায় গত ১০ এপ্রিল এবং মাদক মামলায় ১১ এপ্রিল স¤্রাটকে জামিন দেয় আদালত। সর্বশেষে ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান গতকাল অবৈধ সম্পদের মামলাতেও স¤্রাটের জামিন মঞ্জুর করেন। আর তাতেই তার মুক্তির বাধা কাটে। এ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আসামিপক্ষ সময়ের আবেদন করলে বিচারক আগামী ৯ জুন নতুন তারিখ ধার্য করে দেন।
অবৈধ সম্পদের মামলা
২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, তিনি বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত এই বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকায় ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং সেগুলোতে লোক বসিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন বলেও অভিযোগ আছে। অনেক সময় ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করতেন। তিনি অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকার গুলশান, ধানমন্ডি ও উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট কিনেছেন এবং বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এছাড়া তার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে নামে-বেনামে এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য। মামলাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। এখন মামলাটি অভিযোগ গঠনের অপেক্ষায়।
আজ বাসায় ফিরতে পারে সম্রাট
এদিকে গতকাল মুক্তি পাওয়ার পর সম্রাট বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপতালেই ছিলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে আজ ইসমাইল হোসেনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হতে পারে। এ বিষয়ে বিএসএসএমইউয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম খান বলেন, একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হবে। তবে আজকে (গতকাল) তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে না। কাল বৃহস্পতিবার ( আজ) তাকে ছাড়পত্র দেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার, ১২ মে ২০২২ , ২৯ বৈশাখ ১৪২৮ ০৯ শাওয়াল ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তারের পর আড়াই বছর পর হাসপাতাল থেকে জামিনে কারামুক্ত হলেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। ৪ মামলার মধ্যে সবশেষ অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় জামিন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতলে চিকিৎসাধীন সম্রাট মুক্তি পেলেন। এর আগে মাদকদ্রুব্য, অর্থপাচার ও অস্ত্র মামলায় জামিন পেলেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় জামিন না হওয়ায় তাকে বন্দী থাকতে হয়েছে। যদিও তিনি অসুস্থতাজনিত কারণে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে সিসিইউতে ভর্তি ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে গতকাল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় জামিন পান সম্রাট। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান শুনানি শেষে তিন শর্তে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় ৯ জুন পর্যন্ত সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করেন। শর্তসমূহ হলো- আদালতের অনুমতি ছাড়া দেশত্যাগ করা যাবে না, পাসপোর্ট জমা দিতে হবে এবং স্বাস্থ্যগত পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতের ধার্য করা আগামী তারিখে জমা দিতে হবে।
সম্রাটের জামিনের বিষয়ে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনায় নিয়ে মানবিক কারণে আদালত ইসমাইল হোসেনের জামিন মঞ্জুর করেছেন। আগামী ৯ জুন পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কারা কর্মকর্তা জামিনের কাগজ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সিসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা সম্রাটের কাছে নিয়ম-কানুন মেনে তাকে জামিনে মুক্ত করেন। এ সময় তার পাহারায় থাকা কারারক্ষীদের সরিয়ে নেয়া হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে জামিনে মুক্ত করা হয়। ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে করা চার মামলাতেই জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। নতুন করে আর কোন মামলা না থাকায় কারামুক্তি পেলেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় চার্জশিট দেয়ার পর এ মামলার অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য ছিল গতকাল। সম্রাটের আইনজীবী অভিযোগ গঠন শুনানি পেছানোর জন্য সময়ের আবেদন করেন। একই সঙ্গে তার জামিন আবেদনও করেন। অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে তিন শর্তে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় ৯ জুন পর্যন্ত সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ১১ এপ্রিল রমনা থানার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় শুনানি শেষে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করেন ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তেহসিন ইফতেখার। আগের দিন ১০ এপ্রিল অস্ত্র মামলায় ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফায়সাল আতিক বিন কাদের ও অর্থপাচার মামলায় ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করেন।
আড়াই বছর পর মুক্ত সম্রাট
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে আত্মগোপনে চলে যান ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। সে সময় অভিযান চালিয়ে যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক সম্রাটের অন্যতম সহযোগী খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ওরফে ল্যাংরা খালেককে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর র্যাবের অভিযানে সম্রাটের সাম্রাজ্যের অনেক নেতা কর্মী গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্র্মীদের বক্তব্যে উঠে আসে অবৈধ ক্যাসিনো টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ ঢাকা অপরাধ জগতের বড় নিয়ন্ত্রক ছিলেন সম্রাট। কাকরাইল মোড়ে ভূঁইয়া ম্যানসন দখলে নিয়ে সম্রাটের সাম্রাজ্যের রাজত্য চলত। নানা অভিযোগের পর ওই বছরের ৭ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেদিন বিকেলে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং ‘নির্যাতন করার’ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানানো হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া ঢাকার রমনা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়। রমনা থানার অস্ত্র মামলায় ওই বছর ৬ নভেম্বর স¤্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ১২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা করে দুদক। আর অর্থ পাচারের মামলা হয় ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। গত ৯ ডিসেম্বর মাদক মামলায় সম্রাট ও সহযোগী আরমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে র্যাব। সম্রাটকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া ছয় মাসের সাজা অনেক আগেই শেষ হয়েছিল। এর মধ্যে অস্ত্র ও অর্থপাচারের দুই মামলায় গত ১০ এপ্রিল এবং মাদক মামলায় ১১ এপ্রিল স¤্রাটকে জামিন দেয় আদালত। সর্বশেষে ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান গতকাল অবৈধ সম্পদের মামলাতেও স¤্রাটের জামিন মঞ্জুর করেন। আর তাতেই তার মুক্তির বাধা কাটে। এ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আসামিপক্ষ সময়ের আবেদন করলে বিচারক আগামী ৯ জুন নতুন তারিখ ধার্য করে দেন।
অবৈধ সম্পদের মামলা
২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, তিনি বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত এই বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকায় ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং সেগুলোতে লোক বসিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন বলেও অভিযোগ আছে। অনেক সময় ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করতেন। তিনি অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকার গুলশান, ধানমন্ডি ও উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট কিনেছেন এবং বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এছাড়া তার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে নামে-বেনামে এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য। মামলাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। এখন মামলাটি অভিযোগ গঠনের অপেক্ষায়।
আজ বাসায় ফিরতে পারে সম্রাট
এদিকে গতকাল মুক্তি পাওয়ার পর সম্রাট বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপতালেই ছিলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে আজ ইসমাইল হোসেনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হতে পারে। এ বিষয়ে বিএসএসএমইউয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম খান বলেন, একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হবে। তবে আজকে (গতকাল) তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে না। কাল বৃহস্পতিবার ( আজ) তাকে ছাড়পত্র দেয়া হবে।